ব্রিজটাউনে চলছে পেসারদের দাপট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া টেস্টে প্রথম দুই দিনে উইকেট পড়েছে ২৪টি, যার ২৩টিই নিয়েছেন পেসাররা। পেস বোলিং সহায়ক এই উইকেটে ব্যাটসম্যানদের ঘাম ছুটলেও খেলাটা হচ্ছে জমজমাট। দ্বিতীয় দিন শেষে কে এগিয়ে সেটি বলার সুযোগ নেই।

দ্বিতীয় দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ইনিংসে ১৯০ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া ৪ উইকেটে ৯২ তুলে দিনের খেলা শেষ করেছে। মাঠের খেলাটাই যে শুধু ব্রিজটাউন টেস্টের শিরোনাম তেমনটা নয়। টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে আম্পায়ারিং নিয়ে ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ড্যারেন স্যামি।

দক্ষিণ আফ্রিকার টিভি আম্পায়ার অ্যাড্রিয়ান হোল্ডস্টকের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্যামি। এমনকি বৃহস্পতিবার দিনের খেলা শেষে ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথের সঙ্গে দেখা করে স্যামি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইংল্যান্ডে শেষ ওয়ানডে সিরিজেও হোল্ডস্টকের আম্পায়ারিং নিয়ে তাঁর মনে প্রশ্ন জেগেছিল। সেই সিরিজের দুটি ম্যাচে তিনি টিভি আম্পায়ার এবং অন্যটিতে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

দ্বিতীয় দিনের খেলায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবির। একটি ছিল রোস্টন চেজের এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত। অন্যটি শাই হোপের ক্যাচ। স্যামির দল মনে করে প্যাট কামিন্সের করা বলটি চেজের ব্যাটে লেগেছে। ৪৪ রানে ব্যাটিং করা চেজকে এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন। টিভি আম্পায়ার হোল্ডস্টক জানান বল ও ব্যাটের মধ্যে স্পষ্ট দূরত্ব দেখা যাচ্ছে। আল্ট্রাএজে স্পষ্ট কোনো স্পাইক দেখা না গেলেও কাছাকাছি দুটো ছোট স্পাইক ছিল। তাতেই বল ব্যাটে লেগেছে বলে দাবি চেজের।

হোপের আউটও নিয়েও বিতর্ক আছে। বো ওয়েবস্টারের ভেতরে ঢোকা বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটের পেছনে, অ্যালেক্স ক্যারি দুর্দান্তভাবে সেটি লুফে নেন। ক্যারির বল হাতে ছিল, তবে তিনি ক্যাচ ধরে মাটিতে পড়ার সময় বলটি ঘাসে লেগেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। টিভি আম্পায়ার এখানেও অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে রায় দেন। ড্রেসিংরুমে তখনই হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায় স্যামিকে।

হোপ করেন ৪৮ রান। চেজ ও হোপের উইকেট দুটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এদের একজন বড় ইনিংস খেলতে পারলে লো স্কোরিং এই ম্যাচে এগিয়ে যেত ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ক্ষুব্ধ স্যামি দিনের খেলা শেষে বলেছেন, ‘আমরা শুধু প্রক্রিয়াটি বোঝার চেষ্টা করছি। আমরা শুধু চাই সিদ্ধান্তগুলো যেন ধারাবাহিক হয়। যখন কোনো কিছুতে সন্দেহ থাকে, তখন সেটি যেন সবার ক্ষেত্রেই একইভাবে প্রযোজ্য হয়। এই নির্দিষ্ট আম্পায়ারকে (হোল্ডস্টক) ঘিরে বিষয়টা আমার মনে প্রথম আসে ইংল্যান্ড সফর থেকেই। এটি হতাশাজনক। আমি শুধু চাই সিদ্ধান্তে যেন ধারাবাহিকতা থাকে।’

স্যামি সরাসরি হোল্ডস্টককেই ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, দেখুন, আপনি এমন অবস্থায় যেতে চান না যেখানে নির্দিষ্ট কোনো আম্পায়ারকে নিয়ে সন্দেহ জন্মায়। তবে যখন একের পর এক সিদ্ধান্ত একই দলের বিপক্ষে যায়, তখন প্রশ্ন ওঠেই। আমি জানি, উনি (হোল্ডস্টক) এই সিরিজের জন্য এখানে আছেন। কিন্তু আপনি কোনো টেস্ট ম্যাচে এমন সন্দেহ নিয়ে যেতে চান না।’

স্যামি আরও বলেন, ‘তাই আমি সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়াটি নিয়ে একটি স্পষ্ট আলোচনা চাই, যেন আমরা সবাই বিষয়টি বুঝতে পারি। কারণ দিনের শেষে আমরা চাই মাঠে নেমে আম্পায়ারদের ওপর বিশ্বাস রাখতে। আমাদের দলের উদ্দেশ্য সেটাই। তাই আমরা সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা চাই।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজ কি এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে স্যামি বলেছেন, ‘এটা জানতে হলে আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে।’

চেজের আউট নিয়ে স্যামি বলেছেন, ‘আমাদের মতে বলটি প্যাডে লাগার আগে ব্যাটে লেগেছিল, কারণ আমরা বলের (গতিপথের) বিচ্যুতি দেখেছি।’

স্যামির দাবি সিদ্ধান্তগুলো একই পরিস্থিতিতে ভিন্নরকম হচ্ছে, ‘আমি শুধু বলছি, আপনি যা দেখছেন, তাই বিচার করুন। যদি দুটি একইরকম পরিস্থিতি হয়, আর একটি আউট না হয়—তাহলে অন্যটিকে আউট দেওয়া আরও বেশি সন্দেহের জন্ম দেয়। আমি জানি না উনি (হোল্ডস্টক) কী দেখেছেন, তবে আমরা যে চিত্র দেখেছি, তাতে সিদ্ধান্তগুলো দুই দলের জন্যই সমান ন্যায্য মনে হয়নি। আমরা সবাই মানুষ, ভুল হবে। আমি শুধু চাই ন্যায্যতা।’

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও নাকি একটি সিদ্ধান্ত গেছে। চেজের বিরুদ্ধে একটি এলবিডব্লিউ আপিল রিভিউ করা হয়েছিল, যেখানে মনে হয়েছিল বল প্যাডে আগে লেগেছে। কিন্তু প্রাথমিক রিপ্লেতে তা স্পষ্ট হলেও হোল্ডস্টক মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলানোর মতো প্রমাণ পাননি। এ নিয়ে মিচেল স্টার্ক বলেছেন, তারা মনে করছেন রিপ্লের চিত্র ও অডিও একসঙ্গে মিলছিল না।

তবে স্টার্কও মনে করেন কয়েকটি সিদ্ধান্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গেছে। তিনি বলেছেন, ‘কিছু সিদ্ধান্ত বেশ আগ্রহ জাগানিয়া ছিল। অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বেশি গেছে। আমাদের বিপক্ষেও একটি গেছে (চেজের বিপক্ষে) যেখানে মনে হয়েছিল ব্যাট আর বলের মধ্যে ফাঁক ছিল। এর কারণে আমাদের ৪০ রানের মতো ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু পরে এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে তার উইকেট মিলেছে।’

দ্বিতীয় দিন শেষে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে ৮২ রানে। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ১৮০ রানে অলআউট হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম প য় র বল ছ ন আম দ র উইক ট প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে

প্রযুক্তির উৎকর্ষের মধ্যেও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে প্রায়ই বিকৃতভাবে বা ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। গুগলে ‘ইনডিজেনাস পিপল’ লিখে খোঁজা হলে মাঝেমধ্যে এমন ছবি দেখানো হয়, যা তাদের ‘আদিম’, ‘বন্য’, ‘বর্বর’, ‘জংলি’ ও ‘হিংস্র’ আকারে উপস্থাপন করে।

সোমবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জা​দুঘর মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এমন অভিযোগ করেন। ‘আদিবাসী নারীর অধিকার রক্ষা ও ভবিষ্যৎ গড়ার লড়াইয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক।

আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ঘিরে এমন উপস্থাপনের প্রভাব নারীদের ওপরও পড়বে।

মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, দেশে জাতিসংঘের অনেকগুলো দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হলেও আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করা হয় না। তিনি বলেন, বুঝুক আর না বুঝুক বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিভিন্ন কনভেনশনকে তড়িঘড়ি করে সমর্থন করে। কিন্তু এই কনভেনশনকে সমর্থন করেনি। সরকার বুঝেশুনেই সমর্থন করেনি। আগের সরকার বলেছে, বাংলাদেশে আদিবাসী নেই, এই সরকারও আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিচ্ছে না।

একটাই ধর্ম ও জাতিসত্তা থাকবে, এমন মনোভাব কাম্য নয় উল্লেখ করে এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘কিসের ভয়ে আমরা দেশে ভিন্ন ধর্ম, চিন্তা ও জাতিসত্তার মানুষকে থাকতে দেব না? কে অধিকার দিয়েছে যে একটি মাত্র মতবাদ, চিন্তা, ভাষা জাতি ও ধর্ম থাকবে? রাষ্ট্রের জন্য এটা কাম্য হতে পারে না।’

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে সমতল ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করে খুশী কবির বলেন, অভ্যুত্থানের পরে আর নারীদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। নারী কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু কমিশনের কোনো কিছু গ্রহণ করা হয়নি। এর অর্থ সরকার নারীদের ভয় পায়। এই অবস্থা টিকে থাকার জন্য অভ্যুত্থান হয়নি। তাই অধিকার আদায়ে নারীদের শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। এখনই উত্তম সময়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির ছবি: প্রথম আলো হেডিং: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ