জোহরানকে কেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারে উঠেপড়ে লেগেছে রিপাবলিকান শিবির
Published: 27th, June 2025 GMT
রিপাবলিকান দলের কয়েকজন নেতা নিউইয়র্ক নগরের ডেমোক্রেটিক দলের মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানির মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিল করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা এই তরুণ প্রার্থীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করার কথা বলছেন।
রিপাবলিকান নেতাদের এই বক্তব্যের মাধ্যমে জোহরান ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হচ্ছেন। বিশেষ করে তাঁর মতো নিউইয়র্ক নগরের ডেমোক্রেটিক দলের মেয়র প্রার্থীর প্রতি কিছু রিপাবলিকান নেতার এমন বক্তব্য উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
৩৩ বছর বয়সী এই ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট (গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী) প্রার্থী দলীয় প্রাথমিক বাছাইয়ে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করেছেন। কুমো আনুষ্ঠানিকভাবে পরাজয় মেনে নিয়েছেন।
নিউইয়র্ক ইয়াং রিপাবলিকান ক্লাব (এনওয়াইওয়াইআরসি) ডেমোক্রেটিক দলের এই ফলাফলের প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ নিতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানায়।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক্সে লেখা হয়েছে, ‘চরমপন্থী জোহরান মামদানিকে আমাদের প্রিয় নিউইয়র্ক শহর ধ্বংস করতে দেওয়া যাবে না।’
এই সংগঠন প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানায়, যেন তিনি ম্যাকার্থি যুগের কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রণ আইন ব্যবহার করে জোহরানের নাগরিকত্ব বাতিল ও দ্রুত তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করেন। তারা ট্রাম্পের উপপ্রধান স্টাফ স্টিফেন মিলার ও সীমান্তনীতি–বিষয়ক প্রধান টম হোমানের প্রতিও পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানায়।
এক্সে তারা লিখেছে, ‘পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। নিউইয়র্ক আপনাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।’
জোহরান মামদানির জয়ের পর স্টিফেন মিলার দাবি করেন, ‘অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে একটি সমাজে কী ঘটে’—নিউইয়র্ক নগরের ঘটনা তার সবচেয়ে বড় সতর্কসংকেত।
মিলার আরও বলেন, ‘পুরো ডেমোক্রেটিক দল এখন এমন একজন সমাজতন্ত্রীকে সমর্থন করেছে, যিনি সব অভিবাসন আইনের প্রয়োগ বন্ধ ও পুরো কারা ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে চান।’
টেনেসির রিপাবলিকান দলীয় কংগ্রেস সদস্য অ্যান্ডি ওগলস নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী জোহরানকে ‘ছোট মুহাম্মদ’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, তিনি একজন ইহুদিবিদ্বেষী, সমাজতন্ত্রী, কমিউনিস্ট। তিনি নিউইয়র্ক শহর ধ্বংস করে দেবেন।
ওগলস আরও বলেন, ‘তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া দরকার। এ জন্য আমি তাঁর নাগরিকত্ব বাতিলের আইনি প্রক্রিয়া শুরুর দাবি জানাচ্ছি।’
জোহরান যদি নিউইয়র্ক নগরের নির্বাচিত হন, তাহলে তিনি হবেন এই নগরের প্রথম মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র। তিনি এমন একটি নির্বাচনে জয় পেয়েছেন, যা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর পর ডেমোক্র্যাটদের প্রথম বড় দলীয় বাছাই হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জোহরানের প্রধান প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে চাইল্ডকেয়ার (শিশুদের যত্ন) সবার জন্য উন্মুক্ত করা, বিনা ভাড়ার বাস চালু করা এবং বাসাভাড়া বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা।
ট্রাম্প প্রশাসন ভিত্তিহীনভাবে দাবি করছে, জোহরানের বিজয় অবাধ অভিবাসনের ফল। যদিও তাদের এ দাবির পক্ষে কোনো ভিত্তি নেই। একই সময়ে তারা ব্যাপক অভিবাসী বহিষ্কার কর্মসূচি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এনওয়াইওয়াইআরসি হচ্ছে একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। নিউইয়র্কের ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী রিপাবলিকান সমর্থকদের নিয়ে এ সংগঠন গঠিত। এটি ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
জোহরান মামদানি ১৯৯১ সালে উগান্ডায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাত বছর বয়সে ১৯৯৮ সালে পরিবারের সঙ্গে নিউইয়র্কে চলে আসেন। তিনি ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন।
আরও পড়ুননিউইয়র্কে ইতিহাস গড়লেন জোহরান মামদানি২৬ জুন ২০২৫কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রণ আইনটি ১৯৫৪ সালে প্রেসিডেন্ট ডুইট আইজেনহাওয়ার সই করেন। এটি ছিল স্নায়ুযুদ্ধের সময় চালু হওয়া আইন, যা তাত্ত্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করে। তাদের কিছু নির্দিষ্ট পদে নিয়োগে বাধা দেয়। তবে এই আইনের ব্যবহার খুব কমই হয়েছে। বহুবার এটি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ আইন ম্যাকার্থি যুগের ‘মৃতপ্রায়’ ধারা হিসেবে বিবেচিত।
জোহরানের বিজয়ে কিছু প্রভাবশালী রিপাবলিকান আবারও আন-আমেরিকান অ্যাক্টিভিটিস কমিটি’ (ম্যাকার্থির সময়ে চালু) ফিরিয়ে আনার দাবি করছেন।
রিপাবলিবান সিনেটর মাইক কলিন্স লিখেছেন, নিউইয়র্ক নগর এখন একজন সমাজতন্ত্রীকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করার দ্বারপ্রান্তে। সময় হয়েছে ওই কমিটি আবার চালু করার।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও গত বুধবার তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জোহরান মামদানিকে আক্রমণ করে বলেন, তিনি একজন ‘পাগলাটে কমিউনিস্ট’।
আরও পড়ুনট্রাম্পের ‘সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন’ জোহরান মামদানি২৫ জুন ২০২৫দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা নিউইয়র্ক নগরের বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নভেম্বরের মেয়র নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ডেমোক্র্যাটদের অনেকে অভিযোগ করছেন, তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করে নিউইয়র্কে অভিবাসন নীতি বাস্তবায়নে সহায়তা করেছেন।
রিপাবলিকান ফর রিনিউয়াল নামের আরেকটি গ্রুপ এনওয়াইওয়াইআরসির সঙ্গে সুর মিলিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছে, ‘কমিউনিস্ট চরমপন্থী জোহরানকে যত দ্রুত সম্ভব ফেরত পাঠানো উচিত।’
আরও পড়ুননিউইয়র্ক কি ইতিহাসে প্রথম কোনো মুসলিম মেয়র পেতে যাচ্ছে১১ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র থ ক ন উইয়র ক নগর র ড ম ক র ট ক দল র প বল ক ন র ক নগর র ন উইয র ক
এছাড়াও পড়ুন:
সিটি করপোরেশন ও পুলিশ কী করছে
রাজশাহী কলেজের সামনে এক মাস ধরে চলছে ফুটপাতের স্ল্যাব চুরির ঘটনা আর এর করুণ পরিণতি হলো একজন শিক্ষার্থীর নালায় পড়ে গুরুতর আহত হওয়া। সম্প্রতি সেখানে একই ধরনের আরও ঘটনা ঘটেছে। এটি আমাদের নগর ব্যবস্থাপনার অবহেলা ও উদাসীনতার উদাহরণ। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ফুটপাত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, প্রায় এক মাস রাজশাহী কলেজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে, যেখানে হাজারো শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ চলাচল করে, সেখানে ফুটপাতের স্ল্যাব চুরি হচ্ছে। প্রায় ৫০০ মিটার সড়কের দুই পাশে থাকা ফুটপাত থেকে অন্তত ২০টি স্ল্যাব চুরি হয়ে গেছে। গত বছরও শহরের বিভিন্ন রাস্তা থেকে স্ল্যাব ও লোহার ফ্রেম চুরি হয়েছিল, কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। এবারও স্ল্যাব চুরির ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে জানা গেছে, কিন্তু সেটি সমস্যার সমাধান করতে পারেনি।
নালায় পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। স্থানীয় লোকজন গত ১০ দিনে অন্তত চারজনকে এই ফুটপাতে পড়ে যেতে দেখেছেন। এটি স্পষ্ট করে যে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে এবং কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পরও কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একজন কলেজের ফটকের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি নিজের ছেলেকে আহত হওয়ার পর নিজেই চোর ধরার জন্য পাহারা দিচ্ছেন, কিন্তু তাতেও কোনো ফল হচ্ছে না।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল অবিলম্বে এই অরক্ষিত ফুটপাত মেরামত করা এবং স্ল্যাব চুরি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। শুধু কাগজে-কলমে ব্যবস্থা নিয়ে নাগরিকদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে রাখা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য শহরে আসে, কিন্তু শহরের অব্যবস্থাপনা তাকে হাসপাতালের বিছানায় ঠেলে দেয়, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে?
এ ঘটনা একটি সতর্কতা। অবিলম্বে রাজশাহী কলেজের সামনের ফুটপাত সংস্কার করা হোক। একই সঙ্গে নগরজুড়ে এ ধরনের অরক্ষিত স্থানগুলো চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে সেগুলোর মেরামতের ব্যবস্থা করা হোক। নগর কর্তৃপক্ষের প্রধান দায়িত্ব নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই দায়িত্ব পালনে তাদের ব্যর্থতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। স্ল্যাব চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিন নিয়ে বের হয়ে অনেক অভিযুক্ত ব্যক্তি একই কাজে জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের কীভাবে এ অপরাধকর্ম থেকে বিরত রাখা যায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।