‘যাদের মা নেই তারা কাঁদবে, যাদের মা আছেন তারাও কাঁদবে’
Published: 27th, June 2025 GMT
মা-শব্দটি যেন পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর অনুভূতির নাম। সেই অনুভব নিয়েই নির্মিত হয়েছে ঈদের নাটক ‘ঘ্রাণ’। মায়ের প্রতি সন্তানের নিঃশব্দ ভালোবাসা, অব্যক্ত অনুশোচনা আর স্মৃতির হাহাকার নিয়ে বোনা হয়েছে এর গল্প। নাটকটি ইউটিউবে মুক্তির দুই সপ্তাহেই ৭১ লাখের বেশি দর্শকের হৃদয় ছুঁয়েছে।
মাশরিকুল আলমের নির্মাণে ও ইমদাদ বাবুর গল্পে রচিত এই নাটকে অপূর্বর চরিত্রে দেখা যায় এক ছেলেকে-যে জানেই না তার মায়ের জন্মদিন কবে! প্রেমিকার খালার জন্মদিনের আয়োজনে গিয়ে হঠাৎই বুকের ভেতর ওঠে প্রশ্ন-মায়ের জন্মদিন কেন মনে নেই? এই 'না-জানা' থেকে শুরু হয় এক আবেগঘন অনুসন্ধান, যা শুধু তার নয়-সমস্ত দর্শকেরই এক আত্মজিজ্ঞাসায় রূপ নেয়।
নাটকে অপূর্বর সঙ্গে অভিনয় করেছেন নাজনীন নিহা। মায়ের চরিত্রে রয়েছেন শেলী আহসান, যিনি নিজের অনুভব জানিয়ে বলেন, ‘এমন একটি সন্তান যদি প্রতিটি মায়ের জীবনে থাকত, পৃথিবীটা আরও সুন্দর হতো।’ অপূর্বর মতে, ‘যাদের মা নেই তারা কাঁদবে, যাদের মা আছেন তারাও।’
‘ঘ্রাণ’ এককথায় শুধুই নাটক নয়-এ যেন প্রতিটি সন্তানের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অপরাধবোধের করুণ প্রতিচ্ছবি। যে সমাজ মাকে ভুলতে বসেছে, সেই সমাজেই আবার এক নতুন আলো ছড়ায় এই নাটক। দর্শকেরাও জানাচ্ছেন ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। একজন মন্তব্য করেছেন, ‘মা জীবিত, তবু যেন তিনি অনেক দূরের কেউ-নাটকটি দেখে চোখের অশ্রু আর পিছু হটেনি।’
বিশেষ করে প্রবাসীদের প্রতিক্রিয়াগুলো ছিল হৃদয়বিদারক। একজন লিখেছেন, ‘মাকে নিয়ে এমন নাটক আগে কখনও দেখিনি। সংলাপগুলো যেন হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা এক দীর্ঘশ্বাস।’
‘ঘ্রাণ’-নিঃসন্দেহে এক চিরচেনা অথচ নতুন করে দেখা মা-পুত্র সম্পর্কের সজল আয়না। যা দেখলে হয়তো মনে হবে, আমরা আসলে অনেক আগেই ভুলে গিয়েছি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটিকে-আমাদের মা-কে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন টক
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েল-ভারত যেভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে চেয়েছিল
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক প্রধান জর্জ টেনেট তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেনের মতোই বিপজ্জনক’ বলে মনে করতেন এবং মোসাদের সাবেক প্রধান শাবতাই শ্যাভিট তাঁকে হত্যা না করার জন্য আফসোস করেছিলেন। তিনি হচ্ছে আব্দুল কাদির খান, পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির জনক। পাকিস্তানের প্রায় ২৫০ মিলিয়ন পাকিস্তানি নাগরিকদের কাছে একজন কিংবদন্তি, একজন জাতীয় বীর। এই পরমাণুবিজ্ঞানী ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৮৫ বছর বয়সে ২০২১ সালে মারা যান।
আব্দুল কাদির খান ইরান, লিবিয়া এবং উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহায়তার জন্য একটি গোপন অত্যাধুনিক নেটওয়ার্কও পরিচালনা করেছিলেন। এ দেশগুলোর মধ্যে উত্তর কোরিয়াই শুধু পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে সক্ষম হয়েছে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তারা পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তি হওয়া থেকে বিরত রাখতে নানা গুপ্তহত্যার চেষ্টা করেছিল এবং হুমকি দিয়েছিল। ইসরায়েল নিজেও পারমাণবিক শক্তির অধিকারী দেশ, যদিও তারা তা কখনো স্বীকার করে না।
১৯৮০-এর দশকে ইসরায়েল ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলার একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। যদিও ভারত সরকার সেই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাতিল করে দেয়।
আব্দুল কাদির খান বিশ্বাস করতেন যে একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করে তিনি তাঁর দেশকে বিদেশি হুমকি থেকে বিশেষ করে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত থেকে রক্ষা করেছেন। আজ পাকিস্তানি নাগরিকেরা তেমনটিই মনে করে।
‘কেন একটি ইসলামিক বোমা নয়?’প্রতিবেশী দেশ ভারত যখন প্রথম পারমাণবিক বোমা তৈরি করে পাকিস্তানও তখন এমন বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭৪ সালের ১৮ মে ভারত তার প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা করে, যার সাংকেতিক নাম ছিল ‘স্মাইলিং বুদ্ধ’। এরপর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো অবিলম্বে তাঁর নিজের দেশের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির শপথ নেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা ঘাস বা লতাপাতা খাব, এমনকি ক্ষুধার্ত থাকব, কিন্তু আমরা নিজেদের জন্য একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করব।’
তিনি ঘোষণা করেন, ‘একটি খ্রিষ্টান বোমা আছে, একটি ইহুদি বোমা আছে এবং এখন একটি হিন্দু বোমাও আছে। কেন একটি ইসলামিক বোমা থাকবে না?’
ব্রিটিশ ভারতে জন্মগ্রহণ করা আব্দুল কাদির ১৯৬০ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান নিয়ে ডিগ্রি নেন। এরপর বার্লিনে মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ধাতু প্রকৌশল বিদ্যা) নিয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামেও পড়াশোনা করেন।
১৯৭৪ সালে আব্দুল কাদির আমস্টারডামের অন্যতম পারমাণবিক জ্বালানি সংস্থা ইউরেনকোর একজন সাবকন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছিলেন। কোম্পানিটি ইউরোপের পারমাণবিক চুল্লির জন্য পারমাণবিক জ্বালানি হিসেবে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরবরাহ করত।
আব্দুল কাদির ইউরেনকোর গোপন এলাকায় প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিলেন, যেখান ছিল বিশ্বের সবচেয়ে সেরা সেন্ট্রিফিউজের ব্লুপ্রিন্ট। সেখানে প্রাকৃতিক ইউরেনিয়ামকে পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য সমৃদ্ধ করা হতো এবং তা পারমাণবিক বোমার জ্বালানিতে রূপান্তরিত করা হতো।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি নেদারল্যান্ডস থেকে হঠাৎ করে পাকিস্তানে চলে যান। বিষয়টি ছিল অনেকটা রহস্যময়। যাওয়ার সময় তিনি বলে যান, ‘পাকিস্তানে এমন একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যা আমি প্রত্যাখ্যান করতে পারি না।’
পরে আব্দুল কাদিরের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডস থেকে ইউরেনিয়াম সেন্ট্রিফিউজের একটি ব্লুপ্রিন্ট চুরি করার অভিযোগ ওঠে, যা ইউরেনিয়ামকে অস্ত্র-গ্রেডের জ্বালানিতে পরিণত করতে পারে।
সেই বছরই জুলাই মাসে তিনি পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে একটি গবেষণা পরীক্ষাগার স্থাপন করেন, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করা শুরু হয়।
জুলফিকার আলী, ইন্দিরা গান্ধী ও মুয়াম্মার গাদ্দাফি