এইচএসসি পরীক্ষা: বাংলা দ্বিতীয় পত্রের সময় পরিকল্পনা করে নাও
Published: 27th, June 2025 GMT
এইচএসসি পরীক্ষার সময় বাংলা বিষয়ে এ প্লাস পেতে হলে বাংলা প্রথম পত্রের পাশাপাশি বাংলা দ্বিতীয় পত্রেও ভালো নম্বর পেতে হবে। বাংলা দ্বিতীয় পত্রে কিন্তু বহুনির্বাচনি প্রশ্ন নেই। সব কটিই রচনামূলক প্রশ্ন। ব্যাকরণ ও নির্মিতি অংশ মিলিয়ে মোট ১২টি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। সময় তিন ঘণ্টা বা ১৮০ মিনিট। বাংলায় এ প্লাস পাওয়ার এই কঠিন কাজটি সহজ করে দিতে পারে বাংলা দ্বিতীয় পত্রে বেশি নম্বর পাওয়া। আর বেশি নম্বর পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ১২টি প্রশ্নের উত্তর যথাযথ পরীক্ষার খাতায় লেখা। আর তা করতে প্রয়োজন এই পরীক্ষায় সঠিক ‘টাইম ম্যানেজমেন্ট’ বা ‘সময় পরিকল্পনা’ করা।
বাংলা দ্বিতীয় পত্রে দুটি অংশ আছে—১.
প্রশ্নপত্র পড়ে প্রশ্ন নির্বাচন
বাংলা দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্রটি হাতে পেয়েই প্রশ্নটি খুব ভালো করে পড়তে হবে। তারপর ‘সঠিক প্রশ্নটি’ নির্বাচন করতে হবে। বাংলা দ্বিতীয় পত্রে মোট ২৩টি প্রশ্ন পড়তে হবে। প্রতি প্রশ্নের বিকল্প প্রশ্ন থাকবে, তাই যে প্রশ্নের উত্তর ভালো জানা সেগুলোর উত্তর লিখতে হবে। যে প্রশ্নের উত্তর করতে চাও, সে প্রশ্নগুলো আগে দাগ দিয়ে রাখতে পারো। এতে নির্বাচিত প্রশ্নগুলো সহজেই চোখে পড়বে। আর প্রশ্নপত্র পড়ে ‘প্রশ্ন নির্বাচন’ করতে সময় থাকতে মাত্র ৫ মিনিট।
ব্যাকরণ অংশের প্রশ্ন লেখার সময় পরিকল্পনা
১. প্রথম প্রশ্নটি বাংলা উচ্চারণের নিয়ম আর বিকল্প প্রশ্নটি থাকবে শব্দের শুদ্ধ উচ্চারণ নিয়ে। নম্বর থাকবে ৫। যে প্রশ্নটি ভালো পারবে তা লিখবে। প্রশ্ন এক বা দুই পৃষ্ঠার মধ্যে লিখবে। সময় নেবে ১০ মিনিট।
২. দ্বিতীয় প্রশ্নটি থাকবে বাংলা বানানের নিয়ম আর বিকল্প প্রশ্নটি থাকবে শব্দের ভুল বানান শুদ্ধ করে লেখো। নম্বর থাকবে ৫। ভালো নম্বর পেতে ‘ভুল শব্দের শুদ্ধ বানান’ প্রশ্নটির উত্তর করবে। সময় নেবে ১০ মিনিট।
৩. তৃতীয় প্রশ্নটি থাকবে ব্যাকরণিক শব্দ শ্রেণি আর বিকল্প প্রশ্ন থাকবে অনুচ্ছেদ থেকে শব্দ নির্দেশকরণ। নম্বর থাকবে ৫। তুমি অনুচ্ছেদ থেকে শব্দ শ্রেণি নির্দেশকরণ লিখলে বেশি নম্বর পাবে। সময় নেবে ৬ মিনিট।
৪. ৪ নম্বর প্রশ্নটি থাকবে বাংলা শব্দ গঠন আর বিকল্প প্রশ্ন থাকবে ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয়। নম্বর থাকবে ৫। ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয় প্রশ্নের উত্তর লিখলে বেশি নম্বর পাবে। সময় নেবে ৭ মিনিট।
৫. পঞ্চম প্রশ্নটি হবে বাক্যতত্ত্ব আর বিকল্প প্রশ্নটি থাকবে বাক্য রূপান্তর নিয়ে। নম্বর থাকবে ৫। তুমি সময় বাঁচানোর জন্য বাক্য রূপান্তর প্রশ্নটি লিখবে। সময় পাবে ১০ মিনিট।
৬. ষষ্ঠ প্রশ্নটি থাকবে বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ নিয়ে আর বিকল্প প্রশ্ন থাকবে অশুদ্ধ বাক্যকে শুদ্ধ করে লেখো। নম্বর থাকবে ৫। অশুদ্ধ বাক্যকে শুদ্ধ করে লিখলেই পূর্ণ নম্বর পাবে। প্রশ্নের উত্তর খাতার পূর্ণ এক পৃষ্ঠায় লিখবে। সময় নেবে ৭ মিনিট।
নির্মিত অংশের প্রশ্ন লেখার সময় পরিকল্পনা
৭. নির্মিতি অংশের সাত নম্বর প্রশ্নটি থাকবে একটি ইংরেজি অনুচ্ছেদের বাংলা অনুবাদ করা আর বিকল্প প্রশ্ন থাকবে পারিভাষিক শব্দ। নম্বর থাকবে ১০। তুমি পূর্ণ নম্বর পেতে পারিভাষিক শব্দের উত্তর দেবে, লিখবে এক পৃষ্ঠায়। সময় নেবে ১০ মিনিট।
৮. আট নম্বর প্রশ্ন থাকবে একটি দিনলিপি লেখা আর বিকল্প প্রশ্ন থাকবে প্রতিবেদন লিখন। এতে নম্বর ১০। তুমি অবশ্যই প্রতিবেদনটি লিখবে। খাতায় দুই থেকে তিন পৃষ্ঠায় সুন্দর করে লিখবে। সময় নেবে ২০ মিনিট।
৯. ৯ নম্বর প্রশ্নটি হবে বৈদ্যুতিন চিঠির ওপর আর বিকল্প প্রশ্ন থাকবে আবেদনপত্র লেখার ওপর। নম্বর থাকবে ১০। এটি কিন্তু ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের ই-মেইল লেখার মতো। ই-মেইল বিষয়ে তোমার প্রস্তুতি অনেক ভালো। তাই তুমি বৈদ্যুতিন চিঠির উত্তর করবে। এটি দুই পৃষ্ঠায় লিখবে। সময় পাবে ১৫ মিনিট।
১০. দশম প্রশ্নটি থাকবে সারাংশ বা সারমর্ম লেখা আর বিকল্প প্রশ্ন থাকবে ভাবসম্প্রসারণ লেখো। নম্বর থাকবে ১০। সারমর্ম লিখলে এক পৃষ্ঠায় আর ভাবসম্প্রসারণ লিখলে তিন পৃষ্ঠায় লিখবে। এখানে তুমি ভালো পারো বা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করো সেই প্রশ্নটি লিখবে। আর ভাবসম্প্রসারণ লিখলে সময় নেবে ১৫ মিনিট।
১১. একাদশ প্রশ্নটি হবে সংলাপ লেখা আর বিকল্প প্রশ্নটি হবে খুদে গল্প লেখার ওপর। নম্বর থাকবে ১০। তুমি সংলাপ লেখা প্রশ্নটি উত্তর করবে। এটি লেখা সহজ কিন্তু নম্বর বেশি। তুমি দুই থেকে তিন পৃষ্ঠার মধ্যে সংলাপ লেখা শেষ করবে। সময় নেবে ১৫ মিনিট।
১৩. শেষ প্রশ্নটি হবে প্রবন্ধ লেখার ওপর। নম্বর থাকবে ২০। পাঁচটি প্রবন্ধ থেকে একটি প্রবন্ধ লিখতে হবে। তুমি যে বিষয়ে সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য পাও, তাই নিয়ে প্রবন্ধ লিখবে। কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় পৃষ্ঠা প্রবন্ধ লিখতে হবে। সময় পাবে ৪৫ মিনিট।
লেখা শেষে রিভিশন
পরীক্ষা শেষ। খাতায় শেষ প্রশ্ন লেখা শেষ করে শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুসারে অবশ্যই ‘END’ বা সমাপ্ত লিখবে। তোমার খাতাটি অবশ্যই রিভিশন দেবে। রিভিশন দিলে খাতায় ছোট-বড় কোনো ভুল করলে তা বুঝতে পারবে, তা শুধরে নিতে পারবে। তাই খাতা রিভিশন দেওয়ার জন্য সময় রাখবে মাত্র ৫ মিনিট।
একনজরে ১৮০ মিনিট সময় পরিকল্পনা দেখে নাও—
প্রশ্নপত্র পড়া ও নির্বাচনে সময় রাখবে ৫ মিনিট
লেখা শেষে খাতা রিভিশন দিতে সময় রাখবে ৫ মিনিট
ব্যাকরণ অংশ—
১. প্রথম প্রশ্ন লিখতে সময় নেবে ১০ মিনিট
২. দ্বিতীয় প্রশ্ন লিখতে সময় নেবে ১০ মিনিট
৩. তৃতীয় প্রশ্ন লিখতে সময় নেবে ৬ মিনিট
৪. চতুর্থ প্রশ্ন লিখতে সময় নেবে ৭ মিনিট
৫. পঞ্চম প্রশ্ন লিখতে সময় নেবে ১০ মিনিট
৬. ষষ্ঠ প্রশ্ন লিখতে সময় নেবে ৭ মিনিট
নির্মিতি অংশ—
৭. সপ্তম প্রশ্ন লিখতে সময় নেবে ১০ মিনিট
৮. অষ্টম প্রশ্ন লিখতে সময় নেবে ২০ মিনিট
৯. নবম প্রশ্ন লিখতে সময় নেবে ১৫ মিনিট
১০. দশম প্রশ্ন লিখতে সময় নেবে ১৫ মিনিট
১১. একাদশ প্রশ্ন লিখতে সময় নেবে ১৫ মিনিট
১২. শেষ প্রশ্ন প্রবন্ধ লিখতে সময় নেবে ৪৫ মিনিট।
লেখক: মোস্তাফিজুর রহমান, প্রভাষক, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা
আরও পড়ুনএইচএসসির প্রবেশপত্রে থাকা ১৮ নিয়ম জানতে হবে২৪ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব য করণ অ শ প রবন ধ ল খ ১৫ ম ন ট ১০ ম ন ট সময় ন ব পর ক ষ সময় প র সময় র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারল না উল্লাপাড়ার তিন শিক্ষার্থী
স্কুলের ল্যাব সহকারীর ‘প্রতারণার’ কারণে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় চলতি বছরের এইচএসসির বিএমটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি তিন পরীক্ষার্থী। ঘটনাটি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া মার্চেন্টস পাইল্ট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবসা ব্যবস্থাপনা (বিএম) শাখার। বৃহস্পতিবার থেকে এই পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলো, উপজেলার পূর্ব দেলুয়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে কাওসার আলী, একই গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে মো. রাজু আহমেদ, হাবিবগঞ্জ গ্রামের শাহদৎ হোসেনের ছেলে সাকিবুল হাসান। তারা সবাই ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্স ট্রেডের শিক্ষার্থী। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এটি ছিল তাদের প্রথম বর্ষ সমাপনী পরীক্ষা।
এ তিন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, তারা যথাসময়ে উল্লাপাড়া মার্চেন্টস পাইল্ট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএম শাখায় ভর্তি হন। প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী তারা অভ্যন্তরীণ সকল পরীক্ষাও দিয়েছেন। প্রথম বর্ষ সমাপনীর বোর্ড পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য তারা ২৬০০ টাকা করে এই প্রতিষ্ঠানের ল্যাব সহকারী মো; রাজু আহমেদের কাছে জমা দেন। কিন্তু রাজু ফরম পূরণ না করে টাকাগুলো আত্মসাৎ করেছেন। বুধবার পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে গেলে তারা জানতে পারেন, তাদের ফরম পূরণ হয়নি। আসেনি প্রবেশপত্র।
প্রবেশপত্র কেন আসেনি জানতে চাইলে তাদের আশ্বস্ত করে রাজু আহমেদ বলেন, পরীক্ষার আগে যথাসময়ে তাদের প্রবেশপত্র সরবরাহ করা হবে। অবশেষে পরীক্ষার দিন গিয়ে ভুক্তভোগীরা জানতে পারেন, তাদের ফরম পূরণই হয়নি। রাজু আহমেদ পালাতক। অভিযোগকারীরা জানান, তারা এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মীর আব্দুল হান্নান ও স্কুলের সভাপতি উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাতের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে এই প্রতারণা এবং তাদের শিক্ষা জীবন থেকে একটি বছর ঝরে যাওয়ার জন্য রাজু আহমেদের শাস্তির দাবি জানান।
এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া মার্চেন্টস পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীর আব্দুল হান্নান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি তাঁকে আগে জানানো হয়নি। বর্তমানে রাজু আহমেদ পলাতক রয়েছেন। প্রধান শিক্ষক আরও জানান, তার ল্যাব সহকারী রাজু আহমেদ এর আগেও স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেবার কথা বলে অনেক অভিভাবকের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ভর্তি করে দিতে পারেননি। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় গত বছর তার বার্ষিক প্রবৃদ্ধি স্থগিত করা হয়। এ বছর আবারও দুর্নীতি ও প্রতারণার দায়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্কুলের সভাপতিকে অনুরোধ করেছেন।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি দ্রুত বিষয়টির তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছেন। প্রথমিকভাবে ল্যাব সহকারী রাজু আহমেদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ল্যাব সহকারী রাজু আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।