সম্প্রতি দেশের আটটি বিভাগের ৬২টি জেলার নির্বাচিত ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের জন্য শুরু হচ্ছে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হালনাগাদ ও নির্ভুল তথ্য চেয়ে জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
প্রকল্প বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাচনে যথেষ্ট বৈষম্য দেখা গেছে। কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে– কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা, রাজারহাট, ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারী। বাদ পড়া উপজেলা হচ্ছে উলিপুর ও ফুলবাড়ী। বৈষম্যের যে অভিযোগ উঠেছে তার যৌক্তিকতা দেখতে গেলে এ প্রকল্পের উদ্দেশ্যের সঙ্গে আরও কিছু বিষয় জানা দরকার।
স্কুল ফিডিং কর্মসূচি দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় যুগান্তকারী সামাজিক উদ্যোগ। এর মূল লক্ষ্য বিদ্যালয়ে শিশুদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত এবং তাদের শিক্ষায় মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করা। এ কর্মসূচির আওতায় নির্দিষ্ট স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হবে, যা বিশেষ করে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের শিশুদের অপুষ্টির ঝুঁকি কমাতে এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করবে। পাশাপাশি এটি অভিভাবকদের মধ্যে বিদ্যালয়ে সন্তান পাঠানোর আগ্রহও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রোগ্রামটি সাধারণত এমন এলাকায় বেশি দেখা যায়, যেখানে দারিদ্র্যের হার বেশি এবং শিক্ষার হার কম। সরকারি হিসাবে কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমারসহ ১৬টি নদনদীর অববাহিকায় রয়েছে সাড়ে চার শতাধিক চর। জেলার ১ হাজার ২৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে চরাঞ্চলে রয়েছে ১৬৯টি বিদ্যালয়। অর্থাৎ সাড়ে চার শতাধিক চরাঞ্চলে রয়েছে মাত্র ১৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষাবঞ্চিত শিশুর সংখ্যা ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার দুর্গম চরাঞ্চলে। কুড়িগ্রাম দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলের একটি। এসব বিবেচনায় কুড়িগ্রাম ফিডিং কর্মসূচিতে গুরুত্ব পেয়েছে।
উলিপুর উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৬৯টি, যার প্রায় ৫০ শতাংশ জেলা সদর থেকে অনেক দূরে, চরের দরিদ্র ও দুর্গম এলাকায়। এসব দরিদ্র এলাকার বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পুষ্টিকর খাবারের অভাবে নানা রোগে ভোগে। দারিদ্র্যের কারণে সদর উপজেলার চেয়ে এসব অঞ্চলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বেশি ও বিদ্যালয়ে যেতে অমনোযোগী।
সুতরাং যে কোনো বিভাগের জেলা সদরের চেয়ে নদীকবলিত এলাকার শিক্ষার্থীদের এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত করতে পারলে তা বেশি ফলপ্রসূ হবে। দুর্গম এলাকা বাদ দিয়ে জেলা সদরের শিক্ষার্থীদের এই সুবিধা দিলে সেটা নিঃসন্দেহে বিরাট বৈষম্য। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি প্রকল্পটি ফলপ্রসূ করতে চাইলে যাতে এ রকম দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পায়, সেটি নিশ্চিত করা হোক।
মো.
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উলিপুর, কুড়িগ্রাম
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প উপজ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিটিভিতে আবার শোনা যাবে, ‘আমরা নতুন, আমরা কুঁড়ি...’
প্রায় দুই দশকের দীর্ঘ বিরতির পর আবারও ফিরছে নতুন কুঁড়ি। গত মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজস্ব পেজে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। এই খবর শুনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই স্মৃতিকাতর হয়েছেন—কারও মনে পড়েছে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার স্মৃতি, কারও মনে ভেসে উঠেছে শৈশবের প্রিয় অনুষ্ঠানটির দৃশ্য। ফেসবুকে অনেকে ছবিও শেয়ার করেছেন।
১৯৬৬ সালে পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রথম প্রচারিত হয় ‘নতুন কুঁড়ি’। অনুষ্ঠানের নাম রাখা হয়েছিল কবি গোলাম মোস্তফার ‘কিশোর’ কবিতা থেকে। যার প্রথম ১৫ লাইন অনুষ্ঠানের সূচনাসংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে মোস্তফা মনোয়ারের প্রযোজনায় আবার শুরু হয় ‘নতুন কুঁড়ি’। সে সময় বিটিভির অন্যতম আলোচিত এই অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে শিশু-কিশোরদের স্বপ্নের মঞ্চ। নানা প্রান্ত থেকে উঠে আসা তরুণেরা গান, নাচ, অভিনয়, আবৃত্তি, গল্পবলা, কৌতুকসহ বিভিন্ন শাখায় নিজেদের প্রতিভা মেলে ধরার সুযোগ পান। ২০০৫ সাল পর্যন্ত চলে এ অনুষ্ঠান। পরে নানা কারণে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয় বিটিভি। ২০২০ সালে অনুষ্ঠানটি আবার শুরু করার খবর শোনা গিয়েছিল। কিন্তু পরে বলা হয়, কোভিড মহামারির কারণে সেটা আর সম্ভব হয়নি।
তিন দশকে নতুন অনেক তারকার জন্ম দিয়েছে নতুন কুঁড়ি। অনেকে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, নাট্যাঙ্গন ও সংগীতজগতে নিজস্ব অবস্থান গড়ে তুলেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন তারানা হালিম, রুমানা রশিদ ঈশিতা, তারিন জাহান, মেহের আফরোজ শাওন, নুসরাত ইমরোজ তিশাসহ আরও অনেকে। এ তালিকায় আছেন সামিনা চৌধুরীসহ অনেক জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীও।