একটি নগরের প্রাণপ্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসে কীভাবে নগর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার সঙ্গে নগরের ভবনমালিকেরা মিলেমিশে ধ্বংস করতে পারেন, তার একটা ধ্রুপদি দৃষ্টান্ত হতে পারে ঢাকা। তা না হলে কীভাবে ঢাকার ৫৯ শতাংশ বাড়ির পয়োবর্জ্য জলাশয়ে ফেলা হতে পারে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকেতনের মতো অভিজাত ও অপেক্ষাকৃত আধুনিক আবাসিক এলাকায় বাড়িগুলোর ক্ষেত্রেও এটা ঘটছে। ফলে শহরের অন্য জায়গার পরিস্থিতি কী, সেটা সহজেই অনুমেয়।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের সহায়তায় ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৩-এর আওতাধীন ৮টি ওয়ার্ডে প্রায় আড়াই বছর ধরে (জানুয়ারি ২০২৩—মে ২০২৫) পরিচালিত জরিপে যে ভয়াবহ চিত্রটা পাওয়া গেছে, সেটি এককথায় উদ্বেগজনক। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, এ প্রকল্পের আওতায় ২৫ হাজার ৩৮০টি বাড়িতে জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে ১০ হাজার ৪২৭টি বাড়ি ছিল নির্মাণাধীন কিংবা বসবাস শুরু হয়নি। বাকি বাড়ির মধ্যে ৮ হাজার ৭৮৫টির ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, পয়োবর্জ্য সরাসরি নালা কিংবা জলাধারে যাচ্ছে। সেগুলো খাল ও নদীতে গিয়ে মিশছে।

শুধু নগরের প্রকৃতি-পরিবেশ নয়, এটি ঢাকার দুই সিটির সোয়া দুই কোটির বেশি নাগরিকের জনস্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি। মলমূত্রের মতো মানববর্জ্য নগরের জলাশয়ে সরাসরি গিয়ে মিশছে—এমন বাস্তবতা কল্পনা করাটাও একুশ শতকে এসে কোনো মানুষের পক্ষে অকল্পনীয়। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে ঢাকায় সবার সামনে এটাই ঘটে চলেছে। অধিকাংশ বাড়ির পয়োবর্জ্যের সংযোগ নালার সঙ্গে দেওয়া হয়েছে। যেসব বাড়িতে সেপটিক ট্যাংক আছে, সেসব বাড়ির বর্জ্যও নালায় ফেলা হচ্ছে। মাত্র ৩০ শতাংশ বাড়ির সেপটিক ট্যাংক কার্যকর আছে।

অথচ ইমারত বিধিমালা, বিল্ডিং কোড ও স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী ঢাকায় ভবন নির্মাণ করতে হলে সেখানে অবশ্যই সেপটিক ট্যাংক স্থাপন করে পয়োবর্জ্য পরিশোধন করতে হবে। পয়োবর্জ্য নালা, লেক ও নদীতে সরাসরি ফেলার কোনো সুযোগ নেই। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর গাফিলতি ও তদারকি না থাকার সুযোগে ভবনমালিকেরা এ অপরাধ নির্বিচার করে যাচ্ছেন।

ঢাকার নদী ও খালগুলো যে মৃতপ্রায়, তার প্রধান একটি কারণ অপরিশোধিত পয়োবর্জ্য। অথচ গ্রীষ্মকালে ঢাকা তাপীয় দ্বীপ হয়ে ওঠা, বছরজুড়ে বায়ুর নিম্নমানে বিশ্বে তলানিতে থাকার অন্যতম কারণ, এ শহর ঘিরে একসময় যেসব খাল ও জলাশয় ছিল, সেগুলো এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর ফলে ঢাকাকে ঘিরে থাকা নদীগুলোও মৃতপ্রায়। এ রকম পরিবেশ অসুখ–বিসুখের উর্বর ক্ষেত্রই হতে পারে।

যেকোনো উপায়ে হোক, ঢাকার পয়োবর্জ্য সরাসরি জলাশয়ে ফেলার খাসলত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ঢাকার দুই সিটি, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভবনমালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে তারা আর ঘুমিয়ে থাকতে পারে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

রায়ের পর পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত: রিজওয়ানা হাসান

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায় ঘিরে দেশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকার প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আজ সোমবার সকালে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে ‘দ্য সোল অব জুট’ নামে এক প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন উপদেষ্টা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ