ভবনমালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন
Published: 28th, June 2025 GMT
একটি নগরের প্রাণপ্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসে কীভাবে নগর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার সঙ্গে নগরের ভবনমালিকেরা মিলেমিশে ধ্বংস করতে পারেন, তার একটা ধ্রুপদি দৃষ্টান্ত হতে পারে ঢাকা। তা না হলে কীভাবে ঢাকার ৫৯ শতাংশ বাড়ির পয়োবর্জ্য জলাশয়ে ফেলা হতে পারে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকেতনের মতো অভিজাত ও অপেক্ষাকৃত আধুনিক আবাসিক এলাকায় বাড়িগুলোর ক্ষেত্রেও এটা ঘটছে। ফলে শহরের অন্য জায়গার পরিস্থিতি কী, সেটা সহজেই অনুমেয়।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের সহায়তায় ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৩-এর আওতাধীন ৮টি ওয়ার্ডে প্রায় আড়াই বছর ধরে (জানুয়ারি ২০২৩—মে ২০২৫) পরিচালিত জরিপে যে ভয়াবহ চিত্রটা পাওয়া গেছে, সেটি এককথায় উদ্বেগজনক। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, এ প্রকল্পের আওতায় ২৫ হাজার ৩৮০টি বাড়িতে জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে ১০ হাজার ৪২৭টি বাড়ি ছিল নির্মাণাধীন কিংবা বসবাস শুরু হয়নি। বাকি বাড়ির মধ্যে ৮ হাজার ৭৮৫টির ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, পয়োবর্জ্য সরাসরি নালা কিংবা জলাধারে যাচ্ছে। সেগুলো খাল ও নদীতে গিয়ে মিশছে।
শুধু নগরের প্রকৃতি-পরিবেশ নয়, এটি ঢাকার দুই সিটির সোয়া দুই কোটির বেশি নাগরিকের জনস্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি। মলমূত্রের মতো মানববর্জ্য নগরের জলাশয়ে সরাসরি গিয়ে মিশছে—এমন বাস্তবতা কল্পনা করাটাও একুশ শতকে এসে কোনো মানুষের পক্ষে অকল্পনীয়। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে ঢাকায় সবার সামনে এটাই ঘটে চলেছে। অধিকাংশ বাড়ির পয়োবর্জ্যের সংযোগ নালার সঙ্গে দেওয়া হয়েছে। যেসব বাড়িতে সেপটিক ট্যাংক আছে, সেসব বাড়ির বর্জ্যও নালায় ফেলা হচ্ছে। মাত্র ৩০ শতাংশ বাড়ির সেপটিক ট্যাংক কার্যকর আছে।
অথচ ইমারত বিধিমালা, বিল্ডিং কোড ও স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী ঢাকায় ভবন নির্মাণ করতে হলে সেখানে অবশ্যই সেপটিক ট্যাংক স্থাপন করে পয়োবর্জ্য পরিশোধন করতে হবে। পয়োবর্জ্য নালা, লেক ও নদীতে সরাসরি ফেলার কোনো সুযোগ নেই। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর গাফিলতি ও তদারকি না থাকার সুযোগে ভবনমালিকেরা এ অপরাধ নির্বিচার করে যাচ্ছেন।
ঢাকার নদী ও খালগুলো যে মৃতপ্রায়, তার প্রধান একটি কারণ অপরিশোধিত পয়োবর্জ্য। অথচ গ্রীষ্মকালে ঢাকা তাপীয় দ্বীপ হয়ে ওঠা, বছরজুড়ে বায়ুর নিম্নমানে বিশ্বে তলানিতে থাকার অন্যতম কারণ, এ শহর ঘিরে একসময় যেসব খাল ও জলাশয় ছিল, সেগুলো এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর ফলে ঢাকাকে ঘিরে থাকা নদীগুলোও মৃতপ্রায়। এ রকম পরিবেশ অসুখ–বিসুখের উর্বর ক্ষেত্রই হতে পারে।
যেকোনো উপায়ে হোক, ঢাকার পয়োবর্জ্য সরাসরি জলাশয়ে ফেলার খাসলত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ঢাকার দুই সিটি, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভবনমালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে তারা আর ঘুমিয়ে থাকতে পারে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্লোটিলা বহরের ম্যারিনেট গাজা জলসীমা থেকে কত দূরে
দ্য ম্যারিনেট। ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহরের নৌযান। নৌযানটি এখনো ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। আজ শুক্রবার আল-জাজিরার অনলাইনে এই তথ্য জানানো হয়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি বলছে, একমাত্র দ্য ম্যারিনেটকেই এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। বহরের বাকি নৌযানগুলোকে তারা ইতিমধ্যে আটক করেছে।
দ্য ম্যারিনেট পোল্যান্ডের পতাকাবাহী নৌযান। তবে নৌযানটির মালিকের বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য কোনো নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়, দেখুন লাইভ ট্র্যাকারেনৌযানটিতে ছয়জন আরোহী আছেন। এই আরোহীদের মধ্যে একজন তুরস্কের অধিকারকর্মী সিনান আকিলতু। তিনি আজ নৌযানটি থেকে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা এখন উচ্চ ঝুঁকির এলাকায় প্রবেশ করেছি। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা দুটি মহৎ পরিণতির যেকোনো একটির দিকে অগ্রসর হচ্ছি।’
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকারের তথ্যের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, আজ ভোরের দিকে ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলছিল ম্যারিনেট। এ সময় সূর্যোদয় হচ্ছিল।
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, ভোর ৪টার দিকে ম্যারিনেটের গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৩ দশমিক ৭৮ নট। (ঘণ্টায় প্রায় ৭ কিলোমিটার)। নৌযানটি গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে প্রায় ৪৩ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৮০ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছিল।
আরও পড়ুনগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজে জলকামান ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী১৩ ঘণ্টা আগেগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি বাদে সব নৌযান আটক করেছে ইসরায়েলইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই ম্যারিনেটকে সতর্ক করে দিয়েছে। তারা বলেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ ও অবরোধ ভাঙার যেকোনো চেষ্টা প্রতিহত করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে নৌযানটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। তবে তা ঠিক করা হয়েছে। নৌযানটি গাজা অভিমুখে চলছে।
ফ্লোটিলা আয়োজকেরা জানিয়েছেন, বহরের ৪২টি নৌযানকে অবৈধভাবে আটকানো হয়েছে। আরোহীদের আটক হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও ম্যারিনেট পিছু হটছে না।
আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনইসরায়েল ‘জলদস্যুর কাজ’ করেছে: এরদোয়ান১৪ ঘণ্টা আগেগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বলেছে, ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়, ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।
ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিংকের মাধ্যমে সংযুক্ত আছে বলে জানিয়েছে ফ্লোটিলা আয়োজকেরা।
আরও পড়ুনসুমুদ ফ্লোটিলার আটক অধিকারকর্মীরা ২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলে পৌঁছতে পারেন২০ ঘণ্টা আগে