দেশে যে কোনো উৎসব মানেই নাটকে বৈচিত্র্যময় গল্পের উপস্থিতি। সে গল্পে থাকে প্রেম, পারিবারিক টানাপোড়েন, সম্পর্কের ভাঙাগড়া ও সামাজিক নানা বৈচিত্র‍্যের চিত্র। তবে গল্পে বৈচিত্র্য থাকলেও অধিকাংশ নাটকে প্রেমের গল্প যেন সবসময়ই থাকে কেন্দ্রবিন্দুতে। উৎসবের বাইরেও এই প্রেমের গল্পের প্রাধান্যই বেশি লক্ষণীয়; যা ছিল অতীতে এবং বর্তমানেও। এই সময়ে এসে তা যেন বেড়েছে বহুগুণ। কয়েক বছর ধরে উৎসবে দর্শকপ্রিয়তা আর ট্রেন্ডিং তালিকার দৌড়ে এগিয়ে থাকা বেশির ভাগ নাটকই ভালোবাসার গল্পকে কেন্দ্র করে নির্মিত। কখনও প্রেমের চঞ্চলতা, কখনও সম্পর্কের দ্বিধা, কখনও বা পারিবারিক টানাপোড়েনে জমে উঠেছে নাটকের আবহ।

গেল ঈদুল আজহায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভি’র ব্যানারে এবার প্রকাশ হয়েছে এক ডজন ঈদ নাটক। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে জোভান অভিনীত ‘আশিকি’। ঈদের রাতেই ইউটিউবে মুক্তি পাওয়া এ নাটকটি এরইমধ্যে পৌঁছে গেছে ৫০ লাখেরও অধিক ভিউয়ারের ঘরে। নাটকটিতে দেখা যায়, আশিক নামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের গায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে শহরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। প্রেমে পড়ে ধনীর দুলালী জসের সঙ্গে। গানের প্রতি ভালোবাসা, সমাজের টানাপোড়েন আর এক অসাধারণ প্রেমকাহিনির গল্পে নাটকটি জয় করে নিচ্ছে দর্শকহৃদয়। নির্মাতা ইমরোজ শাওনের কথায়, ‘আশিকির গল্পে আছে একজন শিল্পীর স্ট্রাগল, আবার এক অনন্য ভালোবাসার ভাষ্য।’

একই ব্যানারের আরও একটি নাটক ‘তবুও মন’ নিয়েও বেশ আলোচনা চলছে। তমাল আর রায়ার গল্প এটি। তমাল চাকরি করে থাইল্যান্ডে, রায়া পড়ে রাজশাহীতে। দু’জনের স্বভাব দুই মেরুতে হলেও তাদের সম্পর্ক গড়ায় এক মিষ্টি গন্তব্যে। ফারহান আহমেদ জোভান ও তানজিম সাইয়ারা তটিনী অভিনীত এই নাটকে প্রেম ও পরিবারের টানাপোড়েনকে একসঙ্গে তুলে ধরেছেন নির্মাতা আবুল খায়ের চাঁদ।

এদিকে দীর্ঘদিন পর নাটকে ফিরেছেন ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’খ্যাত নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। তাঁর নির্মিত ‘চুপকথা’ নাটকে জুটি হয়েছেন তৌসিফ মাহবুব ও নাজনীন নীহা। প্রেমের গল্প হলেও এতে রয়েছে প্রকৃতি ও সমাজ নিয়ে নানা প্রশ্ন। শ্রীমঙ্গল, জাফলং, গাজীপুর হয়ে ঢাকায় শুটিং হওয়া এই নাটকটি যেন একপ্রকার সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছে। মহসীন মেহেদীর লেখা গল্পে উজ্জ্বল নিজের মতো করে সংলাপ ও চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন। নাটকটির বিশেষত্ব– নায়ক-নায়িকার প্রথম দেখা কুমিরের খামারে! তবে নির্মাতা মনে করেন, এটি শুধু প্রেমের গল্প নয়। প্রেম ও প্রকৃতির গল্প বলা যেতে পারে। উজ্জ্বলের ভাষায়, ‘গল্পটা প্রেমের। তার সঙ্গে সমাজের নানাবিধ প্রসঙ্গ এসেছে। আমার যে কোনো কাজে যেমনটা হয় আর কী। নির্মাণের সময় সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি বরাবরই মাথায় রাখি। এবারও তাই হলো। তবে এবার নাটক বানাতে গিয়ে মোটামুটি একটি সিনেমা বানিয়ে ফেলেছি সম্ভবত।’ 

তৌসিফ-তটিনী জুটি হয়ে এসেছেন আরেক রোমান্টিক নাটকে ‘মন দিওয়ানা’। নির্মাতা হাসিব হোসাইন রাখির এই নাটকে দেখা যায়, রুসু নামের এক বাউন্ডুলে ছেলের সঙ্গে কলেজ পাস করা মারজানের হঠাৎ পরিচয় ও র‍্যাগিং থেকে গড়ে ওঠা সম্পর্কের গল্প। একদিকে রোমান্স, অন্যদিকে বন্ধুত্বের সহজ গল্পে নাটকটি পেয়েছে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা।

অপূর্ব ও তাসনিয়া ফারিণ অভিনীত নাটক ‘ভুল থেকে ফুল’। দুই প্রজন্মের মুগ্ধতা ছড়ানো দুই তারকার রসায়ন দেখা গেছে এই নাটকে। নাটকটির মাধ্যমে ভিন্ন রকম এক আবেগঘন অনুভূতির জগতে দর্শককে নিয়ে গেছেন নির্মাতা জাকারিয়া সৌখিন। নাটকটি প্রকাশ করেছে ইউটিউব চ্যানেল ধূপছায়া। গল্পটি প্রেমের হলেও তা আটপৌরে রোমান্সের পথে হাঁটে না। বরং এখানে প্রেম এসেছে ভুলের পথে, উপলব্ধির ধাপে, সম্পর্কের নীরব কান্নায়। নির্মাতা জাকারিয়া সৌখিন বলেন, ‘গল্পটির প্রতিটি বাঁকে রয়েছে মায়া। আপনি চাইলেও ইমোশনাল না হয়ে থাকতে পারবেন না। নাটকটি শেষ হলে মনে হবে, ভুলের পরেও ভালোবাসা রয়ে যায়। কখনও কখনও ভুলই আমাদের সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায়।’

ঈদের এই নাটকগুলোর বাইরে সাম্প্রতিক সময়ের সফল রোমান্টিক নাটকের তালিকাতেও ভালোবাসার গল্পই শীর্ষে। যেমন— নিলয়-হিমির ‘গুডবয় ব্যাড লাক’, ‘কাছের মানুষ’, তৌসিফ-কেয়া পায়েলের ‘ভুল মানুষ’, জোভান-তটিনীর ‘মন বদল’, অপূর্ব-সাদিয়ার ‘মেঘ বৃষ্টি রোদ্দুর’, জোভান-কেয়ার ‘বন্ধুত্ব নাকি প্রেম’, মুশফিক-মিম মানতাশার ‘নাইস টু মিট ইউ’, আরশ খান-সুনেহরার ‘পাগল প্রেম’, জোভান-নাজনীন নীহার ‘মিথ্যে প্রেমের গল্প’ এবং অপূর্ব-তটিনীর ‘চিঠি দিও’ ও ‘ফিরে আসা।’

সব মিলিয়ে এবারও প্রমাণ হলো, বাংলা নাটকের প্রাণ এখনও ভালোবাসার গল্পেই। চরিত্রের টানাপোড়েন, আবেগের ছায়া, মায়ার মোড়ক–সবকিছু মিলিয়ে প্রেমই রয়ে গেল নাটকের মূল চালিকাশক্তি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন টক ভ ল ব স র গল প ভ ল ব স র গল প প র ম র গল প ন টক র গল প র ই ন টক ন টকট

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরের লৌহিয়া খালটি দখল উৎসবে চলছে

বন্দরের ঐতিহ্যবাহী লৌহিয়া খালটি দখল উৎসবে মেতে উঠেছে চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। যে খাল দিয়ে এক সময় শীতলক্ষা-বহ্মপুত্র নদীতে সংযোগ ছিল।

সেই ঐতিহ্যবাহী খালটি অবৈধভাবে দখল করে পাঁকা স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস, ব্যাটারি ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেছে ওই সকল ভূমিদস্যুরা।

খালটি দখল হয়ে যাওয়ার কারনে পয়নিষ্কাশনসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয়রা। বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে উল্লেখিত খাল দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা ।

এলাকাবাসী ও বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা গেছে,  বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও  সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম এ রশিদ ও সানাউল্লাহ সানু এবং বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিনের মদদপুষ্ট হয়ে আদর্শ বিদ্যানিকেতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে গিয়ে খাল দখল করে রাস্তা বানিয়েছে।  

তেমনি ভাবে গার্মেন্টস, ব্যাটারি ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে  পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া  খালটি ভরাট করার কারনে  বন্দর ইউনিয়নের ৯ নং ওর্য়াডের কদমতলীসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ড্রেজার দিয়ে ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমি ভরাট করতে গিয়ে সরকারি খাল দখল করে নিয়েছে। দেখার যেন কেউ নেই।

বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত হোসেন সৈকত জানান,  এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে  একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। 

এ ব্যাপারে বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রভাবশালী মহল ও ভূমিদস্যুদের কর্তৃক দখলকৃত খালটি উদ্ধার করে পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা  করেছে ভূক্তভোগী এলাকাবাসী।  
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে দুর্গোৎসব: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
  • দেবী দুর্গার বিদায়ের সুরে রাজশাহীতে প্রতিমা বিসর্জন
  • ঢাকঢোল বাজিয়ে চট্টগ্রামে প্রতিমা বিসর্জন, বৈরী আবহাওয়ায়ও মানুষের ঢল
  • অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির জয় হোক: হাওলাদার
  • দর্পণ বিসর্জন: মণ্ডপে মণ্ডপে বিদায়ের সুর
  • উৎসবের আনন্দে ভরা পূজার মেলা
  • বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই পর্যটকের ঢল, বিকেলে প্রতিমা বিসর্জন উৎসব
  • বিজয়া দশমীতে আজ শেষ হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব
  • ড. ইউনূসকে অসুর রূপে উপস্থাপন নিন্দনীয়: উপদেষ্টা 
  • বন্দরের লৌহিয়া খালটি দখল উৎসবে চলছে