শিশু শিক্ষার্থীকে বস্তায় ভরে রোদে ফেলে রাখলেন মাদ্রাসা শিক্ষক
Published: 28th, June 2025 GMT
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ১০ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীকে চটের বস্তায় ভরে রেলিংবিহীন ছাদে ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার ভয়ে মাদ্রাসার ফটক তালাবদ্ধ করে রাখা হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তীব্র রোদের মধ্যে শিশুকে বস্তায় আটকে রাখার ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগী আবু বকর সিদ্দিকী (১০) কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের ফুলদী দাওদাপাড়া গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে। সে স্থানীয় ফুলদী নূরে মদিনা হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থী।
শনিবার (২৮ জুন) সকালে ওই শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.
অভিযুক্ত মুফতি জাকারিয়া (২৯) ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক। তিনি একই উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের সাওরাইদ এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সকালে কোনো এক কারণে আবু বকরকে পেটান শিক্ষক জাকারিয়া। আবু বকর কান্না শুরু করলে এবং পরিবারকে জানানোর হুমকি দিলে শিক্ষক আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে একটি চটের বস্তায় শিশুটির শরীর আটকে মাথা বাইরে রেখে দোতলা মাদ্রাসা ভবনের রেলিংবিহীন ছাদে ফেলে রাখা হয়। এ সময় তাকে যাতে কেউ খুঁজে না পান, এজন্য মাদ্রাসার ফটক বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করা হয়।
তারা জানান, বন্দি অবস্থায় বস্তায় প্রস্রাব ও পায়খানা করে ফেলে আবু বকর। দীর্ঘ সময় পর এক সহপাঠী গোপনে জানালা দিয়ে বের হয়ে বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। খবর পেয়ে ছুটে আসেন পরিবারের সদস্যরা। এরপর আশপাশের মানুষ জড়ো হন এবং পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত শিক্ষক আগেও শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
শিশুটির বাবা মোশারফ হোসেন বলেছেন, “এটা কোনো শিক্ষকের কাজ হতে পারে? আমার ছেলে ছোট, সে কোনো ভুল করলেও এভাবে নির্যাতনের অধিকার কারো নেই। আমি থানায় অভিযোগ করেছি, মামলা করব। আমি আমার সন্তানের ওপর নির্যাতনের বিচার চাই।”
কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আলাউদ্দিন বলেছেন, “আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। অভিযুক্ত শিক্ষক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে তার দাবি, শিশুটিকে পুরোপুরি বস্তার মধ্যে না রেখে মাথা বাইরে রাখা হয়েছিল, যেন সে পালাতে না পারে।”
তিনি আরো জানান, অভিযুক্ত শিক্ষককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
ঢাকা/রফিক সরকার/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র বস ত য়
এছাড়াও পড়ুন:
অনেক সফল উদ্যোক্তার গল্পে জড়িয়ে আছে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের নাম
সফল উদ্যোক্তা হতে গেলে শুধু পুঁজি বা পরিকল্পনা নয়, প্রয়োজন হয় অদম্য সাহস, দূরদৃষ্টি আর কঠোর পরিশ্রমের। প্রতিকূল সময়েও সাহসের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি থাকতে হয়। সফল উদ্যোক্তার এই সংজ্ঞা যদি খুঁজতে হয়, তাহলে নারায়ণগঞ্জের শফিকুল ইসলাম সেলিম হতে পারেন উজ্জ্বল উদাহরণ। নিষ্ঠা, দূরদৃষ্টি ও অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন ইস্টার্ন কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ। এই প্রতিষ্ঠান আজ দেশের বৈদ্যুতিক তারশিল্পের অন্যতম নির্ভরযোগ্য নাম।
শফিকুল ইসলামের পথচলাটা শুরু হয়েছিল অনেকটা শূন্য থেকে। সময়টা ১৯৯৪ সাল। পকেটে ছিল মাত্র দুই হাজার টাকা। সীমিত মূলধন ও স্বল্প অভিজ্ঞতা নিয়েই রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ভাড়া নেন একটি ছোট কারখানা। শুরু করেন বৈদ্যুতিক তার তৈরির কাজ। ওই সময় তিনি মাত্র ১৬ ধরনের বৈদ্যুতিক তার উৎপাদন করতেন। ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০২১ সালে শফিকুল ইসলাম ইস্টার্ন কেবল ইন্ডাস্ট্রি নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। সেই থেকে তাঁর ছোট ছোট প্রতিটি পদক্ষেপে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক আর্থিক পরামর্শক ও সহায়ক হিসেবে কাজ করে চলেছে।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের পাগলায় প্রায় ২০ কাঠা জমির ওপর গড়ে উঠেছে ইস্টার্ন কেবল ইন্ডাস্ট্রির আধুনিক কারখানা। সেখানে এক কোটি টাকার বেশি মূল্যের আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন বছরে ৩০০ ধরনের বৈদ্যুতিক তার উৎপাদন করে এবং প্রায় ১০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে পরিবেশগত নীতিমালা বাস্তবায়ন অনেক সময় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রেও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও দক্ষ ভূমিকা রেখেছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সহায়তায় ইস্টার্ন কেবল ইএসডিডি (এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডিউ ডিলিজেন্স) রেটিং ‘লো’ বা নিম্ন রাখতে সক্ষম হয়েছে। ইস্টার্ন কেবল ইন্ডাস্ট্রি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই অর্থায়ন নীতিমালার আওতায় সাসটেইনেবল এমএসএমই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান।
কেরানীগঞ্জের শুঁটকিরটেক গ্রামের তরুণ মো. শামীম হোসেনের ব্যবসা শুরু হয়েছিল বিরিয়ানি বা তেহারি বিক্রির মাধ্যমে। সেখানে ওয়ান টাইমন প্লেটের প্রচুর চাহিদা ছিল। এতে খরচ যেমন বেশি হতো প্রচুর, তেমনি মান নিয়েও ছিল অসন্তোষ। তাই ২০০৯ সালে ছোট পরিসরে ওয়ানটাইম প্লেট, বাটি, কাপ, গ্লাস ও বক্স তৈরির কাজ শুরু করেন শামীম। সময়ের সঙ্গে উৎপাদনসক্ষমতা বাড়াতে দরকার হয় আধুনিক যন্ত্রপাতি ও পেশাদার ব্যবস্থাপনা, যেখানে পাশে দাঁড়ায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। সহজ শর্তে এসএমই ঋণ নিয়ে তাঁর উদ্যোগ পায় নতুন গতি ও আকার। সেই ছোট উদ্যোগই পরবর্তী সময় রূপ নেয় ‘ডেরিক বাংলাদেশ’ নামে, যা এখন পরিবেশবান্ধব ওয়ানটাইম কিচেনসামগ্রী তৈরির একটি পরিচিত ব্র্যান্ড।
আবার ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী গ্রামের সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান মো. জুয়েল রানার কথা ধরা যাক। জুয়েল রানা মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে অন্যের মতো চাকরি বা বিদেশে পাড়ি না দিয়ে ঠিক করলেন নিজেই কিছু করবেন। পৈতৃক জমি আর একটি পুরোনো গরুর খামারকে কেন্দ্র করে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ নিয়ে ধীরে ধীরে তিনি গড়ে তোলেন ‘গ্রাম বাংলা অ্যাগ্রো ফার্ম’।
প্রথমে পাঁচ থেকে ছয়টি দেশি গরু দিয়ে ব্যবসা শুরু হলেও বর্তমানে বছরে ২০০ গরু বিক্রি করছেন তিনি। এ ছাড়া তাঁর খামারে রয়েছে ৬০টির বেশি দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভি। ডেইরি খাতের সফলতার পর তিনি পোলট্রি ও মৎস্য খাতের ব্যবসাতেও মনোযোগী হন। বর্তমানে তাঁর খামারে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মুরগির ডিম উৎপাদিত হয়। এ ছাড়া প্রায় ১০ একর জায়গায় মাছ চাষ করছেন তিনি। তাতে সব মিলিয়ে বছরে তাঁর আয় হয় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা।
শফিকুল ইসলামের ইস্টার্ন কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ কিংবা জুয়েল রানার গ্রাম বাংলা এগ্রো ফার্মের মতো এ রকম অসংখ্য সফল ও টেকসই উদ্যোগের গল্পে জড়িয়ে আছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নাম। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এভাবেই বিভিন্ন উদ্যোক্তার স্বপ্নের সারথি হয়ে কাজ করে চলেছে। হাজারো উদ্যোক্তার স্বপ্ন যখন পথে হাঁটতে শেখে, তখন পাশে থাকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নির্ভরতার হাত। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক শুধু ঋণ দেয় না, এই ব্যাংক স্বপ্নে বিনিয়োগ করে।
ফরহাদ আহমেদ খান
সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব এসএমই বিবিডি, ডাচ্–বাংলা ব্যাংক