বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে প্রায় ২৪৯ টন প্লাস্টিক বর্জ্য। প্লাস্টিক খাল-নালা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে পরিবেশ দূষণ, জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং শহরের জলাবদ্ধতা প্রকট করে তোলে। এই পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় ২০২২ সালের জুন মাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি), ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) ও উন্নয়ন সংস্থা ইপসার মধ্যে একটি অংশীদারিত্ব চালু হয়। 
ইউনিলিভার বাংলাদেশ জানিয়েছে, এ উদ্যোগের আওতায় গত এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরী থেকে ২৪ হাজার টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যা শহরের প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রায় ১০ শতাংশ। এর মাধ্যমে তিন হাজারের বেশি বর্জ্যকর্মীকে নিরাপদভাবে বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ৮২৭ জন বর্জ্য সংগ্রাহক ও ভাঙারিওয়ালাকে আনা হয়েছে গ্রুপ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আওতায়, যেখানে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর জন্য সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত অন্যান্য খরচের নিশ্চয়তা রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে ১৫ হাজারের বেশি পরিবার এবং প্রায় সাত হাজার স্কুল শিক্ষার্থীকে উৎসস্থলে বর্জ্য পৃথকীকরণ ও পুনর্ব্যবহার বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে। 

সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, প্লাস্টিক বিক্রি অনেক পরিবারের জন্য অতিরিক্ত আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট ৭৫ শতাংশ পরিবার তাদের আয়ে ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা জানিয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে সংগ্রহ প্লাস্টিকের পরিমাণ ও কার্যক্রম ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। 
জরিপে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রায় ৯৯ শতাংশ বর্জ্যকর্মী তাদের মাসিক আয়ে উন্নতির কথা জানিয়েছেন। ৯১ শতাংশ এখন নিয়মিতভাবে সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করছে। নিয়মিত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারের ফলে অনেকেই জানিয়েছেন, শারীরিক অসুস্থতা ও দুর্ঘটনার হার আগের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ৮৮ শতাংশ পরিবার এবং ভাঙারিওয়ালা এখন বিকাশ, নগদের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন। ৯৫ শতাংশ পরিবার এখন প্লাস্টিক বিক্রয়ে অংশ নিচ্ছে, যাদের এক-তৃতীয়াংশ এই উদ্যোগ চালুর পর যুক্ত হয়েছেন। 

ইউনিলিভার বাংলাদেশ মনে করে, অনানুষ্ঠানিক প্লাস্টিক সংগ্রাহকরাই টেকসই পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। তাদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও জীবিকার নিশ্চয়তার মাধ্যমে এ উদ্যোগ একটি প্রতিফলনযোগ্য মডেল দাঁড় করিয়েছে, যেখানে করপোরেট দায়িত্ববোধ, স্থানীয় সরকার ও সমাজভিত্তিক সংগঠন মিলিতভাবে পরিবেশবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরি করেছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র পর ব র বর জ য স গ রহ

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন নিয়ে নতুন করে সংশয়ে বিএনপি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্ধারণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল লন্ডন বৈঠকের পর সেটা কেটেছে বলে মনে করা হচ্ছিল; কিন্তু দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই নতুন করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংশয় তৈরি হয়েছে বিএনপিতে। বিশেষ করে ভোটের বিষয়ে সরকারের দিক থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট কোনো বার্তা না দেওয়ায় এ নিয়ে জল্পনাকল্পনা বাড়ছে।

বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, লন্ডন বৈঠকের কোনো প্রতিফলন নির্বাচনের কমিশনের কার্যক্রম তারা দেখছেন না। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনসহ কিছু বিষয় নতুন করে সামনে আনার চেষ্টা হচ্ছে। এটাকে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার উপাদান বলে মনে করছে বিএনপি।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তাঁরা দীর্ঘ সময় একান্তে কথা বলেন। বিএনপির নীতি–নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা ধারণা করেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা বৃহস্পতিবার যমুনায় এই বৈঠকে সিইসিকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর কথা বলবেন; কিন্তু সরকারের দিক থেকে এই বৈঠককে শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ বলা হয়েছে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনও কোনো বক্তব্য দেয়নি। ফলে বিএনপি মনে করছে, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের বিষয়ে সিইসিকে স্পষ্ট কোনো বার্তা দেননি। যার ফলে প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির সাক্ষাতে কী আলাপ হয়েছে, তা পরিষ্কার করার আহ্বান জানায় বিএনপি। এ বিষয়ে গত শুক্রবার বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যদি উভয় পক্ষ থেকে জাতির সামনে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়, তাহলে আমরা আশ্বস্ত হই।’

আরও পড়ুননির্বাচন বিলম্বিত বা না হওয়ার জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাওয়া হচ্ছে: সালাহউদ্দিন আহমদ৯ ঘণ্টা আগেযারা স্থানীয় নির্বাচন ও আনুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবি তুলছে, তাদের একটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে; হয় নির্বাচন বিলম্বিত করা অথবা নির্বাচন না হওয়া।সালাহউদ্দিন আহমদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবারের ওই সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন বিষয়ে কথোপকথনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংস্কারপ্রক্রিয়া কতটা এগিয়েছে এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে সিইসির কাছে জানতে চেয়েছেন। তবে কবে নাগাদ নির্বাচন আয়োজন করা হতে পারে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো আলোচনার কথা জানা যায়নি।

১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও (ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে বলে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। সে ক্ষেত্রে ওই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, তাঁদের কাছে এখন পর্যন্ত সরকারের দিক থেকে লন্ডন বৈঠকের ওই ঘোষণার কোনো প্রতিফলন নেই; বরং রাজনীতিতে নতুন নতুন কিছু ইস্যু তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, যা জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার উপাদান বলে মনে করছেন। এর মধ্যে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা এবং আগামী নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) পদ্ধতি প্রবর্তনের দাবি জোরদার করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনপ্রধান উপদেষ্টা-সিইসির কী আলাপ হলো, পরিষ্কার করার আহ্বান সালাহউদ্দিনের২৭ জুন ২০২৫প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ