নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সহায়তা নেওয়ার চিন্তা করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে নৌ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে আসেন। এ সময় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে সভায় বিষয়টি নিয়ে গতকাল আলোচনাও হয়। সেখানে জানানো হয়, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে এ ব্যাপারে শিগগির সিদ্ধান্ত জানাবে মন্ত্রণালয়।

আগামী ৬ জুলাই এনসিটির বর্তমান অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেকের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি শেষ হবে। এর পরে নতুন অপারেটর দেশি, নাকি বিদেশি হবে– সেটি ঠিক করবে সরকার। মধ্যবর্তী এই সময়টাতে নৌবাহিনীর সহায়তায় এনসিটি পরিচালনা করতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে বন্দর সচিব মো.

ওমর ফারুক বলেন, এনসিটি পরিচালনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সম্ভাব্য কয়েকটি পথ ধরে আলোচনা হচ্ছে। নৌবাহিনীর সহায়তা নিয়ে আমরা এটি পরিচালনা করব কিনা, সেটা পরে জানাব। এখন সব আলোচনা পর্যায়ে আছে। 

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে নিয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টা গতকাল সকালে বন্দর পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীও।

দুই উপদেষ্টা যখন সভা করছিলেন, তখন বন্দর ভবনের সামনে পালিত হচ্ছিল রোডমার্চ কর্মসূচি। বামপন্থি দল ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’ ব্যানারে এ কর্মসূচি চলছে। শুক্রবার শুরু হওয়া দু’দিনের এ কর্মসূচি শেষ হয়েছে গতকাল। আন্দোলনকারীদের অন্যতম দাবি, নিউমুরিং টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করা।

এনসিটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল। এই টার্মিনালে পাঁচটি জেটি রয়েছে। এই পাঁচ জেটির চারটিতে সমুদ্রগ্রামী জাহাজ নোঙর করে। একটি জেটিতে অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী জাহাজ নোঙর করতে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব জানান, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিগত সরকার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ প্রক্রিয়া এগিয়ে এনেছে। আগামী নভেম্বরে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহযোগী ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) এ টার্মিনালে ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার বা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে। চুক্তির আগ পর্যন্ত টার্মিনালটি নৌবাহিনীর সহায়তায় পরিচালনা হতে পারে।

এনসিটি টার্মিনালের চারটি ও সিসিটি টার্মিনালের দুটি জেটি ১৭ বছর ধরে আছে সাইফ পাওয়ার টেকের হাতে। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়া সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতেই তাদের কাজ দেওয়া হয়েছে ১১ বার। প্রতিবছর চট্টগ্রাম বন্দরের হ্যান্ডল করা কনটেইনারের ৬২ শতাংশ এককভাবে ওঠানামার কাজ করে সাইফ পাওয়ার টেকের অধীনে থাকা ছয়টি জেটি। বাকি ৩৮ শতাংশ কনটেইনার হ্যান্ডল করে অন্য জেটিগুলো।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট এনস ট গতক ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এশিয়া কাপ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে

কিছুদিন ধরে সনি স্পোর্টস নেটওয়ার্ক তাদের চ্যানেলগুলোয় এশিয়া কাপের বিজ্ঞাপন প্রচার করে আসছে। বিজ্ঞাপনের কভারে বাংলাদেশের নাজমুল হোসেন, ভারতের সূর্যকুমার যাদব আর শ্রীলঙ্কার চারিত আসালাঙ্কাকে দেখানো হচ্ছে। ভারতীয় চ্যানেল বলেই হয়তো পাকিস্তানের কাউকে রাখা হয়নি।

তবে এর মাধ্যমে ২০২৫ এশিয়া কাপ ক্রিকেট নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে চলা অনিশ্চয়তার জট কাটতে চলেছে বলে অনুমান অনেকের। তাঁদের ধারণা, এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েছে বলেই সনি স্পোর্টস নেটওয়ার্ক নিয়মিত এশিয়া কাপের বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে। অনিশ্চয়তা থাকলে তা দেখানোর কথা নয়।

মহাদেশীয় এই প্রতিযোগিতা নিয়ে এবার ক্রিকবাজও সুসংবাদ দিল। ক্রিকেট বিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইটটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টুর্নামেন্ট ঘিরে আশার আবহ তৈরি হয়েছে। কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে যে সংঘাত ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, ‘যুদ্ধবিরতির’ পর থেকে তা কিছুটা স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে আছে।

যদিও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি; তবে ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।

ক্রিকবাজ জানিয়েছে, এসিসির আশা, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে সভা ডেকে ছয় দলের এশিয়া কাপের সূচি চূড়ান্ত করা যাবে। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হবে। নির্দিষ্ট করে বললে, ১০ সেপ্টেম্বর টি–টোয়েন্টি সংস্করণের এশিয়া কাপ শুরু হতে পারে।

ওয়েবসাইটটি আরও জানিয়েছে, এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অংশ নেবে। যদিও প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৪ এসিসি প্রিমিয়ার কাপের রানার্সআপ ওমান ও তৃতীয় হওয়া হংকংয়েরও টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার কথা। কিন্তু সর্বশেষ খবর, ওমান ও হংকংকে ছাড়াই হয়তো হবে ২০২৫ এশিয়া কাপ।

মূল আয়োজক হিসেবে এখনো ভারতের নাম থাকলেও ২০২৩ এশিয়া কাপ ও ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো এবারের এশিয়া কাপও ‘হাইব্রিড মডেলে’ আয়োজনের আলোচনা চলছে। সে ক্ষেত্রে ভারতের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাতে টুর্নামেন্ট হতে পারে। গত ডিসেম্বরে বিসিসিআই–পিসিবির মধ্যে একে অপরের দেশে দল না পাঠানোর যে সমঝোতা হয়েছে, তারই ভিত্তিতে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের ম্যাচগুলো আমিরাতে সরে যাবে।

এপ্রিলে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাষ্মীরের পেহেলগামে হামলার জেরে মে মাসে ভারত–পাকিস্তান সংঘাতে জড়ায়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ ‘যুদ্ধবিরতির’ ঘোষণা দেওয়ার পর সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। ক্রিকেটে দুই দলের মুখোমুখি হওয়া না–হওয়া নিয়েও সংশয়ের মেঘ কেটে যায়।

এ বছর মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে এবং আগামী বছর মেয়েদের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত–পাকিস্তানকে একই গ্রুপে রেখেছে আইসিসি। কলম্বোয় ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচটি হবে ৫ অক্টোবর আর এজবাস্টনে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ ২০২৬ সালের ১৪ জুন।

এবার পুরুষদের এশিয়া কাপেও ভারত–পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবলই। কারণ, সনি স্পোর্টস নেটওয়ার্ক সম্প্রচার ১৭ কোটি মার্কিন ডলারে (২০৭১ কোটি টাকা) চার আসরের স্বত্ব কেনার সময় এসিসির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক সমঝোতা হয়েছিল যে প্রতিটি আসরে অন্তত দুটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থাকবে। দল দুটি যদি ফাইনালে ওঠে, তাহলে তিনবার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে।

কিন্তু ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ না হলে সনি স্পোর্টস নেটওয়ার্ক স্বাভাবিকভাবেই এসিসিকে বিপুল অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানাবে। এতে এসিসি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

ক্রিকবাজ এর আগে জানিয়েছিল, ২০২৫ এশিয়া কাপ আয়োজন করতে এসিসির প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার (৪৬৩ কোটি টাকা) খরচ হবে। এ খরচের বেশির ভাগ অর্থ আসবে সম্প্রচারস্বত্ব থেকে, যার ৭৫ শতাংশ রাজস্ব সমানভাবে ভাগ করে নেওয়ার কথা এসিসির পাঁচ স্থায়ী সদস্য বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ