কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ঘরে ঢুকে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শনিবার (২৮ জুন) রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় তীব্র আলোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, অন্তত ১০-১২ জন যুবক এক নারীর ঘরে ঢুকে তাকে বিবস্ত্র করে মারধর করছেন। এসময় নির্যাতিত নারী প্রাণপণে চিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানালেও কেউ করুণা করেনি। পাশের ঘরের কেউ কেউ ভিডিও ধারণ করলেও কেউ তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যাননি।

পুলিশ জানায়, ভিডিও ছড়ানোর পরই তারা বিষয়টি জানতে পারে। এর আগে নির্যাতনের খবর কেউ থানায় জানায়নি। ঘটনার পরদিন, শুক্রবার নির্যাতিত নারী মুরাদনগর থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। মামলায় বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে ফজর আলীকে (৩৮) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই সে পলাতক রয়েছে।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তার বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। ওই সুযোগে ফজর আলী তার ঘরে ঢোকার চেষ্টা করেন। দরজা না খুললে তিনি কৌশলে ভেতরে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করেন। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ফজরকে আটক করে মারধর করেন এবং ভিডিও ধারণ করেন। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়।

থানায় দেওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়, ভুক্তভোগীর স্বামী দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বিদেশে আছেন। তাদের সংসারে দুটি সন্তান রয়েছে। ঘটনার পর থেকে পরিবারটি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ‘‘ভুক্তভোগীর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। অভিযুক্তকে ধরতে পুলিশের দুটি দল মাঠে কাজ করছে। আশা করছি দ্রুত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই নারী নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি প্রথমে জানায়নি। ভিডিওটি ছড়ানো একটি গুরুতর আইনি অপরাধ। আমরা ভিডিওর উৎস চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। ভিডিওতে যেসব ব্যক্তি নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’’

এদিকে ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ভুক্তভোগী নারীর মানসিক আঘাত আরও বাড়ানো হয়েছে। তারা অবিলম্বে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকা/রুবেল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র দনগর ত র কর

এছাড়াও পড়ুন:

মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারী হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক, হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন গ্রামের নারীরা। গ্রেপ্তার আতঙ্কে এক মাসের বেশি সময় ধরে কড়ইবাড়ি গ্রাম পুরুষশূন্য বলে দাবি করেছেন মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শতাধিক নারী। এ সময় তাঁরা দুই সন্তানসহ নারী হত্যাকে ‘গণপিটুনি’ ও নিহত রোকসানা বেগম ওরফে রুবিকে ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ বলে দাবি করেছেন।

সোমবার সকালে কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কের কড়ইবাড়ি এলাকায় এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন গ্রামের নারীরা। তাঁদের অভিযোগ, গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদের নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত না হলেও তাঁদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হয়রানি করা হচ্ছে। এর আগে ৫ আগস্ট একই দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন গ্রামের নারীরা।

গত ৩ জুলাই সকালে উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে মব সৃষ্টি করে একই পরিবারের তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ঘটে। তাঁরা হলেন কড়ইবাড়ি গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার (২৯)। পরদিন ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০–২৫ জনকে আসামি করে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানায় মামলা করেন রোকসানা বেগমের বড় মেয়ে রিক্তা আক্তার। মামলার প্রধান আসামি আকুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ। এর মধ্যে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের এক মাস আট দিন পার হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা সায়েরা বানু বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই একটি পক্ষ এখানে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। গ্রামের পুরুষেরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ফিরছেন না। এতে পুরো গ্রাম এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। ঘটনার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরীহ গ্রামবাসীকে হয়রানি করছে। আমরা এই অবস্থার অবসান চাই। নিরীহ মানুষের হয়রানি বন্ধ হোক।’

কড়ইবাড়ি গ্রামের রুমা বেগম বলেন, ‘এক মাসের বেশি সময় ধরে পুরুষেরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। এতে অর্থকষ্টে পড়েছি আমরা। শিশুসন্তানদের নিয়ে অনেকটাই মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক। নিরপরাধ মানুষেরা গ্রামে ফিরে আসুক। আমাদের প্রতিটি দিনই এখন আতঙ্কে কাটে।’

গ্রামবাসীর নিরাপত্তাহীনতা প্রসঙ্গে বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের মামলাটি বর্তমানে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। এলাকায় শান্তি–শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রতি রাতেই কড়ইবাড়ি এলাকাসহ আশপাশের গ্রামে পুলিশের চারটি টহল দল কাজ করছে। এ ছাড়া নিরপরাধ কোনো মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। আমরা পুলিশের পোশাক পরেই ডিউটিতে বের হই। তবে সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য কোনো সংস্থার লোকজন আসেন কি না, সেটি আমার জানা নেই।’

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নয়ন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘নিরীহ একজন মানুষকেও হয়রানি করা হয়নি। আমরা শুরু থেকেই মামলাটি নিয়ে সতর্ক। গ্রামবাসীর আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। যাঁরা এ ঘটনায় জড়িত নন, তাঁরা গ্রামে ফিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন। ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্পর্শকাতর বিষয়, তদন্ত দ্রুত যেন হয় মনিটরিং করবেন
  • মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারী হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক, হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন