কুরাইশ কাফেরদের অত্যাচার তীব্রতর হলো। মক্কার পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠল। নবীজি (সা.) অনুমতি দিলেন দেশত্যাগ করার। আকাবার দ্বিতীয় অঙ্গীকারের ছায়ায় তত দিনে মদিনায় একটি ছোট মুসলিম রাজ্য প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে।

হিজরত সহজ ছিল না। সারা জীবনের অর্জিত সহায়-সম্পদ ছেড়ে অচেনা শহরে যাত্রা। পথে আছে লুণ্ঠিত বা খুন হওয়ার আশঙ্কা। মুশরিকদের বাধাও আছে প্রাচীরের মতো। তাঁরা জানেন যে কোথাও মুসলিমদের একটি ঘাঁটি হলে তাঁদের দীর্ঘদিনের আঘাত বুমেরাং হতে পারে।

হিজরতের আগের রাত

নির্দেশ পেয়ে মক্কার মুসলমানরা মদিনার উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলেন। দুই মাসের মধ্যে নগরীর এক–চতুর্থাংশ জনশূন্য হয়ে পড়ে। আগে যাঁরা আবিসিনিয়ায় গিয়েছিলেন, তাঁরাও ধীরে ধীরে মদিনায় ফিরছেন।

আরও পড়ুনহজরত উমর (রা.

) ছিলেন সুশিক্ষিত সাহাবি০৩ মে ২০২৩

বাকি থাকলেন নবীজি (সা.), নিকটতম সহচর আবু বকর (রা.) আর চাচা আবু তালিবের ছেলে আলী (রা.) এবং সেসব অসহায় ব্যক্তি, যাঁরা বন্দী বা পালাতে সক্ষম নন।

থলেগুলো উটের সঙ্গে বাঁধতে গিয়ে দেখেন, বাঁধার মতো কিছু নেই। তিনি কোমরবন্ধ খুলে ফেলেন। আবু বকর তাঁকে বলেন ছিঁড়ে দুই টুকরা করে বাঁধতে। নবীজি দোয়া করেন, বিনিময়ে যেন তিনি বেহেশতের দুটি বন্ধনী পান।

আবু বকর (রা.) ও আলী (রা.)–কেও নবীজি (সা.) হিজরতের প্রস্তুতি নিতে বললেন। মুশরিকরা কোনোভাবে টের পেয়ে যায় সেটা। যাত্রার রাতে তাঁরা নবীজিকে (সা.) হত্যার ষড়যন্ত্র আঁটেন। হত্যাযজ্ঞে সম্মিলিত অংশগ্রহণের ইচ্ছায় বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন গোত্রের লোকজন অবস্থান নেন।

জিব্রাইল (আ.) তাঁদের পরিকল্পনার কথা নবীজিকে জানিয়ে দেন। নবীজি (সা.) গোপনে আবু বকরের বাড়িতে যান। তাঁকে জানান, আল্লাহ তাঁদের মক্কা ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। (ইবনে সাদ, আল-তাবাকাত আল-কুবরা, ১/২২৭)

আরও পড়ুনএক সাহাবি কবির মনস্তাপের ঘটনা০২ মে ২০২৩

নবীজির সফরসঙ্গী হওয়ার আশায় আবু বকর (রা.) অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি দুটি উটও প্রস্তুত রেখেছিলেন।

আবু বকরের কন্যা আসমা

আবু বকর (রা.) তাঁর মেয়ে আসমা (রা.)–কে জানান যে তাঁরা রওনা করছেন। আসমা চামড়ার থলেতে ভ্রমণের জন্য খাবার ও পানীয় জোগাড় করে দেন। থলেগুলো উটের সঙ্গে বাঁধতে গিয়ে দেখেন, বাঁধার মতো কিছু নেই। তিনি কোমরবন্ধ খুলে ফেলেন। আবু বকর তাঁকে বলেন ছিঁড়ে দুই টুকরা করে বাঁধতে।

নবীজি দোয়া করেন, বিনিময়ে যেন তিনি বেহেশতের দুটি বন্ধনী পান। তাঁর নাম হয়ে যায় ‘যাত আন-নিতাকাইন’ বা ‘দুই বন্ধনীর মালিক’। (ইবনে হাজার আসকালানি, আল-ইসাবাহ ফি তামিয়িয আস-সাহাবাহ, পৃ. ২৩০)

সে সময় আসমা ছিলেন ২৭ বছরের তরুণী। যাত্রাপথে নবীজির যেন বিন্দুমাত্র অসুবিধা না হয়, সে জন্য আবু বকর তাঁর সব অর্থ সঙ্গে নিয়ে যান। পরিবারের জন্য কিছু রেখে যাননি।

তাঁকে বোঝাতে আসমা স্বর্ণমুদ্রার মতো কিছু নুড়িপাথর নিয়ে সেগুলো কাপড়ে ঢেকে একটি পাত্রে রাখলেন। তারপর দাদার হাতটি পাত্রের ওপর ছুঁইয়ে দিলেন, যাতে তিনি বিশ্বাস করেন যে অর্থের কোনো অভাব নেই।আরও পড়ুনরাসুল (সা.)–এর স্ত্রী সাফিয়া (রা.)–এর জীবনধারা০১ মে ২০২৩

আসমা নিশ্চয়ই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। ছোট ভাইবোনকে তাঁর দায়িত্বে রেখে যাওয়া হয়েছে। হাতে অর্থ নেই। নবীজির সঙ্গে বাবা চলে গেছেন জানার পর কাফেরদের কেমন কঠোর প্রতিক্রিয়া হবে, তা-ও উপলব্ধি করতে পারেন তিনি।

আসমার সাহস ও দৃঢ়তা

আসমা ভয় পাননি। উদ্বিগ্নও হননি। আল্লাহর ওপর বিশ্বাসের গভীরতা তাঁকে শান্ত স্থির রেখেছিল। বাবা চলে গেলে আসমার অন্ধ বৃদ্ধ দাদা আবু কুহাফা তাঁদের দেখতে যান। শুনেছেন, ছেলে তাঁর দেশত্যাগ করেছেন। সব সম্পদ সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন। আসমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আবু বকর তাঁদের পরিত্যাগ করেছে, নাকি সম্পর্ক ছিন্ন করেছে?

আবু কুহাফা মুসলিম ছিলেন না, আল্লাহর জন্য ত্যাগের সম্মান তাঁর জানা থাকার কথা নয়। আসমা উত্তর দিলেন, ‘না, তিনি আসলে আমাদের জন্য আরও ভালো কিছু রেখে গেছেন!’

তাঁকে বোঝাতে আসমা স্বর্ণমুদ্রার মতো কিছু নুড়িপাথর নিয়ে সেগুলো কাপড়ে ঢেকে একটি পাত্রে রাখলেন। তারপর দাদার হাতটি পাত্রের ওপর ছুঁইয়ে দিলেন, যাতে তিনি বিশ্বাস করেন যে অর্থের কোনো অভাব নেই। তিনি নিশ্চিন্ত রইলেন, ছেলে তাঁদের অবহেলা করেনি। (শামসুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আয-যাহাবি, সিয়ারু আলাম আন-নুবালা, ৩/৫২৩)

আরও পড়ুনসাহাবিদের যুগে বিয়ে০৮ এপ্রিল ২০২৩আবু জাহেলের মুখোমুখি

কুরাইশরা রাতভর নবীজির ঘরের বাইরে অপেক্ষা করেন। সূর্যোদয়ের পর বুঝতে পারেন যে শিকার হাতছাড়া হয়ে গেছে। তাঁদের নেতা আবু জাহেল আবু বকরের বাড়ির দিকে ছোটেন। বুঝতে পারেন, তিনিও নেই। রেগে সে দরজায় ধাক্কা মেরে আসমার কাছে জানতে চান তাঁর বাবা কোথায়। আসমা শান্তভাবে উত্তর দিলেন, ‘আমি কীভাবে জানব?’

ক্ষিপ্ত হয়ে আবু জাহেল তাঁর মুখে এত জোরে থাপ্পড় মারেন যে তাঁর কানের দুল ছিটকে উড়ে যায়। (শামসুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আয-যাহাবি, সিয়ারু আলাম আন-নুবালা, ৩/৫২৩)

খুবই সংকটাপূর্ণ মুহূর্ত। আসমা (রা.) যদি ভয় পেতেন বা ভেঙে পড়তেন, তাহলে নবীজির হিজরত ব্যর্থ হয়ে যেতে পারত। তিনি তাঁর বাবার মতো দৃঢ়চিত্ত নিয়ে মক্কার সবচেয়ে ভয়ংকর কাফেরের মুখে দাঁড়িয়েছিলেন।

তিনি সে সময় কেবল তরুণী নন, কোনো কোনো বর্ণনামতে তিনি অন্তঃসত্ত্বাও ছিলেন। পথ ছিল দীর্ঘ ও বিপজ্জনক। উপরন্তু তাঁকে অনুসরণ করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সতর্ক ছিলেন।গুহায় খাবার সরবরাহ

আসমা (রা.) কেবল জানতেন, তাঁরা কোথায় আছেন। রাতে নিজে ‘সাওর’ গুহায় যাবেন বলে মনস্থির করেন। গুহায় পৌঁছে নবীজি (সা.) তিন দিন অবস্থান করেন। বাকি পথটুকুর জন্য আসমা তাঁদের খাবার ও পাথেয় নিয়ে যান। (আবদুল মালিক ইবনে হিশাম, সিরাত ইবনে হিশাম, ২/৯৮)

তিনি সে সময় কেবল তরুণী নন, কোনো কোনো বর্ণনামতে তিনি অন্তঃসত্ত্বাও ছিলেন। পথ ছিল দীর্ঘ ও বিপজ্জনক। উপরন্তু তাঁকে অনুসরণ করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সতর্ক ছিলেন। নবীজিকে (সা.) জীবিত বা মৃত ফিরিয়ে আনতে কাফেররা একশ উট পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ চাইলেন, এই সাহসী তরুণীর সহায়তায় তাঁদের নিরাপদে মদিনায় পৌঁছে দেবেন।

আসমার (রা.) সাহসী ব্যক্তিত্ব ও আল্লাহর ওপর নির্ভরতা মুসলিম উম্মাহের জন্য জ্বলন্ত উদাহরণ। নিজের জীবন ও সম্ভ্রমের ঝুঁকি নিয়ে নবীজির হিজরতে তিনি যে সহযোগিতা করেছেন, তা একটি নতুন যুগ এবং একটি নতুন সভ্যতার সূচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয়, মানবজাতির ইতিহাসেও এ এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।

আরও পড়ুননারীর অধিকারের কথা সুরা নিসায় ০২ মে ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ র জন য বকর ত হ জরত র ওপর আসম র

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ

আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।

সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।

এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।

সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।

৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’

কারা আছে তালিকায়

দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।

দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।

১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।

২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।

কীভাবে এই মূল্যায়ন

৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।

ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।

এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।

কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।

জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:

বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;

কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;

কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;

সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;

কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ