তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, নেপথ্যে কী?
Published: 29th, June 2025 GMT
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে উম্মে সুলতানা তন্নী (১৭) নামের এক তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনার পর পরই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (২৮ জুন) রাত এগারোটার দিকে উপজেলার মৌডুবী ইউনিয়নের মাঝের দেওর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে বিষয়টি রাজনৈতিক নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এটি একটি পারিবারিক ঘটনা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মৌডুবী ইউনিয়নের বাইলাবুনিয়া গ্রামের বিএনপি কর্মী শাখাওয়াত হোসেনের মেয়ে তন্নীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেওর গ্রামের ছাত্রলীগ কর্মী কামাল গাজীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর পারিবারিক সম্মতি না থাকায় গত ২০ জুন তারা পালিয়ে বিয়ে করেন বলে দাবি তন্নী ও কামালের।
এরপর থেকে তন্নী স্বামীর বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। তবে বিয়ের কোন ডকুমেন্টস দেখাতে পারেনি তন্নী। আর কামাল দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছে। তন্নী কামালের বাড়িতে অবস্থান নেওয়ার পর পরই দুই পরিবারের লোকজন বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
প্রায় এক সপ্তাহ আগে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ গিয়ে পরিবারের সদস্যরা তন্নীকে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু তন্নী আসতে না চাইলে তারা ফেরত চলে আসেন। বিয়ের বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায় শনিবার রাত নয়টার দিকে ফের মেয়েকে আনতে কামালের বাড়ি যান শাখাওয়াত। এসময় সঙ্গে তার ভাই ও স্থানীয় কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
তবে তন্নী যেতে না চাইলে তারা কয়েকজন মিলে তাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যান। এ ঘটনার ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন কামাল গাজী। পরে তিনি লেখেন, “আমার বাড়ি থেকে আমার কলিজা বউকে এভাবে মেরে হাত-পা বেঁধে নিয়ে গেছে। দেশবাসীর সহযোগিতা চাই।” এরপর পরই ভিডিওটি ফেসবুক ও ইউটিউবে ভাইরাল হয়।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণীকে কয়েকজন মিলে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং ওই তরুণী কান্না জড়িত কণ্ঠে চিৎকার করছে।
এ বিষয়ে জানতে কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার ছোট চাচা নাজমুল গাজী বলেন, “আমার ভাতিজা কামালের সঙ্গে তন্নীর বিয়ে হয়েছে কিনা সেটা নিয়ে আমরা ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছি। কারণ তারা কোন ডকুমেন্টস দেখাতে পারেনি। আর একটা মেয়েকে কীভাবে কোন ডকুমেন্টস ছাড়া আমরা বাড়িতে রাখতে পারি? কামালের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছি না। মেয়ের পরিবারকে আমরাই নিয়ে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু সপ্তাহ খানেক আগে তারা এলে মেয়ে যেতে চায়নি। তারা চলে গেছে। তবে গতকাল আবার এসে মেয়েকে নেওয়ার চেষ্টা করলে সে যেতে চায়নি। পরে তারা জোরপূর্বক নিয়ে যায়।”
এ বিষয়ে উম্মে সুলতানা তন্নীর বাবা শাখাওয়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে তন্নীর চাচা আবদুস সাত্তার মিয়া বলেন, “বিয়ের কোন ডকুমেন্টস নেই। আমরা সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য। কীভাবে কোন ডকুমেন্টস ছাড়া আমরা আমাদের মেয়েকে অন্যের বাড়িতে রাখতে পারি? তারপরও ছেলেকে আসতে বলেছি। ছেলে এলে তাদের মধ্যে সম্পর্ক থাকলে আমরা আমাদের মেয়েকে তার হাতে তুলে দিবো। রাত নয়টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি নিয়ে আমরা শুধুমাত্র কয়েকজন ভাইয়েরা মিলে ওই বাড়িতে গেছি এবং মেয়েকে নিয়ে এসেছি। এসময় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইলিয়াস গাজীও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আমাদের নামে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সম্মান ক্ষুন্ন করা হয়েছে।”
রাঙ্গাবালী থানার ওসি এমারত হোসেন বলেন, “ঘটনাটি রাজনৈতিক নয়, পারিবারিক। মেয়ের বাবা চাচ্ছিলেন না তার মেয়ে ছাত্রলীগকর্মী কামালের সঙ্গে থাকুক। তাই স্থানীয় গণ্যমান্যদের উপস্থিতিতে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে গেছেন। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।”
ঢাকা/ইমরান/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র আম দ র ব ষয়ট এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
এনবিআর সংস্কারে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
রবিবার (২৯ জুন) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তবে কমিটিতে কারা আছেন এবং কমিটির কার্য পরিধি কী হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘‘এনবিআর কীভাবে সংস্কার করা যায় সে বিষয়ে কমিটি আলাপ-আলোচনা করবে। তারা সবার কথা শুনবে।’’
৫ সদস্যের কমিটিতে কারা আছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘তাদের নাম আমি এখন বলবো না।’’
এ দিকে এনবিআর-এর ৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক, যারা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন- সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘ওটা আমার কনসার্ন ডিপার্টমেন্ট না।’’
আজ সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অর্থ উপদেষ্টা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বৈঠক শেষ হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, আইসিসিবি'র সহসভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, মেট্রো পলিটন চেম্বারের (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, এমসিসিআইর সহসভাপতি ও ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতির তাসকিন আহমেদ প্রমুখ।
বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানও উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে সংস্থাটির আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান জানিয়ে সরকার বলেছে, কাজে যোগ না দিলে দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হবে। আজ সরকার এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার জাতীয় স্বার্থে সরকার এনবিআরের আওতাধীন সব কাস্টম হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস বা সেবা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঢাকা/হাসনাত//