ফিলিস্তিনের গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় গত শুক্রবার জানিয়েছে, মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণকেন্দ্রগুলো থেকে বিতরণ করা আটার ব্যাগে অক্সিকোডোন নামের মাদক বড়ি পাওয়া গেছে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে তারা।

এক বিবৃতিতে ওই কার্যালয় বলেছে, ‘আমরা এখন পর্যন্ত চারজনের সাক্ষ্য পেয়েছি। তাঁরা আটার ব্যাগের ভেতরে এই বড়িগুলো পেয়েছেন।’ কার্যালয় সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘কিছু মাদক ইচ্ছাকৃতভাবে গুঁড়া বা দ্রবীভূত করে আটার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

অক্সিকোডোন একটি শক্তিশালী মাদক, যা মূলত ক্যানসার রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি ও তীব্র ব্যথা উপশমে ব্যবহার করা হয়। এ মাদক অত্যন্ত আসক্তিকর এবং এর জীবননাশক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাসে জটিলতা, বিভ্রম ইত্যাদি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্টে গাজায় বিতরণ করা আটার ব্যাগে বড়ি পাওয়া যাওয়ার ছবি প্রকাশ হয়েছে। পরে গাজা কর্তৃপক্ষ ওই বিবৃতি দেয়।

গাজার একজন ফার্মাসিস্ট ওমর হামাদ এ ঘটনাকে ‘গণহত্যার সবচেয়ে জঘন্য রূপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ফেসবুকে গাজার চিকিৎসক খলিল মাজেন আবু নাদা লিখেছেন, ‘এই মাদক “আমাদের সমাজিক চেতনা ধ্বংস করার একটি অস্ত্র”।’

১৫টি মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংস্থা গত বুধবার জিএইচএফের কার্যক্রম স্থগিতের দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, এ সংস্থা আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত করছে এবং গাজায় ফিলিস্তিনিদের ‘জবরদস্তিমূলক বাস্তুচ্যুতি’ ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কিংবা গণহত্যার মতো অপরাধে সহায়তা করে থাকতে পারে।

এভাবে ‘মাদকাসক্তি ছড়ানো ও ফিলিস্তিনি সমাজের বন্ধন ভেঙে দেওয়ার জঘন্য অপরাধের’ জন্য পুরোপুরি ইসরায়েলকেই দায়ী করছে গাজার গণমাধ্যম কার্যালয়।

কার্যালয় আরও বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার অবরুদ্ধ অবস্থাকে ‘সাহায্য ও সহায়তার’ ছদ্মাবরণে মাদক পাচারের উপায় হিসেবে ব্যবহার করছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল পরিচালিত সহায়তা কেন্দ্রগুলোকে ‘মৃত্যুকূপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে তারা।

জিএইচএফের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) একটি বিতর্কিত মার্কিন-ইসরায়েলি সংস্থা। বর্তমানে গাজায় ত্রাণ বিতরণে যুক্ত রয়েছে সংস্থাটি। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকার অভিযোগে জিএইচএফের তীব্র সমালোচনা করেছে।

এই মাদক ‘আমাদের সমাজিক চেতনা ধ্বংস করার একটি অস্ত্র’।খলিল মাজেন আবু নাদা, গাজার চিকিৎসক  

গত বুধবার ১৫টি মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংস্থা জিএইচএফের কার্যক্রম স্থগিতের দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, এ সংস্থা আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত করছে এবং গাজায় ফিলিস্তিনিদের ‘জবরদস্তিমূলক বাস্তুচ্যুতি’ ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কিংবা গণহত্যার মতো অপরাধে সহায়তা করে থাকতে পারে।

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, জিএইচএফের কার্যক্রম চলাকালে গত এক মাসে সহায়তা কেন্দ্রগুলোর আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৫১৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুনগাজায় ত্রাণ সরবরাহ স্থগিত করেছে ইসরায়েল ২৭ জুন ২০২৫

শুক্রবার ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ জানায়, ইসরায়েলি সেনারা স্বীকার করেছেন যে তাঁরা জিএইচএফ পরিচালিত সহায়তা কেন্দ্রে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছেন।

মিডল ইস্ট আই জিএইচএফের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চেয়েছে।

আরও পড়ুনত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলির আদেশ দেওয়া হয়েছে, কী বলছেন ইসরায়েলি সেনারা২৭ জুন ২০২৫আরও পড়ুনইসরায়েলের হামলায় গাজায় প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত২০ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ এইচএফ র ক আট র ব য গ ইসর য় ল অপর ধ ন ইসর

এছাড়াও পড়ুন:

গাজা দখল করে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়তে চান নেতানিয়াহু

নিজের জনগণকে ৬৭০ দিনের বেশি সময় ধরে ধ্বংস হতে দেখার বেদনা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এত কষ্ট, এত অপরাধের সাক্ষী হওয়ার পরও গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরেক দফা ইসরায়েলি হামলার কথা ভাবা পর্যন্ত কল্পনার বাইরে। অথচ বিশ্বের চোখের সামনেই এটি হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ব কি শুধু দাঁড়িয়ে দেখে যাবে?

ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা গাজায় এই নতুন হামলার ঘোষণা দিয়েছে। গাজা উপত্যকাকে ‘সম্পূর্ণ দখল’ করার জন্যই তারা সেখানকার জনবসতিগুলোয় হামলা চালানোর পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এ হামলা শুরু হবে গাজা সিটি থেকেই। এর ফলাফল অনুমান করা কঠিন নয়।

২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক সতর্কবার্তা ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ অমান্য করে ইসরায়েল রাফা এলাকায় হামলা চালায়। আজ রাফার কোনো অস্তিত্ব নেই। এরপর ২০২৪ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে তারা উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া, বেইত হনুন ও জাবালিয়া শহরে হামলা চালিয়ে সেগুলো ধ্বংস করে দেয়। 

আরও পড়ুনমুখ ফিরিয়েছে বিশ্ব, গাজা কি নিভে আসছে ০৯ জুন ২০২৫

সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়ালন এ অভিযানকে বলেছেন ‘জাতিগত নিধন’। এরপর ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফেলে, ২০ লাখ বেঁচে থাকা মানুষকে অনাহারে রাখে এবং দক্ষিণের খান ইউনিস শহর ধ্বংস করে দেয়। এসব কাজ ২০২৪ সালের জানুয়ারি, মার্চ ও মে মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের দেওয়া তিনটি গণহত্যাবিরোধী রায়ের সরাসরি লঙ্ঘন।

জানুয়ারিতে আদালত গাজায় গণহত্যার ঝুঁকি আছে বলে জানান এবং তা ঠেকাতে কিছু ব্যবস্থা নিতে বলেন। এর মধ্যে ছিল গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু দেখা গেল, ইসরায়েল এই নির্দেশ মানছে না। গাজা সিটিতে হামলা হলে তা এই গণহত্যা অভিযানের শেষ ধাপ হবে।

যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা দেশগুলো গত দুই বছরে ইসরায়েলের গণ–অত্যাচারের সহযোগিতার দায় থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারবে না। ইসরায়েলকে জবাবদিহি থেকে মুক্তি দিয়ে এবং এই দুষ্ট রাষ্ট্রকে অস্ত্র সরবরাহ করে পশ্চিমারা এই অপরাধগুলোকে সম্ভব করেছে। সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার যে ঘোষণাগুলো এসেছে, তা কেবল প্রচারমূলক চাল ও মনোযোগ সরানোর কৌশল।

৭ অক্টোবরের পরপরই ইসরায়েলের নেতা, রাজনীতিক, সামরিক কমান্ডার ও সেনারা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তাঁরা গাজাকে ধ্বংস করে দেবেন, পুড়িয়ে দেবেন এবং সমতল করে দেবেন। তাঁরা ঠিক সেটাই করেছেন। তাঁরা গাজার ৯০ শতাংশ এলাকা কার্যত ধ্বংস করে এটিকে জনমানবহীন মরুভূমিতে পরিণত করেছেন। বাকি জনসংখ্যাকে ঠাসা অবস্থায় মাত্র ১২ শতাংশ এলাকায় গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। সেখানে মানুষের বেঁচে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নেই। অবরোধ আর বোমাবর্ষণের মাধ্যমে ইসরায়েল গাজায় কোনো নিরাপদ জায়গা রাখেনি। বাইরে যাওয়ারও কোনো পথ রাখেনি।

এখন গাজা সিটি, দেইর আল-বালাহ বা আল-মাওয়াসির বাকি জনবসতিতে হামলার মানে হবে নতুন গণহত্যা, আরও ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি এবং অবশিষ্ট অনাহারগ্রস্ত মানুষকে সরাসরি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। এর মানে ইসরায়েল আসলে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়ার মেসিয়ানি কল্পনা ও অপরাধমূলক প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে—ইসরায়েলের লক্ষ্য ‘সর্বোচ্চ পরিমাণ জমি, সর্বনিম্নসংখ্যক আরব’।

গাজায় দাতব্য রান্নাঘরের সরবরাহ করা খাবার সংগ্রহ করতে ফিলিস্তিনিদের ভিড়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ত্রাণকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করো: ইসরায়েলের প্রতি শতাধিক সংস্থার আহ্বান
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়াল
  • গাজা দখল করে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়তে চান নেতানিয়াহু
  • গাজায় ‘গণহত্যার’ প্রমাণ তুলে ধরার কারণেই কি সাংবাদিক আল-শরিফকে হত্যা করল ইসরায়েল
  • তারা তোমার অশ্রুর যোগ্য ছিল না, আনাস!
  • গাজায় গণহত্যা নিয়ে ভারত সরকারের নীরবতা ‘লজ্জাজনক’: প্রিয়াঙ্কা গান্ধী