অভিমানের মেঘ জমতে জমতে যে আষাঢ়ের আকাশ হয়ে আছে, তা বোঝা গিয়েছিল গল টেস্টের পরপরই। কলম্বো টেস্টের আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনে গুঞ্জনটা চাপা দিয়ে রেখেছিলেন মাত্র, টেস্টটি শেষ হতেই বজ্রসহ বৃষ্টি নাজমুল হোসেন শান্তর। ‘আই হেভ সামথিং টু টেল...; বলে চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাওয়া সাংবাদিকদের সামনে সংযত ও আত্মমগ্ন অধিনায়ক বলতে থাকলেন। ‘এটা ব্যক্তিগত কোনো কিছু নয়। পুরোপুরি দলের ভালোর জন্যই আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই ড্রেসিংরুমে কয়েক বছর ধরে, লম্বা সময় ধরে আমার থাকার সুযোগ হয়েছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত যে তিন জন অধিনায়ক দলের জন্য সমস্যা হতে পারে। দলের ভালোর জন্য এখান থেকে সরে আসছি।’
সাকিব-উত্তর ক্রিকেট সাম্রাজ্যে তিন ফরম্যাটে অধিনায়কত্বের যে মুকুট পরেছিলেন বিসিবির বিশ্বাসের ওপর ভর করে, সেটা নিজেই খুলে রাখলেন ভারী মনে করে! একটুও কি ভাবলেন না মেঘের আড়ালে নীল আকাশের কথা। তিনিই তো নেতৃত্ব নিয়ে পাকিস্তানে দুটি টেস্ট জিতে সূর্যের হাসি দেখিয়েছিলেন, তাঁর হাতেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের চাবি দেওয়া হয়েছিল। শুধু ওয়ানডে ফরম্যাটের নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্যই কি এত তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে? তাও আবার শ্রীলঙ্কায় সিরিজ চলার মাঝে? সামনে ওয়ানডে সিরিজ। এটা কি পেশাদারিত্বের সঙ্গে যায়?
অবশ্য পেশাদারিত্বের ব্যাপারটি দুই পক্ষের মধ্যেই থাকতে হয়। সম্পর্কের ভিতই হলো বিশ্বাস। যেদিন তাঁকে না জানিয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে মেহেদী হাসান মিরাজকে অধিনায়কত্ব করা হলো, সেদিনই বিশ্বাসের জায়গাটি টালমাটাল হয়ে সম্পর্কের ভিত নড়ে যায়। টেস্টে ভালো কিছু করে ‘ছেড়ে দেওয়ার’ মোক্ষম জবাবটাই হয়তো খুঁজছিলেন শান্ত। গল তাঁকে সেই সুযোগ করে দেয়, কিন্তু কলম্বো? যেখানে গতকাল লঙ্কান অধিনায়ককে সাংবাদিক সম্মেলনে তাদের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্টের হিসাব নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে দেখা যায়, সেদিন কিনা শান্তর ‘তিন অধিনায়ক’ তত্ত্বের বিরোধিতায় চাপা পড়ে যায় ইনিংস হারের ব্যর্থতা!
শান্ত বলেছেন, তিনি দলের ভালোর জন্যই এমনটি করেছেন, কিন্তু এটা কী ব্যক্তিসংঘাত নয়? তাঁর জায়গায় অন্য কাউকে নেতৃত্ব দেওয়ায় তিনি যে প্রতিক্রিয়া দেখালেন, তাতে সেই অধিনায়কের মনে কি পাল্টা প্রতিক্রিয়া হবে না? তিনি তো টেস্টে সাকিবের সহ-অধিনায়ক ছিলেন না, তাঁকে যখন সরাসরি অধিনায়ক করা হলো, তখন কি তিনি বিসিবির কাছে প্রক্রিয়া মেনে হয়েছে কিনা জানতে চেয়েছিলেন? কিংবা সেই সহ-অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলেছিলেন?
শান্ত কি জানেন না এই মুহূর্তে টেস্টখেলুড়ে কোনো দেশেই ‘এক অধিনায়ক’ নেই। ভারত ও পাকিস্তানে তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক। এটা মেনেই যেন তাদের ড্রেসিংরুমের পরিবেশ ফুল বিছানো নয়। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এমনকি আয়ারল্যান্ডের মতো দলেও সাদা এবং লাল বলের জন্য আলাদা অধিনায়ক।
এতে পরিশ্রমের পাশাপাশি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে গভীর মনোনিবেশের ব্যাপারটিও জড়িয়ে থাকে। তা ছাড়া একক নেতৃত্বের জন্য যে ধরনের লিডারশিপ দরকার মাঠ ও মাঠের বাইরে, তেমন ব্যক্তিত্বের অভাবের কারণেও অনেক সময় দলগুলো ভিন্ন ফরম্যাটে ভিন্ন অধিনায়ক বেছে নেয়। শান্ত নিজেই জানিয়েছিলেন টি২০ অধিনায়কত্ব তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন ব্যাটিংয়ে আরও মনোনিবেশ করার জন্য। তাহলে দুই অধিনায়কে নিশ্চয়ই আপত্তি ছিল না তাঁর, সমস্যাটা কি শুধু তিন অধিনায়কে?
বিসিবি এবং বাংলাদেশ দল একটা পরিবারের মতোই, সেখানে অভিমান-অভিযোগ থাকতে পারে, দলের স্বার্থে রাগ-অনুরাগ অনেক কিছুরই বিসর্জন দিতে হয়। চ্যালেঞ্জ নিতে হয় সত্যিকারের স্পোর্টস ম্যানের মতোই। সব ছেড়েছুড়ে নীরব থাকা ভালো কি, তাতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষত তৈরি হয়– একটা সময় রক্তক্ষরণ হয় অবিরত।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, মোট ভোটার ১১ হাজার ৯১৯
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে।
এর আগে গত ১০ আগস্ট রাতে খসড়া ভোটার তালিকা ও খসড়া আচরণবিধি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে যেসব শিক্ষার্থীর নাম তালিকায় আসেনি তাঁদের আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়। যাচাই–বাছাই শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ও চূড়ান্ত আচরণবিধি প্রকাশ করেছে কমিশন।
কোন হলে কত ভোটার
চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী ২১টি আবাসিক হলে মোট ভোটার ১১ হাজার ৯১৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ৫ হাজার ৮৬০, আর ছাত্রী ভোটার ৬ হাজার ০৫৯।
ছাত্র হল
আলবেরুনী হলে ২১১, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে ৩৪১, শহীদ সালাম–বরকত হলে ২৯৯, মওলানা ভাসানী হলে ৫২১, ১০ নম্বর হলে ৫৪০, শহীদ রফিক–জব্বার হলে ৬৫৬, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৩৫৭, ২১ নম্বর হলে ৭৫২, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৯৯৪, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ হলে ৯৫৪, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৪৭৭ জন।
ছাত্রী হল
নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ২৮২, জাহানারা ইমাম হলে ৪০০, প্রীতিলতা হলে ৪০২, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪১৭, সুফিয়া কামাল হলে ৪৬০, ১৩ নম্বর হলে ৫৩২, ১৫ নম্বর হলে ৫৭৬, রোকেয়া হলে ৯৫৭, ফজিলাতুন্নেছা হলে ৮০৮, বীর প্রতীক তারামন বিবি হলে ৯৮৩ জন।
আজ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
তফসিল অনুযায়ী আজ সোমবার (১৮ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এবং আগামীকাল মঙ্গলবার একই সময়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে। তবে প্রার্থীকে নিজে উপস্থিত হয়ে মনোনয়ন জমা দিতে হবে।
মনোনয়নপত্রের নির্দেশনা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সাত দফা নির্দেশনা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে রয়েছে—
১. একজন প্রার্থী একাধিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
২. প্রতিটি মনোনয়নপত্রে একজন প্রস্তাবক ও একজন সমর্থকের স্বাক্ষর, শিক্ষাবর্ষ ও বিভাগ উল্লেখ করতে হবে।
৩. একই ব্যক্তি একাধিক প্রার্থীর প্রস্তাবক বা সমর্থক হতে পারবেন না (কার্যকরী সদস্য পদ ছাড়া)। কার্যকরী সদস্য পদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয়জনের (তিন নারী, তিন পুরুষ) প্রস্তাবক বা সমর্থক হওয়া যাবে।
৪. মনোনয়ন জমার সময় শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র বা ছবিযুক্ত লাইব্রেরি কার্ড/ইনডেক্স কার্ড প্রদর্শন করতে হবে।
৫. প্রার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে সব পাওনা পরিশোধের প্রমাণ দিতে হবে।
৬. মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি জমা দিতে হবে (দুই মাসের বেশি পুরোনো ছবি গ্রহণযোগ্য নয়)।
৭. প্রতিটি হলে মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও জমাদানের জন্য পৃথক রেজিস্ট্রার খাতা সংরক্ষণ করতে হবে।