অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে জননিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি এবং অবনতির দিকে যাচ্ছে। জবাবদিহিমূলক বিচারিক প্রক্রিয়ার অভাব ও নারীকে অধস্তন হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতাকে উৎসাহিত করছে। কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতার ঘটনা প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।

গত বৃহস্পতিবারে মুরাদনগরে এক নারীকে ঘরের দরজা ভেঙে ধর্ষণের অভিযোগে শুক্রবার মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ আজ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে।

এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আজ রোববার গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারই যথেষ্ট নয়, তাঁদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশ দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টায় নানা মহল সেই ঘৃণ্য কাজেও জড়িয়েছে। উল্টো ভুক্তভোগীকে কলঙ্কিত করা ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের হাতিয়ার করার চেষ্টা চলমান, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে জননিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি; বরং প্রতিনিয়ত তা অবনতির দিকে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। এতে সমাজে ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত সহিংসতার মনস্তত্ত্ব ক্রমে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠছে। নারীর প্রতি এ ধরনের সহিংসতা শুধু ব্যক্তিগত অপরাধ নয়; বরং এটি সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রতিফলন। এ পরিস্থিতি একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ।

ভুক্তভোগী নারীর সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি মুরাদনগরের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত সব ছবি ও ভিডিও দ্রুত অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে কমিটি। এ ছাড়া নারীর প্রতি সহিংসতাকারী যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, দেশের প্রতিটি নারী নির্ভয়ে, সম্মানের সঙ্গে এবং নিরাপদে বসবাস করতে পারলে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ও সভ্য সমাজ গড়ে উঠবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স রক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

স্পর্শকাতর বিষয়, তদন্ত দ্রুত যেন হয় মনিটরিং করবেন

মুরাদনগরের একটি মামলার ঘটনায় কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে (এসপি) হাইকোর্ট বলেছেন, সেনসেটিভ ম্যাটার (স্পর্শকাতর বিষয়)। অভিযোগপত্র হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তদন্তের সময়সীমা উল্লেখ আছে। দ্রুত যেন হয় মনিটরিং (তদারকি) করবেন। কমপ্লায়েন্স (অগ্রগতি প্রতিবেদন) দেবেন।

মুরাদনগরের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা–সুরক্ষা নিশ্চিতে পদক্ষেপ এবং মামলার তদন্তের অগ্রগতিবিষয়ক শুনানিতে মঙ্গলবার আদালত এ কথা বলেন। শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ২২ অক্টোবর পরবর্তী কমপ্লায়েন্স দিতে বলেছেন।

ওই ঘটনা নিয়ে ‘দরজা ভেঙে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, মামলা’ শিরোনামে গত ২৯ জুন প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটিসহ এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর এ কে এম নূরুন্নবী রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৯ জুন হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।

আদেশে ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন থেকে ভুক্তভোগীর ভিডিও ও ছবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই বিবাদীদের ১৪ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন (হলফনামা আকারে কমপ্লায়েন্স) দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ধার্য তারিখে প্রতিবেদন জমা পড়েনি। এর ধারাবাহিকতায় গত ২২ জুলাই আদালত কমপ্লায়েন্স বিষয়ে অবস্থান জানাতে কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে ১২ আগস্ট বেলা ১১টায় আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন।

মঙ্গলবার সকালে আদালতে হাজির হন কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান শুনানিতে পুলিশ সুপারের নেওয়া পদক্ষেপ ও কার্যক্রমসংক্রান্ত তথ্যাদি–সংবলিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন। শফিকুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির। রিটের পক্ষে আইনজীবী মীর এ কে এম নূরুন্নবী নিজেই শুনানিতে অংশ নেন। শুনানি নিয়ে আদালত কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। পরবর্তী কমপ্লায়েন্স দাখিলের জন্য আগামী ২২ অক্টোবর তারিখ ধার্য করেন।

ডিএনএ পরীক্ষা, তদন্তসহ মামলা–সম্পর্কিত পরবর্তী অগ্রগতির তথ্যাদি দিতে বলা হয়েছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখনো অভিযোগপত্র হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব কাজগুলো শেষ করতে বলেছেন আদালত। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের নির্দিষ্ট সময়সীমা যেন কোনোভাবেই অতিক্রম না করে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজগুলো করে আগামী ২২ অক্টোবর অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সুপারের পক্ষে মঙ্গলবার আদালতে তুলে ধরা প্রতিবেদনের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, মামলার পর ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বলা হয়। বিষয়টি ওসি দেখভাল করছেন। ভুক্তভোগীর জন্য সার্বক্ষণিক যেন নিরাপত্তা থাকে এবং সময়ে সময়ে এসপি ওসিকে এবং ওসি এসপিকে ফলোআপ ও হালনাগাদ তথ্য জানিয়েছে।
গত ২৯ জুন প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মুরাদনগর থানায় মামলা করেছেন ওই নারী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দৌলতপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
  • কুমিল্লায় বিষাক্ত মদ পানে দুজনের মৃত্যু
  • স্পর্শকাতর বিষয়, তদন্ত দ্রুত যেন হয় মনিটরিং করবেন