জাবিতে ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে রাবি শিক্ষার্থী আটক
Published: 29th, June 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধ্যয়নরত এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে হেনস্তার ঘটনা ঘটলে তাকে আটক করা হয়।
জানা গেছে, পূর্বপরিচিত জাবির অর্থনীতি বিভাগের ৫২তম আবর্তনের এক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০১৮-১৯ সেশনের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল রানা। পরে সেই নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা করে কথপোকথনকালে জোরপূর্বক হাত ধরার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে ওই ছাত্রী প্রক্টর বরাবর হেনস্তার অভিযোগ দেন।
আরো পড়ুন:
নিউ মার্কেটে ভবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
এআই ব্যবহারে ভারসাম্য ও নৈতিকতা নিশ্চিত করতে হবে: জবি উপাচার্য
অভিযুক্ত সোহেল রানা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ সেশনের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তার বাসা সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানায়। বর্তমানে চাকরি খুজতে ঢাকার লালবাগে অবস্থান করছেন। তার পিতার নাম মো.
অভিযোগকারী অর্থনীতি বিভাগের ৫২তম আবর্তনের ওই ছাত্রী প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগপত্রে বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ সেশনের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র সোহেল রানা আমাকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নানাভাবে হেনস্তা করে আসছে। তার সঙ্গে আমি যোগাযোগ না রাখতে চাইলেও নানাভাবে আমাকে ব্লাকমেইল করে যোগাযোগ রাখতে বাধ্য করেছে। ইতোপূর্বে তিনি গুণ্ডা ভাড়া করে আমার বাবাকে মারধর পর্যন্ত করেছে। গত কয়েকমাস যাবত তার হেনস্তার মাত্রা আমার সহ্যসীমা অতিক্রম করেছে।”
তিনি বলেন, “আজ তিনি আমার ক্যাম্পাসে এসে আমাকে জোরপূর্বক একা দেখা করতে বাধ্য করেছে এবং সঙ্গে কাউকে নিয়ে গেলে মারধরের হুমকি দিয়েছে। দেখা না করলে ‘দেখে নিব’ বলেও হুমকি দিয়েছে। পরবর্তীতে চাপে পড়ে আমি একা দেখা করি এবং কথোপকথন চলাকালে দূর থেকে আমাদের দেখে আমার বন্ধুরা। তখন তিনি তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং ‘ক্যাম্পাসের বাইরে গেলে দেখে নেব’ বলে হুমকি দেন।”
তিনি আরো বলেন, “এমন্তাবস্থায় আমি এবং আমার পরিবার কেউ নিরাপদ মনে করছি না। তাই আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যার বরাবর একটি অভিযোগ পত্র দিয়েছি যেন তিনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং আমাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেন।”
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অর্থনীতি বিভাগের ৫২ তম আবর্তনের ফাররাজ আহমেদ বলেন, “আমাদের বান্ধবীর সঙ্গে ওই ছেলেটি খারাপ আচরণ করলে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সেখানে যাই। পরে ওই ছেলে আমাদের ভয় দেখান এবং হুমকি দিয়ে বলেন, আমরা ক্যাম্পাসের বাইরে গেলে তিনি আমাদের মারবেন।”
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী অর্থনীতি বিভাগের ৫২তম আবর্তনের কাজী নাহিদা আক্তার প্রমা বলেন, “আমার বান্ধবীকে ছেলেটি দীর্ঘদিন ধরে হেনস্তা করে আসছে। সে ভয়ে কিছু বলতে পারে না। আজ ছেলেটি ক্যাম্পাসে আসে এবং জোরপূর্বক দেখা করে হেনস্তা করে। আমরা এই ঘটনার কঠিন থেকে কঠিনতম বিচার দাবি করছি এবং সেইসঙ্গে আমার বান্ধবী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আবেদন জানাচ্ছি।”
তবে অভিযুক্ত রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, “আমি আজ তার সঙ্গে দেখা করতে আসি। আমরা পূর্ব পরিচিত ছিলাম এবং আগে একই জায়গায় থাকতাম। আমাদের ফেসবুকে কথা হয়। আজ আসার সময় আমি তাকে জানাই দেখা করার জন্য।”
একা দেখা করার জন্য হুমকি দিয়েছিলেন কি না জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি এ রকম কথা বলেছি। আমি এটা এমনিই বলেছিলাম তখন। কিন্তু তার বন্ধুরা এর জন্য এখন অভিযোগ করছে।”
আজকের ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আজ আমি সাড়ে ৯টায় ক্যাম্পাসে আসি এবং এখানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত আমার কিছু বন্ধুর সঙ্গে দেখা করি। পরে আমি ওই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাই। শহীদ মিনারে দেখা করি এবং এক পর্যায়ে তার বন্ধুরা এসে সেখান থেকে আমাকে হেনস্তা করার অভিযোগে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসে।”
এ নিয়ে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে আমাদের শিক্ষার্থীর থেকে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছি। আমরা ছেলেটিকে আটক করেছি এবং প্রক্টর স্যার আসলে আমরা অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত উভয়ের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশেদুল আলম বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমি একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। বিস্তারিত পরে জানাতে পারব।
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র গণয গ য গ ও স ব দ কত আম দ র বন ধ র আম র ব
এছাড়াও পড়ুন:
২০১৮ সালের পাতানো নির্বাচনের হোতা নূরুল হুদা: রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনাইদের আদালত এ আদেশ দেন।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানি শেষে বিচারক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে আদালতে উঠানো হয় নূরুল হুদাকে। এসময় তার বুকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট পরানো ছিল। এজলাসে হাজির করানোর পর তার হেলমেট ও হ্যান্ডকাফ খুলে দেয় পুলিশ। এরপর ৩টা ৪৪ মিনিটের এর দিকে আদালতে শুনানি শুরু হয়।
এদিন আদালতে শুনানি শুরুর আগে তার আইনজীবীদের সাথে অল্প সময় কথা বললেও শুনানি চলাকালে কোনও কথা বলেননি নূরুল হুদা। আদালতে পুরো সময় মাথা নিচু করেছিলেন তিনি। শুনানি চলাকালে তাকে বিমর্ষ থাকতে দেখা যায়।
এদিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে কোনও নিরাপত্তা ছিল না। বিরোধী দলীয় প্রার্থীর ও ভোটারের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করা হয়। এগুলোর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি নূরুল হুদা। ২০১৮ সালে রাত ৩টার মধ্যে ২০১৮ আসনের ফলাফল ঘোষণা করেন তিনি। তিনি কীভাবে এটা করলেন সেটা তাকে জানাতে হবে। এছাড়া রাতে প্রিসাইডিং অফিসারদের বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়াসহ তাদের পাহারায় ও নির্দেশনায় এই রাতের ভোট সম্পন্ন হয়েছে। এই পাতানো নির্বাচনের হোতা ছিলেন উনি (নূরুল হুদা) এবং তার সচিব ও প্রশাসন কাজ করেছে তার নির্দেশে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সঙ্গে উনার যে সম্পর্ক সেই সম্পর্কের খাতিরেই এসব পলিসি হয়েছে। নির্বাচনের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন। এতবড় একটা নির্বাচন ছিল প্রহসনমূলক।
এরপর শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজিব বলেন, গত ২৩ তারিখের আবেদন ও আজকের আবেদনের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আবার রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এসময় তিনি গত ৪ দিনের রিমান্ডে আসামির থেকে কী কী তথ্য পাওয়া গেছে তা জানতে চান।
তিনি বলেন, এই মামলার ধারাগুলো জামিনযোগ্য ছিল। কিন্তু প্রসিকিউশন পরবর্তীতে আবার নতুন ধারা যোগ করতে আবেদন করেন। আদালতে এখন কথা বলতেই ভয় করে। কারণ এই কথাগুলো শুনেই হয়তো আবার নতুন করে মামলা দেবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শুনানিতে আরও বলেন, এখানে কিছু কিছু ধারা প্রশ্নবিদ্ধ। ধারা কীভাবে সংশোধন করা হয়। নূরুল হুদার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সুস্পষ্ট ও দায় সৃষ্টিকারী কোনও ডকুমেন্টস নেই। রিমান্ডের আবেদনে যেসব তথ্য উপাত্ত থাকা প্রয়োজন সেগুলো নেই। নির্বাচন কমিশনে কী কী অনিয়ম হয়েছে এটা তো একজন এসআই তদন্ত করতে পারেন না। তারা শুধু তথ্য চাইতে পারেন।
এর উত্তরে পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, আইও তার তদন্ত চালিয়ে যাবেন। এটা তার কাজ। আদালত এই তদন্তের ওপর নির্ভর করে সবকিছু দেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন আদালত কী করবেন। নূরুল হুদা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।
এদিন শুনানি শেষে বিকেল ৪টা ৪২ মিনিটের দিকে বিচারক ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে এজলাস ত্যাগ করেন।
এর আগে গত ২২ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে নূরুল হুদার বাড়িতে গিয়ে ‘স্থানীয় জনতা’ তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরদিন আদালতে তোলা হলে তার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিএমএম আদালত।
প্রসঙ্গত, সাবেক সচিব নূরুল হুদা ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দেশের দ্বাদশ সিইসি। তার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের সব ভোট হয়।