ইরানে শাসক বদলের পশ্চিমা চেষ্টা কেন উল্টো ফল দেবে
Published: 29th, June 2025 GMT
২২ জুন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এ হামলার মধ্য দিয়ে অনেকের বহুদিনের আশঙ্কাটি বাস্তবে রূপ নিল। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ক্রমশ তীব্র হতে থাকা আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ল।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানে হামলা ছিল সীমিত পরিসরে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইরানের ‘শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে’ কোনো চেষ্টা করছে না। তবে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস অন্য কিছু বলে।
ইসরায়েল বারবার বিভ্রান্তিকর গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে টেনে এনেছে। প্রথমে ইরাকে, এখন ইরানে।
এই নজির এবং ইরানের দিকে থেকে বলা ‘চিরস্থায়ী পরিণতি’র হুমকি বিবেচনায় নিলে যুক্তরাষ্ট্র যে এখানেই থেমে যাবে, সেটা মনে হয় না। বরং ইসরায়েলের বহুদিনের লক্ষ্যের (ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের পতন) সঙ্গে ওয়াশিংটনের লক্ষ্য একবিন্দুতে এসে মিলে যেতে পারে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অপসারণ হতে পারে।
আরও পড়ুনইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ চীন কেন দূরে বসে দেখেছে২৭ জুন ২০২৫যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে এ ধরনের উদ্দেশ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। কিন্তু ইতিহাসে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই ইসরায়েলের কৌশলগত লক্ষ্য বাস্তবায়নে সমর্থন দেয়। ইরানের ক্ষেত্রে দেখা গেল, প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে ইরানের সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র।
বাস্তবেও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। এ হামলার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ২৩ জুন ইরান মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থাপনায় ‘প্রতীকী’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর মধ্যে ছিল কাতারের আল-উদেইদে সামরিক ঘাঁটি ও ইরাকের কিছু লক্ষ্যবস্তু।
ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পরবর্তী উত্তরসূরি কে হবেন, তা এখনো অনিশ্চিত। কিন্তু এটা প্রায় নিশ্চিত যে তিনি কওম শিক্ষাকেন্দ্র থেকেই আসবেন। এটি ইরানে শিয়াদের প্রধান ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র। রুহুল্লাহ খোমেনির আদর্শ, বিশেষ করে বিলায়াত-ই-ফকিহ সম্পর্কে তাঁর ব্যাখ্যা এই শিক্ষাকেন্দ্র প্রচার করে চলেছে।যাহোক, সংঘাত যদি আরও তীব্র রূপ নেয়, তাহলে ওয়াশিংটন সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে, যেটিকে অনেকে বলছেন ‘চূড়ান্ত সমাধান’। অর্থাৎ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা আনার নামে ইরানে সরকার উচ্ছেদ।
যদিও সোমবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু সেটা যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। এর কারণ হলো, এ সংঘাতের পেছনে নিহিত উত্তেজনাগুলো এখনো রয়ে গেছে এবং হামলার পেছনে বড় যে কৌশলটা আছে, সেটা অপরিবর্তিত রয়েছে।
ইরানে সরকার পরিবর্তন করা গেলে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আসবে, এই প্রভাবশালী ধারণা অনেকের মধ্যে (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আইনপ্রণেতারা) এখনো বদ্ধমূল রয়েছে।
যাহোক, ভালি নাসরের মতো পণ্ডিতেরা অনেক দিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন, এ ধারণা একটি বিপজ্জনক ও বাস্তবতাবিবর্জিত কৌশলের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে।
এটি গভীর একটি প্রশ্নকেও সামনে আনে। ইরানে সরকার পরির্তন সত্যিই কি ইসলামি প্রজাতন্ত্রের মতাদর্শিক কাঠামোকে ভেঙে দিতে পারবে? এ প্রশ্ন নীতিনির্ধারক মহল প্রায়ই উপেক্ষা করে।
আরও পড়ুনইরান, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র—কে জিতল এই যুদ্ধে২৪ জুন ২০২৫মতাদর্শিক ধারাবাহিকতাখামেনির অপসারণের মধ্য দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, এমন ধারণার মধ্যে বড় গলদ আছে।
‘বিলায়াত–ই–ফকিহ’ ধারণাটি ইরানি বিপ্লবের মতাদর্শিক ভিত্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে। এই ধর্মতাত্ত্বিক নীতিটাই ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের মেরুদণ্ড।
এটি কয়েক শতাব্দীপ্রাচীন শিয়া মতবাদের দ্বাদশ ইমামীয় ধারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এই মতবাদ অনুসারে, দ্বাদশ ইমাম মুহাম্মদ আল-মাহদির অন্তরালে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রবীণ ইসলামি বিচারকদের জনগণের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।
১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইরানি বিপ্লবের সময় বিলায়াত-ই-ফকিহ ধারণাটি সরাসরি রাজনৈতিক পরিসরে যুক্ত করা হয়। এর আগপর্যন্ত সেটি মূলত ধর্মীয় জ্ঞান ও চিন্তার জগতে সীমাবদ্ধ ছিল।
যদিও শিয়া আলেমদের মধ্যে বিচারকদের রাজনৈতিক ভূমিকা কতটুকু হবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইরাকের নাজাফের গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ আলী সিস্তানি এর রাজনৈতিক প্রয়োগকে সমর্থন করেন না। তবে এ ক্ষেত্রে একটি সাধারণ ঐকমত্য হলো, ইমামের অনুপস্থিতিতে শিয়া মুসলমানদের ধর্মীয় ও আত্মিক পথনির্দেশনার জন্য সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ আলেমকে (মারজা আল-তাকলিদ) অনুসরণ করা উচিত।
আরও পড়ুনইরান কিছুই ভুলবে না, সব মনে রাখবে২৪ জুন ২০২৫ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পরবর্তী উত্তরসূরি কে হবেন, তা এখনো অনিশ্চিত। কিন্তু এটা প্রায় নিশ্চিত যে তিনি কওম শিক্ষাকেন্দ্র থেকেই আসবেন। এটি ইরানে শিয়াদের প্রধান ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র। রুহুল্লাহ খোমেনির আদর্শ, বিশেষ করে বিলায়াত-ই-ফকিহ সম্পর্কে তাঁর ব্যাখ্যা এই শিক্ষাকেন্দ্র প্রচার করে চলেছে।
অন্যভাবে বলা যায়, আলী খামেনিকে সরালেও ব্যবস্থাটি বদলাবে না।
কারণ, ইরান সরকারের এই মতাদর্শিক ভিত্তি শুধু কোনো একক নেতার ওপর নির্ভর করে না। এই মতাদর্শ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইরানের শিয়া মুসলমানদের চিন্তার মধ্যে প্রোথিত এবং রাষ্ট্রের কেন্দ্রে বিপ্লবী মতাদর্শ পুনরুৎপাদন করে চলবে।
প্রভাব সীমান্ত পেরিয়েওইরানের বৈশ্বিক সফট পাওয়ারকে (সাংস্কৃতিক, আদর্শিক, কূটনৈতিক প্রভাব) প্রায়ই গভীরভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়। অনেক রাষ্ট্রেরই প্রবাসে তাদের জনগোষ্ঠী রয়েছে। কিন্তু প্রবাসে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে আদর্শিক আনুগত্য সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে ইরান অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছে।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের প্রভাব ইরানের সীমানা ও শিয়া জনগোষ্ঠীর গণ্ডি পেরিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। বৈশ্বিক রাজনীতিতে এটি ছিল একটি রূপান্তর সৃষ্টিকারী (বিশেষ করে মুসলিমদের জন্য, প্রধানত শিয়াদের জন্য) মুহূর্ত। এই বিপ্লব (বিশেষ করে বিলায়াত-ই-ফকিহ মতবাদের ক্ষেত্রে) গভীর ধর্মতাত্ত্বিক ও দার্শনিক তাৎপর্য নিয়ে এসেছিল।
যদিও অনেক শিয়া বিলায়াত-ই-ফকিহ মতবাদ নিয়ে খোমেনির রাজনৈতিক ব্যাখ্যাকে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু অনেকে বিপ্লবের প্রতি জোরালো মতাদর্শিক আনুগত্য বজায় রেখে চলেছেন।
এই আনুগত্য কেবল ইরানেই সীমাবদ্ধ নয়, পাকিস্তান, লেবানন, ভারত, ইরাক ও আরও অনেক দেশের শিয়া জনগোষ্ঠী এখনো ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন২৫০০ বছরের পুরোনো দুশমনি: ইসরায়েল কি ‘মরদখাই’? ইরান কি ‘হামান’?১৭ জুন ২০২৫ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায়—এই বিপ্লবের প্রতি সমর্থন শুধু সেখানে বাস করা ইরানিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটাই ইরানকে অন্যান্য মুসলিম-অধ্যুষিত দেশ থেকে আলাদা করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সুন্নি মুসলিমরা হয়তো মক্কা ও মদিনার প্রতি, তাঁদের অনেকে হয়তো ওহাবি ঐতিহ্যের প্রতি আধ্যাত্মিক টান অনুভব করতে পারেন, কিন্তু খুব কমসংখ্যকই সৌদি শাসকগোষ্ঠীকে সমর্থন দেবেন।
এর বিপরীতে, ইসলামি বিপ্লবের প্রতি প্রশংসা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এবং প্রবাসে থাকা শিয়াদের মধ্যে দেখা যায়। জাতীয় আনুগত্যের কারণে নয়, বরং আদর্শিক ও আধ্যাত্মিক সংহতির ভিত্তিতে বিশ্বজুড়ে শিয়ারা ইসলামি বিপ্লবের প্রতি সমর্থন জানায়।
যদি বাইরের কোনো কোনো শক্তি ইরানে সরকার উৎখাত করে, তাহলে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি মতাদর্শিক সমর্থন আরও গভীর হবে। বাইরের কোনো শক্তি যদি ইরানে বিকল্প কোনো সরকার চাপিয়ে দেয়, তাহলে বিশ্বজুড়ে শিয়া জনগোষ্ঠীদের কাছ থেকে সেটা ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যাত হবে।
বৈশ্বিক নেটওয়ার্কবৈশ্বিক পৃষ্ঠপোষকদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে ইরান, যা এখন ছয়টি মহাদেশজুড়ে বিস্তৃত।
বুয়েনস এইরেস থেকে জাকার্তা, আফ্রিকা থেকে ইউরোপ, লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক—এই নেটওয়ার্কগুলো খামেনির অনুসারীদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলেছে।
শিয়া সম্প্রদায়গুলো নানা বাধার মুখে পড়তে পারে, কিন্তু তাদের সঙ্গে ইরানের যে আদর্শিক বন্ধন আছে, সেটা অটুট থাকবে।
এই নেটওয়ার্কগুলো শুধু আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনাই দেয় না, দৈনন্দিন জীবনের নানা বিষয়ে ব্যবহারিক পরামর্শও দেয়। এমনকি যদি ইরানের বর্তমান শাসকেরাও বদলেও যায়, এই নেটওয়ার্কগুলো হঠাৎ করে বিলীন হয়ে যাবে না।
সবচেয়ে জরুরি প্রশ্নটিই রয়ে গেছে, ইরানে সরকার পরিবর্তন হলে আসলে কী অর্জন হবে? বাস্তবতা হলো, ইরানে সরকার বদল হলে দেশের ভেতরে ও বিশ্বে বর্তমান সরকারের প্রতি মতাদর্শিক সমর্থনের যে ভিত্তি, সেটা দুর্বল হবে না।
আরও পড়ুনকোনো ইহুদিরাষ্ট্র ৮০ বছর টেকে না—যে ভয়ে ভীত ইসরায়েল০৬ নভেম্বর ২০২৩ইরানে সরকার পরিবর্তন যদি সত্যিই ঘটে, তাহলে তাতে নেতানিয়াহুর সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙক্ষা আর ইসরায়েলের অতিডানপন্থী সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছাড়া আর কার স্বার্থে লাভ হবে?
এটা সত্যি যে ইরানের সমাজে অবশ্যই বড় ধরনের অসন্তোষ রয়েছে। বিশেষ করে সেক্যুলার ও সংস্কারপন্থীদের মধ্যে অসন্তোষটা তীব্র।
অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক দমননীতি এবং নাগরিক স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ—এসব গভীর হতাশা তৈরি করেছে। এই বাস্তবতাগুলো উপেক্ষা করা চলবে না।
কিন্তু বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া সরকার পরিবর্তন মধ্যপ্রাচ্যে কখনোই কার্যকর হয়নি। ইরানও এর ব্যতিক্রম হবে না। বরং এমন একটি পদক্ষেপ প্রায় নিশ্চিতভাবেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, যার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
জাফর এ মির্জা ধর্ম, রাজনীতি ও অভিবাসনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ
মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ মনোজ দে
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র জন ত ক ন টওয় র ক ইসর য় ল র ব শ ষ কর জনগ ষ ঠ আদর শ ক দ র জন লক ষ য মতব দ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
ভাগাড়ের দুর্গন্ধে বাড়িতে টেকাই দায় গ্রামবাসীর
ব্যস্ততম ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ধরে সাঁইসাঁই করে ছুটে চলে যানবাহন। এসব যানবাহনের যেসব চালক নিয়মিত সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করেন, যেন ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের কসমচ এলাকায় এলে গতি বাড়িয়ে দেন। দ্রুত ওই এলাকাটি ছাড়তে পারলেই যেন বাঁচেন তারা। পৌরসভার ফেলা বর্জ্যের তীব্র দুর্গন্ধে আশপাশের বাতাসও যেন ভারী।
কসমচ এলাকার ময়লার ভাগাড়ের পাশেই রয়েছে বসতবাড়ি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদ। চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন আশপাশের বাসিন্দারা। ময়লার তীব্র গন্ধ তো আছেই, সঙ্গে আছে মশা-মাছির উপদ্রব। বাসিন্দারা নানা সময়ে এখানে ময়লা ফেলা বন্ধের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে উপজেলা ও পৌর প্রশাসনের কাছে জমাও দিয়েছেন। করেছেন লিখিত আবেদনও। কিন্তু এ পর্যন্ত মেলেনি কোনো সমাধান।
এসবি লিংকের একটি বাসের চালক মজিবুর রহমানকে ২২ জুন পাওয়া যায় কসমচ এলাকায়। তাঁর কোম্পানির বাসগুলো ঢাকা থেকে ধামরাই, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া হয়ে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার মামুননগর পর্যন্ত চলাচল করে। মজিবুর বলেন, ‘ময়লার ভাগাড়ের পাশ দিয়ে যেতেই দুর্গন্ধ বাসের ভেতর ঢুকে পড়ে। এ সময় যাত্রীরা নাক-মুখ চেপে রাখেন। অনেক সময় আমরাও (চালক) চেপে রাখি।’ কিন্তু সবাই এই গন্ধ সহ্য করতে পারেন না জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকে বমি করে দেন। অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন ধরেই গন্ধের কারণে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পরিবহনের যাত্রী-চালকরা তো ওই এলাকা ছাড়তে পারলেই রক্ষা পান। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের সেই উপায় নেই। কুল্লা-বান্দিমারা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ, আওলাদ হোসেনসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা বলেন, দুর্গন্ধের কারণে বাড়িতে থাকাই দায়। নাক-মুখ চেপে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। দুর্গন্ধের কারণে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করছেন। শিশুরা পড়াশোনার জন্য বিদ্যালয়ে যেতে চায় না। মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেও অসুবিধা হয়। পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের দাবি, ময়লার ভাগাড়টি যেন সরিয়ে অন্য জায়গায় নেওয়া হয়।
এই পথেই নিয়মিত যাত্রী নিয়ে চলাচল করেন অটোরিকশা চালক সোহরাব হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখানে প্রচুর গন্ধ, মাঝেমধ্যে গন্ধের কারণে স্টিয়ারিং ধরব, নাকি নাক চেপে ধরব– তা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই। এতে দুর্ঘটনার ভয়েও থাকি।’
সম্প্রতি গ্রামবাসীর পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন আনোয়ার হোসেন সুজন। তিনি বলেন, পৌরসভার ময়লা এখানে ফেলার কারণে প্রচুর দুর্গন্ধ হয়। আশপাশের বাড়িতে মানুষের থাকতে অসুবিধা হয়। মশা-মাছি গিয়ে খাবারে বসে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথাও জানান। আনোয়ার হোসেনও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদে যেতে লোকজনের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
ধামরাইয় পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা ইউএনও মামনুন আহমেদ অনীকের ভাষ্য, পৌর এলাকার বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। যে কারণে বাধ্য হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে ফেলা হয়। তিনি ওই এলাকার লোকজনের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। ভাগাড়টি সরিয়ে নেওয়ার জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। সেটি পাওয়া গেলেই স্থানীয় লোকজনের দুর্ভোগ কমতে পারে।