হঠাৎ করে পেট্রোল ও অকটেনের সংকট দেখা দিয়েছে। রাজধানীর অধিকাংশ পাম্প ঘুরে জ্বালানি তেল পাচ্ছেন না বাইক ও অন্যান্য গাড়িচালকরা। অনেক পাম্পে তেল না থাকার ব্যাপারে সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়েছে। 

পাম্প মালিকরা বলছেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) চাহিদা অনুসারে তেল সরবরাহ না করায় সংকট দেখা দিয়েছে। তবে বিপিসি বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের সংকটে একাধিক তেলবাহী জাহাজ সময়মতো দেশে আসেনি। এ ছাড়া তেলের দাম বাড়ার আশঙ্কায় অনেক পাম্প মালিক তেল মজুত করেছেন– এমন হতে পারে। তবে দাম অপরিবর্তিত রেখে রোববার জুলাই মাসের তেলের দাম ঘোষণা করা হয়েছে। 

রোববার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পাম্পে পেট্রোল ও অকটেন নেই। জ্বালানি সংগ্রহে চালকদের এক পাম্প থেকে আরেক পাম্প ঘুরতে দেখা গেছে। কয়েকটি পাম্পে পেট্রোল মিললেও অকটেন ছিল না বললেই চলে। অনেকেই এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে জ্বালানি সংগ্রহ করেছেন। 

মালিবাগ মোড়ে দুপুরে পাম্পে কথা হয় প্রাইভেটকারচালক রাতুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, বেলা ১১ থেকে বাড্ডা, রামপুরার বিভিন্ন পাম্প ঘুরে মালিবাগের পাম্পে এসে জ্বালানির সন্ধান মিলেছে। প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা ধরে লাইনে রয়েছেন। সামনে আরও চারটি গাড়ি রয়েছে। এর পর হয়তো তেল মিলবে। 

তেজগাঁওয়ে কথা হয় পাঠাও রাইডার আকবরের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাইকে তেল প্রায় শেষের পথে। সকাল থেকে সাতটি পাম্পে ঘুরেও অকটেন মেলেনি। পরে আসাদগেটের পাম্পে তেল পেয়েছি। 

দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদার ৯২ শতাংশ পূরণ হয় আমদানি করা তেলের মাধ্যমে। যার অধিকাংশই আনা হয় সৌদি আরবভিত্তিক সৌদি অ্যারাবিয়ান অয়েল কোম্পানি (সৌদি আরামকো) এবং আমিরাতের আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (অ্যাডনক) কাছ থেকে। এ ছাড়া আটটি দেশের কাছ থেকে জিটুজি ও আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে তেল আমদানি করা হয়।

বহির্বিশ্ব থেকে দেশে জ্বালানি তেল আমদানির অন্যতম রুট হলো হরমুজ প্রণালি। সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব দেশ এই প্রণালি ব্যবহার করে তেল রপ্তানি করে থাকে। ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে হামলা করার পর দেশটি হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুঁশিয়ারি দেয়। পরে ২২ জুন ইরানের পার্লামেন্ট প্রণালি বন্ধের অনুমোদন দেয়। এর ফলে তেলবাহী জাহাজ চলাচল ব্যাহত হয়। 

এ বিষয়ে বিপিসির একজন পরিচালক বলেন, ৩০ হাজার টনের একটি অকটেনবাহী জাহাজ ২৭ জুন দেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু জাহাজটি আসবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে। দেশে দৈনিক অকটেনের চাহিদা ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টন। ওই জাহাজ এলেই ২০-২৫ দিনের অকটেন মজুত হয়ে যাবে। 

তবে বিতরণ কোম্পানি পদ্মার একজন ব্যবস্থাপক বলেন, প্রতি মাসের শেষ দিকে বিপিসি পরের মাসের তেলের দর ঘোষণা করে। ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বাড়বে। তাই তেল মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। এ জন্য বিপিসি দাম অপরিবর্তিত রেখে নতুন দর রোববারই ঘোষণা করেছে।

জানতে চাইলে পেট্রোল পাম্প ও ট্যাঙ্কলরি মালিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক নাজমুল হক বলেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে তেলবাহী জাহাজ সময়মতো দেশে আসতে পারেনি। তাই তেল সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। তবে এটা সাময়িক সমস্যা, দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।

জুলাইয়ে তেলের দাম অপরিবর্তিত থাকবে 

ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম জুলাই মাসে অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থাৎ, চলতি মাসের দামেই আগামী মাসে এসব জ্বালানি মিলবে। ‌রোববার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে।

এর আগে চলতি মাসের জন্য কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ২ টাকা কমিয়ে ১০২ টাকা এবং অকটেন ও পেট্রোলের দাম ৩ টাকা করে কমিয়ে যথাক্রমে ১২২ টাকা ও ১১৮ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। 

বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গত বছরের মার্চ থেকে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ করে আসছে সরকার। এই হিসেবে প্রতি মাসে নতুন দাম ঘোষণা করা হয়। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল ও অকট ন অকট ন র র বব র

এছাড়াও পড়ুন:

বিপ্লব বদলালেন উত্তরবঙ্গের হালকা প্রকৌশলশিল্প

বগুড়ার প্রকৌশলী মো. মাহমুদুন্নবী বিপ্লব করোনা মহামারির সময় তৈরি করেন অক্সিজেন কনসেনট্রেটর। বগুড়া থেকে বিধিনিষেধের সময়ে রাত জেগে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর তৈরি করেন তিনি। দেশি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে নিজের মেধা দিয়ে এক মাসেই বহনযোগ্য অক্সিজেন কনসেনট্রেটর তৈরি করেন মো. মাহমুদুন্নবী। এই অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের মাধ্যমে ঘরের বাতাস থেকেই প্রতি ঘণ্টায় ৩০০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন তৈরি করা যায়। এটি ব্যবহারও বেশ সহজ। একটি রেগুলেটরের মাধ্যমে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে যন্ত্রটি। ৩০ কেজি ওজনের কম এই অক্সিজেন কনসেনট্রেটর যেকোনো হাসপাতালে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। খরচ পড়েছে ৭০ হাজার টাকা।

১৯৯৬ সালে বগুড়া পলিটেকনিকে শিক্ষকতার পাশাপাশি মো. মাহমুদুন্নবী রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং ওয়ার্কশপ গড়ে তোলেন। তার ওয়ার্কশপেই তিনি বন্যা-পূর্ব সতর্কতার একটি বিশেষ যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। মাত্র পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই যন্ত্র ব্যাটারি ও সৌর প্যানেলে চলে। মাহমুদুন্নবীর বন্যা-পূর্ব সতর্কীকরণ যন্ত্র ২০১৮ সালে বগুড়ায় ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবকের পুরস্কার পায়। মাহমুদুন্নবীর অন্যান্য উদ্ভাবনের মধ্যে বেবি ইউরিন অ্যালার্ম বেড, রোগীর শরীরে পুশ করার স্যালাইন অ্যালার্ম সিস্টেম, জলজ প্রাণীর জন্য পানিতে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ওয়াটার অ্যারোয়েটর, করোনা প্রতিরোধে অটোমেটিক স্যানিটাইজিং মেশিন, প্যারালাইজড রোগীর ব্যবহারের জন্য অটোমেটিক হ্যান্ড এক্সারসাইজ, ডিজিটাল ডোর লক, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেমের জন্য লক রিং টুলস অন্যতম। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের নিবিড় পরিচর্যা ওয়ার্ডে (আইসিইউ) ব্যবহারের জন্য ভেন্টিলেটর মেশিন প্রস্তুত করছেন তিনি।

ধীরে ধীরে উত্তরবঙ্গের অন্যতম বড় ওয়ার্কশপ হিসেবে গড়ে তুলেছেন কাঁকন রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং ওয়ার্কশপকে। মাহমুদুন্নবী বলেন, ‘এখন উত্তরবঙ্গে অনেক বড় শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সমস্যা ও ত্রুটি মেরামতের জন্য বিদেশ থেকেও প্রকৌশলী আনা হতো। সেই সমস্যা সমাধানে আমরা স্থানীয় প্রকৌশলীরা কাজ করছি।’ আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার ২০২৩–এ মো. মাহমুদুন্নবী সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অত্যাবশ্যক পরিষেবা ঘোষণা কী, আন্দোলন থামাতে এটা কীভাবে কাজ করে
  • এক দিনেই রপ্তানি হয়নি সাড়ে তিন হাজার কনটেইনার
  • পর্যটন শহরে করোনা, ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ
  • খেলাপি ঋণ ও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিতে ব্যবসায়ের পরিবেশ সংকুচিত হচ্ছে: ঢাকা চেম্বার
  • চীন–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যচুক্তিতে সই করেছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প
  • ভারত-রাশিয়ার মধ্যে আরও এস-৪০০ সরবরাহ নিয়ে আলোচনা
  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর
  • বেড়েছে চালের দাম
  • বিপ্লব বদলালেন উত্তরবঙ্গের হালকা প্রকৌশলশিল্প