কুলাউড়ায় মনু নদীর বুকে জাগা চরের ধূসর প্রান্তর থেকে ঝিলিক দেয় রুপালি তারা। সেখানে জমেছে নদীর তলার বালু; প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় যে কোনো সময় নিলামযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। তবে প্রশাসনের হেফাজতে থাকা অনুমতি ছাড়া সরকারি প্রকল্পে সেই বালু ব্যবহার করছেন ঠিকাদার।
আরাধনা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের জব্দকৃত ওই বালুর বাজারমূল্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা। যার মধ্যে ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকার বালু দিয়ে ১০ হাজার বস্তার মতো জিও ব্যাগ তৈরি করা হয়েছে নদীর পার ভাঙনরোধে ব্যবহারের জন্য। এতে বরাদ্দের বড় অংশ পকেটস্থ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
চলতি বছরের ২১ মে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা থেকে মনু নদীর ভাঙন থেকে মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর, কুলাউড়া উপজেলা রক্ষা এবং ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন (প্রথম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মনু নদীর চর খনন থেকে উত্তোলন করা মাটি-বালু নিলামের জন্য শর্তাবলি অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি আহ্বান করা হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চর থেকে খনন করার পর জব্দ করা বালু নিলাম হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে তাজপুর চরে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯ ঘনফুট বালু জব্দ করা হয়। নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজে সেখান থেকে বালু নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজ। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই তারা উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কটারকোনা মৌজার কটারকোনা বাজারের উত্তরপাশে তাজপুর চরে থাকা বালু এ ক্ষেত্রে কাজে লাগায়।
শনিবার উপজেলার কটারকোনা এলাকায় গিয়ে মনু নদীর চরের একটি স্থান থেকে বালু নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন জানান, দুই মাস ধরে জব্দ করা ওই বালু থেকে ১২-১৩ লাখ টাকার বালু সরিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
হাজীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তার তদারকির অভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জব্দ করা ওই বালু অন্যত্র ব্যবহার করেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে সরাসরি কেউ তাদের বাধা দেওয়ার সাহস পায়নি। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক রিপন আহমদের ভাই সিপন আহমদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি।
হাজীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মতিউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে এ ব্যাপারে আপত্তি জানানো হয়েছে। তাদের মালিকপক্ষ জানিয়েছে, ওই বালু ইজারা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানানো হয়েছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহরুল হোসেন বলেন, বিষয়টি জানার পর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে ওই বালু নেওয়া 
বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 
যে বালু জিও ব্যাগে ভরা হয়েছে ফেরত দিতে হবে।
ইউএনও মো.

মহিউদ্দিন বলেন, অনুমতি ছাড়া কোনো অবস্থাতেই চর খননের জব্দকৃত বালু অন্য কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই। সরকারের বৈধ প্রকল্পের কাজে এমন অবৈধ পন্থা অবলম্বন দুঃখজনক। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র প রকল প ওই ব ল উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দায়সারা সেবা, চিকিৎসা দেন অফিস সহায়ক

কোথাও রোগীকে সেবা দিচ্ছেন অফিস সহায়ক, কোথাও আবার স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে অফিস সহায়কের কাজ করছেন। অধিকাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন জরাজীর্ণ। কোনোটির দেয়ালে ফাটল আবার কোনোটির ছাদ চুইয়ে পানি ঝরছে। এর মধ্যেই সীমিত জনবল নিয়ে দায়সারা সেবাতে চলছে কার্যক্রম।

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অবস্থা এটি। দায়সারাভাবেই চলছে এসব কেন্দ্রে চিকিৎসা। উপজেলার
পাঁচটি ইউনিয়নের ছয়টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। এই ছয় কেন্দ্র হলো পাঁচুয়ারি, ধলঘাট, গুরুদাশ দত্ত, কেলিশহর, পটিয়া সদর ও বুধপুরা।

উপজেলার চিকিৎসকদের সূত্র জানায়, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিটিতে চিকিৎসা কর্মকর্তা, উপসহকারী কমিউনিটি কর্মকর্তা, ফার্মাসিস্ট ও অফিস সহায়কের (এমএলএস) পদ থাকার কথা। তবে ছয়টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাঁচটিতে চিকিৎসা কর্মকর্তা নেই। বাকিগুলোতেও লোকবলসংকট। একমাত্র ধলঘাট ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে লোকবল রয়েছে।

সম্প্রতি এক সকালে উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান এ প্রতিবেদক। এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থান চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে।

মহাসড়কসংলগ্ন সরু গলি পেরিয়ে যেতেই দেখা যায়, ভাঙাচোরা ভবনের সামনের কক্ষে একা বসে আছেন অফিস সহায়ক জিন্নাত শাহনাজ আক্তার। সকাল ১০টা ৪৭ মিনিটে প্রতিবেদকের সঙ্গে পরিচয়পর্ব শেষে তিনি জানান, চিকিৎসক এখনো আসেননি। তাই তিনিই প্রতিদিন রোগীর বর্ণনা শুনে নাপা, ভিটামিনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ দিচ্ছেন।

ভবনের ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখা যায়, মেঝের পাকা আস্তর উঠে গেছে। দুটি অফিসকক্ষও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। শৌচাগারও তালাবদ্ধ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক প্রণব ঘোষ সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন আসেন, বাকি সময় কেন্দ্র কার্যত ফাঁকা থাকে। ওই দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে অবস্থান করে তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে জিন্নাত শাহনাজ আক্তার বলেন, ‘একদিকে ভবনের ঝুঁকি, অন্যদিকে সাপের ভয়। একাধিকবার সাপ ঢুকেছে আমার রুমে। একবার তো সাপ পেঁচিয়ে ফেলেছিল, ভাগ্যক্রমে রোগীর সহায়তায় রক্ষা পাই।’

অবশ্য শুধু পাঁচুরিয়া নয়। ধলঘাট ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিত্রও একই। কেন্দ্রটিতেও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ছাদের পলেস্তারাও খসে পড়ছে। আবার দরজা-জানালাও ভাঙা। পাশের বড় হলরুমটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত। জানালা, দরজাসহ নানান আসবাব ইতিমধ্যে চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ কর্মচারীদের।

জানতে চাইলে ওই কেন্দ্রের উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা (সাকমো) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। এখানে বসে কাজ করতে ভয় লাগে। ২০১৫ সালে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর একে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও এখনো আমাদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ৩০–৩৫ জন রোগী চিকিৎসা নেন। স্থানীয় বাসিন্দা আতাউর রহমান বলেন, তাঁরা নিয়মিত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নেন। এখান থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধও পান। এই কেন্দ্রের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। ভেতরেই ঢুকতেই ভয় লাগে।

ধলঘাট গুরুদাশ দত্ত ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রেও চিকিৎসা–সেবার দায়িত্বে রয়েছেন একজন উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা। ওই কেন্দ্রে জনবল বলতে তিনি একাই। অফিস সহায়ক না থাকায় ২০১৬ সাল থেকে স্থানীয় প্রবীণ চিত্ররঞ্জন ওয়াদ্দেদার স্বেচ্ছায় রোগীদের ওষুধ বিলির কাজ করছেন।

অন্যদিকে কেলিশহরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিন বছর ধরে চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ শূন্য। এখানেও একজন উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা ও একজন অফিস সহায়ক দিয়ে কোনোমতে সেবা চলছে। পটিয়া সদর স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও একই অবস্থা। অফিস সহায়ক ও ফার্মাসিস্টকে দীর্ঘদিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। বুধপুরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসকও প্রেষণে রয়েছেন। এটিতেও কেবল একজন উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।

চিকিৎসাকেন্দ্রের এই অচলাবস্থায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা। পটিয়া সদর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা কুতুব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চিকিৎসক থেকে উপযুক্ত সেবা ও ওষুধ দুটোই পান। তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত চিকিৎসক পাওয়া যায় না। এ কারণে অনেক সময় তাঁদের চিকিৎসা না নিয়েই ফেরত যেতে হয়।

এসব অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ, বাকি কেন্দ্রগুলোও জরাজীর্ণ। বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে প্রেষণে অন্য জায়গায় পাঠানো হয়েছে। কনসালট্যান্টের পদও শূন্য। এ কারণে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দায়সারা সেবা, চিকিৎসা দেন অফিস সহায়ক