প্রথম আলো নিয়ে অস্পষ্ট প্রতিবেদন বিভ্রান্তি তৈরি করেছে
Published: 29th, June 2025 GMT
ভুয়া সংবাদ প্রত্যাহারসংক্রান্ত গবেষণায় প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জড়িয়ে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে জানাল প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)। সংস্থাটি আজ রোববার এক ব্যাখ্যায় বলেছে, প্রত্যাহার করা সব সংবাদ অপতথ্য না–ও হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে ‘কোনো কোনো গণমাধ্যমে অসম্পূর্ণ ও অস্পষ্ট প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে’।
রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) সেমিনার কক্ষে ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক অপতথ্যের গতি-প্রকৃতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে গতকাল শনিবার একটি চলমান গবেষণায় পাওয়া তথ্য তুলে ধরেন সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি) একটি প্রকল্পের পরামর্শক মামুন-অর-রশীদ। তিনি গবেষণাটি করছেন পিআইবির পক্ষে।
মামুন-অর-রশীদের উপস্থাপনার একটি অংশে বলা হয়, ছয় মাসে প্রথম আলো সবচেয়ে বেশি—১২১টি ভুয়া সংবাদ প্রত্যাহার করেছে। এর পরে রয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, যুগান্তর ও সমকাল। কিন্তু একই স্লাইডে যে লেখচিত্র উপস্থাপন করা হয়, সেখানে দ্বিতীয় অবস্থানে কালবেলা, তৃতীয় ইত্তেফাক ও চতুর্থ অবস্থানে যুগান্তরকে দেখানো হয়।
পিআইবির সেমিনারের পর কয়েকটি গণমাধ্যম ভুয়া সংবাদ প্রত্যাহারের পরিসংখ্যান ধরে খবর প্রকাশ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি আলোচনা হয়। তথ্য যাচাইকারী বা ফ্যাক্ট চেকারদের কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট গবেষণার মেথড বা পদ্ধতিতে গলদ থাকতে পারে বলে উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। এমন পরিস্থিতিতে আজ সন্ধ্যায় পিআইবি ব্যাখ্যা দিয়ে বিবৃতি পাঠায়।
ভুয়া সংবাদ প্রত্যাহার বিষয়ে তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে শনিবারই গবেষকের সঙ্গে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তিনি আজ রাতে লিখিত বক্তব্যে প্রথম আলোকে বলেন, শনিবারের সেমিনারটি ঘিরে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশের ঘটনা ঘটেছে। তিনি এমনভাবে সংবাদ পরিবেশনের তীব্র নিন্দা জানান এবং আরও পেশাদার মনোবৃত্তি নিয়ে সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত বিবেচনায় প্রথম আলো সংবাদ প্রস্তুত ও পরিবেশনে সর্বাধিক কিউরেশন (যাচাই–বাছাই) করে থাকে। স্পষ্টীকরণ বিবৃতির পর আশা করি এ ব্যাপারে মিস কনসেপশন (ভুল ধারণা) থাকবে না।’
পিআইবি দীর্ঘ একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে। ‘“বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অপতথ্যের গতি-প্রকৃতি” বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা’ শিরোনামের বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, সেমিনারে মূল প্রবন্ধকারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা বক্তব্য দেন। কিন্তু এ নিয়ে কোনো কোনো গণমাধ্যমে অসম্পূর্ণ ও অস্পষ্ট প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
‘উপস্থাপনার একটি দিক হলো অনলাইন গণমাধ্যমে প্রত্যাহারকৃত সংবাদ ও অপতথ্যবিষয়ক ডেটার একটা তুলনামূলক চিত্র। কিন্তু এটা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম এমনভাবে সংবাদ পরিবেশন করেছে, যাতে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেও শিরোনাম করা হয়েছে’, বলা হয় ব্যাখ্যায়।
সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটের ৪০৪ বার্তা (404 Page Not Found) সংবলিত লিংক বিশ্লেষণের কথা উল্লেখ করে পিআইবির ব্যাখ্যায় বলা হয়, স্লাইডে উপস্থাপিত সংখ্যা প্রত্যাহারকৃত সংবাদ চিহ্নিত করে, যেগুলোর মধ্যে অপতথ্যও রয়েছে। সব ডেটা অপতথ্য না–ও হতে পারে, কিন্তু সব কটিই প্রত্যাহারকৃত সংবাদের নমুনা পরিসংখ্যান। বক্তব্যে এই ব্যাপারটি উল্লেখ করলেও প্রেজেন্টেশনের (উপস্থাপনা) স্লাইডের লেখায় তা উল্লেখ করা হয়নি, ফলে কিছু অস্পষ্টতার অবকাশ রয়ে যায়।
উল্লেখ্য, ৪০৪ বার্তার মানে সংশ্লিষ্ট লিংকে গিয়ে প্রতিবেদনটি আর পাওয়া যায়নি। এটা ‘ডেড লিংক’ নামে পরিচিতি। কেন ‘ডেড লিংক’ তৈরি হয়, জানতে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা জানান, কোনো সংবাদ প্রত্যাহার করলে যেমন সংশ্লিষ্ট লিংকে ‘৪০৪’ বার্তা আসতে পারে, তেমনি অন্য অনেক কারণ রয়েছে। অনেক সময় ওয়েবসাইট ‘রি-ডিজাইন’ করা, আর্কাইভ নীতি ও ব্রোকেন ইউআরএলসহ নানা কারণে ‘ডেড লিংক’ তৈরি হতে পারে। শুধু ভুয়া তথ্যের কারণে সংবাদ প্রত্যাহার করা হয় না, আরও কারণ থাকতে পারে।
প্রথম আলো গবেষক মামুন-অর-রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রথম আলোর ডেড লিংক চায় শনিবার। আজ রাতে তিনি তা পাঠান। লিংকগুলোর মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি যাচাই করে দেখা যায়, কিছু কনটেন্ট (আধেয়) একাধিকবার প্রকাশিত হয়েছে। বিভ্রান্তি এড়াতে একটি লিংক রেখে অন্যগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এর সঙ্গে ভুয়া সংবাদ প্রকাশ বা তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। কিছু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিরোনামের প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে রয়েছে।
প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন বলেন, কোনো সংবাদ প্রকাশের পর তা ভুয়া শনাক্ত হলে প্রথম আলো ঘোষণা দিয়ে তা প্রত্যাহার করে। প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকা ও অনলাইন সংস্করণের জন্য সংবাদ প্রত্যাহার, ভুল সংশোধন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারসহ নানা বিষয়ে নীতিমালা রয়েছে। প্রথম আলো সেসব নীতিমালা অনুসরণ করে। ভবিষ্যতে আরও সতর্কভাবে তা অনুসরণ করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল র প রক শ ত উপস থ প অপতথ য প আইব র একট
এছাড়াও পড়ুন:
অপতথ্য ও এআইয়ের অপব্যবহার রোধে আশা ও সীমাদ্ধতা, দুটিই দেখছে ইসি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য এবং এআইয়ের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) অপব্যবহার ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কাজ করছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এ ক্ষেত্রে আশা ও সীমাবদ্ধতা, দুটিই দেখছেন তিনি।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি আয়োজিত সংলাপের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় সানাউল্লাহ এ কথা জানান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন, তিনজন নির্বাচন কমিশনার এবং পাঁচটি দলের প্রতিনিধিরা এই পর্বে আলোচনায় অংশ নেন।
সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রথমত ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়িয়ে খারাপ তথ্যকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থী—উভয়ই নির্বাচনী আচরণবিধির আলোকে একটা অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করছেন, যেখানে তাঁরা আচরণবিধি প্রতিপালনের কথা বলেছেন। সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করলে অপতথ্যের প্রভাব কমানো যাবে বলে ইসি মনে করে।’
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় যতটুকু সক্ষমতা আমাদের আছে, এর পাশাপাশি সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে আমরা ইউএনডিপির (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি) যে প্ল্যাটফর্মটা আছে, সেটাও ব্যবহার করছি। তবে এটা খুব একটা সহজ কাজ নয় বর্তমান বিশ্বে। আমি ইসির পক্ষ থেকে অনেকগুলো ইলেকটোরাল ম্যানেজমেন্ট বডির (নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা পর্ষদ) সঙ্গে বৈঠক করেছি। সবারই উদ্বেগ এখন এটা যে কীভাবে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপপ্রয়োগ, অপব্যবহার, এআইয়েরর অপব্যবহার রোধ করা হবে। তবে আমরা যদি সবাই সচেতন থাকি, তাহলে কিছুটা অবশ্যই করা সম্ভব।’
‘প্রায় ৫০ শতাংশের উৎস দেশের বাইরে’
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, বর্তমান সময়ে তথ্যের প্রবাহ থামানো যাবে না। কারণ, ৫০ শতাংশের বেশির উৎস ট্রেসই (শনাক্ত) করা সম্ভব নয়; কোত্থেকে উৎপত্তি হচ্ছে, এটাই বের করা যাবে না। এটা একটা বৈশ্বিক বাস্তবতা। প্রায় ৫০ শতাংশের উৎস দেশের বাইরে। মেটাসহ (ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান) যতগুলো প্রোভাইডার আছে, এরা যে মানদণ্ডে একটা জিনিসকে সরিয়ে দেয়, সেই মানদণ্ডে বেশির ভাগই পড়ে না। তার মানে, চাইলেও সে সরাবে না কন্টেন্টটা।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘তাহলে আমরা কী করতে পারি? আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রথমত ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়িয়ে খারাপ তথ্যকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।...আমরা ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়াব, যেগুলো খারাপ তথ্য আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেগুলোর ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেটা সরানো সম্ভব, তা সরানো, যেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তার পরিবর্তে একটা সঠিক তথ্য যথাযথ সময়ে তুলে ধরা; যাতে মানুষ অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই কাজগুলো করব।’
ভোটার তালিকা ১৮ নভেম্বর
পোস্টাল ভোটিংয়ের নিবন্ধনের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার ইসি ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামের একটি অ্যাপ উদ্বোধন করতে যাচ্ছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, একটা উল্লেখযোগ্য সাড়া পাব।...যে প্রবাসী বাংলাদেশি ভাই–বোনেরা ইতিমধ্যে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত আছেন, তাঁরা চাইলে ভোট দিতে পারবেন। পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে ভোট দেওয়া যাবে।’
তবে গত ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রবাসীদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হতে আবেদন করেছেন, আপাতত তাঁরা ভোট দিতে পারবেন বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ৩১ অক্টোবরের পর যাঁরা হচ্ছেন, তাঁদের নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, ১৮ নভেম্বর একটা ভোটার তালিকা প্রণয়ন হয়ে যাবে।
অবশ্য নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, ‘দেশের ভেতরে যদি কেউ এখনো বাদ পড়ে থাকেন ভোটার তালিকায়, তাঁদের জন্য সুযোগ আছে। কারণ, আমাদের তফসিল ঘোষণার পরও আমরা ভোটার তালিকার একটা ফাইনাল ইভেন্ট (সংস্করণ) বের করব। তখন পর্যন্ত আমরা কাউকে পেলে নিয়ে নেব।’