সমাজে কোটিপতি থাকা উচিৎ নয়। কারণ, এটি অসমতার এক চরম রূপ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মেয়রপ্রার্থী ও ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানি। তিনি বলেন, ‘কোটিপতির ফলে একদিকে মানুষ বিপুল অর্থ অর্জন করে, অন্যদিকে অনেক মানুষ অভাবে থাকে।’

রোববার (স্থানীয় সময়) এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। এনবিসি নিউজের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে উপস্থাপক ক্রিস্টেন ওয়েলকার তাকে প্রশ্ন করেন- আপনি নিজেকে ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট বলেন। আপনি কি মনে করেন কোটিপতিদের থাকার অধিকার আছে?

উত্তরে মামদানি বলেন, ‘আমি মনে করি না আমাদের সমাজে কোটিপতি থাকা উচিৎ। কারণ, এটি অসমতার এক চরম রূপ। কোটিপতির ধারণা মানুষকে একদিকে বিপুল অর্থ অর্জনে সহায়তা করে, অন্যদিকে অনেককে দরিদ্র করে। আমাদের শহরে, রাজ্যে এবং গোটা দেশে আরও বেশি সমতা দরকার।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ধনীদের সঙ্গেও কাজ করতে প্রস্তুত, যেন আমরা সবাই মিলে একটি ন্যায়সঙ্গত শহর গড়ে তুলতে পারি।’

এই সপ্তাহে আমেরিকান রাজনীতি পর্যবেক্ষকদের চমকে দিয়ে মামদানি নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাটিক মনোনয়নের দৌঁড়ে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যান। নির্বাচিত হলে মামদানি হবেন নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম ও এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র।

এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে মামদানি বলেন, ‘নেলসন ম্যান্ডেলার ভাষায়: এটি সবসময়ই অসম্ভব মনে হয় যতক্ষণ না এটি হয়ে যায়। বন্ধুরা, এটি সম্পন্ন হয়েছে। আর আপনারাই এটি সম্ভব করেছেন। আমি গর্বিত নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাটিক মনোনীত প্রার্থী হতে পেরে।’

মিট দ্য প্রেস-এ তিনি আরও বলেন, নিউইয়র্কের প্রতি চারজনে একজন দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে, আর বাকিরা রয়ে গেছে এক অনিশ্চয়তার জালে। এই শহরকে এমন হতে হবে, যা প্রতিদিনের পরিশ্রমে যারা এটি গড়ে তুলছে তাদের নাগালের মধ্যে থাকে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ন উইয র ক স ট র ম মদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

শিশুদের বদ নজর থেকে বাঁচাতে

ইসলামে বদ নজর বা নজরে লাগা একটি বাস্তব বিষয় হিসেবে বিবেচিত, যা মানুষের হিংসা বা প্রশংসার দৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা, যারা দুর্বল ও সংবেদনশীল, তারা বদ নজরের প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

হাদিসে শিশুদের বদ নজর থেকে রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট দোয়া ও আমল বর্ণিত আছে। মহানবী (সা.) নিজে তাঁর নাতি হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর জন্য বদ নজর থেকে রক্ষার দোয়া পড়তেন।

শিশুদের বদ নজর থেকে রক্ষা করতে

ইসলামে বদ নজর থেকে রক্ষার জন্য কুরআনের আয়াত, হাদিসে বর্ণিত দোয়া এবং ‘রুকইয়া’ ব্যবহার করা হয়। শিশুদের জন্য নিচের দোয়া ও আমলগুলো বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ:

১. নবীজি (সা.)-এর শেখানো দোয়া

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) তাঁর নাতি হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর জন্য বদ নজর ও ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য এই দোয়া পড়তেন:
উচ্চারণ: আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক।
অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার মাধ্যমে তাঁর সৃষ্ট সব কিছুর ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭০৮)

পড়ার নিয়ম:

শিশুর কপালে বা শরীরে হাত রেখে এই দোয়া তিনবার পড়া।

প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় বা শিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার আগে পড়া।

দোয়া পড়ার পর শিশুর শরীরে হালকাভাবে ফুঁ দেওয়া।

আরও পড়ুনপরিবেশ–সচেতন করে তুলতে শিশুকে ইসলামি শিক্ষা০৪ আগস্ট ২০২৫

২. সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস

সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস পাঠ বদ নজর ও সব ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য কার্যকারী আমল আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) এই তিনটি সুরা পড়ে নিজের শরীরে ফুঁ দিতেন এবং অন্যদের জন্যও পড়তেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০১৭)

পড়ার নিয়ম:

তিনটি সুরা তিনবার করে পড়া।

পড়ার পর হাতে ফুঁ দিয়ে শিশুর পুরো শরীরে মুছে দেওয়া।

প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় বা শিশু অসুস্থ মনে হলে পড়া।

৩. সুরা ফাতিহা

সুরা ফাতিহা বদ নজর ও রোগ নিরাময়ের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। হাদিসে আছে, একজন সাহাবি সুরা ফাতিহা পড়ে একজন ব্যক্তির ক্ষতি দূর করেছিলেন এবং নবীজি (সা.) তা অনুমোদন করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৬)

পড়ার নিয়ম:

সুরা ফাতিহা সাতবার পড়ে শিশুর শরীরে ফুঁ দেওয়া।

শিশুর কপালে হাত রেখে পড়া উত্তম।

আরও পড়ুনসন্তানদের দৃঢ়চেতা মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলার উপায়০৮ আগস্ট ২০২৫

৪. আয়াতুল কুরসি

আয়াতুল কুরসি (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৫) বদ নজর, শয়তান ও সব ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পড়ে, তাকে আল্লাহ রক্ষা করেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০১০)

পড়ার নিয়ম:

প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় বা শিশুকে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়া।

পড়ার পর শিশুর শরীরে ফুঁ দেওয়া।

৫. সাধারণ দোয়া

নিজের ভাষায়ও শিশুর জন্য দোয়া করা যায়। উদাহরণ: “হে আল্লাহ! আমার শিশুকে বদ নজর ও সব ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করো, তাকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখো।”
নবীজি (সা.) বলেছেন, “দোয়া ইবাদতের মূল।” (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৭১)

আরও পড়ুনতিন শিশু দোলনা থেকে কথা বলেছিল ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪বদ নজর থেকে রক্ষার আমল

১. রুকিয়া

রুকিয়া হলো কুরআনের আয়াত ও হাদিসে বর্ণিত দোয়া পড়ে শিশুর ওপর ফুঁ দেওয়া। উপরে উল্লিখিত সুরা ফাতিহা, ইখলাস, ফালাক, নাস এবং আয়াতুল কুরসি রুকিয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।

২. শিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় সতর্কতা

শিশুকে অতিরিক্ত প্রশংসা বা জনসম্মুখে বেশি উপস্থাপন না করা, কারণ বদ নজর প্রায়ই প্রশংসার মাধ্যমে হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, “নজর সত্য।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৯)

শিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার আগে দোয়া পড়া এবং কালো কাপড় বা সাধারণ পোশাক পরানো।

৩. সকাল-সন্ধ্যার জিকির

প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় তিনবার করে “আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক” পড়া শিশুকে বদ নজর ও শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭০৮)

সতর্কতা

শিরক এড়ানো: বদ নজর থেকে রক্ষার জন্য তাবিজ, কালো সুতা বা অপ্রমাণিত পদ্ধতি ব্যবহার না করে শুধু কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত দোয়া ব্যবহার করা উচিত।

চিকিৎসার গুরুত্ব: বদ নজরের পাশাপাশি শিশুর শারীরিক অসুস্থতার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নবীজি (সা.) বলেছেন, “প্রতিটি রোগের জন্য চিকিৎসা রয়েছে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৭৮)

আন্তরিকতা: দোয়া করার সময় পূর্ণ মনোযোগ ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে।

আরও পড়ুনশিশু ও প্রবীণের সুরক্ষায় ইসলামের শিক্ষা১২ জুন ২০২০

সম্পর্কিত নিবন্ধ