পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় বাস ও মাইক্রোবাসের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে দুটি গাড়িতেই আগুন ধরে যায়। এতে আগুনে পুড়ে ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। 

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গত শনিবার সন্ধ্যায় তানজানিয়ার কিলিমানজারো অঞ্চলের সাবাসাবা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের একটি চাকার টায়ার ফেটে যাওয়ায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন, আর তখনই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

গতকাল রোববার তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘মোট ৩৮ জন এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন নারী। পুড়ে যাওয়ার মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে, ৩৬ জনের মরদেহ এখনো শনাক্ত করা যায়নি।’

নিহতরা কোন দেশি বা তাদের জাতীয়তা কী, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় ২৮ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ছয়জন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট কার্যালয়।

দেশটির প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। তিনি বলেছেন, তানজানিয়ার সড়কে প্রায়ই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। তাই সবাইকে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর হতে হবে।

গত কয়েক বছরে দেশটির সরকার একাধিকবার সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে তারপরও সড়কে প্রাণহানির ঘটনা থামেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে তানজানিয়ায় ১৩ হাজার থেকে ১৯ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। অথচ দেশটির সরকারি হিসেবে সে বছর নিহতের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ২৫৬ জন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব স দ র ঘটন দ র ঘটন স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়েতের ৬ দিনারের ভিসা সর্বোচ্চ ২,২০০ দিনারে বিক্রির অভিযোগ

কিছুদিন ধরে কুয়েতে শ্রমিক ভিসা পেতে প্রক্রিয়া সহজিকরণ করে দিয়েছে দেশটির সরকার। অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মতো বাংলাদেশি নাগরিকরাও শ্রমিক ভিসায় কুয়েতের শ্রমবাজারে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে বেশি আসছেন। 

কুয়েত প্রবাসী ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতা শফিকুল ইসলাম বাবুল জানান, ২০০৭ সাল থেকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশিদের জন্য কুয়েতের ভিসা পাওয়া যাচ্ছিল না। সেক্ষেত্রে বিশেষ অনুমোদন নিয়ে ভিসা পেতে হতো বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য। ফলে ভিসা বিক্রেতারা এই অজুহাতে ভিসার মূল্য অনেক গুণ বাড়িয়ে বিক্রি করেন।

প্রবাসী এ নেতা বলেন, ২০০৭ সালের আগে কয়েক বছর বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য কুয়েতের ভিসা পুরোপুরিভাবে বন্ধ ছিল। ২০০৭ সাল থেকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিশেষ অনুমোদন নিয়েই বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা পাওয়া যাচ্ছিল। যদিও এটি ছিল সীমিত ক্যাটাগরির ভিসা, সেসময় আহলি শোন নামের ভিসা একেবারেই পাওয়া যায়নি। 

এই পরিস্থিতিতে ২০২৫ সালের মে মাস থেকে বিশেষ অনুমোদনবিহীন, অর্থাৎ সহজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই বাংলাদেশিদের জন্য সব ক্যাটাগরির ভিসা অনায়াসে পাওয়া যাচ্ছে।

প্রবাসী ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতা মোহাম্মদ বিলাল হোসেন বলেন, মূলত কুয়েতের শ্রমিক ভিসার নির্দিষ্ট কোনো মূল্য নেই। যদি কোনো কোম্পানি তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে ভিসা প্রদান করে থাকে; সেক্ষেত্রে ওই কোম্পানিই ভিসা-টিকেট সহ অন্যান্য সব খরচ বহন করার নিয়ম রয়েছে। 

বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের দেয়া তথ্যমতে, পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো যেমন: সৌদি আরব, কাতার,ওমান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত- এই ছয় দেশে শ্রমিক ভিসায় যাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ পনেরো হাজার থেকে এক লাখ বিশ হাজার টাকা। 

জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) এর মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি বিদেশে পাঠানোর খরচ বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, এটি রিক্রুটিং এজেন্সির ফি, ভিসা প্রসেসিং ফি, মেডিকেল টেস্ট এবং বিমান ভাড়ার মতো বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে। বোয়েসেল একটি সরকারি সংস্থা, যা কর্মীদের বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা করে থাকে।

কুয়েত প্রবাসী সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট আব্দুস সালেহ বলেন, কুয়েতের ভিসা পেতে প্রসেস খরচ হচ্ছে স্থানীয় মুদ্রায় তিন দিনার এবং দূতাবাস কর্তৃক সত্যায়নে খরচ হচ্ছে তিন দিনার। অর্থাৎ কুয়েতের শ্রমিক ভিসা হাতে আসা পর্যন্ত মোট খরচ হচ্ছে ছয় ‘কুয়েতি দিনার’, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই হাজার চার শ’ টাকার চেয়েও কম। তবে শ্রমিক ভিসায় বিদেশে আসার পর নিয়োগকর্তা আড়াই শ’ দিনারের মতো আরো খরচ করে থাকেন ওয়ার্ক পার্মিট এর জন্য।

তিনি বলেন, এই ৬ দিনারের ভিসা দালালদের হাত বদলের মাধ্যমে ২,০০০ থেকে ২,২০০ কুয়েতি দিনার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ লাখ থেকে ৯ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।  

অবশ্য ভিসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশি ভিসা দালালরা স্থানীয় নাগরিকদের বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে থাকেন বলে মন্তব্য করেন প্রবাসী এই সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট।

বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হবজু মিয়া বলেন, কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রদূত প্রবাসীদের কল্যাণে বেশ কিছু কাজ করেছেন। এর মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশিদের জন্য সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিসা পাওয়ার ইস্যুতেও কাজ করেছেন রাষ্ট্রদূত। 

প্রবাসী এই গণমাধ্যমকর্মী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশিদের অভিবাসন খরচ অনেক গুণ বেশি। এর জন্য দায়ী কুয়েতে বাংলাদেশি ভিসা দালালদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র, এরাই নিয়ন্ত্রণ করছে কুয়েতে ভিসা ব্যবসা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েতের সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন একাধিকবার ভিসা ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন।

মোহাম্মদ হবজু বলেন, সম্প্রতি কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় শ্রমিক ভিসার মূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখতে পরামর্শ দেন। এমনকি ওই সভায় ভিসার দাম চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে নির্ধারণ করে দেন রাষ্ট্রদূত। 

অথচ, রাষ্ট্রদূত দাম কমানোর বিষয়ে ভিসা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বারবার কথা বললেও বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে এর চিত্র ভিন্ন। স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশি ভিসা দালালরা তাদের ইচ্ছা-খুশি মতো ভিসা মূল্য নির্ধারণ করেছেন। স্থানীয় মুদ্রায় ২,০০০ হাজার থেকে ২,২০০ কুয়েতি দিনার দামে কুয়েতের শ্রমিক ভিসা বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ লাখ থেকে ৯ লাখ টাকা হচ্ছে ভিসা দালালদের নির্ধারিত ভিসা মূল্য। 

কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (শ্রম) মোহাম্মদ আবুল হোসেন এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫০টি ভিসা সত্যায়িত করার আবেদন পাচ্ছে বাংলাদেশ দূতাবাস কুয়েত। 

প্রায় এক মাস ধরে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজিকরণ করার কারণেই অধিকসংখ্যক ভিসা বাংলাদেশিরা পাচ্ছেন। 

জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা আরো বলেন, বর্তমানে এক তৃতীয়াংশ দক্ষ কর্মীর ভিসা সত্যায়ন করে দিচ্ছেন তারা; যদিও এর আগে সাধারণ শ্রমিক ভিসায় সত্যায়নের জন্য আবেদন পাওয়া যেতো।  

আবুল হোসেন বলেন, বর্তমানে ভিসা সত্যায়নের জন্য নিয়োগকর্তাকে দূতাবাসে আসতে হচ্ছে নতুবা তার নিবন্ধিত প্রতিনিধিকে আসতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ভিসা সত্যায়ন করেই আমাদের দায়িত্ব শেষ মনে করছি না। ভবিষ্যতে যেন কোনো বাংলাদেশি কুয়েতের ভিসায় এ দেশটিতে এসে সমস্যাগ্রস্ত না হন; সে বিষয়টিও আমরা দেখছি।

ঢাকা/হাসান/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ