সদ্য জন্ম দেওয়া সন্তানসহ ক্লিনিকে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন শিক্ষার্থ
Published: 30th, June 2025 GMT
অদম্য ইচ্ছাশক্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শরীয়তপুর সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সন্তান জন্মের দুই দিন পর রবিবার (২৯ জুন) ক্লিনিকেই এইচএসসি’র দ্বিতীয় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি।
শিক্ষার্থীর পরিবার জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাশার গ্রামের ইশা আলম নামে এই শিক্ষার্থীর বিয়ে হয় গত বছরের ২৮ জুন। তার বাবার নাম মো.
সন্তানসম্ভবা অবস্থায় চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন ইশা। গত বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা দিয়েছিলেন ইশা। শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে শরীয়তপুর সদর উপজেলার নিপুণ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এরপর রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল তার বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষা।
ইশার পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজে। তবে শারীরিক অবস্থার কারণে কলেজের শিক্ষক মো. মাসুম মিয়ার পরামর্শে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে ক্লিনিকেই পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। অধ্যক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর রবিবার সকালে একজন মহিলা শিক্ষক ও একজন মহিলা পুলিশ উপস্থিত থেকে নিপুণ ক্লিনিকের বিছানাতেই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।
ইশা আলম বলেন, ‘‘আমি আইন পড়তে চাই, বিচারক হয়ে নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়াতে চাই। সন্তান জন্মের পরও পরীক্ষা দিতে পেরে আমি আনন্দিত। আল্লাহ, শিক্ষক, পরিবার, সহকর্মী ও চিকিৎসকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘গর্ভকালীন সময়েই পরীক্ষার সময় চলে আসে। তবে আমি মনোবল হারাইনি। পরিবারের উৎসাহ ও সহযোগিতায় এই অবস্থাতেও পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত নেই। আমি বিশ্বাস করি, মনোবল ধরে রাখলে প্রত্যেক মেয়েই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।’’
ইশার মা সুহাদা বেগম বলেন, ‘‘মেয়ের এমন সাহস আর মনোবল দেখে গর্বিত। এমন অবস্থায়ও যে সে পরীক্ষা দেবে, তা কখনও ভাবিনি। সবাই দোয়া করবেন আমার মেয়ে ও নাতনির জন্য।’’
ইশার স্বামী তুষার বলেন, ‘‘ইশা সবসময় পড়াশোনার বিষয়ে আমাকে পাশে থাকতে বলেছে, আমি চেষ্টা করেছি সাপোর্ট দিতে। কিন্তু সন্তান জন্মের পরপরই পরীক্ষা দেবে তা কখনও ভাবিনি। পরে আমি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের কাছে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাই। এরপরেই স্যারসহ সকলে ওকে সহযোগিতা করেছেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। আল্লাহ ওদের সুস্থ রাখুক।’’
ক্লিনিকের গাইনি বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট ডা. হোসনে আরা বেগম রোজী বলেন, ‘‘২৭ জুন রাতে প্রসববেদনা নিয়ে ইশা আমাদের কাছে এসেছিলেন। তার প্রবল ইচ্ছে ছিল পরীক্ষা দেওয়ার। তার মনের শক্তির কারণে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়েছে। এখন মা ও মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছেন।’’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্র সচিব ও সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ওয়াজেদ কামাল বলেন, ‘‘শিক্ষকরা সবসময় মানবিক। সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অদম্য ইচ্ছা প্রকাশ করে ইশা আলম। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে এক নারী শিক্ষক ও নারী পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। ইশার হাতের লেখা ছিল সুন্দর, পরীক্ষাও দিয়েছে ভালো। মা ও নবজাতক দুজনেই সুস্থ। আল্লাহর কাছে প্রার্থণা, একদিন এই শিশুকন্যাও গ্র্যাজুয়েট হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করুক।’’
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ই পর ক ষ পর ক ষ য় পর ক ষ র কল জ র অবস থ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ৪ অভিযোগ
কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে স্থাপিত বিএনপির অভিযোগ বাক্সে এ সপ্তাহে দলটির একজন নেতার বিরুদ্ধেই দখল ও চাঁদাবাজির চারটি অভিযোগ পড়েছে। এছাড়া অভিযোগ এসেছে একজন সাংবাদিক ও কুষ্টিয়ার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. সুজাত হোসেন খানের বিরুদ্ধেও।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দ্বিতীয় বারের মত কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি স্থাপিত অভিযোগ বাক্স খোলা হয়।
সেসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার, প্রেসক্লাবের সভাপতি আল মামুন সাগর, সেক্রেটারি আবু মনি জুবায়েদ রিপন, সিনিয়র সহ সভাপতি লুৎফর রহমান কুমার ও কোষাধ্যক্ষ এম. লিটন উজ জামান, নির্বাহী সদস্য এএইচএম আরিফ, দৈনিক খবর ওয়ালার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুন্সি শাহিন আহমেদ জুয়েল প্রমুখ।
চলতি সপ্তায় সর্বমোট ছয়টি অভিযোগ পড়েছে। এরমধ্যে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আল আমীন রানা ওরফে কানাইয়ের বিরুদ্ধেই পড়েছে চারটি অভিযোগ। সবগুলো অভিযোগই ছিল দখলদারি ও চাঁদাবাজি বিষয়ক। অভিযোগ কারীদের মধ্যে সংখ্যালঘুরাও রয়েছেন।
এছাড়া কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের ক্ষেত্রে উৎকোচ গ্রহণ।
অভিযোগের বিষয়ে আল আমীন রানা কানাই বলেন, “বাক্স থাকলে অভিযোগ পড়তেই পারে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে আপনারা দেখেন। আমি এ ধরনের কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই।”
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সরকারি কর্মকর্তা সুজাত হোসেনও। তিনি বলেন, “আমরা অনেকের বিরুদ্ধে অনেক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তারা চক্রান্ত করে অভিযোগ দিতে পারেন। এসব অভিযোগের সত্যতা নেই।”
এর আগে গত ৩০ জুলাই দুপুরে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে প্রথমবার বাক্সটি খুলে অভিযোগ পড়ে শোনান কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার।
সেসময় গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের মধ্যে ছিল কুষ্টিয়া শহরের বড়বাজার ট্রাক শ্রমিক অফিস থেকে চাঁদা আদায়, লালন একাডেমির সাপ্তাহিক সেবার নামে অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রতারণা, জিয়ারখী ইউনিয়নের মঠপাড়া মাঠের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি এবং বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নাম ভাঙিয়ে শহরের ধোপাপাড়া, মধ্য মিলপাড়া কলোনিতে সাজু বাহিনীর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ।
এর আগের চারটি অভিযোগ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, “সবগুলো অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মিল পড়ায় দখল হয়ে থাকা ক্লাব ঘরটি দখলমুক্ত করে কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
গত ২১ জুলাই কুষ্টিয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিষয়ে জানতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করে জেলা বিএনপি। কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের নিচে ফটকের পাশে এটি স্থাপন করেন বিএনপির কুষ্টিয়া জেলা শাখার আহ্বায়ক কুতুব উদ্দীন আহমেদ ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। শহরের আরও কয়েকটি স্থানে এমন বাক্স বসানোর কথা জানিয়েছেন তারা।
ঢাকা/কাঞ্চন/এস