ভৈরবে টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে ঠাট্টার জেরে সংঘর্ষ, আহত ১০
Published: 30th, June 2025 GMT
ভৈরবে টিফিন ক্যারিয়ার (ভাতের বাটি) নিয়ে ঠাট্টার জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। এসময় ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর।
রোববার (২৯ জুন) পৌর শহরের জগন্নাথপুর দক্ষিণপাড়া এলাকায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ভৈরব থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভৈরব থানার এসআই আসিবুল হক ভূঁইয়া।
এ ঘটনায় আহত লিটন মিয়া (৬০) ও পাবেল মিয়া (২২) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহত হাছেনা বেগমকে (৫০) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাখা হয়েছে। এছাড়াও রানা মিয়া (২৬), দিপু মিয়াসহ (১৬) আরো ৫ জন আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৭ জুন শুক্রবার দুপুরে পৌর শহরের জগন্নাথপুর দক্ষিণ পাড়া (গাইনহাটি) এলাকার ধন মিয়া বাড়ির ভাড়াটিয়া তুষার ভ্যানগাড়িতে করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের জন্য দুপুরের খাবারের জন্য টিফিন বক্স (ভাতের বাটি) নিয়ে বাজারে যাচ্ছিলেন। এই সময় প্রতিবেশী ভূঁইয়া বাড়ির সায়মন ঠাট্টার ছলে টিফিন ক্যারিয়ার খুলে দেখতে গেলে তুষার বাধা দেন। ঠাট্টা মশকরার এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি শুরু হলে তা পরে মারামারিতে রূপ নেয়। মারামারিতে সায়মনের সঙ্গে তার বন্ধু আসিফও ছিলেন। ওই দিন রাতে স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। এরপর রোববার সন্ধ্যায় একই ঘটনার জেরে তুষারের সঙ্গে আসিফের আবারও বাকবিতণ্ডা হয়।
পরে রাত সাড়ে ৭টায় বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে গেলে আসিফের পক্ষে ভূঁইয়া বাড়ি ও ভাওয়াল বাড়ি এবং তুষারের পক্ষে মন্নাফ মিয়ার বাড়ির লোকজন যোগ দেন। তখন বিষয়টি সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় উভয় পক্ষ দা, বল্লম, লাঠিসোঁটা ও ইট পাটকেলসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের নারী-পুরুষসহ ১০ জন আহত হন।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আকাশ মিয়া ও বিল্লাল মিয়া বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় রাস্তার পাশে থাকা বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ১০ জন নারী-পুরুষ। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ শুক্রবার বিষয়টি মীমাংসা করলেও দুইদিন পর আবার একই ঘটনায় টানা দুই ঘণ্টা সংঘর্ষ চলে। বিষয়টি আমাদের জন্য দুঃখজনক। উঠতি বয়সের ছেলেরা মুরুব্বিদের কথা কর্ণপাত করে না।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার এসআই আসিবুল হক ভূঁইয়া বলেন, স্থানীয়দের খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। সেনাবাহিনীসহ থানা পুলিশের সদস্যরা মিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। দুই পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ আহত স ঘর ষ ব ষয়ট আহত হ
এছাড়াও পড়ুন:
জামিনে মুক্তির পরই ভারতে পালিয়েছেন এসআই আকবর, দাবি নিহতের মায়ের
সিলেটে পুলিশের হেফাজতে নিহত রায়হান আহমদ (৩৪) হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরই ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে দাবি করেছেন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি করেন।
সালমা বেগম বলেন, আকবর হোসেন প্রথমেই ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তখন পুলিশ অনেক কষ্টে কানাইঘাটের ডনা সীমান্ত থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল। জামিন পেয়েই যে পালানোর চেষ্টা করবেন, সেটা স্বাভাবিক ছিল।
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান আহমদকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ। পরে ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী। পরে মহানগর পুলিশের অনুসন্ধান কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করে। এরপর হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রধান অভিযুক্ত আকবরকে ৯ নভেম্বর কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।
২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্য অভিযুক্তরা হলেন এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুন অর রশিদ ও টিটু চন্দ্র দাস, ফাঁড়ির ‘টু-আইসি’ পদে থাকা এসআই হাসান উদ্দিন ও আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত রোববার আকবর হোসেন উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হন। এরপর মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষ পিটিশন ফর লিভ টু আপিল দায়ের করে। শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ উচ্চ আদালতের আদেশ স্থগিত করেন। পাশাপাশি আকবর হোসেনকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
সালমা বেগম বলেন, হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ছয় আসামির মধ্যে আবদুল্লাহ আল নোমান শুরু থেকেই পলাতক। কারাগারে থাকা পাঁচজনের মধ্যে চারজনই জামিনে মুক্ত আছেন। যার কারণে পুরো পরিবার ও মামলার সাক্ষীরা শঙ্কিত ও নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলার বিচারকাজ প্রভাবিত করার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য তিনি ন্যায়বিচার পেতে প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতি আবেদন জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, সহসভাপতি আমির হোসেন, দুর্নীতি মুক্তকরণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ হোসেন, সিলেট যুব উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আফিকুর রহমান, আখালিয়ার মুরব্বি ছানাউল্লাহ ছানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁরা আকবর হোসেনকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা ও দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির দাবি জানান।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুল ফজল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার তাঁর জামিন স্থগিত হয়েছে। তাঁকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আত্মসমর্পণ না করলে তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তার করবেন।