চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানার অফিসে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে এক শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গত শনিবার থেকে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হলেও মারধরে জড়িত কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রোববার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গত শুক্রবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর  কোনাবাড়ীতে অবস্থিত গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড নামে এক কারখানার ভেতরে ঘটনাটি ঘটেছে।

নিহত শ্রমিক হলেন, টাঙ্গাইলের  ঘাটাইল উপজেলার শুকতার বাইদ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মো.

হৃদয় (১৯)। তিনি গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড কারখানায় মেকানিক্যাল মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন।

এদিকে ওই শ্রমিককে চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, শ্রমিক হৃদয়কে কারখানার ভিতরে একটি অফিস কক্ষে জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে অচেতন অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে বের করছে এবং মারধর করছে কয়েকজন। তার মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। তাকে নির্দয়ভাবে পেটানোর পরেও দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে হৃদয় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। তার এমন দৃশ্য অনেকেই দেখছেন, কেউ কেউ হাসছে। কয়েকজনকে বলতে শোনা গেছে- অনেক পেটানো হয়েছে, তারপরও কিছুই হয়নি, মরে যায়নি।

এ ঘটনায় নিহত মো. হৃদয়ের বড়ভাই লিটন মিয়া বাদী হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কোনাবাড়ী থানায় ২৮ জুন মধ্য রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পরে পুলিশ ২৯ জুন অভিযান চালিয়ে হাসান মাহমুদ ওরফে মিঠুন নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। হাসান মাহমুদ ওই কারখানারই শ্রমিক।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মো. হৃদয় গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকার গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড কারখানার মেকানিক্যাল মিস্ত্রি (অন কল) হিসাবে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতোই গত ২৭ জুন সকালে কারখানায় যায়। তবে ডিউটি শেষ করে বাসায় না ফেরায় নিহতের ভাই ও মা কারখানার দিকে যায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পায় কারখানার শ্রমিকরা হত্যার ঘটনায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। তারা লাশের সন্ধান চাইলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে আছে বলে জানায়। পরে তারা হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করে।

মামলার বাদী লিটন মিয়া বলেন, গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড কারখানার ভেতরে আমার ভাইকে প্রচণ্ড মারধর করে হত্যা করে। পরে এটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তার লাশ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। আমরা আমাদের ভাই হত্যার বিচার চাই।

কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন বলেন, ওই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলকে শনাক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য র

এছাড়াও পড়ুন:

যাত্রাশিল্পীকে মারধর-নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১

ময়মনসিংহ নগরীতে এক নারী যাত্রাশিল্পীকে মারধর করে, চুল কেটে দিয়ে ও মুখে কালি মাখিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে এ ঘটনায় ওই ভুক্তভোগী নারী থানায় মামলা করেন। 

গ্রেপ্তার শাহ আলম (৪০) চরকালীবাড়ি এলাকার মো. রাশেদের ছেলে। তিনি মামলার ৩ নম্বর আসামি। তাকে জুবিলী ঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

নির্যাতনের শিকার নৃত্যশিল্পীর নাম মোছা. রুপা নগরের বড় কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। তারা নগরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মাসুদ জামেলী বলেন, “ওই নারীকে বেঁধে রেখে চুল কেটে মারধর করা হয়েছে। মুখে কালি মাখিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুটি পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই মামলা চলছিল। অপহরণ মামলার আসামিরা জামিনে ছিলেন। আদালতের আরেকটি ভাঙচুরের মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ গত বুধবার দুপুরে ফিরে আসে। তখন প্রতিপক্ষ রাস্তায় রুপাকে আটকে নির্যাতন চালায়।”

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, বড় কালীবাড়ি লোকনাথ মন্দির-সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের একটি বস্তিতে বাস্তুহারা সমবায় সমিতির কাছ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে ৩ লাখ টাকায় একটি জমি কেনেন রুপা। গত বছর সেখানে আধা পাকা ঘর করতে গেলে সমবায় সমিতির সদস্য শাহ আলম চাঁদা দাবি করেন। 

এক লাখ টাকা দেওয়ার পর আরো ১০ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। টাকা না পেয়ে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রুপার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় রুপা আদালতে মামলা করেন। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল রুপার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে মো. রনি সুলতানকে অপহরণ করা হয়। 

এ ঘটনায় রুপা ৯ এপ্রিল মামলা করলে আসামি শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। রুপার করা ভাঙচুর মামলার তদন্ত করতে পুলিশ বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যায়। 

পুলিশ চলে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষ রাস্তায় রুপাকে ধরে নিয়ে বেঁধে মারধর করে, চুল কেটে ও মুখে কালি মেখে হেনস্তা করে। এসময় তার সামনে মাদক ও টাকা রেখে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। 

পরে রুপার স্বামী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

রুপা বলেন, ‘‘পুলিশ চলে যাওয়ার পরই আমাকে রাস্তায় ধরে নিয়ে গিয়ে বেঁধে চুল কেটে মুখে কালি মেখে দেয়। আমি বিচার চাই।’’

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম বলেন, “মামলা তদন্ত করে পুলিশ ফিরে আসার পর ওই নারীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে এবং একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।”

ঢাকা/মিলন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজধানীর বছিলায় পেট্রলবোমাসহ একজনকে আটক করেছে র‍্যাব
  • যাত্রাশিল্পীকে মারধর-নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১