চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানায় শ্রমিককে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা, ভিডিও ভাইরাল
Published: 30th, June 2025 GMT
চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানার অফিসে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে এক শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গত শনিবার থেকে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হলেও মারধরে জড়িত কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রোববার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গত শুক্রবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে অবস্থিত গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড নামে এক কারখানার ভেতরে ঘটনাটি ঘটেছে।
নিহত শ্রমিক হলেন, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শুকতার বাইদ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মো.
এদিকে ওই শ্রমিককে চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, শ্রমিক হৃদয়কে কারখানার ভিতরে একটি অফিস কক্ষে জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে অচেতন অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে বের করছে এবং মারধর করছে কয়েকজন। তার মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। তাকে নির্দয়ভাবে পেটানোর পরেও দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে হৃদয় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। তার এমন দৃশ্য অনেকেই দেখছেন, কেউ কেউ হাসছে। কয়েকজনকে বলতে শোনা গেছে- অনেক পেটানো হয়েছে, তারপরও কিছুই হয়নি, মরে যায়নি।
এ ঘটনায় নিহত মো. হৃদয়ের বড়ভাই লিটন মিয়া বাদী হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কোনাবাড়ী থানায় ২৮ জুন মধ্য রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পরে পুলিশ ২৯ জুন অভিযান চালিয়ে হাসান মাহমুদ ওরফে মিঠুন নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। হাসান মাহমুদ ওই কারখানারই শ্রমিক।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মো. হৃদয় গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকার গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড কারখানার মেকানিক্যাল মিস্ত্রি (অন কল) হিসাবে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতোই গত ২৭ জুন সকালে কারখানায় যায়। তবে ডিউটি শেষ করে বাসায় না ফেরায় নিহতের ভাই ও মা কারখানার দিকে যায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পায় কারখানার শ্রমিকরা হত্যার ঘটনায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। তারা লাশের সন্ধান চাইলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে আছে বলে জানায়। পরে তারা হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করে।
মামলার বাদী লিটন মিয়া বলেন, গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড কারখানার ভেতরে আমার ভাইকে প্রচণ্ড মারধর করে হত্যা করে। পরে এটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তার লাশ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। আমরা আমাদের ভাই হত্যার বিচার চাই।
কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন বলেন, ওই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলকে শনাক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হত য র
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবকে আর কখনো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেওয়া হবে না, বললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান অধ্যায় তাহলে শেষ! লাল-সবুজ জার্সিতে আর কখনো খেলতে দেখা যাবে না তাঁকে। না, সাকিব নিজে দেশের হয়ে আর না খেলার ঘোষণা দেননি। তবে তাঁকে আর বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেওয়া হবে না, এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। গতকাল সোমবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর-এর সঙ্গে মুঠোফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন আসিফ মাহমুদ।
সাকিবের এক ফেসবুক পোস্টের জেরে আসিফের সঙ্গে দুই দিন ধরে তাঁর পাল্টাপাল্টি ভার্চ্যুয়াল লড়াই চলছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে চলছে তীব্র বিতর্ক। এর মধ্যেই নিজের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানালেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরকে তিনি বলেন, ‘তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের জার্সির পরিচয় বহন করতে দেওয়া, এটা আমার পক্ষে কোনোভাবেই সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব না। ইতিপূর্বে এটা আমি বিসিবিকে না বললেও এখন আমার বোর্ডের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে, সাকিব আল হাসান আর কখনো বাংলাদেশ টিমে খেলতে পারবেন না।’
কেন এমন সিদ্ধান্ত, সেটাও ব্যাখ্যা করেছেন আসিফ মাহমুদ, ‘যতবার তিনি (সাকিব) দেশে আসার জন্য চেয়েছেন, খেলার জন্য চেয়েছেন, বলেছেন “আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। আমি শুধু এমপি ইলেকশনটা করেছি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছি।” কিন্তু আসল সত্যটা তো হচ্ছে, তিনি আসলে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠেভাবে জড়িত, যার প্রমাণ আমরা পেলাম।’
প্রমাণ বলতে আসিফ মাহমুদ আসলে সাকিবের একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসের কথা বুঝিয়েছেন। যে পোস্ট থেকে এই বিতর্কের সূত্রপাত। তবে এর আগে পেছনের ঘটনাও একটু মনে করা যাক। গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময়টায় সাকিব ছিলেন দেশের বাইরে। এরপর আর দেশে ফিরতে পারেননি নৌকা প্রতীকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়া সাকিব। আরও অনেকের মতো সাকিবের নামেও হত্যা মামলা হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগ আছে, আছে দুদকের মামলাও।
আরও পড়ুনএবার সাকিবকে পাল্টা জবাব দিলেন আসিফ১২ ঘণ্টা আগেতো সেই সাকিব গত রোববার রাত ৯টার দিকে ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করেছেন। সেই পোস্টে গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নিজের একটা ছবি দিয়ে সাকিব লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন, আপা।’
এর একটু পরেই সেদিন রাত ১০টার দিকে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তাঁর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, ‘একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি দিয়েছেন আপনারা আমাকে। বাট আই ওয়াজ রাইট। ইন্ড অব দ্য ডিসকাশন।’
এর জবাবে গত রোববার রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে সাকিব নিজের ফেসবুকে লিখেন, ‘যাক শেষমেশ কেউ একজন স্বীকার করে নিলেন যে তাঁর জন্য আমার আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেওয়া হলো না, বাংলাদেশের জন্য খেলতে পারলাম না!’
সে (শেখ হাসিনা) তো সব সময় সিরিয়াসলি খেলা ফলো করেছে, খেলা দেখছে। তাই না? খেলার সঙ্গে যুক্ত এবং ওতপ্রোতভাবেই যুক্ত ছিলেন। তো সেখান থেকেই একটা সম্পর্ক হয়েছে। সেটা রাজনীতির আগে থেকেই। সেই জায়গা থেকে আমি একজনকে উইশ করতেই পারি। তা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য, কাউকে কোনো ইঙ্গিত, এমন কোনো কিছুই না।সাকিব আল হাসানসেটার জবাবে গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে আসিফ মাহমুদ নিজের ফেসবুকে আবার লিখেন, ‘ভাইয়া, আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল। আমি শুধু নির্বাচনটাই করেছিলাম, আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে জড়িত হইনি। ইউ নো হু। যার হাত ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত, তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বোর্ডের কর্তারা একাধিকবার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে বললেও তা না করে বরং খুনিদের এনডোর্স করা ছাড়াও শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, মানি লন্ডারিং, ফিন্যান্সিয়াল ফ্রড করা কাউকে কেন শুধু ভালো ক্রিকেটার বলেই পুনর্বাসন করতে হবে? আইন সবার জন্য সমান, ফেস ইট।’
আরও পড়ুনক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফকে জবাব দিলেন সাকিব২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫দুজনের পাল্টাপাল্টি এই স্ট্যাটাসগুলো নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তোলপাড়, এর মধ্যেই চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন আসিফ মাহমুদ।
শেখ হাসিনার সঙ্গে ছবি পোস্ট করা ও তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো নিয়ে সাকিবের অবস্থানও জানতে চেয়েছিল চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর। মুঠোফোনে তিনি চ্যানেলটিকে বলেছেন, ‘সে (শেখ হাসিনা) তো সব সময় সিরিয়াসলি খেলা ফলো করেছে, খেলা দেখছে। তাই না? খেলার সঙ্গে যুক্ত এবং ওতপ্রোতভাবেই যুক্ত ছিলেন। তো সেখান থেকেই একটা সম্পর্ক হয়েছে। সেটা রাজনীতির আগে থেকেই। সেই জায়গা থেকে আমি একজনকে উইশ করতেই পারি। তা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য, কাউকে কোনো ইঙ্গিত, এমন কোনো কিছুই না।’