ছাত্রীদের হেনস্তা, সমকামিতা প্রচারসহ নানা অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। সোমবার ইবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বিষয়টি জানানো হয়। 

অফিস আদেশ অনুযায়ী, গত ৩১ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৮তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী সহকারী অধ্যাপক হাফিজুলের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ এনে অনেক দিন ধরেই তাঁর অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। হাফিজুলের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটিও অভিযোগের সত্যতা পায়। গত ২২ ডিসেম্বর বার্ষিক একটি ইনক্রিমেন্ট বাতিলসহ তাঁকে এক বছরের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এই শাস্তিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে তাঁকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৭তম সভায় বিষয়টি পুনরায় ব্যাপক তদন্তের জন্য আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকেই গত ৩১ মে সর্বশেষ সিন্ডিকেটে শিক্ষক হাফিজুলকে চাকরি থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে হাফিজুল ইসলামের নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এদিকে, যৌন হয়রানি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আলী রেজওয়ান তালুকদার এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের শাস্তির সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। কিন্তু তাদের এই শাস্তি ‘মাত্রাতিরিক্ত’ এবং তা সিন্ডিকেট কর্তৃক পুনর্বিবেচনা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দিয়েছেন সিন্ডিকেট সদস্য ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড.

মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, ওই দুই শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে তাদের শাস্তির সুপারিশ বিষয়ে গত ২৫ জুন রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেন সিন্ডিকেট সদস্য ড. আমজাদ হোসেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ১০৩তম সিন্ডিকেট সভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সহযোগী অধ্যাপক আলী রেজওয়ান তালুকদার ও সহকারী অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা নিয়ে তাঁর আপত্তি রয়েছে। তাঁর দাবি, তদন্ত প্রতিবেদন সম্পূর্ণভাবে সভায় পঠিত হয়নি এবং কিছু শাস্তির বিষয়ে সভায় কোনো আলোচনাও হয়নি।

এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্য ও উপ-উপাচার্য ড. মাসুদা কামাল বলেন, সাধারণত সিন্ডিকেট সভায় পর্যালোচনা ও মতামতের মাধ্যমে যে কোনো সিদ্ধান্ত আসে। সে অনুযায়ী অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিষয়েও পর্যালোচনার মাধ্যমে শাস্তির সিদ্ধান্ত এসেছে।

সিন্ডিকেট সদস্য ও প্রক্টর আবদুল হাকিম বলেন, আমি সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত ছিলাম। আর সব সিন্ডিকেট সদস্যের মতামত ও পর্যালোচনার মাধ্যমেই তাদের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন ড ক ট সদস য তদন ত সহক র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পুতিনকে কেন গ্রেপ্তার করা হবে না

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০২৩ সালের মার্চে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সে সময় পুতিনকে একজন ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যায়িত করে বলেছিলেন, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ন্যায়সংগত। তবে যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য কোনো দেশ নয়।

২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, ওই সংবিধির আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কখনো ওই চুক্তিকে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করার জন্য অনুসমর্থনের জন্য পদক্ষেপ নেয়নি।

বিল ক্লিনটন রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরের দুই বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সম্পৃক্ততার অবসান ঘটান। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।

সে কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কার্যকারিতা আমেরিকার মাটিতে নেই।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন প্রকাশ্যে আইসিসির প্রতি বৈরিতা করছে। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত এই আদালতের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। আফগানিস্তানে যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা যুদ্ধাপরাধ করেছেন, এমন অভিযোগের তদন্ত করায় আইসিসির ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেয় ট্রাম্প প্রশাসন।

আইসিসির এখতিয়ারের এই ঘাটতিই পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আজকের বৈঠকের স্থান হিসেবে আলাস্কাকে বেছে নেওয়ার একটি কারণ হতে পারে।

অবশ্য আইসিসির স্বাক্ষরকারী দেশ মঙ্গোলিয়ায় ২০২৩ সালের আগস্টে সফর করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সে সময় তাঁকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের অনুরোধ করা হলেও তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল দেশটি। সে জন্য মঙ্গোলিয়াকে কোনো পরিণতি ভোগ করতে হয়নি।

শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক আইন কেবল ততটাই কার্যকর হয়, যতটা দেশগুলোর সরকার এবং তাদের নেতারা কার্যকর করতে চান। আর এই ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে চান এবং এই সাক্ষাৎ তাঁর পছন্দ মতো করতে তাঁকে আটকানোর মতো কিছুই নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ