চলতি অর্থবছরের শেষ দিন ছিল সোমবার (৩০ জুন)। ফলে এদিন দুপুরে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে বিভিন্ন কাজের বিল ছাড়ের ছিল তুমুল ব্যস্ততা। এর মধ্যে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে ওই অফিসে এসে পৌঁছাল নামকরা একটি ব্র্যান্ডের তৈরি কাচ্চি বিরিয়ানির প্যাকেট। হিসাবরক্ষণ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য উপহার হিসেবে খাবারগুলো এনেছেন বিস্ফোরক মামলার আসামি ও বিতর্কিত ঠিকাদার আবদুর রহমান মুন্না। তাতে কী, ততক্ষণে অফিসজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ। অতঃপর সেই কাচ্চি বিরিয়ানিতেই দুপুরে ভূরিভোজ সারেন হিসাবরক্ষণ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

জানা গেছে, আজ দুপুর পৌনে ২টার দিকে ঠিকাদার মুন্না গাড়িভর্তি কাচ্চি বিরিয়ানি উপজেলা পরিষদের ভেতরে হিসাবরক্ষণ অফিসে নিয়ে আসেন। এ সময় মুন্না গাড়ির ভেতরেই অবস্থান করলেও খাবারের প্যাকেট অফিসের ভেতরে পৌঁছে দেন তাঁর চালক। এরপর অফিস পিয়নরা খাবারগুলো প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর টেবিলে পৌঁছে দেন।

বিতর্কিত ঠিকাদার মুন্নার বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক। গত ৫ আগস্টের পর তাঁর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা হয় চারঘাট থানায়। এ ছাড়া রাজশাহীর বেশ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সম্প্রতি আইজিপি বরাবর মুন্নার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। 

অভিযোগে তারা দাবি করেন, সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের ‘আশীর্বাদে’ মুন্না ১৭ বছর ধরে সারদা পুলিশ একাডেমি, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন জেলায় পুলিশের স্থাপনা নির্মাণ, সংস্কার, রেশন সরবরাহ, পণ্য ও সেবা সরবরাহের অধিকাংশ কাজ নামে-বেনামে করেছেন। এককভাবে পুলিশের সব কাজ করে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের প্রভাব খাটিয়ে তিনি পুলিশে একচেটিয়া নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্যও করেছেন।

হিসাব রক্ষণ অফিসের এক কর্মচারী জানান, ঠিকাদার মুন্নার প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি কাজের বিল আটকে ছিল। আজ সেগুলো ছাড়া হয়েছে। অন্য ঠিকাদারের কোনো বিল কাগজপত্রের জটিলতায় আটকা পড়লে মুন্না সব সময় এ বিষয়ে অফিসের সঙ্গে সমঝোতা করে চলেন। এ জন্য প্রায়ই কর্মকর্তাদের নানা ধরনের উপহার দিয়ে খুশি রাখেন। তাই বিল ছাড় হলে অফিসের সবাইর জন্য মাঝেমধ্যে ভালো খাবারের ব্যবস্থা করেন। 

হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর নয়ন কুমার অধিকারী বলেন, ‘আজ (সোমবার) দুপুরে আমাদের সবার জন্য কাচ্চি বিরিয়ানির ব্যবস্থা ছিল। খাওয়ার পর আমি জেনেছি সেগুলো ঠিকাদার মুন্না পাঠিয়েছেন। শুধু আমাদের অফিসে না, পাশের কয়েকটি ব্যাংকেও তিনি খাবার পাঠিয়েছেন বলে শুনেছি।’ 

এদিকে একজন বিতর্কিত ঠিকাদারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহসভাপতি আঞ্জুমান আরা বলেন, যে ঠিকাদারের বিলের কাজ করছেন, তাঁর কাছ থেকেই কাচ্চি বিরিয়ানি খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। এটি কোনো নীতি-নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। 

এ বিষয়ে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সামশুল করিম বলেন, ‘আমার কর্মচারীরা বলেছিল, আজ দুপুরে খাবার না আনার জন্য। তারা মুন্না নাকি অন্য কারও কাছ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করেছে, আমার জানা নেই।’ যে কেউ খাবার দিলেই তাঁর সেটি খাওয়া নৈতিকতার মধ্যে পড়ে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তর দেননি। 

হিসাবরক্ষণ অফিসে খাবার পাঠানোর বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান ঠিকাদার আবদুর রহমান মুন্না। তিনি দাবি করেন, ‘আমার গাড়ি রাজশাহী থেকে চারঘাট যাচ্ছিল। পথে হিসাবরক্ষণ অফিসের খাবারের বিষয়টি জানতে পেরে আমার গাড়িতে সেগুলো অফিসে পৌঁছে দিয়েছি।’ বিভিন্ন অনিয়মের লিখিত অভিযোগের বিষয়ে মুন্না বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতিতে কখনও জড়িত ছিলাম না। সৎভাবে ব্যবসা করেছি।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব তর ক ত ঠ ক দ র কর মকর ত ব যবস উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্লোটিলা বহরের ম্যারিনেট গাজা জলসীমা থেকে কত দূরে

দ্য ম্যারিনেট। ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহরের নৌযান। নৌযানটি এখনো ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। আজ শুক্রবার আল-জাজিরার অনলাইনে এই তথ্য জানানো হয়।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি বলছে, একমাত্র দ্য ম্যারিনেটকেই এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। বহরের বাকি নৌযানগুলোকে তারা ইতিমধ্যে আটক করেছে।

দ্য ম্যারিনেট পোল্যান্ডের পতাকাবাহী নৌযান। তবে নৌযানটির মালিকের বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য কোনো নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।

ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়, দেখুন লাইভ ট্র্যাকারে

নৌযানটিতে ছয়জন আরোহী আছেন। এই আরোহীদের মধ্যে একজন তুরস্কের অধিকারকর্মী সিনান আকিলতু। তিনি আজ নৌযানটি থেকে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা এখন উচ্চ ঝুঁকির এলাকায় প্রবেশ করেছি। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা দুটি মহৎ পরিণতির যেকোনো একটির দিকে অগ্রসর হচ্ছি।’

ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকারের তথ্যের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, আজ ভোরের দিকে ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলছিল ম্যারিনেট। এ সময় সূর্যোদয় হচ্ছিল।

ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, ভোর ৪টার দিকে ম্যারিনেটের গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৩ দশমিক ৭৮ নট। (ঘণ্টায় প্রায় ৭ কিলোমিটার)। নৌযানটি গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে প্রায় ৪৩ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৮০ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছিল।

আরও পড়ুনগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজে জলকামান ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী১৩ ঘণ্টা আগেগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি বাদে সব নৌযান আটক করেছে ইসরায়েল

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই ম্যারিনেটকে সতর্ক করে দিয়েছে। তারা বলেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ ও অবরোধ ভাঙার যেকোনো চেষ্টা প্রতিহত করা হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে নৌযানটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। তবে তা ঠিক করা হয়েছে। নৌযানটি গাজা অভিমুখে চলছে।

ফ্লোটিলা আয়োজকেরা জানিয়েছেন, বহরের ৪২টি নৌযানকে অবৈধভাবে আটকানো হয়েছে। আরোহীদের আটক হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও ম্যারিনেট পিছু হটছে না।

আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনইসরায়েল ‘জলদস্যুর কাজ’ করেছে: এরদোয়ান১৪ ঘণ্টা আগে

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বলেছে, ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়, ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।

ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিংকের মাধ্যমে সংযুক্ত আছে বলে জানিয়েছে ফ্লোটিলা আয়োজকেরা।

আরও পড়ুনসুমুদ ফ্লোটিলার আটক অধিকারকর্মীরা ২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলে পৌঁছতে পারেন২০ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ