তজুমদ্দিনে স্বামীকে নির্যাতনের পর গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
Published: 30th, June 2025 GMT
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় শ্রমিক দল, যুবদল, কলেজ ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। আজ সোমবার সাতজনের নাম উল্লেখ করে এই মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাব্বত খান। এর আগে গতকাল রোববার ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর স্বামী তজুমদ্দিন উপজেলার একটি ইউনিয়নের বাসিন্দা। তবে ঢাকায় থাকেন। তিনি দুই বিয়ে করেছেন। ওই ব্যক্তি বলেন, ১৪-১৫ দিন আগে তিনি ঢাকা থেকে বাড়ি আসেন। পরে গত শনিবার দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। সেখানে রাতের বেলা উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, খবর পেয়ে রোববার সকালে তাঁর প্রথম স্ত্রী ঘটনাস্থলে আসেন। প্রথম স্ত্রীকে দেখে আবারও রড-হাতুড়ি দিয়ে তাঁকে বেধড়ক পেটানো শুরু করেন। এ সময় প্রথম স্ত্রী হামলাকারীদের হাত-পা ধরে স্বামীকে ছেড়ে দিতে বলেন। একপর্যায়ে তাঁরা চার লাখ টাকার বদলে এক লাখ টাকা দিতে বলেন। তখন প্রথম স্ত্রী তাঁর শ্বশুরকে ফোন করে টাকার জন্য বলেন। টাকা আসছে শুনে-হামলাকারীরা প্রথম স্ত্রীকে ঘরে রেখে স্বামীকে দোকানে চা খাওয়ার কথা বলে বাইরে নিয়ে যান।
ওই নারী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামীকে বের করে নিয়ে যাওযার পর সন্ত্রাসীরা ঘরের দরজা-জানালা আটকে তাঁকে ধর্ষণ করেন। তিনি চিৎকার করলে বাড়ির নারীরা দরজা-জানালা খুলতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁকে রক্ষা করতে পারেননি।
ভুক্তভোগী দম্পতি বলেন, সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা কাউকে না বলার শর্তে তাঁদের ছেড়ে দেন। এর পর থেকে প্রথম স্ত্রী গ্রামে ফিরে বারবার আত্মহত্যা করতে যান। আর গ্রামবাসী উদ্ধার করেন। অবশেষে তাঁরা গ্রামবাসীর কাছে ঘটনা খুলে বলেন। গ্রামের বাসিন্দারা তখন ৯৯৯ ফোন দিয়ে পুলিশে খবর দেন। সোমবার পুলিশ এসে তাঁদের অভিযোগপত্র গ্রহণ করে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রধান আসামি উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন ও যুবদল কর্মী মো. আলাউদ্দিন গা ঢাকা দেন। তাঁদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। তবে তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল আহমেদ প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে তিনি একসময় থাকতেন, তিনি এখন সেখানে থাকেন না। সেখানে আরেক রাসেল আছে। কিন্তু তজুমদ্দিনে বিবদমান বিএনপির ষড়যন্ত্রে পড়ে তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে।
মামলার আরেক আসামি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন বলেন, তিনি তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী। তাঁকেও ষড়যন্ত্রমূলক ফাঁসানো হচ্ছে।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাব্বত খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সোমবার বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম স ত র দল র য গ ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মিয়ানমারের বন্দিশিবিরগুলোতে বৈদ্যুতিক শক, যৌনাঙ্গ পুড়িয়ে দেওয়ার মতো নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ
মিয়ানমারের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে গত এক বছরে নির্যাতন ও যৌন সহিংসতার যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ–সমর্থিত একটি স্বাধীন তদন্ত দল। নির্যাতনের ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক শক, শ্বাসরোধ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও যৌনাঙ্গ পুড়িয়ে দেওয়ার মতো বর্বরতা।
আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক এই স্বাধীন তদন্ত দলের প্রকাশিত সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানান দলের প্রধান নিকোলাস কুমজিয়ান। প্রতিবেদন গত ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ের তথ্য আছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের নির্বাচিত অং সান সু চির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এর পর থেকেই দেশটিতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, যা গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ওপর নৃশংস দমন-পীড়নের পর অনেকে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়। দেশটির একটি বড় অংশজুড়ে এখনো সংঘর্ষ চলছে।
জাতিসংঘের এই তদন্ত দলের প্রতিবেদনে বলা হয়, আটক কেন্দ্রগুলোর অভিযান পরিচালনায় জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। পাশাপাশি আটক যোদ্ধা ও তাঁদের সহযোগিতাকারী বেসামরিক মানুষকে যাঁরা বিচারের মুখোমুখি না করে হত্যা করেছে, সেই অপরাধীদেরও শনাক্ত করার ক্ষেত্রেও তদন্তকাজ এগিয়েছে। এই অপরাধীদের মধ্যে রয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, সংশ্লিষ্ট মিলিশিয়া এবং বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা।
প্রতিবেদনটিতে মিয়ানমারের বন্দিশিবিরগুলোতে হওয়া নির্যাতনের বিস্তারিত উল্লেখ আছে। এর মধ্যে রয়েছে মারধর, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া, শ্বাসরোধ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন অঙ্গ পুড়িয়ে দেওয়াসহ নানা ধরনেরে যৌন সহিংসতা।
নিকোলাস কুমজিয়ান বলেন, মিয়ানমারে নারকীয় নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান ঘটনা ও নির্মমতাকে প্রতিবেদনে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি দিনের জন্য কাজ করছি, যখন অপরাধীদের তাঁদের কৃতকর্মের জন্য আদালতে মুখোমুখি হতে হবে।’
নিকোলাস আরও বলেন, তাঁরা তদন্ত করতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পেয়েছেন। এর মধ্য দিয়েই মিয়ানমারের আটক কেন্দ্রগুলোতে যে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা বেরিয়ে আসে।
তদন্তকারী দলটি রাখাইন রাজ্যের সম্প্রদায়গুলোর বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতা নিয়ে নতুন তদন্ত শুরু করেছে। সেখানকার নিয়ন্ত্রণ নিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিরোধী আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াই চলছে।
২০১৭ সালে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা নিজ দেশে নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচতে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। গত বছর রাখাইনে সংঘর্ষের তীব্র আকার ধারণ করলে আরও প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধীন ২০১৮ সালে গঠিত মিয়ানমার–সম্পর্কিত দ্য ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে। তদন্তকারী এ সংস্থা রোহিঙ্গা–সংক্রান্ত মামলায় পাওয়া তথ্যপ্রমাণ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতের কর্তৃপক্ষের কাছে সরবরাহ করেছে।