ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে মারধর, স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ
Published: 30th, June 2025 GMT
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে মারধর ও স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। রোববার রাতের এ ঘটনায় সোমবার তজুমদ্দিন থানায় উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সম্পাদক ফরিদ উদ্দিনসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঘটনার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছে– তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো.
মামলার বাদী ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী জানান, তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক বিরোধ চলছে। এ নিয়ে কথা বলার জন্য শনিবার রাতে ফোন করে তাকে তজুমদ্দিন বাজার এলাকায় যেতে বলেন ওই নারী। সেখানে পৌঁছানোর পর শ্রমিক দলের নেতা ফরিদ উদ্দিন, তার সহযোগী আলাউদ্দিন, ছাত্রদল নেতা রাসেলসহ ৫ থেকে ৭ জন তাকে মারধর করে চার লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না পেয়ে তাকে রাতভর নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে পরদিন রোববার বেলা ১১টায় ওই ব্যক্তির প্রথম স্ত্রী সেখানে গিয়ে আসামিদের ১০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু এতে খুশি হননি ফরিদ ও তার লোকজন। ক্ষুব্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রী দু’জনকে নির্যাতন করতে থাকে তারা।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, দুপুর ১২টায় তার স্বামীকে জোরপূর্বক বাসার বাইরে নিয়ে যায় আসামিদের কয়েকজন। এ সময় ওই বাসার একটি কক্ষে ফরিদ ও আলাউদ্দিন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। তখন ঘরের বাইরে পাহারায় ছিল মারধরের শিকার ব্যক্তির দ্বিতীয় স্ত্রী। ধর্ষণের শিকার নারী আসামিদের ‘ভাই’ ডেকেও রক্ষা পাননি। বিষয়টি কাউকে না জানানোর শর্তে বিকেলে মুক্তি স্বামী-স্ত্রীর। বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালান ধর্ষণের শিকার নারী। তবে স্বজনদের কারণে তিনি তা করতে পারেননি। প্রতিবেশীদের সহায়তায় ওই রাতে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পরে তজুমদ্দিন থানা পুলিশ গিয়ে ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করে।
আজ সন্ধ্যায় তজুমদ্দিন থানার ওসি মোহাব্বত খান জানান, এজাহার অনুযায়ী, ফরিদ ও আলাউদ্দিন ধর্ষণ করে এবং একজন তাদের সহযোগিতা করে। মারধরের ঘটনায় ৬-৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এসপি মোহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, তদন্তে প্রমাণ হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রদল নেতা রাসেল বলেন, ‘আমি বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।’ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ওমর আসাদ রিন্টু জানান, বিএনপির অঙ্গসংগঠনের কেউ এ ঘটনায় জড়িত থাকলে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ধর্ষণের শিকার মানসিক ভারসাম্যহীন শিশু
ফরিদপুর সদর উপজেলায় মানসিক ভারসাম্যহীন (১০) শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত রোববারের এ ঘটনায় সোমবার কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নিযাতন দমন আইনে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর মা। মামলার আসামি ওমর আলী ও মো. জুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি আসাদউজ্জামান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওই শিশুকে ওমর আলী ধর্ষণ করে। তাকে সহায়তা করে জুয়েল। ভুক্তভোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
ঝিনাইদহে শিশুকে ধর্ষণ
ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ১২ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে রোববার তানভীর হোসেন ওরফে সোহেল মন্ডল নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিন সন্ধ্যায় বিষয়টি জানাজানির পর রাতে ভুক্তভোগীকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় সোহেলের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেছেন শিশুটির মা। সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সোহেলকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নেত্রকোনায় শিশুকে যৌন নির্যাতন
নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলায় শিশুকে (৭) যৌন নির্যাতনের অভিযোগে জাফর আলী নামের এক মুদিদোকানিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরের এ ঘটনায় খালিয়াজুরী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলার পর সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, শিশুটিকে যৌন হয়রানির বিচার চাইতে গেলে জাফর ও তার লোকজন হুমকি দেয়। এরপর তারা মামলা করেন।
মাদ্রাসায় ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার এক মাদ্রাসায় ছাত্রীকে (১১) যৌন হেনস্থার অভিযোগে গ্রাম্য সালিশে শরিফুল ইসলাম নামের এক শিক্ষককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই মাদ্রাসার সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, কিছুদিন ধরে শিক্ষক শরিফুল ইসলাম ওই ছাত্রীকে নানা ধরনের খারাপ ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। সেই সঙ্গে খারাপ কথা বলতেন। পরে বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্যদের ব্যক্তিদের জানানা হলে শনিবার তারা সালিশ বৈঠকে বসেন। বালিয়াকান্দি থানার ওসি জামাল উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(সংশ্লিষ্ট অফিস ও প্রতিনিধির পাঠানো তথ্য)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর আস ম দ র এ ঘটন য় উপজ ল য় ব যবস থ র বব র ব ষয়ট ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ অভিযোগের তদন্তসহ ৯ দফা দাবি
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক।
আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা এ দাবি জানান।
ওই বিবৃতিতে মারমা এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ-সহিংসতা ও গুলিবর্ষণে ৩ জন নিহত ও ৩০ জন আদিবাসী আহত হয়েছেন বলে জানান বিশিষ্ট নাগরিকেরা। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনেরও দাবি জানান তাঁরা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোনো বাহিনী আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ঊর্ধ্বে নয়। মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তাঁকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। দায়মুক্তির সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
নাগরিক সমাজের ৯ দফা দাবিগুলো হলো:১. খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভুক্তভোগী কিশোরী এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সহায়তা দিতে হবে।
২. সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং মদদের অভিযোগের বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
৩. সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিরা যে বাহিনীর সদস্যই হোক না কেন, তাঁদের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. নিহত ও আহতদের পরিবারকে সুরক্ষা, যথার্থ ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. পাহাড়ে দীর্ঘদিনের সামরিকীকরণ নীতি পর্যালোচনা করে শান্তিপূর্ণ, রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগোতে হবে।
৬. পাহাড়ে বসবাসরত সব নাগরিকের জীবনের অধিকার, নিরাপত্তা ও সম্প্রীতিনির্ভর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৭. পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর যেন কাঠামোগত নিপীড়ন চালানো না হয় এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা যেন আরও হয়রানি, গ্রেপ্তার ও আইনি নিপীড়নের শিকার না হয়—রাষ্ট্রকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. পাহাড়ে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বর দমন না হয় এবং জনগণ সত্য জানতে পারে।
৯. নারীদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনাগুলোর প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিতে স্বাধীন তদন্ত করতে হবে।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতায় প্রাণহানির কারণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করার দাবি আসকের২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আসিফ শাহান, মোশাহিদা সুলতানা, রুশাদ ফরিদী, তাসনীম মাহবুব, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, মানজুর আল মতিন, কাজী জাহেদ ইকবাল, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, সংগীতশিল্পী বীথি ঘোষ, লেখক ফিরোজ আহমেদসহ ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি এইচআরএফবির২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫