মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শুল্ক চু্ক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে ওয়াশিংটনে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বৈঠকে বসবেন প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত চূক্তির খসড়া নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। চুক্তি হলে ট্রাম্প প্রশাসনের বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের হার কিছুটা কমবে।সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত পাল্টা শুল্ক চুক্তির একটি খসড়া বাংলাদেশে পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। জবাবে খসড়ার ওপর মতামত ওয়াশিংটনে পাঠায় ঢাকা। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড.

খলিলুর রহমানের সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিরা (ইউএসটিআর) বৈঠক করেন। বৈঠকে উভয় পক্ষের দরকষাকষির পর খসড়ায় আবারও কিছুটা পরিবর্তন আনছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যা আজ মঙ্গলবার চূড়ান্ত করে নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে। এ সংশোধিত খসড়া নিয়েই বৃহস্পতিবার ওই বৈঠকে বসবে উভয় পক্ষ।

একদিনের বৈঠকে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হলে পরদিনও বৈঠক হতে পারে। এসব বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। তবে সেটি সম্ভব না হলে ভার্চুয়ালি তিনি যুক্ত হবেন। 

এ বিষয়ে সোমবার বাণিজ্য বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, পাল্টা শুল্ক চুক্তির খসড়ায় সংযোজন-বিয়োজন করে ইতোমধ্যেই দুবার মতামত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। এসব মতামতের বিষয়ে দরকষাকষি করতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। আজ মঙ্গলবার তার কাছে তৃতীয় মতামতটি পাঠানো হবে। এ মতামতের ভিত্তিতে চুক্তি চূড়ান্ত করতে আগামী বৃহস্পতিবার। সেখানে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো সম্ভব না হলে পরবর্তীতে আরও বৈঠকের প্রয়োজন হতে পারে। 

দরকষাকষি শেষে চুক্তি করতে কতদিন সময় লাগতে পারে– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চুক্তি করার ক্ষেত্রে অন্যান্য যে কোনো দেশের সঙ্গে এগিয়ে রয়েছি। গত ২ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে এ পর্যন্ত ২৮ দফা বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলে সেটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন নিতে হবে। এরপর ভেটিং হয়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন। তারপরই চুক্তি করার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খসড়ায় যুক্তরাষ্ট্রে পক্ষ থেকে বেশকিছু কঠিন প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন–কানুনের মধ্য থেকে বাংলদেশ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার ওপরই বেশি জোর দিয়ে মতামত দিয়েছে। কারণ, বাণিজ্য ঘাটতির ওপর ভিত্তি করেই যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এক্ষেত্রে খসড়ার মতামতে জানানো হয়, বাংলাদেশ বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করে এমন অন্তত ৪১ পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি আনার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে পেট্রোলিয়াম পণ্য, তুলা, প্রোপেন বা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি), সয়াবিন তেল, গম, এলএনজি উল্লেখযোগ্য। 

সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারি কেনাকাটা বাড়ানোর উদ্যোগের বিষয়টিও মতামতে জানানো হয়। এরই অংশ হিসেবে দেশটি থেকে দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানির চুক্তির আওতায় বাড়তি আরও ১ বিলিয়ন ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার এলএনজি আমদানি করা হবে। খাদ্য-শস্য আমদানি বাড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি ইউক্রেন থেকে ৩ লাখ টন গম আমদানি উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসব গম আমদানি সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বাংলাদেশের সামরিক কেনাকাটার মূল উৎস হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে এ অস্ত্র কেনা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং–এর প্রায় সবগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটি থেকে আরও কিছু উড়োজাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প য ক তর ষ ট র র উপদ ষ ট র র রহম ন মত মত আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের সঙ্গে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস চুক্তি মিশরের

গাজায় গণহত্যা ও দুর্ক্ষিভের মধ্যে ইসরায়েলের কাছ থেকে গ্যাস কিনতে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের ইতিহাসে বৃহত্তম চুক্তি এটি, যা সম্প্রসারণবাদী দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে আরো শক্তিশালী করবে এবং ফিলিস্তিন নিশ্চিহ্নের প্রশ্নে অর্থের যোগান নিশ্চিত করবে।

সংবাদমাধ্যম ‘মিডল ইস্ট আই’ লিখেছে, চুক্তির অধীনে ইসরায়েলের লেভিয়াথান গ্যাসক্ষেত্র থেকে মিশরের গ্যাস আমদানির পরিমাণ প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পাবে এবং এটি ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রপ্তানি চুক্তি হিসেবে চিহ্নিত হবে।

আরো পড়ুন:

অস্ট্রেলিয়াও সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে ‘স্বীকৃতি দেবে’

গাজা দখলের পাঁচ দফা পরিকল্পনা নেতানিয়াহুর

ইসরায়েলি জ্বালানি কোম্পানি নিউমেডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই চুক্তির আওতায় ২০৪০ সাল পর্যন্ত সমুদ্রতীরবর্তী লেভিয়াথান গ্যাসক্ষেত্র থেকে ১৩০ বিলিয়ন ঘনমিটার (বিসিএম) গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে মিশরে সরবরাহ করা হবে।

লেভিয়াথান গ্যাসক্ষেত্রের তিন মালিকের একটি নিউমেড; অন্য দুই মালিক হলো ইসরায়েলের রেশিও কোম্পানি ও শেভরন। নিউমেডের মালিকানা ৪৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

নতুন চুক্তিটি ২০১৮ সালে মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির একটি বড় সম্প্রসারণ। বিদ্যমান চুক্তির আওতায় প্রতিবছর ৪.৫ বিসিএম গ্যাস মিশরে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। যদিও ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা শুরু করার পর থেকে ইসরায়েল একাধিকবার গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। এই চুক্তির মেয়াদ চলতি দশকের শেষে শেষ হওয়ার কথা।

নতুন চুক্তি ইসরায়েলের ওপর মিশরের জ্বালানিনির্ভরতা আরো গভীর করবে; কারণ গত তিন বছরে নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন ধসে পড়ায় ক্রমবর্ধমান দেশীয় চাহিদা মেটাতে কায়রো আমদানি বাড়াচ্ছে।

গত দুই গ্রীষ্মে মিশরের তীব্র জ্বালানি ঘাটতির কারণে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে পর্যায়ক্রমিক লোডশেডিং হয়েছে, যা জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

এই ঘাটতি মেটাতে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়ানোর চেষ্টা করেছে মিশর সরকার, যার বাজারমূল্য ২০২৫ সালে বেড়ে ১৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৪ সালে এই বাজারমূল্য ছিল ১২ বিলিয়ন ডলার।

জয়েন্ট অর্গানাইজেশনস ডেটা ইনিশিয়েটিভ নামে প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল বর্তমানে মিশরের মোট চাহিদার ১৫-২০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করে।

নিউমেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়োসি আবু এই চুক্তিকে ‘উইন-উইন ডিল’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, চুক্তিটি এলএনজি আমদানির তুলনায় মিশরের ‘বিপুল পরিমাণ অর্থ’ সাশ্রয় করবে।

গ্যাস সরবরাহ করা পাইপলাইনের মাধ্যমে, যা এলএনজি আমদানির তুলনায় সস্তা। কারণ এলএনজি পরিবহনের জন্য তরল আকারে আনার আগে ‘অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায়’ ঠান্ডা করতে হয়।

মিশরের অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘মাদা মাসর’-এর তথ্য অনুযায়ী, নতুন চুক্তির আওতায় প্রতি বিসিএম গ্যাসের জন্য প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ডলার বেশি দেবে মিশর, যা আগের চুক্তির তুলনায় ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

মিশরের সাবেক পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এবং সরকারের এক সূত্র মাদা মাসরকে গত বছর জানিয়েছিলেন, দুই দেশ মাসের পর মাস ধরে ইসরায়েলি গ্যাসের প্রবাহ মিশরে বাড়ানোর আলোচনা করেছে।

তারা বলেছিলেন, ইসরায়েলি গ্যাস মিশরের জন্য সরবরাহ ঘাটতি পূরণের সবচেয়ে সস্তা বিকল্প হওয়ায় মিশর আমদানির জন্য বেশি মূল্য দিতে রাজি হতে পারে।

‘শর্ত পূরণের কোনো নিশ্চয়তা নেই’
তবে চুক্তি বাস্তবায়ন নির্ভর করছে পাইপলাইন ও অতিরিক্ত রপ্তানি অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ করার ওপর।

চুক্তির প্রথম ধাপে ২০২৬ সালের শুরুর দিকে মিশরে ২০ বিসিএম গ্যাস সরবরাহ করা হবে, যা নির্ভর করছে লেভিয়াথান গ্যাসক্ষেত্রে একটি নতুন পাইপলাইন নির্মাণ এবং ইসরায়েলের বন্দর নগরী আশদোদ ও আশকেলনের মধ্যে চলমান পাইপলাইনের সম্প্রসারণ কাজ শেষ হওয়ার ওপর; যে প্রকল্পটি গাজায় ইসরায়েলের হামলার কারণে স্থগিত রয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপে অবশিষ্ট ১১০ বিসিএম গ্যাস মিশরে সরবরাহের বিষয়টি নির্ভর করছে রপ্তানি অবকাঠামো সম্প্রসারণের ওপর, যার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েল থেকে মিশরের সীমান্তবর্তী নিটজানা পর্যন্ত একটি নতুন স্থলভিত্তিক পাইপলাইন নির্মাণ, যার কাজ এখনো শুরু হয়নি।

নিউমেড এক বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করে বলেছে, এসব শর্ত পূরণের কোনো নিশ্চয়তা নেই।

পদক্ষেপটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন গাজায় ইসরায়েলের অবরোধে কায়রোর কথিত সহযোগিতার অভিযোগ নিয়ে মিশরে জনঅসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। গাজায় ইসরায়েল আরোপিত অনাহারে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।

গত জুলাইয়ে গাজায় জীবনরক্ষাকারী ত্রাণ প্রবেশের জন্য রাফাহ সীমান্ত খুলে দিতে ব্যর্থ হওয়ার প্রতিবাদে কায়রোর মা’আসারা থানায় হামলা চালানো দুই ব্যক্তিকে জোরপূর্বক গুম করা হয়।

এর ঠিক আগে রাফাহ সীমান্ত বন্ধের প্রতিবাদে নেদারল্যান্ডসে অ্যাক্টিভিস্ট আনাস হাবিবের নেতৃত্বে প্রতীকীভাবে দূতাবাসের ফটক বন্ধ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় রাজধানীগুলোর মিশরীয় দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ হয়।

মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই সপ্তাহে কায়রোতে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে ‘সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মূল্যবোধের ঘাটতির’ নিন্দা জানান তিনি। গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলায় (যেখানে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন) মিশরের সহযোগিতার অভিযোগকে ‘আজব কথা’ বলে উড়িয়ে দেন।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলের সঙ্গে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস চুক্তি মিশরের