কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় খোলা বাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রয় (ওএমএস) ডিলার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে পুরাতন তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সোমবার এ ঘটনার পর রাত পর্যন্ত তালা ঝুলছিল বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় নেতৃত্ব দেন লালমাই উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মো.

নোমান হোসেন ও সদস্য সচিব মো. সাদ্দাম বিন হোসাইন।  

উপজেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, লালমাই উপজেলায় বাগমারা বাজার, হরিশ্চর ও ভুশ্চি বাজারের জন্য ডিলার নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ওএমএস ডিলার নিয়োগে আবেদন ক্রয়ের শেষ তারিখ ছিল ১৯ জুন। আবেদন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২২ জুন। রোববার (২৯ জুন) উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারজানা আক্তার সরেজমিনে ৮টি আবেদন যাচাই করেন এবং দোকান পরিদর্শন করেন। বিভিন্ন কারণে কয়েকজনের আবেদন বাদ পড়ে। যোগ্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। 

তবে কুমিল্লা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক কবির হোসাইন রুমন, লালমাই উপজেলার আহ্বায়ক মো. নোমান হোসেন, সদস্য সচিব মো. সাদ্দাম বিন হোসাইন বলেন, লালমাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত) রাজিব কুমার দে ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়ায় আমরা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের তালা ভেঙে সাময়িকভাবে নতুন তালা লাগিয়ে দিয়েছি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিমাদ্রী খীসা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। মঙ্গলবার মানববন্ধনসহ কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেব। সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তালা থাকবে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত) রাজিব কুমার দে বলেন, বিধি মোতাবেক সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ডিলার চূড়ান্ত করা হয়। যারা বাদ পড়েছেন, তাদের বাদ পড়ার কারণও আছে। কিন্তু সব না জেনেই তারা অফিসে তালা দিয়েছেন। 

লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিমাদ্রী খীসা সমকালকে বলেন, তালা দেওয়ার ঘটনা সঠিক। আমার জানামতে, ওএমএস ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়টি স্বচ্ছতার সাথে হয়েছে। তবুও যেহেতু একটি অভিযোগ উঠেছে বিষয়টি তদন্ত করে কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ওএমএসের চাল-আটা কিনতে কেউ রাত ১২টা, কেউ ভোররাত থেকে লাইনে

বাজারের উচ্চ মূল্যের বিপরীতে অর্ধেক দামে চাল ও আটা কিনতে রাজশাহীতে সরকারি খোলাবাজারের (ওএমএস) ট্রাকের সামনে ভিড় করছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সকাল ৯টায় ট্রাক এলেও অনেকেই পণ্যের আশায় রাত ১২টা বা ভোররাত থেকে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। রাজশাহী নগরের চৌদ্দপাই এলাকায় এমনই এক চিত্র দেখা গেছে, যেখানে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও অনেকে পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন।

রাজশাহী নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে সাপ্তাহিক ছুটি বাদে পাঁচ দিন প্রতি ট্রাকে এক টন চাল ও এক টন আটা বিক্রি করা হয়। একজন প্রতি কেজি ৩০ টাকায় সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল এবং প্রতি কেজি ২৪ টাকায় একই পরিমাণ আটা কিনতে পারেন।

রাত তিনটার দিকে এসে লাইন ধরে অবস্থান করছিলেন নগরের বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা রোজেনা বেগম। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে চাল ও আটা কেনার সুযোগ পান। তিনি বলেন, ‘অ্যাকটা মানুষ কাইজ করেন। চাইরটা-পাঁচটা মানুষ খায়। কী করব, ওই একজনের আয়ে কিছু হয় না। আইসতে তো হবেই। তা ছাড়া তো বুদ্ধি নাই। আমরা গরিব মানুষ। অনেক দিন পাওয়া যায় না। তাই রাতে আসি।’

রাত দুইটার দিকে লাইনে দাঁড়ান নগরের মির্জাপুর এলাকার সোনাবান বেগম। তিনি লাঠিতে ভর করে চলাফেরা করেন। দুই ছেলে মারা গেছেন। তিনি বলেন, ‘গতকালকে সকাইলে আইছিলাম। আইসা পাইনি। পরে আজ দুইটায় আইসিছিলাম। এখানে আইসে বসেছিলাম।’

ফজরের আজানের পর লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন হনুফার মোড়ের চায়না বেগম। কথা বলতে গিয়ে তাঁর চোখ ছলছল করে ওঠে। তিনি বলেন, ‘একটু বেশি করে বাড়ায় দিক। আমরা একা খেতে চাইনি। আমরা কারও হক মারতে চাইনি। বাংলাদেশের সবাই খাব। কেউ খাবে, কেউ খাবে না, এটা তো আমরা চাইনি। আল্লাহকে স্মরণ করলে কেউ কারও হক মারতে পারে না। কিন্তু হক মারছে। সবাই আমরা খেতে চাই।’

লাইনে দাঁড়ানো অধিকাংশ ব্যক্তিই পরিবারের বয়স্ক বা প্রবীণ সদস্য। বেশির ভাগ মানুষের হাতে টুল, পিঁড়ি বা ইট-পাথরসহ ব্যাগ দেখা গেছে। এসব রেখে বা এসবে বসে তাঁরা রাত পার করেন সকালের অপেক্ষায়। তবে লাইনে প্রবীণ নারীদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দেখা গেছে প্রবীণ পুরুষদের।

ওএমএসের ট্রাক থেকে একজন প্রতি কেজি ৩০ টাকায় সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল এবং প্রতি কেজি ২৪ টাকায় একই পরিমাণ আটা কিনতে পারেন। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী নগরের চৌদ্দপাই এলাকায় তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওএমএসের চাল-আটা কিনতে কেউ রাত ১২টা, কেউ ভোররাত থেকে লাইনে