টেস্ট সিরিজ শেষ। এবার ওয়ানডেতে মুখোমুখি হওয়ার পালা। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা এবারের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে তিনটি ওয়ানডে খেলবে। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচ আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচটি। দিবারাত্রির ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় শুরু হবে। সরাসরি দেখাবে টি স্পোর্টস।

দুই দলের এটি একাদশতম দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। এর আগের দশ দ্বিপক্ষীয় সিরিজের ছয়টিতে শ্রীলঙ্কা জিতেছে। বাংলাদেশের জয় দুটিতে। দুটিতে সিরিজ অমীমাংসিত থেকে। এছাড়া মহাদেশীয়, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা মিলিয়ে দুই দল ৫৭ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে সাফল্যের হার বেশি শ্রীলঙ্কারই। ৪৩ ম্যাচে জিতেছে তারা। বাংলাদেশ তাদের হারাতে পেরেছে ১২ ম্যাচে। ২ ম্যাচে কোনো ফল আসেনি।

তবে অতীতের পরিসংখ্যানের সঙ্গে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে ব্যবধান রয়েছে। দুই দলের সবশেষ দুই দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছে। এছাড়া শেষ ৯ মুখোমুখি লড়াইয়ের ৫টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। যেখানে ২০২৩ সালের দিল্লির বিশ্বকাপের ম্যাচও রয়েছে। টাইমড আউটের কারণে যে ম্যাচ স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে।

আরো পড়ুন:

বিদেশি কোম্পানির অধীনে বিপিএল, ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

পাকিস্তান টেস্ট দলের কোচ মাহমুদ, আফ্রিকা সিরিজ দিয়ে শুরু

লম্বা সময় পর বাংলাদেশ এবার পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা গেছে। সবশেষ ২০১৭ সালে দুই টেস্ট, তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলেছিল দুই দল। এবারও টেস্ট সিরিজ দিয়ে শুরু হয়েছিল সফর। গলে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দারুণ পারফর্ম করেছিল। একটু সাহসিকতা দেখালে ম্যাচটা নিজেদের পক্ষেও আনতে পারত। কিন্তু কলম্বোর এসএসসিতে দ্বিতীয় ম্যাচে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ। যার ফলে টেস্ট সিরিজ খোয়াতে হয় ১-০ ব্যবধানে। একই সঙ্গে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ চক্রে একটি পরাজয়কে সঙ্গী করে বাংলাদেশ।

এবার ওয়ানডের পালা। দুই বছর পর বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কায় ওয়ানডে খেলবে। সবশেষ এশিয়া কাপে দুই দলের দেখা হয়েছিল। এরপর দিল্লি ও চট্টগ্রামে চার ওয়ানডে খেলে দুই দল। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ সফরে গিয়ে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হারায় শ্রীলঙ্কা। এবার ঘরের মাঠে তারা কী প্রতিশোধ নিতে পারবে? সময়ের কাছেই প্রশ্নটা তোলা থাক।

এই ম্যাচ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হবে মেহেদী হাসান মিরাজের। শান্তর কাছ থেকে অধিনায়কত্ব ‘ছিনিয়ে’ মিরাজকে ওয়ানডে অধিনায়ক করা হয়েছে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত ভালোভাবে নেননি শান্ত। এজন্য টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন। যা নিশ্চিতভাবেই মিরাজের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে যাচ্ছে।

মিরাজকে এর আগেও অস্থায়ী অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে শান্তর অনুপস্থিতিতে। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। যেখানে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার মিরাজ যুগ পাকাপাকিভাবে শুরু হতে যাচ্ছে। এবার তার অধীনে বাংলাদেশ কেমন করে সেটাই দেখার।

ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর আবার বাংলাদেশ নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যের ফরম্যাটে খেলতে নামছে। নতুন অধিনায়ক, পুরোনো চেনা প্রতিপক্ষ। কেমন করবে বাংলাদেশ? টেস্ট সিরিজ হারের ক্ষত ভুলে ওয়ানডেতে কী পারবে লড়াই করতে? জয় ছিনিয়ে আনতে? 

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবধ ন দ ই দল

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েল-তুরস্কের বিরোধে সিরিয়া কি ভাগ হয়ে যাবে

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক দৃশ্যপটের দিকে নজর দিলে মনে হতে পারে, ইসরায়েলের কৌশলগত অবস্থান আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে। একই কথা বলা যায় তুরস্কের ক্ষেত্রেও। প্রশ্ন হচ্ছে, এ পরিস্থিতি কি স্থিতিশীলতার ভিত্তি তৈরি করে দিচ্ছে, নাকি সামনে আরও বড় বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে?

গাজা, অধিকৃত পশ্চিম তীর, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরান—বেশ কয়েকটি জায়গায় সংঘাতে জড়িয়ে পড়লেও ইসরায়েল এ মুহূর্তে এগিয়ে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অন্যদিকে ইরানের নেতৃত্বাধীন ‘প্রতিরোধ অক্ষকে’ বিশৃঙ্খল বলে মনে হচ্ছে। অন্যদিকে এখন সিরিয়া শাসন করছেন আল-কায়েদার সাবেক নেতা। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো তাঁর ভাবমূর্তি অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ‘পরিষ্কার’ করে নিয়েছে। আইএস ও হায়াত তাহরির আল-শামের মতো উগ্রবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েক দশকের অবস্থান কয়েক দিনের মধ্যে আবর্জনার স্তূপে ছুড়ে ফেলা হয়, যেটা পশ্চিমাদের দ্বিচারিতাকে আরও পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে।

আরও পড়ুনতুরস্ক যে কারণে নিজেদের ইসরায়েলের চূড়ান্ত টার্গেট মনে করছে ০২ আগস্ট ২০২৫ইসরায়েলের পাশাপাশি তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ আঞ্চলিক ক্রীড়নক। ফলে অত্যন্ত অস্থির মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আনতে গেলে অনিবার্যভাবেই তুরস্ক ও ইসরায়েলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর দুটি দেশই মার্কিন চাপ উপেক্ষা করতে প্রস্তুত, যেটা অধিকাংশ মিত্রদেশের কল্পনারও বাইরে। তুরস্কে অবশ্য ওয়াশিংটনের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে গভীর সংশয় রয়েছে। আঙ্কারার বিশ্বাস, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা ইসরায়েলকেই অগ্রাধিকার দেবে।

তুরস্কে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সম্প্রতি দেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের প্রধান নিরাপত্তা হুমকি কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে (পিকেকে) নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়েছেন। তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়া থেকে বাশার আল-আসাদকে সরাতে চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়েছে। তাঁর জায়গায় এসেছেন আহমেদ আল-শারা। পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নিজেদের ভাবমূর্তি আরও মজবুত করেছে আঙ্কারা।

ইসরায়েলের পাশাপাশি তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ আঞ্চলিক ক্রীড়নক। ফলে অত্যন্ত অস্থির মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আনতে গেলে অনিবার্যভাবেই তুরস্ক ও ইসরায়েলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর দুটি দেশই মার্কিন চাপ উপেক্ষা করতে প্রস্তুত, যেটা অধিকাংশ মিত্রদেশের কল্পনারও বাইরে। তুরস্কে অবশ্য ওয়াশিংটনের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে গভীর সংশয় রয়েছে। আঙ্কারার বিশ্বাস, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা ইসরায়েলকেই অগ্রাধিকার দেবে।

আরও পড়ুনইসরায়েলের সিরিয়া আক্রমণ যেভাবে বুমেরাং হচ্ছে২৩ জুলাই ২০২৫

এ সমীকরণে সিরিয়া বড় একটা পরীক্ষার ময়দান হতে পারে। গত মাসে দক্ষিণ সিরিয়ায় দ্রুজ ও বেদুইন সম্প্রদায়ের সংঘর্ষের মধ্যে ইসরায়েল সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর অবস্থানে বিমান হামলা চালায়। যদিও ইসরায়েল বলেছে, এর লক্ষ্য দ্রুজদের রক্ষা করা। আসল উদ্দেশ্য মনে হচ্ছে দামেস্কের দক্ষিণাঞ্চলকে নিরস্ত্র করে নিজেদের ‘নিরপেক্ষ অঞ্চল’ বাড়ানো।

এর বাইরে আসাদের পতনের পরপরই ইসরায়েল কোনো উসকানি ছাড়াই একের পর এক বিমান হামলা চালিয়ে সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেয়। পশ্চিমা দেশগুলো সে সময় স্বাভাবিকভাবেই নীরবতা বজায় রেখেছিল।

সৌদি আরব, কাতার, তুরস্কসহ কয়েকটি আঞ্চলিক দেশ সিরিয়ার ঐক্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান সতর্ক করেছেন, দ্রুজরা (যাদের আঙ্কারা ইসরায়েলের সহযোগী মনে করে) যদি সিরিয়াকে বিভক্ত বা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, তবে তুরস্ক হস্তক্ষেপ করতে পারে।

আরও পড়ুন২৫০০ বছরের পুরোনো দুশমনি: ইসরায়েল কি ‘মরদখাই’? ইরান কি ‘হামান’?১৭ জুন ২০২৫

এমন জল্পনাও রয়েছে যে ইসরায়েল ১৯৭৪ সালে সিরিয়ার সঙ্গে করা যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করে নতুন নিরাপত্তা চুক্তি করতে চায়। এর মাধ্যমে ইসরায়েল গোলান মালভূমিতে অন্তর্বর্তীকালীন পাঁচ বছরের জন্য অবস্থান করতে চায়। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলে, ইসরায়েল সহজেই এসব ‘অস্থায়ী’ ব্যবস্থাকে স্থায়ী ব্যবস্থায় পরিণত করে। সেটা যেমন দামেস্কের জন্য উদ্বেগজনক, আবার আঙ্কারার জন্যও।

এদিকে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সাম্প্রতিক দ্রুজ দমন অভিযান কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। গোষ্ঠীটি আশঙ্কা করছে, পরের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে তারা। যদিও এখন পর্যন্ত মার্কিন সুরক্ষা গোষ্ঠীটি তাদের পাশে রয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে তুরস্ক শারার পক্ষে দাঁড়াতে প্রস্তুত বলে মনে হয় না। আবার ইসরায়েলের সঙ্গে প্রভাবক্ষেত্র ভাগাভাগি নিয়ে আপস করতেও তারা রাজি হবে কি না, সেটাও অনিশ্চিত।

আরও পড়ুনসিরিয়া ও কুর্দিদের নিয়ে তুরস্ক আসলে কী করতে চায়২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

এ বাস্তবতায় আমরা একটা কাল্পনিক ভাগাভাগির কথা চিন্তা করতে পারি। দামেস্কের উপকণ্ঠ পর্যন্ত সিরিয়ার দক্ষিণাংশ ইসরায়েলের প্রভাবে চলে যেতে পারে। আর ইউফ্রেতিসের পূর্ব দিকে এসডিএফের প্রধান ঘাঁটি এলাকা ছাড়া বাকি অংশ তুরস্কের প্রভাবে চলে যাবে। এ অবস্থায় এসডিএফ মার্কিন সমর্থনের ওপর ভরসা রাখবে, যা তুর্কি হামলার বিরুদ্ধে একধরনের ঢাল হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু বাস্তবে তা কীভাবে কার্যকর হবে, সেটাই প্রশ্ন।

এ অঞ্চলে শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির বড় পরীক্ষা আসতে পারে। ওয়াশিংটন সম্ভবত একটি সমন্বিত কৌশলের দিকে এগোচ্ছে।

ওয়াশিংটনের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে তুরস্কের সংশয় অবশ্যই আগের মতোই গভীর। আঙ্কারার বিশ্বাস, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা ইসরায়েলকেই অগ্রাধিকার দেবে। কিন্তু ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্র কি পারবে মধ্যপ্রাচ্যে তার দুই আঞ্চলিক মিত্রকে গভীরভাবে বিভক্ত সিরিয়ায় নিজ নিজ প্রভাববলয় তৈরির প্রতিযোগিতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে? কেননা যেকোনো সময়ই এ বিভাজন আরেকটি বড় সংঘাতের স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দিতে পারে।

মার্কো কার্নোলোস ইতালির সাবেক কূটনীতিক। তিনি সোমালিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও জাতিসংঘে দায়িত্ব পালন করেছেন

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

আরও পড়ুনইসরায়েল এখন শেষ সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো১২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ