ভোলায় স্বামীকে নির্যাতনের পর স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, মামলা
Published: 1st, July 2025 GMT
ভোলার তজুমদ্দিনে স্বামীকে বেঁধে রেখে এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদল ও শ্রমিক দল নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সোমবার (৩০ জুন) ভুক্তভোগী বাদী হয়ে তজুমদ্দিন থানায় মামলা করেছেন। গত শনিবার রাতে উপজেলার কামারপট্টি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
মামলায় ছয় জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। নাম না জানা আসামি করা হয়েছে আরো ৫-৬ জনকে।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- তজুমদ্দিন উপজেলা শ্রমিক দলের ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন ও যুবদল নেতা আলাউদ্দিন। তদন্তের স্বার্থে বাকিদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।
আরো পড়ুন:
আইনজীবী হত্যা: চিন্ময় দাসসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আসামির আপিল শুনবেন হাইকোর্ট, অর্থদণ্ড স্থগিত
তজুমুদ্দিন সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল ও সজিব ঘটনার পরোক্ষ মদদ দিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। ধর্ষণে সহায়তা করার অভিযোগে ঝর্ণা বেগম নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী দম্পতির অভিযোগ থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী নারীর স্বামী দুই বিয়ে করেছেন। গত শনিবার রাতে তাকে ডেকে পাঠান তার ছোট স্ত্রী। সেখানে যাওয়ার পথে আটকে চাঁদা দাবি করেন ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের নেতারা। তাদের সঙ্গে কয়েকজন ব্যক্তি ছিলেন। তাকে একটি ঘরে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে তার বড় স্ত্রীকে টাকা নিয়ে এসে স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে বলে নির্যাতনকারীরা।
গত রবিবার সকালে বড় স্ত্রী ঘটনাস্থলে গেলে তার কাছে স্বামীর মুক্তিপণ হিসেবে চার লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার সামনেই ওই ব্যক্তিকে আরেক দফা পাইপ ও রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়। দুপুর ১টার দিকে স্বামীকে অন্যত্র সরিয়ে রেখে ফরিদ ও আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে তার বড় স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। এ সময় তাদের বাবা ও ভাই ডেকে এবং হাত-পা ধরেও রক্ষা পাননি ভুক্তভোগী নারী।
পরে ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বামীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘটনা কাউকে না বলার শর্তে বাড়ি পাঠিয়ে দেন অভিযুক্তরা। রবিবার সন্ধ্যায় ধর্ষণের শিকার নারী আত্মহত্যার চেষ্টা করলে বাড়ির আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় বাজারে নিয়ে সবাইকে ঘটনাটি জানান। পরে ভুক্তভোগী নারী ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে পুরো ঘটনা জানালে রাতে পুলিশ গিয়ে তাদের থানায় নেয়। সেখানে মামলা হয়।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ওমর আসাদ রিন্টু বলেন, “অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
তজুমদ্দিন থানার ওসি মহব্বত খান বলেন, “ধর্ষণ মামলা রুজু হয়েছে। একজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।”
ঢাকা/পলাশ/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবকে আর কখনো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেওয়া হবে না, বললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান অধ্যায় তাহলে শেষ! লাল-সবুজ জার্সিতে আর কখনো খেলতে দেখা যাবে না তাঁকে। না, সাকিব নিজে দেশের হয়ে আর না খেলার ঘোষণা দেননি। তবে তাঁকে আর বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেওয়া হবে না, এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। গতকাল সোমবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর-এর সঙ্গে মুঠোফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন আসিফ মাহমুদ।
সাকিবের এক ফেসবুক পোস্টের জেরে আসিফের সঙ্গে দুই দিন ধরে তাঁর পাল্টাপাল্টি ভার্চ্যুয়াল লড়াই চলছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে চলছে তীব্র বিতর্ক। এর মধ্যেই নিজের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানালেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরকে তিনি বলেন, ‘তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের জার্সির পরিচয় বহন করতে দেওয়া, এটা আমার পক্ষে কোনোভাবেই সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব না। ইতিপূর্বে এটা আমি বিসিবিকে না বললেও এখন আমার বোর্ডের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে, সাকিব আল হাসান আর কখনো বাংলাদেশ টিমে খেলতে পারবেন না।’
কেন এমন সিদ্ধান্ত, সেটাও ব্যাখ্যা করেছেন আসিফ মাহমুদ, ‘যতবার তিনি (সাকিব) দেশে আসার জন্য চেয়েছেন, খেলার জন্য চেয়েছেন, বলেছেন “আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। আমি শুধু এমপি ইলেকশনটা করেছি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছি।” কিন্তু আসল সত্যটা তো হচ্ছে, তিনি আসলে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠেভাবে জড়িত, যার প্রমাণ আমরা পেলাম।’
প্রমাণ বলতে আসিফ মাহমুদ আসলে সাকিবের একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসের কথা বুঝিয়েছেন। যে পোস্ট থেকে এই বিতর্কের সূত্রপাত। তবে এর আগে পেছনের ঘটনাও একটু মনে করা যাক। গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময়টায় সাকিব ছিলেন দেশের বাইরে। এরপর আর দেশে ফিরতে পারেননি নৌকা প্রতীকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়া সাকিব। আরও অনেকের মতো সাকিবের নামেও হত্যা মামলা হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগ আছে, আছে দুদকের মামলাও।
আরও পড়ুনএবার সাকিবকে পাল্টা জবাব দিলেন আসিফ১২ ঘণ্টা আগেতো সেই সাকিব গত রোববার রাত ৯টার দিকে ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করেছেন। সেই পোস্টে গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নিজের একটা ছবি দিয়ে সাকিব লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন, আপা।’
এর একটু পরেই সেদিন রাত ১০টার দিকে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তাঁর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, ‘একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি দিয়েছেন আপনারা আমাকে। বাট আই ওয়াজ রাইট। ইন্ড অব দ্য ডিসকাশন।’
এর জবাবে গত রোববার রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে সাকিব নিজের ফেসবুকে লিখেন, ‘যাক শেষমেশ কেউ একজন স্বীকার করে নিলেন যে তাঁর জন্য আমার আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেওয়া হলো না, বাংলাদেশের জন্য খেলতে পারলাম না!’
সে (শেখ হাসিনা) তো সব সময় সিরিয়াসলি খেলা ফলো করেছে, খেলা দেখছে। তাই না? খেলার সঙ্গে যুক্ত এবং ওতপ্রোতভাবেই যুক্ত ছিলেন। তো সেখান থেকেই একটা সম্পর্ক হয়েছে। সেটা রাজনীতির আগে থেকেই। সেই জায়গা থেকে আমি একজনকে উইশ করতেই পারি। তা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য, কাউকে কোনো ইঙ্গিত, এমন কোনো কিছুই না।সাকিব আল হাসানসেটার জবাবে গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে আসিফ মাহমুদ নিজের ফেসবুকে আবার লিখেন, ‘ভাইয়া, আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল। আমি শুধু নির্বাচনটাই করেছিলাম, আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে জড়িত হইনি। ইউ নো হু। যার হাত ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত, তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বোর্ডের কর্তারা একাধিকবার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে বললেও তা না করে বরং খুনিদের এনডোর্স করা ছাড়াও শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, মানি লন্ডারিং, ফিন্যান্সিয়াল ফ্রড করা কাউকে কেন শুধু ভালো ক্রিকেটার বলেই পুনর্বাসন করতে হবে? আইন সবার জন্য সমান, ফেস ইট।’
আরও পড়ুনক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফকে জবাব দিলেন সাকিব২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫দুজনের পাল্টাপাল্টি এই স্ট্যাটাসগুলো নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তোলপাড়, এর মধ্যেই চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন আসিফ মাহমুদ।
শেখ হাসিনার সঙ্গে ছবি পোস্ট করা ও তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো নিয়ে সাকিবের অবস্থানও জানতে চেয়েছিল চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর। মুঠোফোনে তিনি চ্যানেলটিকে বলেছেন, ‘সে (শেখ হাসিনা) তো সব সময় সিরিয়াসলি খেলা ফলো করেছে, খেলা দেখছে। তাই না? খেলার সঙ্গে যুক্ত এবং ওতপ্রোতভাবেই যুক্ত ছিলেন। তো সেখান থেকেই একটা সম্পর্ক হয়েছে। সেটা রাজনীতির আগে থেকেই। সেই জায়গা থেকে আমি একজনকে উইশ করতেই পারি। তা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য, কাউকে কোনো ইঙ্গিত, এমন কোনো কিছুই না।’