ভোলার তজুমদ্দিনে স্বামীকে বেঁধে রেখে এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদল ও শ্রমিক দল নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সোমবার (৩০ জুন) ভুক্তভোগী বাদী হয়ে তজুমদ্দিন থানায় মামলা করেছেন। গত শনিবার রাতে উপজেলার কামারপট্টি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। 

মামলায় ছয় জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। নাম না জানা আসামি করা হয়েছে আরো ৫-৬ জনকে। 

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- তজুমদ্দিন উপজেলা শ্রমিক দলের ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন ও যুবদল নেতা আলাউদ্দিন। তদন্তের স্বার্থে বাকিদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।

আরো পড়ুন:

আইনজীবী হত্যা: চিন্ময় দাসসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র 

মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আসামির আপিল শুনবেন হাইকোর্ট, অর্থদণ্ড স্থগিত

তজুমুদ্দিন সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল ও সজিব ঘটনার পরোক্ষ মদদ দিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। ধর্ষণে সহায়তা করার অভিযোগে ঝর্ণা বেগম নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

ভুক্তভোগী দম্পতির অভিযোগ থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী নারীর স্বামী দুই বিয়ে করেছেন। গত শনিবার রাতে তাকে ডেকে পাঠান তার ছোট স্ত্রী। সেখানে যাওয়ার পথে আটকে চাঁদা দাবি করেন ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের নেতারা। তাদের সঙ্গে কয়েকজন ব্যক্তি ছিলেন। তাকে একটি ঘরে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে তার বড় স্ত্রীকে টাকা নিয়ে এসে স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে বলে নির্যাতনকারীরা।

গত রবিবার সকালে বড় স্ত্রী ঘটনাস্থলে গেলে তার কাছে স্বামীর মুক্তিপণ হিসেবে চার লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার সামনেই ওই ব্যক্তিকে আরেক দফা পাইপ ও রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়। দুপুর ১টার দিকে স্বামীকে অন্যত্র সরিয়ে রেখে ফরিদ ও আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে তার বড় স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। এ সময় তাদের বাবা ও ভাই ডেকে এবং হাত-পা ধরেও রক্ষা পাননি ভুক্তভোগী নারী।

পরে ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বামীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘটনা কাউকে না বলার শর্তে বাড়ি পাঠিয়ে দেন অভিযুক্তরা। রবিবার সন্ধ্যায় ধর্ষণের শিকার নারী আত্মহত্যার চেষ্টা করলে বাড়ির আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় বাজারে নিয়ে সবাইকে ঘটনাটি জানান। পরে ভুক্তভোগী নারী ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে পুরো ঘটনা জানালে রাতে পুলিশ গিয়ে তাদের থানায় নেয়। সেখানে মামলা হয়।

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ওমর আসাদ রিন্টু বলেন, “অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

তজুমদ্দিন থানার ওসি মহব্বত খান বলেন, “ধর্ষণ মামলা রুজু হয়েছে। একজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।”

ঢাকা/পলাশ/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ

এছাড়াও পড়ুন:

জামায়াতের সঙ্গে জোট ও পিআরে একমত নুর

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সারাদেশে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩৫৪ জন, যার মধ্যে কন্যাশিশু ও কিশোরী ২৬৯ জন এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারী ৮৫ জন। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৬ জন, যার মধ্যে শিশু-কিশোরী ৬২ জন। বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮১৯ নারী ও ৭৩৬ শিশু ও কিশোরী।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বিবৃতিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদ ১৫টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান তৈরি করে। 

বিবৃতিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু জানান, কেবল জুনে ১১৬ নারী ও ৮৭ জন কন্যাসহ ২০৩ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার ৬৫ জনের মধ্যে কন্যাশিশু ৪৩ জন। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৮ জন, এদের মধ্যে ৫ জন কন্যা। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩ জনকে, যার মধ্যে ২ জন কন্যা। ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন ৭ কন্যাশিশু।

উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন ৫ জন নারী ও কন্যা; যার মধ্যে ২ জন আত্মহত্যা করেছেন। এ ছাড়া ১৩ জন কন্যাসহ ৬৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ২ জন কন্যাসহ ১১ জনের মৃত্যু রহস্যজনকভাবে ঘটেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন ৩ নারী, যাদের মধ্যে ২ জন মারা গেছেন। এসিডদগ্ধ হয়েছেন ১ জন নারী। ৩ জন নারী অগ্নিদগ্ধ (যার মধ্যে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে), যৌতুক নির্যাতনের শিকার ১ নারী এবং পারিবারিক সহিংসতায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬ জন। আত্মহত্যা করেছেন ৬ কন্যাসহ ২২ জন। অপহরণ হয়েছে ২ কন্যা, সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন ১ জন এবং বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে দুটি।

সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে নির্যাতনের শিকার ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যাশিশুর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৭ জনকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৪ কিশোরী। এদের মধ্যে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১২৭ জনকে। যৌন নিপীড়নের শিকার ৫১ জন। ৩১ জনকে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে। উত্ত্যক্তকরণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন। ২১ নারী ও কন্যাশিশু পাচার হয়েছেন। একজন এসিড সন্ত্রাসের শিকার। ৬১ কন্যাসহ হত্যার শিকার হয়েছে ৩২০ নারী ও কন্যাশিশু। 

সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম সমকালকে বলেন, এ পরিসংখ্যান শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনার ওপর ভিত্তি করে। বাস্তবে সংখ্যাটা আরও বেশি। বিশেষ করে কন্যাশিশুর ওপর সহিংসতা ও দলবদ্ধ ধর্ষণের সংখ্যা উদ্বেগজনক। এটি সমাজের জন্য অ্যালার্মিং।

তিনি বলেন, ছয় মাসে হাজারের বেশি নারী-কন্যা নির্যাতনের শিকার হলেও মহিলা মন্ত্রণালয় বা সরকারের উচ্চপর্যায়ের কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আছিয়া ধর্ষণ মামলায় তড়িঘড়ি করে বিচার হয়েছে, কিন্তু ভালো তদন্ত না হওয়ায় পরিবার সন্তুষ্ট নয়। এ ধরনের বিচারে দ্রুততা নয়, নির্ভুলতা জরুরি। তিনি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান এবং রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছয় মাসে নির্যাতনের শিকার দেড় হাজার নারী-কন্যাশিশু
  • জামায়াতের সঙ্গে জোট ও পিআরে একমত নুর
  • তজুমদ্দিনে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ: গ্রেপ্তার হয়নি মূল আসামিরা
  • তজুমদ্দিনে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে বিএনপির দুই পক্ষের পৃথক মানববন্ধন, ইটপাটকেল নিক্ষেপ
  • ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে মারধর, স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ
  • তজুমদ্দিনে স্বামীকে নির্যাতনের পর গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
  • চুরির অপবাদ দিয়ে শ্রমিককে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা, ভিডিও ভাইরাল
  • চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানায় শ্রমিককে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা, ভিডিও ভাইরাল