জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাউছার মাহমুদ নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় মৃত দুই আওয়ামী লীগ নেতাসহ দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের ৯১ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তাছাড়া একই মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতাকে একাধিকবার আসামি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার নগরের কোতোয়ালি থানায় নিহত কাউছার মাহমুদের বাবা মোহাম্মদ আবদুল মোতালেব মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আসামি হিসেবে মৃত ওই দুই আওয়ামী লীগ নেতার নাম পাওয়া গেছে।

মামলায় নাম আসা মৃত দুই আসামি হলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক দেবাশীষ গুহ বুলবুল এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য অমল মিত্র।

দেবাশীষ গুহ বুলবুল ২০২১ সালের ৫ মার্চে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং অমল মিত্রের ২০২৩ সালের ৭ মে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এরপরও তাদের নাম মামলার এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.

হাছান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, আব্দুচ ছালাম, মহিউদ্দিন বাচ্চু ও যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর।

এছাড়া মামলায় আসামির তালিকায় সাবেক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারীর নাম তিনবার এবং সাবেক কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের নাম দুইবার করে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, তার ছেলে কাউছার মাহমুদ বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিল। গত বছরের ৪ আগস্ট নিউমার্কেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। সেখানে আসামিরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গুলিবর্ষণ ও হামলা চালায়। এতে কাউছারের ‘শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে যাওয়াসহ গুরুতর জখম হয়। তার ছেলে কাউছার মাহমুদ অজ্ঞান হয়ে পড়লে সঙ্গীরা তাকে উদ্ধার করে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় গত বছরের ২২ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি বিভাগে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থা আরো আশঙ্কাজনক হলে হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গতবছরের ১৩ অক্টোবর রাতে তিনি মারা যান।

মামলা করতে দেরি হওয়া প্রসঙ্গে এজাহারে কাউছারের বাবা উল্লেখ করেন, ঘটনার বিস্তারিত অবগত হয়ে পরিবার ও চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করায় এজাহার দায়ের করতে দেরি হয়েছে।

কাউছারের ছোট ভাই সুলতান মো. নাইম বলেন, আমার ভাই গত ৪ আগস্ট নিউমার্কেট এলাকায় আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়েছিল। সেখানে তাকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন পেটায়। মার খেয়ে আহত হয়ে বাসায় ফিরে এলেও সে বাবার ভয়ে বিষয়টি গোপন করে। সন্ধ্যার দিকে সে খারাপ লাগছে বলে অজ্ঞান হয়ে যায়। ১৭ দিন পর জ্ঞান ফিরে এলে সে মারধরের ঘটনাটি খুলে বললে তখন আমরা পুরো বিষয়টি জানতে পারি। মারধরের ফলে তার দুটি কিডনি অকেজো হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও দেখা দেয়।

জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম বলেন, মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলার এজাহারে কোনো অসংগতি থাকলে তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

পলাতক থাকায় আসামিপক্ষের কারোর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই অভ য ত থ ন আস ম আওয় ম ল গ আওয় ম আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

অর্থ পাচার করে বিদেশে গড়ে তোলা ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান

বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিভিন্ন দেশে গড়ে তোলা প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি দেশের সাতটি শহরে অনুসন্ধান চালিয়ে এই তথ্য পাওয়া গেছে বলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে জানিয়েছেন সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব।

আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ও সিআইসি মহাপরিচালক আহসান হাবিব প্রধান উপদেষ্টার সামনে এসব তথ্য তুলে ধরেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ছাড়া নয়টি দেশে ৩৫২টি পাসপোর্টের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলো টাকার বিনিময়ে অর্জন করেছে কিছু বাংলাদেশি। দেশগুলো হচ্ছে- অ্যান্টিগা অ‍্যান্ড বারবুডা, অস্ট্রিয়া, ডমেনিকা, গ্রেনেডা, সেন্ট কিটস অ‍্যান্ড নেভিস, নর্থ মেসিডোনিয়া, মালটা, সেন্ট লুসিয়া ও তুরস্ক।

সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব বলেছেন, দেশে বসেই বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষে সিআইসির গোয়েন্দারা দেশগুলোতে সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিস্তারিত তথ্য তুলে নিয়ে আসেন। আরও অনুসন্ধান চলমান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ পাচার করে গড়ে তোলা ৩৪৬টি সম্পত্তির সন্ধান মিলেছে। এটি আমাদের অনুসন্ধানের আংশিক চিত্র। এসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বাংলাদেশের অনুকূলে নিয়ে আসার জন‍্য এবং অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সাজা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সিআইসি। ছয়টিরও অধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে।’

সিআইসির মহাপরিচালক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা যা পেয়েছি এটি “টিপ অব দ্য আইসবার্গ” (হিমশৈলের চূড়া মাত্র)। আমাদের কাছে এখনো প্রচুর তথ্য রয়েছে, যা উন্মোচনে আরও সময় প্রয়োজন।’

এই অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা শেখ হাসিনার আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেটাবেজ (তথ্যভাণ্ডার) নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় নিজেদের লোক বসিয়ে বহু তথ‍্য গায়েব করে দিয়েছেন জানিয়ে আহসান হাবিব বলেন, মুছে দেওয়া ওই সব তথ‍্য উদ্ধারে দক্ষতা অর্জন করেছে সিআইসি।

বিস্তারিত জানার পর প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে দুদক, সিআইসি ও পুলিশের সিআইডিসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে সম্পত্তি তৈরি করতে না পারে।

সিআইসিকে অনুসন্ধান কাজ চলমান রাখার নির্দেশনা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যত দূর সম্ভব গভীরে যেতে হবে এবং সম্ভাব্য আরও দেশে অনুসন্ধান বিস্তৃত করতে হবে। যাতে দেশের সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

দেশের অর্থনৈতিক খাতের এই লুটপাটকে ভয়াবহ দেশদ্রোহিতা হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন‍্য একটি সুন্দর দেশ বিনির্মাণ করতে হলে অবশ্যই এই লুটেরাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশের সম্পদকে কীভাবে লুটপাট করেছে কিছু মানুষ, তা জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে। সে জন‍্য সবগুলো সংস্থাকে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ