দোহারে বিএনপি নেতার মৃত্যু নিশ্চিতে গুলির পর কয়েকবার কোপানো হয়: পুলিশ
Published: 2nd, July 2025 GMT
ঢাকার দোহার উপজেলায় বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদকে (৬৫) হত্যার জন্য সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কয়েকটি গুলির পাশাপাশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কুপিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে এমন তথ্যের কথা জানানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দুটি মোটরসাইকেলে অন্তত ৫ জন যুবক এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
আজ বুধবার সকালে হারুনুর নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হলে উপজেলার বাহ্রা স্কুলের কাছে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। হারুনুর রশিদ ওরফে হারুন মাস্টার উপজেলার নয়াবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। তাঁর বাড়ি বাহ্রা গ্রামে।
আরও পড়ুনদোহারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বিএনপি নেতা নিহত৮ ঘণ্টা আগেকয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, সকাল ৬টার দিকে ধোয়াইর বাজারের পাশে পদ্মা নদী–তীরবর্তী বাঁধের রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন হারুনুর। এ সময় তাঁর পেছন থেকে দুটি মোটরসাইকেলে ৫ যুবক সেখানে আসে। মুহূর্তেই হারুনুরকে লক্ষ্য করে গুলি করে তারা। এ অবস্থায় হারুনুর মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁর শরীরে অন্তত তিনবার ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। পরে দ্রুত ওই সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এদিকে হারুন মাস্টারকে গুলি করে হত্যার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা হাসপাতালে ভিড় জমান। এ হত্যার বিচার ও খুনিদের খুঁজে বের করার দাবিতে তাঁরা তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেছেন।
স্বামী হত্যার বিচার দাবি করে হারুনুর রশিদের স্ত্রী শিক্ষক নাহিদা পারভীন বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাই আমার স্বামীর জীবনে কাল হয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে হারুনুরের ছোট ভাই আবদুল মান্নান বলেন, ‘আগামী ইউপি নির্বাচনে নয়াবাড়ী থেকে আমার ভাইয়ের (হারুনুর) চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া এ অঞ্চলের কিছু বালু ও মাটি ব্যবসায়ীর অন্যায় কাজকে আমার ভাই প্রশ্রয় না দেওয়ায় তাঁকে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।’
কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িত, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। হারুনুরের ভাতিজা শাহিন বলেন, কে বা কারা এবং কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে আপাতত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কিছুদিন ধরে নোয়াখালীতে বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সেই জেরে এ হত্যা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
লাশটির সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আলী বলেন, হারুনুরের শরীরে ৪টি গুলি ও ৩টি ধারালো অস্ত্রের জখম পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে গুলির পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে কোপানো হয়েছে। অপরাধীদের খুঁজে বের করতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।
এমন হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক প্রথম আলোকে বলেন, সন্ত্রাসী চক্রটিকে খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এ হত য ক ণ ড ন শ চ ত কর ব এনপ র হত য র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আলু চাষে কৃষকের মাথায় হাত
চলতি বছর আলুর ভালো ফলন হলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ও সংরক্ষণের অভাবে মুন্সীগঞ্জের চাষিদের লোকসান হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি হওয়ায় হিমাগারে সংরক্ষণ করতে না পারা, মূল্য কম ও বাঁশের মাচায় সংরক্ষণ করা আলুতে পচন ধরার কারণে কৃষকের মাথায় হাত। এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতির কারণে জেলার বেশির ভাগ কৃষক এখন দেনার দায়ে জর্জরিত। এই অবস্থায় সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার জেলায় ১০ লাখ ৮০ হাজার টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ টন হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। বাকি ৬ লাখ টন আলু দেশীয় পদ্ধতিতে বাড়িতেই সংরক্ষণ করা হয়েছে।
জেলা আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন জানান, উৎপাদন উপকরণের অতিরিক্ত দামের কারণে এবার প্রতি কেজি আলুতে খরচ পড়েছে ১৬ টাকা। হিমাগারে সংরক্ষণ করতে গিয়ে প্রতি কেজিতে খরচ উঠেছে ২৬ টাকা। অথচ বর্তমানে হিমাগার থেকে আলুর পাইকারি দাম মিলছে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ টাকা। এতে প্রতি কেজিতে চাষি ও ব্যবসায়ীর লোকসান গুনতে হচ্ছে ১০ থেকে ১১ টাকা। এই হিসাবে, হিমাগারে সংরক্ষিত ৪ লাখ টন আলুতে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষিত ৬ লাখ টন আলুর ২৫ শতাংশ অর্থাৎ দেড় লাখ টন পচে গেছে। এই দেড় লাখ টন আলুর উৎপাদন খরচ, বস্তা ও শ্রমিক খরচ বাবদ প্রতি কেজিতে ১৮ টাকা হিসাবে লোকসানের পরিমাণ ২৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষিত বাকি সাড়ে ৪ লাখ টন আলু নিজ বাড়ি থেকে ১১ টাকা কেজিতে বিক্রি করায় কৃষকের আরও ৪৯৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সব মিলিয়ে মুন্সীগঞ্জের আলু চাষি ও ব্যবসায়ীদের লোকসান প্রায় ১ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের ১৮ লাখ মানুষ ১২ হাজার টন আলু খেয়েছে। বাকি ৬৮ হাজার টন আলু অন্য জেলায় পাঠানো হয়েছে। তারপরও ১০ লাখ টন আলু হিমাগার ও বাড়িতে দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। এই অতিরিক্ত জোগানই দাম কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্তের ভাষ্য, এবার ভয়াবহ লোকসানের মুখে পড়ে মুন্সীগঞ্জের বেশির ভাগ কৃষক এখন দেনার জালে আটকা পড়েছেন। মহাজন ও ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। অনেক কৃষকের ভিটেমাটি বিক্রি করার উপক্রম হয়েছে। পরিবারের মুখে দুই বেলা অন্ন জোগানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এই লোকসান শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৃষকদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলছে। তাদের চোখেমুখে এখন শুধুই হতাশার ছাপ।
আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মুন্সীগঞ্জের কৃষকদের বাঁচাতে সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। কৃষকদের এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারি প্রণোদনা, ঋণ মওকুফ এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য একটি কার্যকর বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য। অন্যথায় আলু চাষে আগ্রহ হারাবেন কৃষক, যা দেশের সামগ্রিক কৃষি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।