ঢাকার দোহার উপজেলায় বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদকে (৬৫) হত্যার জন্য সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কয়েকটি গুলির পাশাপাশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কুপিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে এমন তথ্যের কথা জানানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দুটি মোটরসাইকেলে অন্তত ৫ জন যুবক এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

আজ বুধবার সকালে হারুনুর নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হলে উপজেলার বাহ্রা স্কুলের কাছে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। হারুনুর রশিদ ওরফে হারুন মাস্টার উপজেলার নয়াবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। তাঁর বাড়ি বাহ্রা গ্রামে।

আরও পড়ুনদোহারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বিএনপি নেতা নিহত৮ ঘণ্টা আগে

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, সকাল ৬টার দিকে ধোয়াইর বাজারের পাশে পদ্মা নদী–তীরবর্তী বাঁধের রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন হারুনুর। এ সময় তাঁর পেছন থেকে দুটি মোটরসাইকেলে ৫ যুবক সেখানে আসে। মুহূর্তেই হারুনুরকে লক্ষ্য করে গুলি করে তারা। এ অবস্থায় হারুনুর মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁর শরীরে অন্তত তিনবার ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। পরে দ্রুত ওই সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

এদিকে হারুন মাস্টারকে গুলি করে হত্যার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা হাসপাতালে ভিড় জমান। এ হত্যার বিচার ও খুনিদের খুঁজে বের করার দাবিতে তাঁরা তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেছেন।

স্বামী হত্যার বিচার দাবি করে হারুনুর রশিদের স্ত্রী শিক্ষক নাহিদা পারভীন বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাই আমার স্বামীর জীবনে কাল হয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে হারুনুরের ছোট ভাই আবদুল মান্নান বলেন, ‘আগামী ইউপি নির্বাচনে নয়াবাড়ী থেকে আমার ভাইয়ের (হারুনুর) চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া এ অঞ্চলের কিছু বালু ও মাটি ব্যবসায়ীর অন্যায় কাজকে আমার ভাই প্রশ্রয় না দেওয়ায় তাঁকে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।’

কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িত, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। হারুনুরের ভাতিজা শাহিন বলেন, কে বা কারা এবং কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে আপাতত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কিছুদিন ধরে নোয়াখালীতে বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সেই জেরে এ হত্যা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

লাশটির সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আলী বলেন, হারুনুরের শরীরে ৪টি গুলি ও ৩টি ধারালো অস্ত্রের জখম পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে গুলির পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে কোপানো হয়েছে। অপরাধীদের খুঁজে বের করতে পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।

এমন হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক প্রথম আলোকে বলেন, সন্ত্রাসী চক্রটিকে খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এ হত য ক ণ ড ন শ চ ত কর ব এনপ র হত য র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ

আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।

সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।

এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।

সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।

৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’

কারা আছে তালিকায়

দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।

দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।

১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।

২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।

কীভাবে এই মূল্যায়ন

৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।

ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।

এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।

কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।

জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:

বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;

কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;

কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;

সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;

কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ