দেশের অর্ধেকের বেশি বিমাপ্রতিষ্ঠান এখন ঝুঁকিতে আছে: আইডিআরএ
Published: 2nd, July 2025 GMT
দেশের মোট ৮২টি বিমাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অর্ধেকের বেশি আছে ঝুঁকিতে। জীবনবিমা ও সাধারণ বিমা মিলিয়ে ৩২টি প্রতিষ্ঠান আছে উচ্চপর্যায়ের ঝুঁকিতে। আর ১৫টি জীবনবিমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে মধ্যম পর্যায়ের ঝুঁকিতে।
ঢাকার দিলকুশায় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) আয়োজনে আজ বুধবার সংস্থাটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির চেয়ারম্যান আসলাম আলম। সংস্থার চার সদস্য মো.
সংবাদ সম্মেলনে আসলাম আলম জানান, জুলাই আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে সংস্কার। আন্দোলনের বার্ষিকী উদ্যাপনের সময় চলে এসেছে। এ সময়ের মধ্যে সংস্কারের জন্য কতটুকু, কী করল আইডিআরএ, তা জানাতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে আসলাম আলম বলেন, সংকটের মধ্যে আছে দেশের বিমা খাত। ১৩ লাখ গ্রাহকের ৪ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা বিমা দাবি পরিশোধের অপেক্ষায় রয়েছে। পলিসির দাবি পরিশোধ বাকি আছে জীবনবিমা কোম্পানিতে ৪৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিমা কোম্পানিতে ৪৬ শতাংশ।
বিমা খাতের অন্যতম সমস্যার মধ্যে বিমা দাবির টাকা পরিশোধ না করাকে চিহ্নিত করেন আসলাম আলম। তিনি বলেন, সময়মতো বিমা দাবি পরিশোধ না করায় এ খাতের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা বেড়েছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ছাড়া আস্থা বাড়বে না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে জীবনবিমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে মোট ৩৬টি। আর সাধারণ বিমাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪৬টি। জীবনবিমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টি উচ্চ ঝুঁকিতে ও ১৫টি মধ্যম ঝুঁকিতে থাকলেও স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে বাকি ৬টি। তবে মধ্যম ঝুঁকিতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা নিরসনযোগ্য। এদিকে ১৭টি সাধারণ বিমাপ্রতিষ্ঠান আছে উচ্চ ঝুঁকিতে। কোম্পানিগুলোর ব্যবসা, সম্পদসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা এবং আইডিআরএর অভ্যন্তরীণ কিছু মাপকাঠির মাধ্যমে ঝুঁকিতে থাকা কোম্পানির তথ্য বের করা হয়েছে। ঝুঁকির কথা বলা হলেও সংবাদ সম্মেলনে কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম বলা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বিমা খাতে ১৪ বছরে ৫৪ লাখ গ্রাহক কমেছে। বর্তমানে চালু থাকা পলিসি ৭১ লাখ। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিমা খাতের অবদান কমছে বছর বছর। ২০১০ সালে জিডিপিতে বিমা খাতের অবদান ছিল শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ। অথচ ২০২৩ সালে তা কমে দশমিক ৪১ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২৪ সালে তা আরও কমেছে।
আইডিআরএতে ১৬০ জন অনুমোদিত জনবলের বিপরীতে মাত্র ১০৭ জন কর্মরত রয়েছেন জানিয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, ২০২৪ সালে ২৪ হাজার ৮৫২টি অভিযোগ পেয়েছে আইডিআরএ। জনবলসংকটের কারণে এগুলো তদারক করা যাচ্ছে না। সংস্থাটিকে শক্তিশালী করার জন্য ৫৩৫ জনবলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের থাকবেন ৪১ জন।
বিমা খাতের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে বিভিন্ন আইন ও বিধি করা হচ্ছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সংস্কার আনা হচ্ছে তিন খাতে—প্রাতিষ্ঠানিক, আইনগত ও ডিজিটাল। বলা হয়, দুটি নতুন অধ্যাদেশ করা হচ্ছে। দুটি করা হচ্ছে সংশোধন। ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের আদলে করা হচ্ছে বিমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ। এতে বিমাপ্রতিষ্ঠান একীভূত করা সহজ হবে। বিদ্যমান বিমা আইন এবং বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইনও সংশোধন করা হচ্ছে। বিমা আইনের ১৬০টি ধারা আছে। ২৩টি নতুন ধারার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সংশোধন করা হবে ৫৬টি ধারা।
বিমা কোম্পানিগুলোর নিবন্ধন নবায়ন মাশুল প্রতি হাজারে ১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে আইডিআরএ। তবে এ হার ২০১২ সালে ৩ দশমিক ৫ টাকা থাকলেও ২০১৮ সালে তা কমিয়ে ১ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে আসলাম আলম বলেন, ‘২০১৮ সালে আইন সংশোধন করে গাড়ির বিমা ঐচ্ছিক করা হয়েছিল। এ কারণে কেউ বিমা করছেন না, তবে এ বিমা দরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলমান। সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করে মোটরযানের যে বিমা আছে, তার বিপরীতে জরিমানা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ জন্য আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি এবং দেন-দরবার করছি।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আসল ম আলম আইড আরএ প রস ত ব জ বনব ম পর শ ধ
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিক পরিচয় জেনেও পুলিশ মেরেছে
সড়কে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে জ্বলছে টায়ার। কাঠ গুঁড়ির আগুনে ধোঁয়ায় ছেয়ে আছে চারদিক। পুলিশ তখনো নির্বিচার ছুড়ে যাচ্ছে গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল। কে সাধারণ মানুষ আর কে সংবাদকর্মী, তা আলাদা করার যেন সময় নেই কারও। আমি ভয়ে রাস্তার একপাশ ঘেঁষে দ্রুত হাঁটছিলাম। তখন হঠাৎ একটি কাঁদানে গ্যাসের শেল এসে লাগে আমার বাঁ হাতে। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়, চোখ জ্বলে ওঠে ধোঁয়ায়। কিছুই দেখতে পারছিলাম না, যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।
তখন চিৎকার করে বললাম—‘আমি সাংবাদিক!’ কিন্তু কে শোনে কার কথা! গলার আওয়াজ যেন বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছিল। উপায় না দেখে রাস্তার পাশের ফুটপাতে বসে পড়লাম। একটু পর দেখতে পেলাম পাশের ‘লাভ রোড’ থেকে কয়েকজন পুলিশ এগিয়ে আসছে। একজন আমাকে জোর গলায় ডাকলেন। কাছে যেতেই বললেন, ‘কী হয়েছে? পরিচয় দিলাম, প্রেসের আইডি কার্ড দেখালাম; বুঝলেন আমি সাংবাদিক। এ সময় তিনি বললেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে ছোট মানুষ ঘরে থাকলে ভালো হতো, কী দরকার এত রাতে ঘর থেকে বের হওয়ার?’ তার ব্যবহার শালীন ছিল।
আমি একবার পেছন ফিরে হাঁটা শুরু করলাম। তখনই ঘটল ভয়ানক এক ঘটনা। পেছন থেকে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা আমার কোমরে প্রচণ্ড লাথি মারলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি রাস্তায় পড়ে গেলাম। তিনি চিৎকার করে বলতে থাকলেন, ‘তোরাই শান্ত পরিবেশটা ঘোলাটে করেছিস!’ এরপর শুরু হলো লাঠি দিয়ে নির্দয়ভাবে পিটুনি। বুকে, রানে, পায়ে—যেখানে পেয়েছে, সেখানেই আঘাত করেছে, পিটিয়েছে। ব্যথা আর যন্ত্রণায় আমি ছটফট করছিলাম।
পাশের সেই সদয় পুলিশ কর্মকর্তা আবারও ছুটে এলেন। বললেন, ‘চলে যান, এখান থেকে দ্রুত চলে যান।’ বিনা অপরাধে পুলিশের মার খেলাম। এর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ, প্রতিবাদ—কিছুই করতে পারিনি। তখন পেশাগত সম্মান বাঁচাতে চুপচাপ উঠে দাঁড়ালাম। ব্যথা চেপে, পা খুঁড়িয়ে একরাশ অপমান নিয়ে বাসায় ফিরলাম!
লেখক: মুহাম্মদ নূরে আলম, সাংবাদিক