বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে একত্রে কাজ করবে জাপান ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। এ বিষয়ে দু’পক্ষ একটি চুক্তি সই করেছে। চুক্তির আওতায় নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ৪৮ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে জাপান। একটি অবাধ, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করতে এ অর্থ ব্যয় করা হবে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি ও ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার। সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যুরোর মহাপরিচালক ইশিজুকি হিদে উপস্থিত ছিলেন।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চুক্তিটির আওতায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক, কারিগরি ও কার্যক্রম পরিচালনার দক্ষতা বাড়াতে জাপান প্রায় ৪৮ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা করবে। প্রকল্পটির লক্ষ্য ভোটার ও নাগরিক শিক্ষা জোরদার করা, নারী, যুবসমাজ এবং সমাজে প্রতিনিধিত্ব কম এমন গোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা, সেই সঙ্গে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াজুড়ে স্বচ্ছতা ও সততা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া। এই নির্বাচনী সহায়তা বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের বন্ধুত্ব এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, মানবিক নিরাপত্তা এবং গণতান্ত্রিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতির অংশ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন জাপানের সহযোগিতাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই চুক্তি আমাদের কার্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এবং জনসাধারণের আস্থা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে নির্বাচন আয়োজনে সহায়তা করবে।

জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি বলেন, বাংলাদেশ এখন গণতান্ত্রিক পথে যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে। জাপান বাংলাদেশকে সম্মান করে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রচেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন করে। আমরা আশা করি ইউএনডিপির মাধ্যমে জাপানের এই সহায়তা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার জাপানের উদারতা ও দীর্ঘস্থায়ী অংশীদার হিসেবে সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, জাপানের সহায়তা একটি শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য, যা জনগণের সত্যিকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়, এমন নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে। এটা আমাদের যৌথ লক্ষ্যে নতুন শক্তি যোগ করেছে।

জাপানের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকল্পটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে সাড়া দেওয়া এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, নির্বাচনী অখণ্ডতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে সহায়তা করার জন্য জাপান, ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশের যৌথ প্রতিশ্রুতি প্রতিফলন করে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ইউএনড প সহয গ ত সহ য ত

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও’ দাবিতে খানির কর্মসূচি

পবিত্র ঈদুল আজহার পরপরই অস্বাভাবিক হারে চালের দাম বাড়া এবং সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক—খানি। সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপের দাবিতে আজ সোমবার ঢাকাসহ আটটি বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন করেছে নেটওয়ার্কটির সদস্য সংগঠনগুলো।

'ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও' স্লোগানে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, কৃষকের স্বার্থরক্ষা এবং রেশনিং ব্যবস্থাসহ একাধিক দাবির কথা তুলে ধরেন।

পরিকল্পনা কমিশনের সর্বশেষ (জুন ২০২৫) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতির মধ্যে চালের একক প্রভাব প্রায় ৪০ শতাংশ। অথচ বোরো মৌসুমে উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও বাজারে কোনো স্বস্তি মিলছে না।

ময়মনসিংহের ফুলপুরে থানার সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে কৃষক জহর আলী বলেন, ‘যে ভাত আমরা ফলাই, তাই আবার চড়া দামে কিন্না খাই। আমাদের দেখার কেউ নাই?’ রিকশাচালক সিকান্দার বললেন, সারাদিনে যা আয় করি, তার অর্ধেক যায় চাল কিনতে। আমরা ৪০ টাকা কেজিতে চাল চাই।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত কর্মসূচিতে খানির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতার কারণে সাধারণ মানুষ এখন মাছ, মাংস, ডাল বাদ দিয়ে কেবল ভাতনির্ভর খাদ্য গ্রহণ করছে। যা দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।

জাতিসংঘ খাদ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, দেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এবং প্রতি ১০ জনে ৩ জন প্রয়োজনীয় খাদ্য সংস্থান করতে পারছেন না। নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে এই হার ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।

সংগঠনটি সংকট উত্তরণে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করে। দাবিগুলো হলো- কৃষকের কাছ থেকে সরকারের সরাসরি চাল ক্রয়ের আওতা বৃদ্ধি, দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু; ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় বাজার, উৎপাদন ও ভোগক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগ; টিসিবি ও ওএমএস কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে প্রয়োজনভিত্তিক সহায়তা সিন্ডিকেট রোধ ও কার্যকর বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা।

বরিশালের অশ্বিনী কুমার টাউন হলে আয়োজিত মানববন্ধনে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সম্পাদক রণজিৎ দত্ত বলেন, মিল পর্যায়ে খরচ বৃদ্ধি, ধানের দামে অস্থিরতা, মজুতদারির অপচেষ্টা ও বাজার নজরদারির ঘাটতির কারণে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। এতে কৃষক ন্যায্য দাম পাচ্ছে না, আবার ভোক্তা কিনছেন অতিরিক্ত দামে।

তিনি বলেন, খাদ্যে ব্যয় কমিয়ে এনে মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পুষ্টিহীনতায় না পড়ে।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, সরকার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে চালের বাজার স্থিতিশীল করবে এবং দেশের সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইডিই বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি উন্মোচিত
  • আদিবাসী তরুণদের জন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ
  • ফুলেফলে, লতাগুল্মে ছাওয়া সবুজের ডাক
  • পাট খাতের উন্নয়নে টেকসই বাজার প্রবেশ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
  • ব্যালট প্রকল্পে ইসিকে ৪৮ লাখ ডলারের আর্থিক সহায়তা দেবে জাপান
  • বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে একত্রে কাজ করবে জাপান এবং জাতিসংঘ 
  • ‘ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও’ দাবিতে খানির কর্মসূচি
  • জলবায়ু সহনশীল কৃষিতে নতুন দিগন্ত: কিনোয়া ও চিয়া সিড চাষে কৃষকের সাফল্য উদযাপন