ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পেন্টাগনের মূল্যায়নে কী বেরিয়ে এল
Published: 3rd, July 2025 GMT
ইরানে মার্কিন হামলায় দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে গেছে বলে গোয়েন্দা তথ্য মূল্যায়ন শেষে জানিয়েছে পেন্টাগন। এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে তেহরানের এ কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়ে গেছে।
গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র শন পারনেল বলেন, ওয়াশিংটনের হামলায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে এ হামলাকে ‘সাহসী অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
শন পারনেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অন্তত এক থেকে দুই বছরের জন্য তাদের (ইরান) কর্মসূচি দুর্বল করে দিয়েছি। প্রতিরক্ষা বিভাগের গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে এ মূল্যায়ন উঠে এসেছে।’
আরও পড়ুনইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী২৭ জুন ২০২৫যুক্তরাষ্ট্র গত ২১ জুন বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমানের সহায়তায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক বোমা হামলা চালায়। তখন থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার বলে আসছেন, এ হামলায় দেশটির পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস হয়েছে।
ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।
তবে গত মাসে ফাঁস হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাথমিক গোয়েন্দা মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, এ হামলায় ইরানের কর্মসূচির মূল উপাদানগুলো অক্ষত রয়ে গেছে এবং কাজ কিছু সময়ের জন্য বিলম্বিত হয়েছে মাত্র।
এদিকে ইরান তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত জানাতে কৌশলী ভূমিকা নিচ্ছে।
তবে গত মাসে ফাঁস হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাথমিক গোয়েন্দা মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, এ হামলায় ইরানের কর্মসূচির মূল উপাদানগুলো অক্ষত রয়ে গেছে এবং কাজ কিছু সময়ের জন্য বিলম্বিত হয়েছে মাত্র।ইরানের কিছু কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলায় স্থাপনাগুলোর বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ট্রাম্প হামলার প্রভাব ‘অতিরঞ্জিত’ করে দেখাচ্ছেন।
ইসরায়েল-ইরান ১২ দিনের সংঘাতের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে ওই হামলা চালায়। এর ফলাফল নিয়ে এখনো কোনো স্বাধীন মূল্যায়ন প্রকাশিত হয়নি। ইরানের ভূগর্ভস্থ যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছে, বিশেষ করে সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফর্দোর ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করেও বোঝা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুনইরানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংস নিয়ে ট্রাম্প কি তাহলে মিথ্যা বলেছেন৩০ জুন ২০২৫ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুতের অবস্থান ও বর্তমান অবস্থা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থা ও প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, হামলার পর আশঙ্কাজনক মাত্রায় তেজস্ক্রিয়তা বৃদ্ধির কোনো ইঙ্গিত তারা পায়নি; যেমনটা এ ধরনের হামলায় আশঙ্কা করা হয়ে থাকে। তবে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, ইউরেনিয়াম সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত কনটেইনারগুলোর হয়তো হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—এমন তথ্য তাঁরা বাতিল করে দিচ্ছেন না।
গত সপ্তাহে সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্রোসি বলেন, ‘আমরা জানি না, ওই পদার্থগুলো কোথায় রাখা হয়েছিল বা সেগুলোর কিছু হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু হয়তো ধ্বংস হয়েছে, আবার কিছু হয়তো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
আমরা অন্তত এক থেকে দুই বছরের জন্য তাদের (ইরান) কর্মসূচি দুর্বল করে দিয়েছি। প্রতিরক্ষা বিভাগের গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে এ মূল্যায়ন উঠে এসেছে।শন পারনেল, মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্রস্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে ফর্দো থেকে কিছু ট্রাক বেরিয়ে যাচ্ছে।
গ্রোসি বলেন, ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারে। উল্লেখ্য, সমৃদ্ধকরণ হচ্ছে ইউরেনিয়ামকে পারমাণবিক জ্বালানিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে তেজস্ক্রিয়তা বাড়ানো হয়।
ইরানের যেসব স্থাপনায় হামলা চালানো হয়, সেগুলো এর আগপর্যন্ত আইএইএর সরাসরি নজরদারির আওতায় ছিল। কিন্তু এখন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি অন্ধকারে। তা আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের নজরদারির বাইরে চলে গেছে।
আরও পড়ুনইরানে বোমা হামলার সঙ্গে জাপানে পারমাণবিক বোমা ফেলার তুলনা করলেন ট্রাম্প২৫ জুন ২০২৫ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের পর ইরানি পার্লামেন্ট একটি আইন পাস করেছে। সেখানে বলা হয়, আইএইএ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই সংস্থাটির সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করা হবে।
জেনেভা সনদ অনুযায়ী, যেসব স্থাপনায় ‘বিপজ্জনক শক্তি’ রয়েছে, যেমন বাঁধ, নালা বা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, তাতে হামলা চালানো নিষিদ্ধ।
ইসরায়েলের সঙ্গে ১৩ জুন সংঘাত শুরুর আগে তেহরান দাবি করেছিল, তারা ইসরায়েলের এমন কিছু নথি পেয়েছে যাতে দেখা যায়, আইএইএ তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে গোপন তথ্য ইসরায়েলকে সরবরাহ করছে। তবে সংস্থাটি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইরানের পারমাণবিক নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থা ও প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, হামলার পর আশঙ্কাজনক মাত্রায় তেজস্ক্রিয়তা বৃদ্ধির কোনো ইঙ্গিত তারা পায়নি; যেমনটা এ ধরনের হামলায় আশঙ্কা করা হয়ে থাকে। তবে আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, ইউরেনিয়াম সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত কনটেইনারগুলোর কিছু হয়তো হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এদিকে গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন আইএইএর সঙ্গে আবার সহযোগিতা শুরু করে।
বিবৃতিতে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘এ মুহূর্তে যখন ইরানের শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধির পথে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে, তখন আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করাটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’
রাফায়েল গ্রোসি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইউর ন য় ম স ইসর য় ল র র জন য ব বল ছ ন ত হয় ছ আশঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ২ বছর পিছিয়েছে: পেন্টা
মার্কিন বিমান হামলার ফলে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনার পারমাণবিক কর্মসূচি অন্তত ২ বছর পিছিয়ে গেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। খবর সিনহুয়ার।
বুধবার (২ জুলাই) পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমরা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছি। আমাদের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা প্রতিবেদন এ তথ্য নিশ্চিত করছে।”
পার্নেল আরো বলেন, “আমরা যেসব গোয়েন্দা তথ্য দেখেছি তাতে আমাদের বিশ্বাস, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।”
আরো পড়ুন:
মার্কিন অস্ত্র সহায়তা স্থগিতে রুশ হামলা জোরদারের শঙ্কায় ইউক্রেন
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে বললেন ট্রাম্প
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য জানায়নি পেন্টাগন।
গত ২২ জুন, মার্কিন বাহিনী ইরানের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা- নাতাঞ্জ, ফোরডো এবং ইসফাহানে হামলা চালায়।
গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ফোরডোতে কী ঘটেছে তা কেউ সঠিকভাবে জানে না। আমরা এখন পর্যন্ত যা জানি তা হলো, স্থাপনাগুলো গুরুতর ও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করছে।”
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বুধবার (২ জুলাই) আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে তেহরানের সহযোগিতা স্থগিত করে একটি আইন প্রণয়নের নির্দেশনা জারি করেছেন।
ইরানের সাংবিধানিক পরিষদের মুখপাত্র হাদি তাহান নাজিফের মতে, আইনটিতে ইরানের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, পারমাণবিক স্থাপনা ও বিজ্ঞানীদের নিরাপত্তা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আইন অনুসারে, ভবিষ্যতে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আইএইএর যেকোনো পরিদর্শনের জন্য তেহরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন লাগবে।
এদিকে, এর জবাবে আইএইএ এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা এই প্রতিবেদনগুলো সম্পর্কে অবগত। আইএইএ ইরানের কাছ থেকে আরো আনুষ্ঠানিক তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছে।”
বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখার সময় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের প্রধান মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক ইরানের সিদ্ধান্তের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি এটিকে ‘স্পষ্টতই উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেন।
ডুজারিক বলেন, “জাতিসংঘ প্রধান আইএইএর সঙ্গে ইরানের সহযোগিতার বিষয়ে বরাবরই স্পষ্ট অবস্থানে ছিলেন। তিনি পারমাণবিক ইস্যুতে আইএইএর সঙ্গে সকল দেশকে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।”
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসের মতে, আইএইএর সঙ্গে ইরানের সহযোগিতা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ‘অগ্রহণযোগ্য’।
বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্রুস বলেন, “আমরা ‘অগ্রহণযোগ্য’ শব্দটি ব্যবহার করব। কারণ ইরান এমন এক সময়ে আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যখন তাদের কাছে পথ পরিবর্তন করে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।”
তিনি বলেন, “ইরানের আর দেরি না করে জাতিসংঘের সংস্থা আইএইএর সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করা উচিত।”
ঢাকা/ফিরোজ