কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ি গ্রামে একই পরিবারের তিনজনকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল ৯ টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন- রুবি, রাসেল ও জোনাকি।

বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। বাড়ির ভেতরে একসঙ্গে তিনটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি। নিহতরা সবাই একই পরিবারের সদস্য।”

তিনি আরো বলেন, “ঘটনাস্থলে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।”

ঢাকা/রুবেল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বাঁশখালীর রাস্তাঘাটের অন্তহীন হাহাকার, দেখার কি কেউ নেই

বৃষ্টিতে সিক্ত এক দুপুরে, যখন রাজধানীর গাড়িচালিত রাস্তায় গতি মাপা হয় মিনিটে কতটা এগোতে পারে, তখন বাঁশখালীতে একজন রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া যায় না। কারণ, এখানকার রাস্তাগুলো রাস্তা নয়, কাদামাটির কর্দমাক্ত দুঃস্বপ্ন। যেখানে প্রত্যাশা ছিল সমৃদ্ধ একটি যোগাযোগব্যবস্থা, সেখানে জন্ম নিয়েছে এক নির্মম পরিহাস। গণতন্ত্রের প্রতীক হয়ে যাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন, ভোটের দিনে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিয়ে যাঁরা মন জয় করেছিলেন, তাঁদের এখন মুখে কুলুপ, চোখে অন্ধত্ব। যেন জনগণের কষ্ট তাঁদের কল্পনারও বাইরে।

গন্ডামারা-টাইমবাজার সড়কের দিকে তাকানো যাক। তিন বছর ধরে কাজ চলছে, বাস্তবে সেটি একটি স্থির দৃশ্যপট ছাড়া কিছু নয়। মুয়াজ্জিমপাড়া-গন্ডামারা ব্রিজের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংযোগপথ থেকে ইট সরিয়ে শুধু মাটি ফেলে রাখার পর তিনটি বর্ষাকাল কেটে গেছে, কিন্তু সেই মাটির গায়ে আর নির্মাণের কোনো হাত পড়েনি। প্রতিদিন ভাঙা স্যান্ডেলের ফাঁকে কাদা ঢুকে পড়ে, প্রতিদিন বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হয়, কিন্তু কাজের অগ্রগতি হয় না। কেউ হাত তুলে বলে না ‘এই যে এই পথে স্কুলে যাওয়া ছেলেটার পা হোঁচট খাচ্ছে বারবার, এই যে বৃদ্ধ মানুষটা পথচলায় হাড়গোড় ভাঙছে, এই দৃশ্য আমারও দেখা দরকার।’

প্রেম বাজার-সরলিয়া রাস্তা কিংবা গুনাগরি-মোশাররফ আলী হাট, বঙ্গবন্ধু সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের রাস্তাও একই দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে। রাস্তা খানাখন্দে ভরা, কোথাও কোথাও ছোটখাটো পুকুর! যেন রাস্তায় গাড়ির আগে চলে মাছ। বাহারছড়া সৈকত সংযোগ রাস্তা কিংবা ইকোপার্ক সংযোগ রাস্তা, এসব জায়গায় পর্যটনের সম্ভাবনা থাকলেও তা চাপা পড়ে আছে অব্যবস্থাপনার ধ্বংসস্তূপে। অথচ এই এলাকা হতে পারত দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান, যেখানে মানুষ আসত প্রকৃতির টানে, ফিরে যেত ভালোবাসায় ভরে।

তিন বছর সময় কম নয়। একটি শিশুর হাঁটতে শেখার জন্য যথেষ্ট, একটি শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক পাস করতে পারে, একটি সরকার গঠন হতে পারে, এমনকি একটি জাতি দিক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতে পারে; কিন্তু বাঁশখালীতে তিন বছর মানে অন্ধকারে পথচলা, প্রতিশ্রুতির পচন আর গলার রক্তচাপার পরও নিস্তব্ধতা। কেন এমন হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা সবাই জানি, কিন্তু বলতে ভয় পাই। কারণ, উত্তরটি বড় অসহ্য—দায়িত্বের অভাব, দুর্নীতির গ্রাস, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অনুপস্থিতি। জনগণের কষ্ট যেন এখন ক্ষমতাধরদের এজেন্ডায় নেই।

রাস্তা সংস্কার মানে শুধু কাগজে কলম দিয়ে ডিপিপি তৈরি নয়, মাঠে–ময়দানে বাস্তবায়নের জন্য সৎ প্রশাসন, নির্ভরযোগ্য ঠিকাদার ও নিয়মিত তদারকি দরকার। কিন্তু কোথায় সেই সৎ মানুষ? কোথায় সেই প্রকৌশলী, যিনি জনগণের কান্না শোনেন? জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে চুপ কেন? তাঁরা তো জনগণেরই প্রতিনিধি। তাঁরা তো সেই মানুষ, যাঁরা ভোট চাইতে দরজায় দরজায় গিয়েছিলেন। আজ যখন রাস্তার অবস্থা বেহাল, একজন প্রসূতির অ্যাম্বুলেন্স আটকে থাকে, তখন সেই নেতারা কোথায়? যখন শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে না পেরে পিছিয়ে পড়ে, তখন তাঁদের বিবেক কাঁদে না? নাকি পদ ও প্রতিপত্তির ঊর্ধ্বে উঠে গেছে সব মানবিকতা? এই যে জনদুর্ভোগ, এই যে রাস্তার অচলাবস্থা, তা কি উন্নয়নের শত্রু নয়? প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, তহবিল বরাদ্দ হয়, কিন্তু বাস্তবায়নের মাঠে শূন্যতা। মধ্যস্বত্বভোগী, কমিশনভিত্তিক ঠিকাদার আর রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় চলা দুর্নীতির বৃত্ত যেন গিলে খাচ্ছে জনতার অধিকার।

আমরা যদি জানতাম, কাজ না হওয়ার কারণ বাজেট নেই, তবু একধরনের সহানুভূতির জায়গা তৈরি হতো। কিন্তু আমাদের যন্ত্রণা আরও গভীর। কারণ, বাজেট আছে, কাগজপত্রে কাজও চলছে, শুধু বাস্তবের মাটি শুকিয়ে গেছে।

এ ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি কার? সেই সাধারণ মানুষের, যাদের কাছে রাষ্ট্র মানে একটুখানি ভালো রাস্তা, একটু নিরাপদে পথচলা আর সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানো। তারা তো ঘুষ দেয় না, তদবির করে না, দলবাজি বোঝে না। তাদের একটাই চাওয়া, রাষ্ট্রের মৌলিক সেবাগুলো যেন ঠিকঠাক থাকে। আজকের এই বাস্তবতায় প্রশ্ন জাগে, জনগণের যে যোগাযোগের অধিকার, তা কি বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে?

বাঁশখালীর জনগণ কি দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক? তাদের চোখে কান্না, মুখে অভিযোগ, মনে তীব্র বঞ্চনার ক্ষত—এই সবকিছু দেখেশুনেও যদি প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, প্রকৌশলী কিংবা মিডিয়া চুপ থাকে, তাহলে এ রাষ্ট্র কোন মানুষের জন্য?

বাঁশখালীর এই সড়ক দুর্ভোগ আসলে একটা বড় প্রশ্নের প্রতীক—আমরা কোন দিকে যাচ্ছি? যখন দেশের বড় শহরগুলো আলোকোজ্জ্বল, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভারে ভাসছে, তখন তার কিছু মাইল দূরের এক উপজেলার রাস্তায় একজন বৃদ্ধ মানুষ হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। এ বৈষম্য কি নতুন এক শোষণব্যবস্থা গড়ে তুলছে না?

প্রশাসনকে আজ জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দরকার। জনপ্রতিনিধিদের মুখোমুখি করে প্রশ্ন রাখতে হবে, কেন এই অচলাবস্থা? কাদের স্বার্থে বারবার প্রকল্প শুরু হয়, মাঝপথে থেমে যায়? ঠিকাদারদের ওপর নজরদারি কই? আর সবচেয়ে বড় কথা, জনগণের কষ্ট নিয়ে কথা বলার কেউ কি নেই?​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​

আবদুল্লাহ আল মাহমুদ

শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ