সড়ক দুর্ঘটনায় লক্ষ্মীপুরের একই পরিবারের সাতজন প্রাণ হারানোর ঘটনায় মাইক্রোবাসের চালক আকবর হোসেনের (২৪) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুপুরে ওমান প্রবাসী বাহারের বাবা আব্দুর রহিম বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন।

আরো পড়ুন: ঘরে ৭টি লাশ, পাশে শুয়ে বৃদ্ধ বাবা

আরো পড়ুন:

শিবচরে বাসের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত

কুড়িগ্রামে ট্রাকচাপায় ওষুধ ব্যবসায়ী নিহত

চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোবারক হোসেন মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “প্রবাসী বাহারের বাবা বাদী হয়ে মাইক্রোবাস চালক আকবর হোসেনকে আসামি করে মামলা করেছেন। চালক এখনো পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

অভিযুক্ত আকবর হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের হাসানপুর গ্রামের মৃত ফয়েজ আহমেদের ছেলে।

আরো পড়ুন: মাইক্রোবাস খাদে পড়ে নিহত ৭: চালক গ্রেপ্তার হয়নি 

বুধবার (৬ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজারে মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে তিন শিশুসহ সাতজন নিহত হন। দুর্ঘটনা কবলিতদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার উত্তর চৌপল্লী গ্রামে।

 

এদিকে, দুর্ঘটনার খবর শুনেই ওমান থেকে শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকালে দেশে ফেরেন প্রবাসী বাহারের ভাই লিটন ও রুবেল। ঢাকা থেকে সরাসরি গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী এলাকায় যান তারা। স্বজন হারানো পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি তারা মাইক্রোবাস চালক আকবর হোসেনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনার ঘটনায় নতুন তথ্য দিয়েছেন গাড়ির মালিক মো.

রাসেল। তিনি বলেন, “ঘটনার পরপরই চালক আকবর আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। আমি দ্রুত গিয়ে খালে নামি, আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা করি। প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট গাড়ির চালক ঘটনাস্থলে ছিল।” 

তিনি আরো বলেন, “অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে (মাইক্রোবাস চালক) হাসপাতালে নিয়ে যান বলে শুনেছি।” আকবর হোসেনের মোবাইল বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি। 

রাসেল বলেন, “ভুক্তভোগীরা রাগে-ক্ষোভে গাড়ির পেছনের গ্লাস ভেঙেছে। পরিবারটির এমন ক্ষতি দেখে আমিও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আকবর ৬ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছে। আগে সহকারী ছিল, এখন সে নিজেই গাড়ি চালায়। দেশের বিভিন্ন জেলায় বহুবার ভাড়া নিয়ে গেছে। সে দক্ষ বলেই তাকে গাড়ি দিয়েছি।”

মাইক্রোবাসের মালিক বলেন, “গাড়িটি লোনে কিনেছি। অদক্ষ চালকের হাতে গাড়ি দিতাম না। আকবরের ড্রাইভিং লাইসেন্সও রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে লাইসেন্সবিহীন কাউকে কেউই গাড়ি দেয় না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লক্ষ্মীপুর শহরের রেন্ট-এ-কারের তিনজন চালক বলেন, অনেক মালিক কম বেতনে অদক্ষ চালক নিয়োগ দেন। অটো গিয়ার গাড়ি চালাতে পারলেই চালক ভেবে বসা হয়। তাদের মতে, যদি সে অভিজ্ঞ চালক হতো তাহলে কুমিল্লার পর জিরিয়ে নিত। চালকের দায়িত্বহীনতা বড় ধরনের ট্র্যাজেডি ডেকে এনেছে।

নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ, চালক ঘুম চোখে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ফেরার সময় গাড়িটি একবার দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাই। গাড়ির যাত্রীরা চালককে বিশ্রাম নিতে অনুরোধ করেন। তবে, তিনি সেই অনুরোধ আমলে নেননি।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চন্দ্রগঞ্জ পূর্ববাজার এলাকায় পৌঁছানোর পর ঘুমের কারণে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চালক। ফলে গাড়িটি রাস্তার পাশের খালে পড়ে যান। খালের পানিতে ডুবে মারা যান বাহারের মা, স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সাত সদস্য। বেঁচে যান বাহার, তার বাবা ও আরো তিনজন।

বাহার উদ্দিন বলেন, “একটা জায়গায় গাড়ি প্রায় উল্টে যাচ্ছিল, আমরা বলছিলাম ঘুম আসলে জিরিয়ে নাও। চালক কিছুই শোনেনি। খালে পড়ার পর গাড়ির দরজার লক খুলে দিলে সবাই বের হতে পারত, কিন্তু সে নিজে জানালা দিয়ে বের হয়ে যায়।”

এদিকে, ঘটনার পর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক ব্যারিস্টার মো. গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়ার নির্দেশে জেলা প্রবাসী কল্যাণ সেন্টারের সহকারী পরিচালক খুরশীদ আলম সরেজমিনে চৌপল্লী গ্রামের কাশারি বাড়িতে যান। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।

ঢাকা/জাহাঙ্গীর/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন ন হত আহত আকবর হ স ন লক ষ ম প র উপজ ল র দ র ঘটন পর ব র প রব স র চ লক ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

পোশাককর্মীর এক মোবাইল ফোন উদ্ধারে গিয়ে ১৪৮টি জব্দ

চট্টগ্রাম মহানগরীতে এক পোশাককর্মীর চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে ১৪৮টি মোবাইল ফোন জব্দ করেছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (পশ্চিম জোন)। এ সময় দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরাও জব্দ করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে মোবাইল চুরি ও বিক্রয় সিন্ডিকেটের তিন সদস্যকে। 

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের দামপাড়ায় মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন সিএমপি ডিবি বন্দর জোনের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিক। চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানার পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন ও চৈতন্য গলি এলাকা থেকে এই বিপুল সংখ্যক মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ২৪ আগস্ট ভোরে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানাধীন জাহাঙ্গীর কলোনির টিনশেড বাসা থেকে পোশাক শ্রমিক আকবর হোসেনের ভিভো ব্র্যান্ডের একটি মোবাইল ফোন কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়। অসহায় এই শ্রমিক প্রায় ২০ দিন পর তার মোবাইল ফোন উদ্ধারে গোয়েন্দা পুলিশ পশ্চিম জোনের শরণাপন্ন হন। 

অভিযোগ পেয়ে মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করতে ডিবি পশ্চিম জোনের এসআই মো. ইমাম হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিকের দিকনির্দেশনায় পুলিশ পরিদর্শক ধীমান মজুমদারের তত্ত্বাবধানে এসআই মো. ইমাম হোসেনের নেতৃত্বে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরের কোতোয়ালী থানার পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় পোশাককর্মী আকবরের চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনসহ ৪৮টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় সোহেল মিয়া (৩৩) নামের মোবাইল চোর চক্রের এক সদস্যকে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোতোয়ালী থানাধীন স্টেশন রোড ও চৈতন্য গলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোর চক্রের দুই সদস্য আবদুল হাকিম (২৭) ও মো. ইয়াছিনকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি আইফোন ও দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরা। 

আটক ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল ফোন চুরি, ছিনতাই ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

জব্দ করা মোবাইল ফোনগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার আবু বক্কর সিদ্দিক।

ঢাকা/রেজাউল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নোয়াখালীতে প্রশিক্ষণের গাড়ি পুকুরে পড়ে তরুণের মৃত্যু
  • পদ স্থগিত নেতার পক্ষে বিবৃতির বিষয় অস্বীকার করে শোকজের জবাব বিএনপির দুই নেতার
  • পোশাককর্মীর এক মোবাইল ফোন উদ্ধারে গিয়ে ১৪৮টি জব্দ