সাতজনের মৃত্যু, মাইক্রোবাস চালকের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 9th, August 2025 GMT
সড়ক দুর্ঘটনায় লক্ষ্মীপুরের একই পরিবারের সাতজন প্রাণ হারানোর ঘটনায় মাইক্রোবাসের চালক আকবর হোসেনের (২৪) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুপুরে ওমান প্রবাসী বাহারের বাবা আব্দুর রহিম বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন।
আরো পড়ুন: ঘরে ৭টি লাশ, পাশে শুয়ে বৃদ্ধ বাবা
আরো পড়ুন:
শিবচরে বাসের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত
কুড়িগ্রামে ট্রাকচাপায় ওষুধ ব্যবসায়ী নিহত
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোবারক হোসেন মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “প্রবাসী বাহারের বাবা বাদী হয়ে মাইক্রোবাস চালক আকবর হোসেনকে আসামি করে মামলা করেছেন। চালক এখনো পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
অভিযুক্ত আকবর হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের হাসানপুর গ্রামের মৃত ফয়েজ আহমেদের ছেলে।
আরো পড়ুন: মাইক্রোবাস খাদে পড়ে নিহত ৭: চালক গ্রেপ্তার হয়নি
বুধবার (৬ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজারে মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে তিন শিশুসহ সাতজন নিহত হন। দুর্ঘটনা কবলিতদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার উত্তর চৌপল্লী গ্রামে।
এদিকে, দুর্ঘটনার খবর শুনেই ওমান থেকে শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকালে দেশে ফেরেন প্রবাসী বাহারের ভাই লিটন ও রুবেল। ঢাকা থেকে সরাসরি গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী এলাকায় যান তারা। স্বজন হারানো পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি তারা মাইক্রোবাস চালক আকবর হোসেনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনার ঘটনায় নতুন তথ্য দিয়েছেন গাড়ির মালিক মো.
তিনি আরো বলেন, “অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে (মাইক্রোবাস চালক) হাসপাতালে নিয়ে যান বলে শুনেছি।” আকবর হোসেনের মোবাইল বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
রাসেল বলেন, “ভুক্তভোগীরা রাগে-ক্ষোভে গাড়ির পেছনের গ্লাস ভেঙেছে। পরিবারটির এমন ক্ষতি দেখে আমিও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আকবর ৬ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছে। আগে সহকারী ছিল, এখন সে নিজেই গাড়ি চালায়। দেশের বিভিন্ন জেলায় বহুবার ভাড়া নিয়ে গেছে। সে দক্ষ বলেই তাকে গাড়ি দিয়েছি।”
মাইক্রোবাসের মালিক বলেন, “গাড়িটি লোনে কিনেছি। অদক্ষ চালকের হাতে গাড়ি দিতাম না। আকবরের ড্রাইভিং লাইসেন্সও রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে লাইসেন্সবিহীন কাউকে কেউই গাড়ি দেয় না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লক্ষ্মীপুর শহরের রেন্ট-এ-কারের তিনজন চালক বলেন, অনেক মালিক কম বেতনে অদক্ষ চালক নিয়োগ দেন। অটো গিয়ার গাড়ি চালাতে পারলেই চালক ভেবে বসা হয়। তাদের মতে, যদি সে অভিজ্ঞ চালক হতো তাহলে কুমিল্লার পর জিরিয়ে নিত। চালকের দায়িত্বহীনতা বড় ধরনের ট্র্যাজেডি ডেকে এনেছে।
নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ, চালক ঘুম চোখে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ফেরার সময় গাড়িটি একবার দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাই। গাড়ির যাত্রীরা চালককে বিশ্রাম নিতে অনুরোধ করেন। তবে, তিনি সেই অনুরোধ আমলে নেননি।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চন্দ্রগঞ্জ পূর্ববাজার এলাকায় পৌঁছানোর পর ঘুমের কারণে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চালক। ফলে গাড়িটি রাস্তার পাশের খালে পড়ে যান। খালের পানিতে ডুবে মারা যান বাহারের মা, স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সাত সদস্য। বেঁচে যান বাহার, তার বাবা ও আরো তিনজন।
বাহার উদ্দিন বলেন, “একটা জায়গায় গাড়ি প্রায় উল্টে যাচ্ছিল, আমরা বলছিলাম ঘুম আসলে জিরিয়ে নাও। চালক কিছুই শোনেনি। খালে পড়ার পর গাড়ির দরজার লক খুলে দিলে সবাই বের হতে পারত, কিন্তু সে নিজে জানালা দিয়ে বের হয়ে যায়।”
এদিকে, ঘটনার পর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক ব্যারিস্টার মো. গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়ার নির্দেশে জেলা প্রবাসী কল্যাণ সেন্টারের সহকারী পরিচালক খুরশীদ আলম সরেজমিনে চৌপল্লী গ্রামের কাশারি বাড়িতে যান। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
ঢাকা/জাহাঙ্গীর/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন ন হত আহত আকবর হ স ন লক ষ ম প র উপজ ল র দ র ঘটন পর ব র প রব স র চ লক ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমি রায়হান, মাথার খুলি উড়ায় ফেলব’
‘আমি ঢাকাইয়া আকবর খুনের মামলার ২ নম্বর আসামি রায়হান, মাথার খুলি উড়ায় ফেলব।...আকবর সি-বিচে কীভাবে পড়ে ছিল তুই দেখছস? তুইও পড়ে থাকবি।’ গত ২৫ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের কালুরঘাট এলাকার এক ওষুধের দোকানিকে এভাবেই মুঠোফোনে হুমকি দেন ১৩ মামলার আসামি ‘সন্ত্রাসী’ মোহাম্মদ রায়হান। এরপর থেকে আতঙ্কে দিন কাটছে ওই দোকানির। রায়হানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রায়হান কারাগারে থাকা ‘সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে কারাগারে থাকা ছোট সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক আরেক ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের অনুসারী। এই ‘সন্ত্রাসী’ দলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, খুনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। গত শুক্রবারও চাঁদার জন্য চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকার এক ব্যবসায়ীকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে। মো. ইউনুস নামের ওই ব্যবসায়ী নদী থেকে বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত খননযন্ত্রের ব্যবসা করেন। গুলিতে আহত হয়ে ওই ব্যবসায়ী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী ২০০০ সালে চট্টগ্রাম নগরে বহুল আলোচিত আট ছাত্রলীগ নেতা খুনের মামলার আসামি ছিলেন। মামলার রায়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান তিনি। ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ ১৭টি মামলা রয়েছে। তিনি বিদেশে পালিয়ে থাকলেও তাঁর হয়ে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী এলাকায় অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে ছোট সাজ্জাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে। বর্তমানে কারাগারে থাকা ছোট সাজ্জাদের বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম রায়হান।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রায়হানের নামে নগর ও জেলায় জোড়া খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা। গত ১৩ জুলাই রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের ইশান ভট্টের হাটে বোরকা পরে এসে যুবদল নেতা মোহাম্মদ সেলিমকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও রায়হানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রায়হানের নামে নগর ও জেলায় জোড়া খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা। গত ১৩ জুলাই রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের ইশান ভট্টের হাটে বোরকা পরে এসে যুবদল নেতা মোহাম্মদ সেলিমকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও রায়হানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি কালুরঘাটের ওই ওষুধের দোকানিকে রায়হান হুমকি দেন এর আগের দিনের একটি ঘটনার সূত্র ধরে। ওই দিন রাতে দোকানটির সামনে কিছু ব্যক্তির মধ্যে মারামারি হয়। মারামারির সূত্রপাত হয় ওই দোকানির সঙ্গে এক ক্রেতার ঝগড়ার জেরে। রায়হান ফোনে অভিযোগ তোলেন, ওই দোকানি লোকজন নিয়ে এসে তাঁর অনুসারীদের মারধর করিয়েছেন। তবে দোকানি জবাবে বলেন, তাঁর সঙ্গে ঝগড়ার সময় বাইরে থেকে কৌতূহলী লোকজন এগিয়ে আসে। এ সময় এসব লোকজন রায়হান অনুসারীদের মারধর করেছে। মারধরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কাউকে তিনি চেনেন না।
কালুরঘাটে ব্যবসায়ীকে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া ব্যক্তি সন্ত্রাসী রায়হান। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মোহরায় ব্যবসায়ীকে গুলি করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরাও সাজ্জাদ ও রায়হানের লোক।আফতাব উদ্দিন, ওসি, চান্দগাঁও থানারায়হানের সঙ্গে ওই দোকানির মুঠোফোনে কথোপকথন হয়েছে ৫ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড। এর শুরুতেই অপর প্রান্ত থেকে রায়হান ওই ওষুধের দোকানিকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এরপর মারধরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তাঁর সামনে হাজির করতে বলেন। নইলে ওই দোকানিকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। হুমকির সময় বারবার নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে রায়হান বলেন, তিনি ‘সন্ত্রাসী’ ঢাকাইয়া আকবর খুনের মামলার আসামি। একপর্যায়ে চট্টগ্রামের ‘গুন্ডাদের’ ওই দোকানি চেনেন কি না, জানতে চান রায়হান এবং তাঁর পরিচয় না জানলে ‘সাজ্জাদ ভাই’কে জিজ্ঞেস করার কথা বলেন।
যে দোকানিকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তাঁর নাম মো. রিদুয়ান। হুমকির ঘটনায় তিনি থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি বা মামলা করেননি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জিডি করিনি। তবে পুলিশ বিষয়টি জানে।’
এ বিষয়ে জানতে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কালুরঘাটে ব্যবসায়ীকে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া ব্যক্তি সন্ত্রাসী রায়হান। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মোহরায় ব্যবসায়ীকে গুলি করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরাও সাজ্জাদ ও রায়হানের লোক।’
পুলিশ জানায়, হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয় রায়হানের। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দুজন কারাগার থেকে জামিনে বের হন। এরপর ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রায়হান। সাজ্জাদ সম্প্রতি আবারও কারাগারে গেলে তাঁর অস্ত্রভান্ডারের দেখভাল করছেন এই রায়হান।
ব্যবসায়ীকে হুমকির অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোহাম্মদ রায়হানকে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
গত ২৩ মে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে ‘সন্ত্রাসী’ আকবর আলী ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকে প্রকাশ্যে গুলি করে খুনের মামলার আসামি করা হয় রায়হানকে। আকবর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বলেও যান তাঁকে গুলি করেছেন রায়হান। এ ছাড়া ৩০ মার্চ বাকলিয়ায় জোড়া খুন, ২২ এপ্রিল রাউজানের গাজীপাড়ায় যুবদলকর্মী ইব্রাহিমকে গুলি করে হত্যা, গত বছরের ২৯ আগস্ট নগরের অক্সিজেন-হাটহাজারীর পশ্চিম কুয়াইশে দুই বন্ধু মো. মাসুদ ও মো. আনিছকে হত্যা, একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁওয়ে ইট-বালুর ব্যবসায়ী মো. তাহসীনকে হত্যায় রায়হানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।