যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল’ বিলের কারণে ২০ লাখের বেশি মার্কিন অভিবাসী ও সে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছেন। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য বসবাস করা প্রায় ২ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসীও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ২০২৬-২৭ সালে এই বিলের আওতায় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ১ লাখ কোটি ডলার কাটছাঁট করা হয়েছে।

মেডিকেয়ার ও মেডিকেইডে বড় ধরনের বাজেট কাটছাঁটের প্রস্তাবে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়বে নিম্ন আয়ের পরিবার ও অভিবাসীরা। বিশেষ করে নথিপত্রহীন মানুষজন স্বাস্থ্যসেবা হারাবেন। যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ কেনা যায় না।

প্রস্তাবিত এই বাজেটে আংশিকভাবে মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য কোনো দিকনির্দেশনা ও বরাদ্দ নেই। অনেকেই হারাবেন স্বাস্থ্যসেবা–সংক্রান্ত চাকরি। ১ হাজার ১১৬ পৃষ্ঠার ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল’ বিলের আওতায় প্রস্তাবিত বাজেটে ৪৮ পৃষ্ঠা রাখা হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ বিষয়ে। তাই বিশাল এই বাজেট সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই অনেকেরই।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অভিবাসী সানি খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, মিশিগানসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে চার লাখের বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী বসবাস করেন। তাঁদের বেশির ভাগই মধ্য ও নিম্ন আয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা স্বাস্থ্য বিষয়ে সরকারি সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল। হোম কেয়ার, রাইড শেয়ার, রেস্তোরাঁ, ডেলিভারি ও ট্যাক্সিচালকেরা নানাভাবে এই ক্ষতির আওতায় পড়বেন।

অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-২৫-এর ডিস্ট্রিক্ট লিডার দিলীপ নাথ প্রস্তাবিত বাজেটের ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাবিত এই বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ১ লাখ কোটি ডলার কাটছাঁট করা হবে। মেডিকেইড ও স্বল্প আয়ের মানুষের খাদ্যসহায়তার প্রোগ্রাম এসএনএপি থেকে প্রায় ৭৯ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট থেকে ৩০ হাজার কোটি ডলার এবং মেডিকেয়ার থেকে কাটছাঁট করা হবে ৫০ কোটি ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ এবং ২ থেকে আড়াই লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ক্ষতির মুখে পড়বেন। অনেক হোম কেয়ার, ডে–কেয়ার এমনকি হাসপাতালও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫ বছরের বেশি প্রবীণ ব্যক্তিদের অনেকেই মেডিকেইডের ওপর ভিত্তি করে জীবন যাপন করেন। হোম কেয়ার, নার্সিং কেয়ার, ওষুধপত্রের ব্যয় সরকারি মেডিকেইডের খাত থেকে পেয়ে থাকেন তাঁরা।

ইমিগ্র্যান্ট এল্ডার হোম কেয়ারের কর্ণধার গিয়াস আহমেদ বাজেটের অনেকটা প্রশংসা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বসবাসরত ১৯ থেকে ৬৪ বছরের মানুষের মধ্যে যাঁরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সপ্তাহে অন্তত ২০ ঘণ্টা কাজ করেন না, তাঁরা মেডিকেইড থেকে বঞ্চিত হবেন। ৬৫ বছরের ওপর জ্যেষ্ঠ নাগরিক (সিনিয়র সিটিজেন) যাঁরা আছেন, তাঁদের সেবার ক্ষেত্রে কোনো তারতম্য হবে না।

গিয়াস আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, যাঁরা ক্যাশে কাজ করে নিয়মিত ট্যাক্স দেন না, যাঁরা কাজ না করে সরকারি সহযোগিতার ওপর নির্ভর করে জীবন যাপন করেন, তাঁদের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার নেই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র প রস ত ব ত বসব স সরক র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

এআই দাবা প্রতিযোগিতায় মাস্কের গ্রোককে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ওপেনএআই

বিশ্বের সেরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দাবাড়ু নির্ধারণে আয়োজিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতেছে চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই। ফাইনালে তারা হারিয়েছে ইলন মাস্কের এআই মডেল গ্রোক ৪–কে।

দাবা দীর্ঘদিন ধরে কম্পিউটারের সক্ষমতা যাচাইয়ের অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত। আধুনিক দাবা সফটওয়্যার এখন বিশ্বের সেরা মানব-দাবাড়ুকেও অনায়াসে হারাতে পারে। তবে এবারের প্রতিযোগিতা ছিল ভিন্নধর্মী। এখানে অংশ নেওয়া এআই মডেল বিশেষভাবে দাবার জন্য তৈরি নয়। সাধারণত এগুলো নিত্যদিনের নানা কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে। পুরো টুর্নামেন্টে অপরাজিত থাকা ওপেনএআইয়ের ওথ্রি মডেল ফাইনালে মাস্কের প্রতিষ্ঠান এক্সএআইয়ের গ্রোক ৪–কে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে। এই জয় দুই প্রতিষ্ঠানের চলমান প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আরও উসকে দিয়েছে।

ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান ও ইলন মাস্ক দুজনই দাবি করে আসছেন, তাঁদের সর্বশেষ এআই মডেলই বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত। তৃতীয় স্থানে রয়েছে গুগলের মডেল জেমিনি। ওপেনএআইয়ের আরেকটি মডেলকে হারিয়ে এই অবস্থান অর্জন করেছে জেমিনি। চেজ ডটকমের প্রতিবেদক পেদ্রো পিনহাতা বলেন, ‘সেমিফাইনাল পর্যন্ত মনে হয়েছিল, গ্রোক ৪–কে থামানোর মতো কেউ নেই। কিছু দুর্বল মুহূর্ত থাকলেও এক্সএআইয়ের এআই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী দাবাড়ু। কিন্তু শেষ দিনের খেলায় সেই ধারণা ভেঙে যায়। ফাইনালে গ্রোকের ‘ভুলভরা’ খেলার সুযোগ নিয়ে ওথ্রি টানা কয়েকটি নিশ্চিত জয় তুলে নেয়।

দাবা গ্র্যান্ডমাস্টার হিকারু নাকামুরা তাঁর সরাসরি সম্প্রচারে মন্তব্য করেন, গ্রোক অনেক ভুল করেছে, কিন্তু ওপেনএআই একটিও করেনি।

এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে গুগলের মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্ম ক্যাগলে। এ প্ল্যাটফর্মে ডেটা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাঁদের সিস্টেম পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করেন। তিন দিনব্যাপী এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয় আটটি বড় ভাষা মডেল, অ্যানথ্রপিক, গুগল, ওপেনএআই, এক্সএআই ছাড়াও চীনের ডিপসিক ও মুনশট এআই। এআই ডেভেলপাররা সাধারণত ‘বেঞ্চমার্ক’ পরীক্ষা ব্যবহার করে মডেলের যুক্তি প্রয়োগ, কৌশল নির্ধারণ বা প্রোগ্রামিং দক্ষতা যাচাই করেন। দাবার মতো জটিল, নিয়মনির্ভর কৌশলভিত্তিক খেলা এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় মডেলের লক্ষ্য অর্জনের সক্ষমতা পরিমাপের জন্য। অর্থাৎ প্রতিপক্ষকে হারিয়ে জয়লাভ।

গুগলের এআই ল্যাব ডিপমাইন্ডের তৈরি ‘আলফাগো’ ২০১০–এর দশকের শেষ দিকে মানব গো চ্যাম্পিয়নদের একের পর এক হারিয়ে আলোচনায় আসে।  ডিপমাইন্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্যার ডেমিস হাসাবিস নিজেও একসময় ছিলেন দাবার বিস্ময় প্রতিভা। অন্যদিকে ১৯৯৭ সালে আইবিএমের সুপারকম্পিউটার ‘ডিপ ব্লু’ তৎকালীন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভকে হারিয়ে প্রযুক্তি–দুনিয়ায় সাড়া ফেলে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ