৩৬ বছরের শিক্ষকতা শেষে সহকর্মী-শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় আপ্লুত স্বপন কুমার
Published: 9th, August 2025 GMT
১৯৮৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মজিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন স্বপন কুমার সূত্রধর। টানা প্রায় ৩৬ বছর শিক্ষকতা করার পর গত বৃহস্পতিবার ছিল তাঁর শেষ কর্মদিবস। এ উপলক্ষে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাঁকে সাড়ম্বরে বিদায় জানিয়েছেন।
স্বপন কুমার বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর শেষ কর্মদিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ব্যতিক্রমী কিছু আয়োজন করেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে বিদায় অনুষ্ঠানে স্বপন কুমারের হাতে বিভিন্ন উপহার ও ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। ৩৬ বছরের প্রিয় কর্মক্ষেত্র, সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের ছেড়ে যাওয়ার আগে বিকেল চারটার দিকে বিদ্যালয়ের মাঠে দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। এ সময় তাঁকে একাধিক ফুলের মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের আঙিনা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ের মুহূর্তে বেশ আপ্লুত হয়ে পড়েন তাঁর সহকর্মী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা। তাঁরা সবই মিলে স্বপন কুমারকে ফুলে শোভিত একটি গাড়িতে তুলে দেন। আর গাড়িটির দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে চলতে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ঢাকা-হোমনা সড়কের কড়িকান্দি বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে প্রিয় শিক্ষককে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি পৌঁছে দেন তাঁরা।
এমন বিদায়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন স্বপন কুমারও। তিনি বলেন, ‘জানি, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আজকের এই আয়োজন প্রমাণ করেছে, শিক্ষার্থীরা আমাকে কতটুকু ভালোবাসে। আজ প্রমাণিত হয়েছে, আমার ৩৬ বছরের শিক্ষকতা জীবনের সার্থকতা, শিক্ষার্থীদের কতটুকু দিতে পেরেছি, অর্থাৎ তাদের কতটুকু বোঝাতে পেরেছি।’
শিক্ষক হিসেবে স্বপন কুমার শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন জানিয়ে মজিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের নতুন প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) জোবায়দা আক্তার বলেন, ‘তাঁর (স্বপন কুমার) ন্যায়নীতি ও আদর্শ আমাদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বপন ক ম র ৩৬ বছর সহকর ম
এছাড়াও পড়ুন:
সেনাঘাঁটিতে সহকর্মীদের গুলি করলেন মার্কিন সার্জেন্ট, আহত ৫
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া রাজ্যে অবস্থিত ফোর্ট স্টুয়ার্ট সামরিক ঘাঁটিতে নিজের কর্মক্ষেত্রে গুলি চালানোর অভিযোগে বুধবার (৬ আগস্ট) একজন সক্রিয় কর্তব্যরত সেনা সার্জেন্টকে আটক করা হয়েছে। গুলিতে তার পাঁচ সহকর্মী আহত হয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। খবর সিএনএনের।
তৃতীয় পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডিং জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জন লুবাসের মতে, ২৮ বছর বয়সী সার্জেন্ট কোরনেলিয়াস স্যামেন্ট্রিও র্যাডফোর্ড নিজের ব্যক্তিগত বন্দুক দিয়ে গুলি চালাতে শুরু করলে সহকর্মীরা সাহসিকতার সঙ্গে তাকে প্রতিরোধ করে আটক করতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় পুরো ঘাঁটিতে সতর্কতা জারি করে সাময়িক লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
ঘটনার পর দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আহতদের স্থানীয় সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তিনজনকে জরুরি অস্ত্রোপচার করতে হয়, বাকি দুইজনও চিকিৎসাধীন।
আরো পড়ুন:
রয়টার্সের বিশ্লেষণ: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের শুল্ক চুক্তির সব আশা শেষ?
পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঘাঁটির কমান্ডার লুবাস বলেন, “আহত পাঁচজন সেনার অবস্থা স্থিতিশীল এবং তারা পর্যবেক্ষণে আছেন। র্যাডফোর্ডের হামলার উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয়।”
মামলা সম্পর্কে ব্রিফ করা একজন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার মতে, গুলি চালানোর শিকার একজনের সঙ্গে র্যাডফোর্ডের মতবিরোধ হয়েছিল। সে সেই সহকর্মীকে একটি রক্ষণাবেক্ষণ এলাকায় অনুসরণ করে এবং চারজনকে গুলি করার আগে তার বুকে গুলি করে।
কী নিয়ে মতবিরোধ ছিল তা স্পষ্ট নয়।
লুবাস বলেন, পুলিশ র্যাডফোর্ডকে গ্রেপ্তার করার আগেই অন্যান্য সেনা সদস্যরা তাকে মোকাবিলা করে ‘আরো হতাহতের ঘটনা রোধ’ করে। সামরিক বাহিনীর অস্ত্রের পরিবর্তে ব্যক্তিগত হ্যান্ডগান থেকে গুলি করেন অভিযুক্ত ওই সেনা।
তিনি বলেন, “গোলাগুলির প্রত্যক্ষদর্শী এলাকার সেনা সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ও ভয় ছাড়াই আক্রমণকারীকে মোকাবিলা করে তাকে দমন করে। এর ফলে আইন প্রয়োগকারীরা তাকে হেফাজতে নিতে সক্ষম হয়।
অভিযুক্ত ওই সেনা কমকর্তার বাবা এডি র্যাডফোর্ড দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, তিনি সাম্প্রতিক সময়ে তার ছেলের কোনো অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করেননি এবং গুলি চালানোর কারণ কী হতে পারে তা তিনি জানেন না।
টাইমসের খবর অনুসারে, এডি র্যাডফোর্ড বলেছেন, তার ছেলে ফোর্ট স্টুয়ার্টে বর্ণবাদের বিষয়ে পরিবারের কাছে অভিযোগ করেছিল এবং স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছিল।
মার্কিন সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলের বাসিন্দা র্যাডফোর্ড ২০১৮ সালে অটোমেটেড লজিস্টিক স্পেশালিস্ট হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তাকে ফোর্ট স্টেওয়ার্ট ঘাঁটির দ্বিতীয় ব্রিগেড কমব্যাট টিমে নিযুক্ত করা হয়। তার দায়িত্ব ছিল সরবরাহ ও গুদাম পরিচালনা করা।
লুবাস বলেন, র্যাডফোর্ডকে কখনো যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করা হয়নি এবং সামরিক রেকর্ডে তার বিরুদ্ধে মানসিক আচরণগত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে, জেনারেল স্বীকার করেছেন যে, র্যাডফোর্ডকে মে মাসে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল- আর এই ঘটনাটি সম্পর্কে গুলি চালানোর আগে তার চেইন অব কমান্ড অবগত ছিল না।
লুবাস বলেন, “ঘটনাটি ঘটার আগ পর্যন্ত ডিইউআই (মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো) গ্রেপ্তারের বিষয়টি তার চেইন অব কমান্ডের কাছে অজানা ছিল। আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ডাটাবেজগুলো খতিয়ে দেখতে শুরু করেছি।”
সাভানা থেকে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ফোর্ট স্টুয়ার্ট মিসিসিপি নদীর পূর্বে মার্কিন সেনাবাহিনীর বৃহত্তম পোস্ট। এটি সেনাবাহিনীর তৃতীয় পদাতিক ডিভিশনে নিযুক্ত হাজার হাজার সৈন্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের আবাসস্থল।
ঢাকা/ফিরোজ