বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অবস্থা আরও খারাপ করে ফেলেছে। তিনি বলেন, ‘দেশের অবস্থা হাসিনা ১২টা বাজিয়েছে, এ সরকার চব্বিশটা বাজায়ে দিসে।’

আজ শনিবার বিকেলে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) আয়োজিত আলোচনা সভায় মির্জা আব্বাস এ কথা বলেন। গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাসাসের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অনেক কিছু আছে বলার মতো, আমি এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমার এই অবস্থান থেকে কথাগুলো বলতে পারছি না। আরও অনেক কিছু আছে, দেশের কোন দিক দিয়ে ক্ষতি হয়েছে, কারা কীভাবে কোথায় আত্মসাৎ করেছে? কত টাকা লুট করেছে, কত টাকা খেয়েছে-এই কথাগুলো কিন্তু বলতে পারি। প্রমাণসহ সবকিছু আছে। কিন্তু আমি এখন বলতে চাই না, আমার অবস্থান থেকে।’

উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন অরাজকতায় বিএনপিকে দোষারোপ করা হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যেখানেই খুন, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি; সেখানেই বিএনপির নাম বলছে একটি দল। উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপিকে রং দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। জনগণের সামনে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা আমরা খুব ভালো বুঝি।’

নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপিকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আপনাদের যেমন খায়েশ আছে ক্ষমতায় যাওয়ার, আমাদেরও তেমন ইচ্ছা আছে। যদি জনগণ ভোট দেয়, ক্ষমতায় যাব; যদি না দেয় মেনে নেব আপনাদের। কিন্তু আমরা ভোট চাই। এই ভোটের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য গত ১৭ বছর বিএনপি আন্দোলন করেছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল আছে, তারাও চায় না নির্বাচনটা হোক। তারা নির্বাচনের কথা মুখে বলে, কিন্তু অন্তরে তারা নির্বাচনের কথা বলে না। কারণ তাদের ধারণা জন্মেছে, নির্বাচন হলেই বিএনপি ক্ষমতায় বসবে। কিছু কিছু দল নির্বাচন যাতে না হয়, সে জন্য ছুতা বের করে। বিএনপি কখনো দেশ শাসন করেনি, করবেও না। বিএনপি দেশ পরিচালনা করার চেষ্টা করেছে, করবে।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অনেকে বলেন ৩৬ দিনের আন্দোলনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বার স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে একবার, ১৯৭১ সালে। লক্ষ লক্ষ শহীদের জীবনের বিনিময়ে। এখন অনেকেই বলে, এটা আগে, ওটা আগে; এটা না হলে ওইটা করা যাবে না। যেটা হওয়া উচিত সেটা হচ্ছে, জুলাই-আগস্টে যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, সে প্রশাসনের লোক হোক, সাধারণ মানুষ হোক, শেখ হাসিনা হোক কিংবা অন্য কেউ হোক, তাদের বিচারটা করা দরকার খুব জরুরি।’ তিনি বলেন, বিচারকাজ খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয় না। বিচার এবং নির্বাচন পাশাপাশি চলবে। দুটো পাশাপাশি চলতে কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু বিচারের আগে নির্বাচন হওয়া যাবে না, এগুলো বলবেন না।

আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, ভারতে বসে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। দেশে একটা অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়। দেশে নির্বাচন হতে দেবে না, এমন একটা ভাবসাব তাদের ভেতরে আছে।

আলোচনা সভায় জাসাসের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শওকত আজিজের সভাপতিত্বে আলোচনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম, জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক এম এ মালেক, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হেলাল উদ্দীন, গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মিরাজের বাবা আব্দুর রব মিয়া প্রমুখ। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়। এতে জাসাসের শিল্পীরা অংশ নেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ

আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।

সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।

এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।

সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।

৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’

কারা আছে তালিকায়

দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।

দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।

১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।

২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।

কীভাবে এই মূল্যায়ন

৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।

ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।

এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।

কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।

জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:

বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;

কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;

কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;

সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;

কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ