সেই সেমিনার নিয়ে ব্যাখ্যা দিল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন
Published: 10th, August 2025 GMT
রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে এক সেমিনারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার দাবি করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র প্রমাণ তাঁর কাছে আছে। ওই সেমিনারের আয়োজক বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অনুষ্ঠানটির বিষয়ে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছে।
শনিবার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৮ আগস্ট (গতকাল) ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে উপদেষ্টাদের নিয়ে দু-একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত নেতিবাচক সংবাদটি বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশনের শনিবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, (শুক্রবারের) সেমিনারের বিষয়বস্তু–সম্পর্কিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল। ওই বিজ্ঞপ্তির আলোকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও দু-একটি গণমাধ্যমে সেমিনারের মূল প্রবন্ধ ও বিষয়বস্তুর বাইরে উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্য নয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সেমিনার একটি একাডেমিক বিষয়। এতে বিভিন্ন পর্যায়ের বিজ্ঞজনেরা দেশের জনপ্রশাসনের গতিপ্রকৃতি ও প্রত্যাশা নিয়ে তাঁদের নিজস্ব বক্তব্য দেন। অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। সেমিনারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার আলোকে আগামী দিনের জনপ্রত্যাশা ও জনপ্রশাসন নিয়ে অনেক ইতিবাচক-নেতিবাচক, আত্মসমালোচনা ও গঠনমূলক বক্তব্য, পরামর্শ ও প্রত্যাশা উঠে আসে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের চারজন সদস্যও সেমিনারে তাঁদের প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। (শুক্রবার) অ্যাসোসিয়েশনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিল, সেটাই অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্য।
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। দৃশ্যমান সংস্কার কার্যক্রমসহ অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিয়াম মিলনায়তনে অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার অভিযোগ করেছিলেন, আট উপদেষ্টার ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র প্রমাণ তাঁর কাছে রয়েছে। উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ হয় না, বদলিও হয় না। তবে তিনি উপদেষ্টাদের নাম বলেননি।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৮২ ব্যাচের এই কর্মকর্তা বর্তমানে অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি। আওয়ামী লীগের সময়ে তিনি যুগ্ম সচিব হিসেবে অবসরে যান। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর তাঁকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে সচিব করা হয়।
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন’ শীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে প্রশাসন ক্যাডারদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। শুক্রবার বিকেল চারটায় সেমিনার শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। সেমিনারে প্রশাসন ক্যাডারের শীর্ষ পদের প্রায় সব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
আবদুস সাত্তার তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ। আমলাদের চরিত্র না হয় খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের রক্তের ওপর দিয়ে চেয়ারে বসা অন্তত আটজন উপদেষ্টার সীমাহীন দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ দিতে পারব। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আট উপদেষ্টার দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’ এ সময় উপস্থিত কর্মকর্তারা ‘ঠিক ঠিক’ বলে হাততালি দেন।
আরও পড়ুনআট উপদেষ্টার সমালোচনায় সাবেক সচিব ০৮ আগস্ট ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট দ র উপদ ষ ট র শ ক রব র র জনপ
এছাড়াও পড়ুন:
“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”: অর্থ ও ফজিলত
ইসলামে জিকির মুমিনের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ, যা আল্লাহর সঙ্গে আধ্যাত্মিক সংযোগ দৃঢ় করে এবং মনকে শান্তি প্রদান করে। এর মধ্যে “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” একটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ জিকির, যা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত।
এই জিকিরটি মানুষের দুর্বলতা ও আল্লাহর সর্বশক্তিমান ক্ষমতার প্রতি ঈমান প্রকাশ করে। এটি কঠিন পরিস্থিতিতে, দুশ্চিন্তায় বা কোনো কাজ শুরুর আগে পড়া হয়, যা মুমিনকে আল্লাহর উপর ভরসা করতে উৎসাহিত করে।
অর্থ“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” এর অর্থ:“কোনো শক্তি বা ক্ষমতা নেই আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতা ছাড়া।”
অর্থাৎ, এটি মানুষের সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে যে, কোনো কিছুই মানুষের নিয়ন্ত্রণে নয়; সবকিছু আল্লাহর হাতে। এই কথার মাধ্যমে একজন মুমিন স্বীকার করে যে, সকল শক্তি ও সাফল্যের উৎস একমাত্র আল্লাহ।
এই জিকির মানুষকে আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল হতে শেখায় এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করে। (তাফসির মা’আরিফুল কুরআন, মুফতি শফি উসমানী, পৃষ্ঠা: ৮/২৪৫, মাকতাবাতুল আশরাফ, ২০১০)
আরও পড়ুনসর্বশ্রেষ্ঠ জিকির লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ফজিলতহাদিসে এই জিকিরের গুরুত্ব ও পুরস্কার সম্পর্কে বর্ণনা পাওয়া যায়। আবু মুসা আল-আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়ে, তা জান্নাতের ধনসম্পদের মধ্যে একটি।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪২০২)
এই জিকিরের ফজিলতের মধ্যে রয়েছে:
গুনাহ মাফ: এটি পড়ার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয় এবং আল্লাহর রহমত অর্জিত হয়।
মানসিক শান্তি: কঠিন পরিস্থিতিতে এই জিকির মনের উদ্বেগ দূর করে এবং আল্লাহর উপর ভরসা বাড়ায়।
জান্নাতের পথ: হাদিস অনুযায়ী, এটি জান্নাতে প্রবেশের একটি মাধ্যম।
সুরক্ষা: এটি শয়তানের ক্ষতি ও বদ নজর থেকে রক্ষা করে। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৭১)
আরও পড়ুনতাওহিদ বলতে কী বোঝায়১২ জুলাই ২০২৫কখন পড়তে হবে?এই জিকিরটি যেকোনো সময় পড়া যায়, তবে নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে এটি বিশেষভাবে উপকারী:
কঠিন পরিস্থিতিতে: দুশ্চিন্তা, ভয় বা চাপের সময় এটি পড়া মানসিক শক্তি প্রদান করে।
কাজ শুরুর আগে: যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করার আগে আল্লাহর সাহায্য কামনা করা।
সকাল-সন্ধ্যার জিকির: প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় নিয়মিত পড়া।
নামাজের পর: ফরজ নামাজের পর জিকিরের অংশ হিসেবে পড়া। (ফিকহুস সুন্নাহ, সাইয়্যিদ সাবিক, পৃষ্ঠা: ২০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৮)
“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর তাৎপর্যপূর্ণ জিকির, যা মানুষকে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হতে শেখায়। এর অর্থ—“কোনো শক্তি বা ক্ষমতা নেই আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতা ছাড়া”—মুমিনের ঈমানকে দৃঢ় করে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার গুরুত্ব তুলে ধরে। এই জিকির জান্নাতের ধনসম্পদ, গুনাহ মাফের কারণ এবং মানসিক শান্তির উৎস। আধুনিক জীবনে ব্যস্ততা, উদ্বেগ ও চাপের মাঝে এই জিকির নিয়মিত পড়ার মাধ্যমে আমরা আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করতে পারি।
আরও পড়ুনধৈর্য গড়ে তুলতে কোরআনের ৬ শিক্ষা১৩ জুলাই ২০২৫