গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান হত্যার ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। দুর্বৃত্তরা যখন এক ভদ্রলোককে নিশানা করে ‘এই পাইছি, তোরা আয়’ বলে সহযোগীদের ডাকছিল, তখন আসাদুজ্জামান পেশাগত দায়িত্ব হিসেবে ঘটনার ছবি তুলছিলেন। এরপর পাঁচ–ছয়জন দুর্বৃত্ত তাঁকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। তিনি দৌড়ে ঈদগাহ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নিয়েও রেহাই পাননি। তারা দোকানে ঢুকে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

এটা গাজীপুরের বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আগের দিন বুধবার নগরীর সাহাপাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের আক্রমণে আনোয়ার হোসেন নামের আরেক সাংবাদিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত সাত মাসে গাজীপুরে শতাধিক হত্যা ও অসংখ্য ছিনতাই–ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও জননিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকর ভূমিকা নিতে না পারা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে দেশের আরও অনেক স্থানের মতো গাজীপুরেও মব সন্ত্রাস বেড়ে যায়। এসব সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য যারা দায়ী, সরকার তাদের না ধরে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। আসাদুজ্জামান হত্যার ঘটনায় পুলিশ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের মধ্যে একজন নারীও আছেন। এই অপরাধী চক্র দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি করে এলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যে ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান নিহত হন, তা–ও ছিল অপরাধীদের অপকৌশলের অংশ।

আসাদুজ্জামান দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ–এর গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। পাশাপাশি একটি ওষুধ কোম্পানির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। পরিবারে তিনিই ছিলেন একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি, যিনি দুটি কাজ করে সংসার নির্বাহ করতেন। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো গাজীপুরেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনার পেছনে পেছনে হাঁটে। তারা যদি জানেই যে সেখানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী চক্র আছে, তাদের ধরতে আগে থেকে অভিযান চালাল না কেন?

পুলিশের লোকবলের অভাব আছে, মানুষ এই অজুহাত শুনতে চায় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি ও সেনাসদস্যরাও নিয়োজিত আছেন। এতগুলো বাহিনী দায়িত্বে থাকার পরও অবাধে ছিনতাই–ডাকাতি ও খুনের ঘটনা ঘটতে থাকলে মানুষ কীভাবে ভরসা পাবে? গাজীপুরে সন্ত্রাসীদের হাতে একজন সাংবাদিক খুন হওয়ার পরও সরকারের নীতিনির্ধারকদের চৈতন্যোদয় হয়েছে বলে মনে হয় না। তাঁরা বরাবরের মতো সাংবাদিকদের ওপর সরকার কোনো চাপ সৃষ্টি করছে না বলে সাফাই গাইছেন। সাংবাদিকসহ সব নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।

কেবল গাজীপুর নয়, সারা দেশেই জননিরাপত্তা হুমকির মুখে। সন্ত্রাসীরা যদি একজন কর্তব্যরত সাংবাদিককে খুন করে পালিয়ে যেতে পারে, তাহলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। গত বছর গণ–অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পর বিশৃঙ্খল অবস্থাকে সরকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বলে চালিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এক বছর পরও পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। থানা–পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধের কমবেশি পরিসংখ্যান দিয়ে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করা যাবে না। তারা তখনই আশ্বস্ত হবে, যখন দেখবে সরকার সত্যি সত্যি অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে।

সন্ত্রাসীদের হাতে যে সাংবাদিক নৃশংসভাবে খুন হলেন, কোনোভাবেই তাঁকে ফিরিয়ে আনা যাবে না। কিন্তু জননিরাপত্তার স্বার্থে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতেই হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আগেই সরকারকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আস দ জ জ ম ন অপর ধ দ র ঘটন র সরক র র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

দুই কমিশনের সভাপতি-সদস্যদের মর্যাদা ও বেতন-ভাতা নির্ধারণ

দুই কমিশনের সভাপতি-সদস্যদের মর্যাদা ও বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিশনের সভাপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারকের এবং কমিশনের সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের মর্যাদা, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন। এ বিষয়ে গত ৭ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জাতীয় সংসদের তিন নির্বাচনে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে পর্যালোচনাপূর্বক ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গঠিত কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদের মর্যাদা, বেতন-ভাতা ও সম্মানী এবং অন্যান্য সুবিধা নির্ধারণ করা হলো। পাঁচ সদস্যের এ কমিশনে সভাপতি হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামীম হাসনাইন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অন্য যেকোনো পেশা, ব্যবসায় কিংবা সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক (যথা ডেপুটেশন, লিয়েন, ছুটি ইত্যাদি) থাকলে তা সাময়িকভাবে স্থগিতের শর্তে এ কমিশনের সভাপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারকের এবং কমিশনের সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের মর্যাদা, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন।

তবে শর্ত থাকে, কমিশনের সভাপতি বা কোনো সদস্য অবৈতনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে চাইলে বা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে না চাইলে তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (বেতন এবং সুবিধা) আইন, ২০২১ প্রযোজ্য হবে। এ সংক্রান্ত ব্যয় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বাজেট থেকে নির্বাহ হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত কারণ, দায়দায়িত্ব ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয় চিহ্নিত করার লক্ষ্যে গঠিত তদন্ত কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদেরও মর্যাদা, বেতন-ভাতা/সম্মানি এবং অন্যান্য সুবিধা নির্ধারণ করা হয়েছে। নয় সদস্যের এ তদন্ত কমিশনের সভাপতি সাবেক সচিব এ কে এম জাফর উল্লা খান।

এ কমিশনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অন্য যেকোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক (যথা-ডেপুটেশন, লিয়েন, ছুটি ইত্যাদি) থাকলে তা সাময়িকভাবে স্থগিতের শর্তে তদন্ত কমিশনের সভাপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারকের এবং (কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপনের) ক্রমিক ২, ৭, ৮ ও ৯ এ উল্লিখিত কমিশনের সদস্য এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এম সাঈদ হোসাইন, নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক মো. আশিকুর রহমান ও আইনজীবী ব্যারিস্টার আশরাফ আলি) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের মর্যাদা, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন। কমিশনের অন্য সদস্যরা প্রত্যেক সভায় অংশগ্রহণের জন্য ৫ হাজার টাকা সম্মানি পাবেন।

তবে শর্ত থাকে, কমিশনের সভাপতি বা কোনো সদস্য অবৈতনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে চাইলে বা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে না চাইলে তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন করতে পারবেন।

প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (বেতন এবং সুবিধা) আইন, ২০২১ অনুসরণ করতে হবে। এ সংক্রান্ত ব্যয় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের বাজেট থেকে নির্বাহ হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিটি করপোরেশন ও পুলিশ কী করছে
  • সেই ‘সুপারম্যান’ এখন ট্রাম্পপন্থী অভিবাসন এজেন্ট
  • শুল্ক আরোপ: ট্রাম্প আসলে ভারতকে ততটা গুরুত্বই দেয়নি
  • দুই কমিশনের সভাপতি-সদস্যদের মর্যাদা ও বেতন-ভাতা নির্ধারণ
  • আগামী নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বড় চ্যালেঞ্জ: সিইসি
  • ২দিনে ৫ হত্যা, সরকার দায় এড়াতে পারে না: গণসংহতি আন্দোলন 
  • এক সপ্তাহে দেশজুড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ১৩১
  • শেখ হাসিনা একদিন বিচারের মুখোমুখি হবেন: প্রেস সচিব
  • সরকারের চেষ্টা থাকবে সবচেয়ে ভালো নির্বাচন উপহার দেওয়া: প্রেস সচিব