স্ত্রীকে জীবন্ত কবর দেওয়ার চেষ্টা, ভিডিও ভাইরালের পর স্বামী বললেন ‘ভুল’ হয়েছে
Published: 11th, August 2025 GMT
শেরপুরের শ্রীবরদীতে অসুস্থ স্ত্রীকে জীবন্ত কবর দেওয়ার চেষ্টা করেন খলিলুর রহমান (৮০) নামের এক বৃদ্ধ। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তিনি দাবি করেন, শুধু ভয় দেখাতে এমনটি করেছেন। সমালোচনার মুখে খলিলুর রহমান বলেন, আমি ‘ভুল’ করেছি।
রবিবার (১০ আগস্ট) রাইজিংবিডিকে খলিলুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি আমার মনের অজান্তে হয়েছে। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমার মাথায় তখন কিছু কাজ করেনি। ৩-৪ দিন ধরে আমার ঘরে তেমন কোনো খাবার নেই। তার মধ্যে আমার গায়ে অনেক জ্বর। প্রায় ২০ বছর ধরে অসুস্থ ও ছয় বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী আমার স্ত্রী খোশেদা বেগম। তাকে তো আমিই দেখাশোনা করি। প্রস্রাব-পায়খানা পরিষ্কার করি, কাপড় পরিষ্কার করি, ভাত রান্না করে খাওয়াই, এমনকি নখ পর্যন্ত কেটে দেই।”
তিনি বলেন, “আমার কষ্ট তো কেউ দেখে না। আপনারা তো এর সমাধান দিতে পারবেন না। সে কোনো কথা শোনে না, তাই ভয় দেখাইতে এই কাজ করেছি। আমার ভুল হয়েছে।”
স্থানীয়রা জানান, গত ৮ আগস্ট শুক্রবার দুপুরে বিছানায় মলত্যাগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে খোশেদা বেগমকে জীবন্ত কবর দেওয়ার চেষ্টা করেন তার স্বামী।
তিনি বলেন, “চতুর্থ সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় আমার স্ত্রীর পেটে বাচ্চা মারা যায়। এর পর থেকেই শুরু হয় শারীরিক জটিলতা। আমি আমার স্ত্রীর বোঝা বইছি। আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। এক ছেলে ও এক মেয়ে বিদেশে শ্রমিকের কাজ করে। অন্য মেয়েটা অন্ধ। সে ঢাকায় ভিক্ষা করে। বিদেশে থাকা দুই সন্তান মাঝে মধ্যে দুই-চার হাজার টাকা দেয়। আর কোনো খোঁজ খবর রাখে না। শুধু ঢাকার মেয়ের ভিক্ষার টাকা দিয়ে সংসার চলেনা। মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। এখন আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না।”
স্থানীয়দের মতে, খলিলুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রীকে সেবা করে আসছেন, তবে অর্থকষ্ট ও শারীরিক ক্লান্তি থেকে অতিষ্ঠ হয়ে এমন কাজ করেছেন। স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসা এলাকাজুড়ে উদাহরণ হলেও এ ঘটনার জন্য অনেকে হতবাক। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাল হয়। ভিডিওটি আবার ধারণ করেন তাদের নাতি খোকন মিয়া।
গত ৮ আগস্ট স্ত্রীকে জীবন্ত কবর দেওয়ার চেষ্টা করেন খলিলুর রহমান
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার জন্যে সে ঘটনার সময় উপস্থিত থেকেও তার নানিকে বাঁচাতে না এসে উল্টা ভিডিও করেছেন এবং ফেসবুকে শেয়ার করেছন।
এদিকে, নাতি খোকনের দাবি, আমার মা ও মামা দেশের বাইরে থাকে। নানিকে নির্যাতনের ঘটনার চিত্র তাদেরকে পাঠানোর জন্যই আমি ভিডিও করেছি। আমি কোনো ব্লগার নই।
খোকন আরো বলেন, “আমার ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার আধাঘণ্টার মধ্যে আমি পোস্টটি ডিলিট করে দেই। কিন্তু বাকিরা আমার ভিডিও ডাউনলোড করে তারাই ভাইরাল করার জন্য পোস্ট করেছেন।”
এ ব্যাপারে কাকিলাকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হামিদুল্লাহ বলেন, “আমরা যতটুকু জানি খলিলুর রহমান একজন ভালো মানুষ। তিনি নিজেই স্ত্রীকে দেখাশোনা করেন। হয়তো মানসিক চাপে পড়ে তিনি এমন কাজ করেছে। আমরা নিয়মিত তাদের খোঁজ খবর রাখবো।”
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ বলেন, “আমি ভিডিওটি দেখেছি। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে, লম্বা সময় ধরে স্ত্রীকে সেবা করতে করতে নিজেই ক্লান্ত। আমরা চেষ্টা করছি, তাদেরকে কোনো বৃদ্ধাশ্রমে রাখা যায় কিনা। আলোচনাও হয়েছে। এতে দুই জনেরই কষ্টের লাঘব হবে এবং সুন্দর জীবন পাবে।”
ঢাকা/তারিকুল/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ন র জন য ক জ কর ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
অর্ধেক বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে ধ্বংস হব: পাকিস্তানের সেনাপ্রধান
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ডমার্শাল আসিম মুনির প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন, ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে পাকিস্তান যদি অস্তিত্ব সংকটে পড়ে, তবে তারা ‘বিশ্বের অর্ধেককে সঙ্গে নিয়ে ধ্বংস হবে।’ একই সঙ্গে ভারত সিন্ধু নদীতে বাঁধ নির্মাণ করলে তা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ধ্বংসের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। খবর দ্য প্রিন্টের।
মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে আবারো যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান। রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাম্পা শহরে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যদি আমাদের মনে হয়, আমরা ডুবে যাচ্ছি (ধ্বংস হচ্ছি), তাহলে আমাদের সঙ্গে বিশ্বের অর্ধেককে নিয়ে ডুববো।”
দ্য প্রিন্ট বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে বসে সরাসরি তৃতীয় কোনো রাষ্ট্রকে সরাসরি পারমাণবিক হুমকি দেওয়ার এমন ঘটনা নজিরবিহীন।
আরো পড়ুন:
ট্যামি ব্রুসকে জাতিসংঘের উপপ্রতিনিধি মনোনীত করলেন ট্রাম্প
শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনকে রাখতে হবে: ইউরোপ
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যবসায়ী ও ট্যাম্পার সম্মানসূচক কনসাল আদনান আসাদের আয়োজিত এক নৈশভোজে এ বক্তব্য দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রায় ১২০ জন ফ্লোরিডাভিত্তিক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অংশ নেন।
বক্তব্যে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ভারতের সিন্ধু নদী অববাহিকায় যেকোনো ধরনের পরিকাঠামো নির্মাণ ধ্বংসেরও হুমকি দেন। তিনি দাবি করেন, ভারতের এই প্রকল্পগুলো পাকিস্তানের জন্য পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করলে তা ২৫ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাকে বিপন্ন করবে। তার ভাষায়- “আমরা অপেক্ষা করব ভারত কোনো বাঁধ বানানোর জন্য, আর একবার বানালে ১০টা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ওটা উড়িয়ে দেব… সিন্ধু নদী ভারতীয়দের পারিবারিক সম্পত্তি নয়। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের কোনো ঘাটতি নেই, আলহামদুলিল্লাহ।”
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের নবায়নকৃত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই মুনিরকে এমন স্পষ্ট ও আগ্রাসী হুমকি দেওয়ার সাহস জুগিয়েছে, তাও আবার আতিথ্যদাতা দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে।
মুনিরের ভারতবিরোধী বিস্তৃত হুমকির মধ্যে ছিল পূর্ব ভারত থেকে হামলা শুরু করে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত- যা সম্ভবত দিল্লির সাম্প্রতিক বাংলাদেশ-সংক্রান্ত অস্থিরতার প্রতি ইঙ্গিতবহ। তিনি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক টানাপোড়েন নিয়েও কটাক্ষ করেন এবং পাকিস্তানের ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের সঙ্গে সমান্তরাল সম্পর্ক বজায় রাখার সক্ষমতা নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেন।
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে গত ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলার পর নয়াদিল্লি সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তানের অভিযোগ, এ সিদ্ধান্তে তাদের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ঢাকা/ফিরোজ