গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ এবং কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মধ্যে নির্মিত দ্বিতীয় তিস্তা সেতু উদ্বোধনের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। আগামী ২৫ আগস্ট খুলে দেওয়া হবে বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ সেতু। কিন্তু, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে উদ্বোধনের আগেই ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুটি। 

সেতু থেকে মাত্র কয়েকশ’ মিটার দূরে ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে তোলা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বালু। পাইপের মাধ্যমে সেসব বালু ফেলা হচ্ছে তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়কঘেঁষা জমিতে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলামের প্রত্যক্ষ মদদে সেতুর কাছ থেকে বালু তুলে বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। তারা টাকার লোভে এ মূল্যবান সেতুকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। 

আরো পড়ুন:

উদ্বোধন হয়নি তিস্তা সেতু, অপেক্ষা আরো ২৩ দিন

গোপালগঞ্জের ঘটনায় সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করবে: সেতু উপদেষ্টা

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।

এ আইন অমান্য করে তিস্তা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে ওই সিন্ডিকেট। তারা বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করছে। 

সম্প্রতি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছে। বালু সিন্ডিকেটের সদস্যদের তোপের মুখে পড়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন তারা। 

গত ৫ জুলাই চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ড্রেজার বন্ধ করতে গিয়ে একজনকে আটক করেন। কিন্তু, সংঘবদ্ধ বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেট ও তাদের বাহিনী নৌ পুলিশের ওপর হামলা করে আসামিকে ছিনিয়ে নেয়। পরদিন চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সেলিম জামান সরকার সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। মামলার ১২ জনের নাম উল্লেখসহ ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেন। 

চলতি মাসেও তিস্তা সেতু এলাকায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা এবং পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় একজনকে আটক করে থানায় মামলা দায়ের করেন ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল হাকিম আজাদ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হরিপুর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে বালু তোলা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে গোলমাল হয়। পরে কয়েকদিন বালু তোলা বন্ধ ছিল। কিছুদিন থেকে আবার বালু তোলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।  

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস বলেছেন, “অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। মামলাও দেওয়া হচ্ছে। এরপরও কেউ বালু উত্তোলন করলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।” 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গাইবান্ধা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেছেন, “সেতুর পাশে থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমি জেনেছি। এতে সেতু ও বেড়িবাঁধ হুমকিতে পড়তে পারে। আমি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে বালু উত্তোলন বন্ধ আছে।” 

গাইবান্ধা এলজিইডি কার্যালয়ের আওতায় ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর তিস্তা সেতু প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড নামের একটি চীনা প্রতিষ্ঠান এ সেতু নির্মাণ করেছে। আগামী ২৫ আগস্ট সেতুটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। 

ঢাকা/মাসুম/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন দরগঞ জ উপজ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

যাত্রাশিল্পীকে মারধর-নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১

ময়মনসিংহ নগরীতে এক নারী যাত্রাশিল্পীকে মারধর করে, চুল কেটে দিয়ে ও মুখে কালি মাখিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে এ ঘটনায় ওই ভুক্তভোগী নারী থানায় মামলা করেন। 

গ্রেপ্তার শাহ আলম (৪০) চরকালীবাড়ি এলাকার মো. রাশেদের ছেলে। তিনি মামলার ৩ নম্বর আসামি। তাকে জুবিলী ঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

নির্যাতনের শিকার নৃত্যশিল্পীর নাম মোছা. রুপা নগরের বড় কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। তারা নগরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মাসুদ জামেলী বলেন, “ওই নারীকে বেঁধে রেখে চুল কেটে মারধর করা হয়েছে। মুখে কালি মাখিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুটি পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই মামলা চলছিল। অপহরণ মামলার আসামিরা জামিনে ছিলেন। আদালতের আরেকটি ভাঙচুরের মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ গত বুধবার দুপুরে ফিরে আসে। তখন প্রতিপক্ষ রাস্তায় রুপাকে আটকে নির্যাতন চালায়।”

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, বড় কালীবাড়ি লোকনাথ মন্দির-সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের একটি বস্তিতে বাস্তুহারা সমবায় সমিতির কাছ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে ৩ লাখ টাকায় একটি জমি কেনেন রুপা। গত বছর সেখানে আধা পাকা ঘর করতে গেলে সমবায় সমিতির সদস্য শাহ আলম চাঁদা দাবি করেন। 

এক লাখ টাকা দেওয়ার পর আরো ১০ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। টাকা না পেয়ে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রুপার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় রুপা আদালতে মামলা করেন। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল রুপার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে মো. রনি সুলতানকে অপহরণ করা হয়। 

এ ঘটনায় রুপা ৯ এপ্রিল মামলা করলে আসামি শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। রুপার করা ভাঙচুর মামলার তদন্ত করতে পুলিশ বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যায়। 

পুলিশ চলে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষ রাস্তায় রুপাকে ধরে নিয়ে বেঁধে মারধর করে, চুল কেটে ও মুখে কালি মেখে হেনস্তা করে। এসময় তার সামনে মাদক ও টাকা রেখে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। 

পরে রুপার স্বামী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

রুপা বলেন, ‘‘পুলিশ চলে যাওয়ার পরই আমাকে রাস্তায় ধরে নিয়ে গিয়ে বেঁধে চুল কেটে মুখে কালি মেখে দেয়। আমি বিচার চাই।’’

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম বলেন, “মামলা তদন্ত করে পুলিশ ফিরে আসার পর ওই নারীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে এবং একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।”

ঢাকা/মিলন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজধানীর বছিলায় পেট্রলবোমাসহ একজনকে আটক করেছে র‍্যাব
  • যাত্রাশিল্পীকে মারধর-নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১