জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চট্টগ্রাম নগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী নিজাম উদ্দিনের চাঁদা চাওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তাঁকে কারণ দর্শানোর চিঠি (শোকজ) দিয়েছে দলটি। আজ সোমবার দুপুরে নগর কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী (দপ্তর) আরিফ মঈনুদ্দিনের সই করা চিঠিটি তাঁকে পাঠানো হয়।

এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক আন্দোলন দমাতে নিজাম উদ্দিনের ৫ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ার একটি ভিডিও গতকাল রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। আরেক ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথনের ভিডিওটিতে আন্দোলন বন্ধে টাকা চাইতে শোনা যায় তাঁকে।

চাঁদা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এগুলো পুরোনো ভিডিও। এগুলো ছড়িয়ে দিয়ে আমাকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এগুলো প্ল্যানড (পরিকল্পিত) ভিডিও। যে ভিডিও করেছে (আফতাব) সে লাইভে এসে বিস্তারিত বলবে।’ এ ঘটনায় দলের চিঠি পাওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন নিজাম উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যথাযথ ব্যাখ্যা পাঠিয়ে দেব।’

দলের পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, ‘গত ১০ আগস্ট বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ মারফতে আপনার একটি ভিডিও এনসিপির চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির নজরে এসেছে। ফলে আপনার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। এমতাবস্থায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কেন আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে চট্টগ্রামের প্রধান যুগ্ম সমন্বয়কারী মীর আরশাদুল হক বরাবর আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য আপনাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

নিজাম উদ্দিনকে দলের পাঠানো কারণ দর্শানোর চিঠি (শোকজ).

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ যত অভিযোগ লক্ষ্মীপুরে গ্রেপ্তার আলমগীরের বিরুদ্ধে

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা–পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন জেলার তালিকাভুক্ত ‘সন্ত্রাসী’ আলমগীর হোসেন (৪০)। আজ সোমবার ভোরে চন্দ্রগঞ্জ থানার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের ইমাম উদ্দিন মিজি বাড়ির কাছ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আলমগীর হোসেন উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের উত্তর মাগুরী এলাকার আবুল কালামের ছেলে। সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের আলোচিত সন্ত্রাসী আবুল কাশেম জিহাদীর সেকেন্ড ইন কমান্ড আলমগীর হোসেন।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফয়জুল আজীম নোমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় চারটি অস্ত্র মামলা, একটি হত্যা ও দুটি মাদক মামলা এবং চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, অপহরণসহ মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলেন। তিনি লক্ষ্মীপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে একজন।

আলমগীরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দারবাজার এলাকায় জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

পুলিশ জানায়, নোমান ও রাকিব খুনের মামলায় অন্যতম আসামি আলমগীর হোসেন। ওই মামলায় তিনি ২০২৩ সালের ৯ মে গ্রেপ্তার হন। পরে উচ্চ আদালত থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন। এরপর আর আদালতে হাজিরা দেননি।

আলমগীর ২০১৩ সালের দিকে সন্ত্রাসী মাসুম বিল্লাহ লাদেন বাহিনীর সদস্য ছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। তাঁর মৃত্যুর পর তিনি ২০১৫ সালের দিকে আবুল কাশেম জিহাদীর বাহিনীতে যোগ দেন। কাশেম জিহাদী চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। নোমান ও রাকিব হত্যার ২৩ দিন পর জিহাদীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

আলমগীরের বিরুদ্ধে আজাদ হোসেন ওরফে বাবলু (২৫) নামের একজনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। গত ২ জুন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় আজাদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মাদক বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এলাকার একাধিক সূত্র জানায়, আলমগীর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলার বশিকপুর, চাটখিল ও আশপাশের এলাকায় অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বহুবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবি

চাটখিল উপজেলার রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোরশেদ আলম ভূঁইয়া আলমগীরের লোকজনের হাতে অপহরণের শিকার হন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত ৩১ জুলাই তিনি ও তাঁর সহযোগী তারেক রহমানকে আলমগীর হোসেনের লোকজন অপহরণ করেন। রাত ১০টার দিকে শামসুল হুদা উচ্চবিদ্যালয়ের কাছ থেকে তাঁদের তুলে নিয়ে যান অপহরণকারীরা। এরপর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তাঁদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়, যা পরবর্তী সময় ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায়ে ব্যবহার করা হয়।

মোরশেদ আলম আরও জানান, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নেওয়ার পর পরদিন বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অপহরণের সময় তাঁদের মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর এলাকার মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও তাঁরা তাঁর দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। নয়তো জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করবেন, এই আশঙ্কা তাঁদের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ