এক সময় হোয়াইট হাউসের প্রবেশপথে শোভা পেত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আনুষ্ঠানিক প্রতিকৃতি। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিকৃতিটি সরিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় স্থানান্তর করেছেন। এ পদক্ষেপকে দুই নেতার মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও তাঁর বাবা জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের সঙ্গেও ট্রাম্পের সম্পর্ক ভালো না। হোয়াইট হাউসে এই দুজনের প্রতিকৃতিও অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত দুটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, বারাক ওবামার প্রতিকৃতিটি হোয়াইট হাউসের প্রধান সিঁড়ির এক কোণে সরিয়ে নিতে ট্রাম্প তাঁর কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে প্রতিকৃতিটি প্রতিদিন হোয়াইট হাউসে আগত হাজারো দর্শনার্থীর চোখের আড়ালে চলে যাবে। জর্জ ডব্লিউ বুশ ও তাঁর বাবার প্রতিকৃতিও সিঁড়ি এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

কয়েকটি সূত্র বলেছে, হোয়াইট হাউসের সৌন্দর্যবর্ধনের বড় থেকে ছোট—প্রায় সব কাজের সঙ্গেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি জড়িত।

সিএনএনের কাছে একটি ছবি এসেছে। এতে দেখা গেছে, বারাক ওবামার প্রতিকৃতিটি একটি সিঁড়ির দেয়ালের ওপরে এক কোনায় ঝোলানো রয়েছে। এটি যেখানে রাখা হয়েছে, সেখানে খুব কম মানুষের যাওয়ার অনুমতি আছে। শুধু প্রেসিডেন্টের পরিবারের সদস্য, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং নির্দিষ্ট কিছু কর্মকর্তা সেখানে যেতে পারেন। এর অর্থ হলো রবার্ট ম্যাকার্ডির আঁকা এই প্রতিকৃতি হোয়াইট হাউসে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা এখন থেকে আর দেখতে পাবেন না।

হোয়াইট হাউসের আনুষ্ঠানিক নিয়ম ও প্রথা অনুযায়ী, সদ্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টদের প্রতিকৃতি হোয়াইট হাউসের প্রবেশপথের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রদর্শিত হয়, যাতে তা অতিথি এবং দর্শনার্থীরা দেখতে পান; কিন্তু ওবামার প্রতিকৃতি সরানোর মধ্য দিয়ে সেই প্রথা ভঙ্গ হলো।

হোয়াইট হাউসে বারাক ওবামার ওই প্রতিকৃতি স্থানান্তরের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে গত এপ্রিল মাসেও সেটি সরানো হয়েছিল। তার বদলে সেখানে বসানো হয়েছিল ট্রাম্পের একটি ছবি। ওই ছবি পেনসিলভানিয়ার বাটলার শহরে হত্যাচেষ্টা থেকে ট্রাম্পের বেঁচে যাওয়ার সময়ের।

হোয়াইট হাউসের আনুষ্ঠানিক নিয়ম ও প্রথা অনুযায়ী, সদ্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টদের প্রতিকৃতি হোয়াইট হাউসের প্রবেশপথের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রদর্শিত হয়, যাতে তা অতিথি এবং দর্শনার্থীরা দেখতে পান; কিন্তু ওবামার প্রতিকৃতি সরানোর মধ্য দিয়ে সেই প্রথা ভেঙে ফেলা হলো।

সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিকৃতি এখনো সম্পন্ন হয়নি।

প্রতিকৃতি স্থানান্তরের এ বিষয়টি ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি তাঁর সর্বশেষ অসম্মানজনক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টদের প্রতিকৃতি প্রদর্শনের আধুনিক ঐতিহ্য শুরু হয় ১৯৬০–এর দশকে ফার্স্ট লেডি জ্যাকুলিন কেনেডির সময় থেকে। আগে প্রতিকৃতি প্রদর্শনের নীতি ছিল অনিয়মিত, যা কখনো কংগ্রেস, কখনো ব্যক্তিগত অর্থায়ন বা প্রেসিডেন্ট নিজেই করতেন।

ট্রাম্প ও ওবামার মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। ট্রাম্প সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, ওবামা ও তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তারা ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় দেশদ্রোহের কাজ করেছেন। তবে এ অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক, উদ্ভট ও মনোযোগ সরানোর কৌশল’ হিসেবে অভিহিত করেছে ওবামার অফিস।

ট্রাম্পের অভিযোগ ছিল, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে ওবামা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ‘মনগড়া’ গোয়েন্দা তথ্য তৈরি করেছিলেন। ট্রাম্পের অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি কৌঁসুলিদের এই অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বুশ পরিবারের সঙ্গেও ট্রাম্পের সম্পর্ক ভালো নয়। প্রয়াত জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ তাঁর জীবনীতে ট্রাম্পকে ‘ফাঁপা বুলি’ বলে আখ্যা দেন এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দেন। অন্যদিকে জর্জ ডব্লিউ বুশকে ‘ব্যর্থ ও অনুপ্রেরণাহীন’ প্রেসিডেন্ট বলে সমালোচনা করেছেন।

হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টদের প্রতিকৃতি প্রদর্শনের আধুনিক ঐতিহ্য শুরু হয় ১৯৬০ সালের দশকে ফার্স্ট লেডি জ্যাকুলিন কেনেডির সময় থেকে। আগে প্রতিকৃতি প্রদর্শনের নীতি ছিল অনিয়মিত, যা কখনো কংগ্রেস, কখনো ব্যক্তিগত অর্থায়ন বা প্রেসিডেন্ট নিজেই করতেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স থ ন ন তর প রদর শ কর ছ ন র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

জামিনের পর মামলা নিয়ে মেহজাবীনের বিবৃতি

ব্যবসায় অংশীদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২৭ লাখ টাকা ‘আত্মসাৎ করা ও হত্যার হুমকি দেওয়ার’ অভিযোগের মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী ও তার ভাই আলিসান চৌধুরী। 

রবিবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক আফরোজা তানিয়া শুনানি শেষে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন মেহজাবীন চৌধুরীর আইনজীবী তুহিন হাওলাদার। 

আরো পড়ুন:

আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন মেহজাবীন চৌধুরী

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে যা বললেন মেহজাবীন

সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে মেহজাবীন চৌধুরী তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। তাতে এ মামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন এই অভিনেত্রী।    

মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “একজন অজানা ব্যক্তি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে আমার ও আমার ১৯ বছর বয়সি ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গত নয় মাসে আমি এই মামলার কোনো তথ্য পাইনি, কারণ অভিযোগকারী পুলিশকে আমার সঠিক ফোন নম্বর, সঠিক ঠিকানা বা কোনো যাচাইকৃত তথ্য দিতে পারেননি। তিনি দাবি করেন যে, ২০১৬ সাল থেকে তিনি আমার সাথে ‘ব্যবসা’ করছিলেন।”  

মেহজাবীন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি অভিযোগকারী। এ বিষয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “তবে যোগাযোগের কোনো প্রমাণ নেই। তিনি বলেন, ‘তিনি ২০১৬ সাল থেকে আমাকে ফেসবুকে মেসেজ দিতেন। কিন্তু তিনি যা দেখাতে পারেননি।’ একটি মেসেজ যেটা তিনি আমাকে পাঠিয়েছিলেন মেসেজের, হোয়াটসঅ্যাপ বা আমার নম্বরে, কিংবা আমার পক্ষ থেকে একটি উত্তর, এমনকি একটি স্ক্রিনশটও না।” 

অভিযোগকারীর পরিচয় অসম্পূর্ণ। এ তথ্য উল্লেখ করে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “তার পরিচয় অসম্পূর্ণ। তার সম্পূর্ণ পরিচয়পত্র এখনো জমা দেয়া হয়নি। তার এনআইডি পর্যন্ত অনুপস্থিত। অভিযোগকারী ও তার আইনজীবী ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। গতকাল খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে অভিযোগকারী তার ফোন বন্ধ করে রেখেছেন, এমনকি তার আইনজীবীর নম্বরও বন্ধ।” 

আর্থিক লেনদেনের কোনো নেই। মেহাজাবীনের ভাষায়, “আর্থিক লেনদেনের কোনো প্রমাণ নেই। তিনি দাবি করেন যে, তিনি আমাকে ২৭ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি দেখাতে পারেননি—কোনো ব্যাংক লেনদেন, কোনো চেক, বিকাশ লেনদেন, কোনো লিখিত চুক্তি, কোনো রশিদ, কোনো সাক্ষী, কিছুই না। একটি কাগজপত্রও নেই।” 

অপহরণের অভিযোগের বিষয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “১১ ফেব্রুয়ারির ঘটনাটি সম্পূর্ণ প্রমাণহীন। তিনি দাবি করেন ১১ ফেব্রুয়ারি আমি তাকে চোখ বেঁধে হাতিরঝিলের একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিলাম, আমার ছোট ভাইসহ আরো ৪–৫ জনকে নিয়ে। গত নয় মাসে তিনি দেখাতে পারেননি রেস্টুরেন্ট বা আশেপাশের রাস্তার এক সেকেন্ডেরও সিসিটিভি ফুটেজ, কোনো সাক্ষী, কোনো প্রমাণ, কিছুই না। হাতিরঝিল ঢাকার সবচেয়ে বেশি সিসিটিভি-নিয়ন্ত্রিত এলাকা, তবু তিনি একটি ছবি বা ভিডিও ফুটেজ দেখাতে পারেননি।” 

মামলা হওয়ার পর ৯ মাস কেটে গেলেও কোনো নোটিশ পাননি মেহজাবীন চৌধুরী। এ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গত নয় মাসে আমি কোনো নোটিশ পাইনি। এই নয় মাসে আমি কোনো পুলিশ স্টেশনের ফোন কল, কোনো কোর্টের নোটিশ বা ডকুমেন্ট। একটি নোটিশ পেলেও আমি অনেক আগে থেকেই আইনি ব্যবস্থা নিতাম।” 

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন মেহজাবীন। তার ভাষায়, “আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই মামলার কোনো ভিত্তি না থাকলেও, যখন জানতে পারলাম যে একটি অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে, তখন আমি আইনি প্রক্রিয়া মেনে জামিন নিয়েছি। কারণ আমি আমাদের আইন ও নিয়ম মানি। প্রমাণ ছাড়া দায়ের করা মামলা কখনো সত্য হয়ে যায় না। সত্য খুব দ্রুতই আদালতে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখনকার দিনে কাউকে অপমান করা, মানহানি করা বা ভাইরাল হওয়ার জন্য অন্যকে ব্যবহার করা খুবই সহজ হয়ে গেছে। এই ব্যক্তির যে উদ্দেশ্যই থাকুক, আমার বা আমার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করে, সে যা-ই করতে চায়—আমি বিশ্বাস করি সবকিছু খুব দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে যাবে।” 

অনুরোধ জানিয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “এর আগ পর্যন্ত আমি সবাইকে অনুরোধ করব—দয়া করে সহানুভূতিশীল হোন, দয়া করে মানবিক হোন এবং কাউকে না জেনে কোনো মিডিয়া ট্রায়াল শুরু করবেন না। গত ১৫ বছর ধরে আমি আমার কাজ, আমার পেশা এবং আমার দর্শকদের জন্য যে পরিমাণ পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা দিয়ে এসেছি, সেই পরিশ্রমের পরেও আজ আমাকে এসব ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে—এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জামিনের পর মামলা নিয়ে মেহজাবীনের বিবৃতি